1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিথ্যা মামলার ফাঁদ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মিথ্যা মামলা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার এক বড় হাতিয়ার৷ যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে তারা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী বা মতাদর্শের লোকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে থাকেন৷

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি: Getty Images/Afp/Munir uz ZAMAN

এই মিথ্যা মামলার ফাঁদে পড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি থেকে দিনমজুর পর্যন্ত৷ ১৭৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে রাষ্ট্রপতি হন খন্দকার মোশতাক৷ জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই সেই খন্দকার মোশতাককে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি থাকার সময় কাপ-পিরিচ চুরির মামলায় গ্রেফতার করেন এবং ট্রাইব্যুনাল করে তার বিচার সম্পন্ন করেন৷ ট্রাইব্যুনাল মোশতাককে তিন বছরের জেল এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করে৷ হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্ট করে ১৯৭৯ সালে খন্দকার মোশতাক মামলা থেকে অব্যাহতি পান৷

karjon - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

গত বিএনপি সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধেও প্লেট চুরির মামলা হয়েছিল৷ সেই সময় তাকে রিমান্ডে নিয়ে চরম নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷ এছাড়া বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান জামাল উদ্দিনকে ঘড়ি চুরির মামলায় নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের বিচার ব্যবস্থায় তো মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না৷ কারণ ক্ষতিগ্রস্তরা অনেক সময় বিচার চাইতে যাচ্ছেন না৷ বিশেষ করে গ্রামের মানুষ তো এখনও সালিশে সমাধান খুঁজছেন৷

যারা যাচ্ছেন তাদের বিচার পেতে ১০ থেকে ১৫ বছর লেগে যাচ্ছে৷ আর এটা একটা বড় খরচের ব্যাপারও৷ যাদের এই খরচ করার সামর্থ্য আছে তারাও দীর্ঘ সময়ের কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন৷ ফলে বিচার ব্যবস্থার একটা পরিবর্তন হওয়া দরকার৷ এই পরিবর্তনটা হয়ে গেলে মিথ্যা মামলাসহ সব ধরনের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷''

Abu - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও অনেক মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে৷ সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা হয়েছে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, লুটতরাজসহ নানা অভিযোগে৷ ছিনতাইয়ের বিষয়গুলো তো একেবারেই হাস্যকর৷ তার বিরুদ্ধে ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনতাই, স্বর্ণের নেকলেস, মোবাইল সেট, স্বর্ণের চেইন, সিকোফাইভ ঘড়ি, মোটরসাইকেল, নগদ টাকা, ২১ ইঞ্চি টেলিভিশন, আংটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিন পেয়েছেন৷ কিন্তু এখনও মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হয়নি৷

ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের আইনে কিন্তু মিথ্যা মামলা করার শাস্তির ব্যবস্থা আছে৷ অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যারা মিথ্যা মামলার শিকার হন তারা প্রতিকার চাইতে আসেন না৷ আর কি পরিমাণ মিথ্যা মামলা হচ্ছে সেটার পরিসংখ্যান নেই৷ কারণ নানা কারণেই অনেক মামলা প্রমাণ করা যায় না৷ যেগুলো প্রমাণ করা যায় না, তার সবগুলোই যে মিথ্যা মামলা সেটা বলা যাবে না৷ এক্ষেত্রে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা এগিয়ে এলে এই ধরনের মিথ্যা মামলার প্রবণতা কমবে৷''

Masudur rahman - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কেউ মামলা করলে পুলিশ যাচাই-বাছাই করেই আদালতে চার্জশিট দেয়৷ আর কেউ মিথ্যা মামলা করলে পুলিশ ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেই আদালতে প্রতিবেদন উপস্থান করে৷''

সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণের প্রধান হাতিয়ার এই মিথ্যা মামলা৷ যেমন সাংবাদিক নাজমুল হুদা৷  তার বিরুদ্ধে ‘প্যান্ট চুরি'র মতো হাস্যকর মামলা করা হয়েছিল৷ তিনি একুশে টেলিভিশন ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন৷ তার বিরুদ্ধে প্রথমে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা করে পুলিশ৷

সেই মামলাটি যখন প্রমাণ করতে পারেনি তখন তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা দেয়৷ পাশাপাশি একটি প্যান্ট চুরির মামলা করে পুলিশ৷ আইসিটি অ্যাক্টের মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি৷ এই ফাঁদে পড়ে দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন একুশে টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদা৷

Najmul huda - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

নাজমুলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার মধ্যে দু'টি বিশেষ আইনে এবং তিনটি পোশাক কারখানায় চুরি, হামলা, শ্লীলতাহানি ও ভাঙচুরের৷ এই মামলাগুলোর একটিতেও এজাহারে নাজমুলের নাম নেই৷ সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস তার মুক্তি চেয়ে বিবৃতিও দিয়েছিল৷

সাংবাদিক নাজমুল হুদা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘তাকে গ্রেফতারের দিন সকালে পুলিশ ফোন করে দেখা করতে বলে৷ সাংবাদিক সম্মেলনের মিথ্যা তথ্যও দেয়৷ এক পর্যায়ে আশুলিয়া এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যায়৷ সেখানে পুলিশের বিরুদ্ধে লেখার জন্য আমাকে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷ অনেক আকুতি-মিনতির পর থানায় সোপর্দ করা হয় আমাকে৷ এরপর রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালায় পুলিশ৷'' তার বিরুদ্ধে চুরির মামলা দেয়ায় আক্ষেপ করে এই সাংবাদিক বলেন, ‘‘এই চুরির মামলা শুধু আমাকে নয়, পুরো সাংবাদিক সমাজকে কলঙ্কিত করেছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ