বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে শেখ হাসিনার পাশে ভারত। অ্যামেরিকাকে পাঠানো এক কূটনৈতিক বার্তায় অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সম্প্রতি একাধিক মন্তব্য করেছে অ্যামেরিকা। কিন্তু অ্যামেরিকার অবস্থানের সঙ্গে সহমত নয় ভারত। জি২০ বৈঠকের আগে এক কূটনৈতিক বার্তায় বাংলাদেশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে দিল্লি। ভারতের বক্তব্যে কয়েকটি ভাগ আছে।
কূটনৈতিক নোটে ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে তা ভারত এবং অ্যামেরিকা কারও পক্ষেই সুখকর হবে না। কারণহাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে জামাতের মতো সংগঠনের ক্ষমতা বাড়বে বলে মনে করে ভারত। অ্যামেরিকা জামাতকে একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দেখে। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে তুলনা করে। কিন্তু ভারত মনে করে জামাত একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠন। ভারতের বার্তায় একথা স্পষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ স্থলসীমান্ত আছে। বাংলাদেশে জামাতের মতো সংগঠন শক্তিশালী হলে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা সমস্যার মুখে পড়বে। জামাতের মতো সংগঠনের সঙ্গে পাকিস্তানের নিবিড় যোগ আছে বলেই মনে করে ভারত।
ঢাকার গোলাপবাগে বিএনপির সমাবেশে জনতার ঢল
অবশেষে সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ঢাকার গোলাপবাগে বিএনপির সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে । সেখানে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। গোলাপবাগের সমাবেশ ঘুরে ছবিগুলো তুলেছেন মর্তূজা রাশেদ।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে পুরুষ নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি নারী সমর্থকদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশ থেকে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আটক দলটির নেতাকর্মী এবং মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও আলমদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি জানানো হয়েছে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সকাল থেকে ভিড়
ভোর থেকেই ব্যানারে পোস্টারে দলে দলে সমর্থকেরা জড় হতে থাকেন সমাবেশস্থলের দিকে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোলাপবাগের মাঠ
ছবি: Mortuza Rashed/DW
জিয়ার নামে ধ্বনি
বিএনপি নেতা-কর্মীদের স্লোগানে ছিল তারেক রহমান, খালেদা জিয়া এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম। ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে সরকার ও বিএনপির মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। পুলিশ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিকল্প ভেন্যু নিয়ে আলোচনার মাঝেই বুধবার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ৷ সেসময় সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত এবং অনেকে আহত হন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বিরোধিতা চরমে, হাল ছাড়বে না সমর্থকরা
‘যত অবরোধ-ই দেক আর গাড়ি বন্ধ রাখুক, সরকার আমাদের নিবেদিত কর্মীদের আটকাতে পারবে না,’ এ কথা বলেন চরফ্যাশন থেকে আসা কর্মী মোঃ আব্দুস সামাদ।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পুলিশি তৎপরতা
সমাবেশস্থল পুলিশ, আনসার-বিজিবি সদস্য এবং সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের দ্বারা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
আশপাশে কী পরিস্থিতি
গোলাপবাগে সমাবেশস্থল ছাড়াও মাদারটেক, গোপীবাগ, মানিকনগর এবং কমলাপুরসহ আশেপাশের ৪-৫ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিএনপির সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল। এসব এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
রাত থেকে ভিড়
তিলধারণের জায়গা নেই সমাবেশস্থলে। শুক্রবার বিকেল থেকেই নেতা-কর্মীরা মাঠে আসা শুরু করে এবং সেখানেই কাগজ, বাঁশের চাটাই বিছিয়ে রাতযাপন করে। সমাবেশে আসার পথে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি সমর্থকেরা।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পদত্যাগের ঘোষণা
সমাবেশের মঞ্চ থেকে বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তারা জানিয়েছেন যে, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তারা পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন।
গোলাপবাগ মাঠ এবং আশেপাশের এলাকায় জনতার ঢল নামলেও শহরের অন্যত্র বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল সকালের দিকে। গণপরিবহণের অভাবে জনভোগান্তি চরমে ওঠে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও ছিল অনেক কম। ঢাকার গোলাপবাগে বিএনপির সমাবেশ চলাকালে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে রাখে পুলিশ।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
রিকশা, ভ্যানই ভরসা
বড় গণপরিবহন না থাকায় কেউ কেউ যাতায়াতের জন্য ভ্যান, অটোরিকশা এবং পিকআপে ব্যবহার করেছেন। কারো নির্দেশনায় বাস চলাচল বন্ধ ছিল কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
11 ছবি1 | 11
ভারত জানিয়েছে, অ্যামেরিকার মতো ভারতও চায় বাংলাদেশে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। কিন্তু অ্যামেরিকা সম্প্রতি যে মন্তব্যগুলি করেছে তা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করে ভারত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল দিল্লি ঘুরে যাওয়ার পরেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এবিষয়ে আলোচনা হয়েছে ভারতীয় প্রশাসনের।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হন্তারকের তালিকায় শেখ হাসিনা
গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় কঠোর হস্তক্ষেপ করা বিশ্বের ৩৭ জন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের তালিকা প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ এর মধ্যে দুজন নারী রয়েছেন৷ তাদের একজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
ছবি: rsf.org
‘প্রেস ফ্রিডম প্রিডেটর্স’
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স, আরএসএফ সম্প্রতি ২০২১ সালের ‘প্রেস ফ্রিডম প্রিডেটর্স’ বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শিকারিদের তালিকা প্রকাশ করেছে৷ এতে বিশ্বের ৩৭ জন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের নাম রয়েছে যারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় কঠোর হস্তক্ষেপ করেছেন৷ এর আগে ২০১৬ সালে সবশেষ এমন তালিকা প্রকাশ করেছিল আরএসএফ৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Guay
শেখ হাসিনা
তালিকায় দুই নারী নেত্রীর নাম রয়েছে৷ এদের একজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা এই নারী অন্তত ২০১৪ সাল থেকে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শিকারি’ বলে মনে করছে আরএসএফ৷ ২০১৮ সালে তার সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করে, যার আওতায় ৭০ জনের বেশি সাংবাদিক ও ব্লগারকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে৷ যে সাংবাদিকরা তাকে বিরক্ত করেন তিনি তাদের ধরেন বলে মনে করে আরএসএফ৷
ছবি: rsf.org
ক্যারি ল্যাম
২০১৭ সাল থেকে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করা ক্যারি ল্যাম নিজেকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পুতুল হিসেবে প্রমাণ করেছেন বলে মনে করছে আরএসএফ৷ ফলে তালিকার দুই নারীর একজন হিসেবে তার নাম এসেছে৷ হংকংয়ের শীর্ষস্থানীয় স্বাধীন সংবাদপত্র ‘অ্যাপল ডেইলি’ বন্ধ হয়ে যাওয়া ও তার প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাইয়ের গ্রেপ্তারের ঘটনাও উল্লেখ করেছে আরএসএফ৷
ছবি: Peter Parks/AFP/Getty Images
প্রথম পশ্চিম ইউরোপীয় নেতা
তালিকায় প্রথম পশ্চিম ইউরোপীয় নেতা হিসেবে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অর্বানের নাম এসেছে৷ ২০১০ সালে আবারও ক্ষমতায় ফিরে তিনি বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করছেন বলে মনে করে আরএসএফ৷ শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ৮০ শতাংশের বেশি গণমাধ্যম কিনে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে৷ এই রিপোর্টের সমালোচনা করে সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, আরএসএফকে ‘ফেক নিউজ উইদাউট বর্ডার্স’ ডাকা উচিত৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Stache
মোহামেদ বিন সালমান
সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশগজি হত্যার বিষয়টি তুলে ধরে আরএসএফ বলছে, সৌদি প্রিন্স বিন সালমানের গ্রহণ করা বিভিন্ন কৌশল মাঝেমধ্যে সাংবাদিক অপহরণ, তাদের নির্যাতন ও অন্যান্য অচিন্তনীয় ঘটনার জন্ম দিয়ে থাকে৷
ছবি: Xinhua/imago images
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যরা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের নামও এই তালিকায় আছে৷
অন্যান্য নেতৃবৃন্দ
তালিকায় অন্যান্যদের মধ্যে আছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ফিলিপাইন্সের প্রেসিডেন্ট রদরিগো দুতার্তে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ, ইরানের সুপ্রিম নেতা আলি খামেনেই, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন, মিয়ানমারের মিন অং লায়িং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো৷
ছবি: rsf.org
7 ছবি1 | 7
আগামী সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে জি২০-র বৈঠক শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সেখানে আসবেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং উপমহাদেশের ভূরাজনীতি নিয়ে সমান্তরাল বৈঠক হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ভারত জি২০-র মঞ্চকে এবিষয়ে আলোচনার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।
আফগানিস্তানের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছে ভারত। অ্যামেরিকাকে জানানো হয়েছে, যেভাবে আফগানিস্তান থেকে অ্যামেরিকা তাদের ঘাঁটি সরিয়ে নিয়েছে, ভারত তাতে সন্তুষ্ট নয়। এর ফলে উপমহাদেশ অঞ্চলে অস্থিরতার আশঙ্কা বেড়েছে। তালেবান উপমহাদেশের ভূরাজনীতিতে একটি বড় 'থ্রেট' হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে ভারত। বস্তুত, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্ক ভারতের চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। এপ্রসঙ্গেই বাংলাদেশের জন্য অ্যামেরিকার পৃথক ভিসা নীতির সমালোচনা করেছে ভারত। অ্যামেরিকা জানিয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন যারা বানচাল করার চেষ্টা করবে, অ্যামেরিকা তাদের সে দেশে ঢুকতে দেবে না। ভারত মনে করে অ্যামেরিকার এই নীতি সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো। ভারত এই নীতিকে ভালো চোখে দেখছে না।
জি২০ বৈঠকে এই সবকটি বিষয়ই বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় উঠে আসতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। বস্তুত, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসাররাও আড়ালে একথা স্বীকার করছেন।
ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বাংলাদেশের জন্মের সময় থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মসৃণ থেকেছে। যখনই সে দেশে অন্য কোনো সরকার ক্ষমতায় এসেছে, দুই দেশের সম্পর্ক ততটা মসৃণ থাকেনি। তাই ভারত সবসময়ই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারকে গুরুত্ব দেয়।'' উৎপল মনে করেন, ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকার দেখতে চায় ভারত। কারণ, ভারত মনে করে আওয়ামী লীগের সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকলে দুই দেশের সীমান্ত আপাতদৃষ্টিতে সুরক্ষিত থাকে।