হাসিনা-মনমোহন শেষ বৈঠক
৪ মার্চ ২০১৪ মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় মঙ্গলবার বিমস্টেক সম্মেলন শেষে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং৷ বৈঠকে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ বিক্রির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী৷ ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ বাংলাদেশের সঞ্চালন লাইনে যুক্ত করার জন্য মনমোহন সিংকে শেখ হাসিনা অনুরোধ জানালে, তিনি সম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন৷ প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় ভারত বর্তমানে বাংলাদেশের কাছে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ বিক্রি করছে৷
শেখ হাসিনা বৈঠকে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান – এই চারটি দেশের আঞ্চলিক উদ্যোগে জলবিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দেন৷ দুই দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়৷ এছাড়া, প্রটোকল বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের বিল শিগগিরই ভারতের পার্লামেন্টে পাস হবে বলেও আশা করেন দুই নেতা৷
তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘বাংলাদেশের জনগণ ভারতের ইতিবাচক ও কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায় আছে৷'' ২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত তা আটকে যায়৷ এখনও সেটা অনিশ্চিত অবস্থায় আছে৷
বিমস্টেক সম্মেলনে হাসিনা-মনমোহনের এই বৈঠক ভারতের ইউপিএ সরকারের আমলে শেষ বৈঠক বলে মনে করা হচ্ছে৷ কারণ ভারতে সামনেই জাতীয় নির্বাচন৷ সেই প্রেক্ষিতে তিস্তার পানি নিয়ে এই বৈঠকে নতুন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায়, হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পানি ও নদী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ইমামুল হক৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তিই তিস্তার পানি আটকে দিয়েছে৷ তবে এটা আদতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়৷ কারণ বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি নিয়ে কাজ করছে, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে নয়৷ তা সত্ত্বেও অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকার মমতাকে বাগে আনতে পারেনি৷ আর ভবিষ্যতের সরকার যে পারবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ তাই তাঁর কথায়, ‘‘তিস্তার পানি নিয়ে বাংলাদেশেরও কূটনৈতিক ব্যর্থতা আছে৷ আমরা কি চাই, কেন চাই, কোন যুক্তিতে চাই – তা তুলে ধরার মতো দক্ষ লোক সরকারে আছে কিনা, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷''
ইমামুল হক বলেন, তিস্তার জলবণ্টন ইস্যুটি হয়ত থেকে যাবে৷ ভবিষ্যতেও এ নিয়ে বিস্তর রাজনীতি এবং কূটনীতি হবে৷ কিন্তু পানি পেতে হলে বাংলাদেশকে শক্ত অবস্থানে যেতে হবে৷