হিংসার গুজবে রবিবার দিনভর ত্রস্ত থাকল দিল্লি। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলল গুজব। সাম্প্রতিক হিংসার পর দিল্লির এই চেহারা একেবারেই অচেনা।
বিজ্ঞাপন
রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই দিল্লি পুরো গুজব-নগরী। সংঘর্ষের গুজব, হাঙ্গামার গুজব, হিংসার গুজব। সামাজিক মাধ্যেমের কল্যাণে সেই গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। সেই গুজবের এমনই তেজ যে, তা অনায়াসে গ্রাস করে ফেলল পুরো দিল্লিকে। সন্ধ্যা থেকে রাত। গুজবও বাড়তে থাকল। পুরো দিল্লিতে তখন আতঙ্ক। এই বুঝি প্রতিবেশী এলাকায় দাঙ্গা শুরু হল! তা এ বার ছড়িয়ে পড়বে নিজের এলাকায়। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ সহকর্মীর ফোন এল, ''বদরপুরে কিছু হয়েছে কি? খোঁজ নাও।'' কেন? সহকর্মীর জবাব, ''অটো করে আসছিলাম, অটো চালকের বাড়ি থেকে ফোন এল। বদরপুরে গণ্ডগোল হচ্ছে। রাতে বাড়ি আসার দরকার নেই।'' ফোন শুরু হল। পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা, পরিচিত জনদের কছে। কিন্তু সব জায়গা থেকে একই জবাব, ''শুধুই গুজব। কোনও ঘটনা ঘটেনি।'' ভুল বললাম, একটাই ঘটনা ঘটেছে, আতঙ্ক ছড়িয়ে গিয়েছে সর্বত্র।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। চিত্তরঞ্জন পার্কে একের পর এক পুলিশের গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে ছুটছে। গাড়িগুলি যাচ্ছে কালকাজি ও গোবিন্দপুরীর দিকে। ইতিমধ্যে খবর এসেছে, বেশ কিছু মেট্রো রেলের স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে সেই খবর দ্রুত ছড়াল। কী হল? পুলিশ সূত্র জানাল, দিল্লি জুড়ে পুলিশ বাহিনী টহল দিচ্ছে। গুজবে কান না দেওয়ার জন্য মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে। লোককে ভরসা দেওয়ার জন্য পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ মহল্লার পর মহল্লা। চিত্তরঞ্জন পার্কের লাগোয়া এলাকা ডবল স্টোরিতে গুজব শুনে লাঠি হাতে লোকে রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন। পুলিশ গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সরিয়ে দিয়ে বলে, ''কোথাও কিছু হয়নি। বাড়ি যান। আমরা রাস্তায় আছি।''
যুদ্ধক্ষেত্রের নাম উত্তর পূর্ব দিল্লি
ভয়াবহ বললে কম বলা হয়। উত্তর পূর্ব দিল্লির হিংসা বিধ্বস্ত এলাকায় এখনও ধোঁয়া। পোড়া গন্ধ। ছাইয়ের স্তূপ। নিহত বেড়ে ৪২।
ছবি: DW/S. Ghosh
হিংসার স্তূপ
চার দিন ধরে ধ্বংসলীলা চলেছে উত্তর পূর্ব দিল্লির এই এলাকায়। অনেক বাড়ি র আস্ত নেই। ছাই হয়ে গিয়েছে সব কিছু।
ছবি: DW/S. Ghosh
এটাই ঘর
কয়েক দিন আগেও এটাই ছিল এক দম্পতির সুখের সংসার। হিংসার পর তাঁরা পালিয়ে বেঁচেছেন। বাড়ির ভিতরের চিত্র এখন এটাই।
ছবি: DW/S. Ghosh
মাঝ রাতে হানা
মধ্য রাতে আক্রমণ হয়েছিল এই বাড়িতে। সব কিছু ভএঙে তছনছ করে দেওয়ার পরে এ ভাবেই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখনও উড়ছে ধোঁয়া।
ছবি: DW/S. Ghosh
পাথরের রাস্তা
রাস্তা জুড়ে এ ভাবেই পড়ে আছে পাথর। এখনও সময় সময় চলছে পাথর বৃষ্টি। পরিষ্কার করার সাহসও কেউ দেখাচ্ছেন না।
ছবি: DW/S. Ghosh
গাড়ির শো রুম
এক বহুজাতিক সংস্থার গাড়ির শো রুম এটি। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিটি গাড়ি।
এখানে ছিল চায়ের দোকান। আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছে সব। চার দিন পরে নিজের দোকানের সামনে আসার সাহস পেয়েছেন এই মহিলা। পাশেই ছিল তাঁর ঘর। তারও আর কোনও অস্তিত্ব নেই।
ছবি: DW/S. Ghosh
রাস্তার ধারের দৃশ্য
রাস্তা জুড়ে এ ভাবেই পড়ে আছে পোড়া বাইক, স্কুটার, রিকশ। বাতাসে পোড়া মোবিলের গন্ধ।
ছবি: DW/S. Ghosh
বিধ্বস্ত টায়ার কারখানা
পেট্রোল পাম্পের পাশে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল টায়ার কারখানা। আপাতত এলাকার দখল নিয়েছে পুলিশ। ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না কাউকে।
ছবি: DW/S. Ghosh
গাড়ির কঙ্কাল
টায়ার কারখানার পাশে এ ভাবেই পড়ে আছে পোড়া গাড়ি, বেকারির ভ্যান।
ছবি: DW/S. Ghosh
এটাই রান্নাঘর
রান্না বসিয়ে ছিলেন এই বাড়ির গৃহকত্রী। তখনই হামলা হয়। সব ছেড়ে পালিয়ে যান সকলে। গোটা রান্না ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এ ভাবেই।
ছবি: DW/S. Ghosh
শুনশান বাড়ি
দাঙ্গাবাজরা আসার পরে এই অবস্থাতেই ঘর ছেড়ে পালিয়েছিলেন বাড়ির মালিক। আক্রমণকারীরা ভিতরে ঢুকে শেল ফাটিয়েছিল। তাতেই পুড়ে গিয়েছে সব কিছু।
ছবি: DW/S. Ghosh
আশ্রয় শিবির
আশ্রয়হীন মানুষদের এ ভাবেই ছোট ছোট দলে রেখেছেন এলাকার মানুষ। হিন্দু মুসলিম সকলে একসঙ্গেই বাস করছেন সেখানে।
ছবি: DW/S. Ghosh
পুলিশের তৎপরতা
হিংসার তিন দিন পর তৎপর হয়েছে পুলিশ। কোনও কোনও এলাকায় এ ভাবেই পাহারা দেওয়া হচ্ছে বাড়ি।
ছবি: DW/S. Ghosh
সাফাই পর্ব
হিংসার আঁচ অনেকটাই কমেছে যেখানে, সেখানে শুরু হয়েছে সাফাইয়ের কাজ। সাফাই গাইছেন রাজনীতির নেতারাও। শুক্রবার বিজেপি দাবি করেছে, হিংসায় উস্কানি দিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। বিরোধীরাও এর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। তাঁদের নিশানায় বিজেপির কোনও কোনও নেতার ঘৃণার রাজনীতির।
ছবি: DW/S. Ghosh
পুলিশি টহলদারি
রাস্তায় নেমেছে পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনী। দিনভর উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় চলছে টহলদারি। তার জেরে হিংসা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
ছবি: DW/S. Ghosh
16 ছবি1 | 16
রাত আটটা। সহকর্মী সম্যন্তক ঘোষ থাকেন সাকেতে। তাঁর বাড়িতে যিনি কাজ করেন, তিনি থাকেন সৈনিক কলোনিতে। বারবার সেই মহিলা ফোন করছেন, ''শুনছি, খানপুরায় হিংসা হচ্ছে। আমরা বাড়ির দরজা, জানালা বন্ধ করে বসে আছি।'' ফোনের মধ্যেই বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তিনি। আর অনুরোধ করছেন, ''আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান।'' রাত দুটো পর্যন্ত ফোন করে গিয়েছেন তিনি। আরেক সহকর্মী থাকেন দ্বারকাতে। তাঁর এক আত্মীয় গিয়েছিলেন সেলুনে চুল কাটাতে। এমন সময় সেখানে কিছু লোক এসে খবর দেয়, দাঙ্গাকারিরা সদলবলে আসছে। মুহূর্তে বাজার বন্ধ করে যে যে দিকে পারেন পালালেন। দেখা গেল, সবই ভুয়ো আতঙ্ক। আরেক সহকর্মী জাভেদ আখতারের অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ। দক্ষিণ দিল্লিতে খাদাড় বলে একটি জায়গা আছে। গরিব এলাকা। শীলা দীক্ষিতের সময়, দিল্লির অনেক বস্তির লোকেদের সেখানে জমি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে একজন চোর ধরা পড়ার খবর আসে। স্থানীয় লোক তাকে ধরে পেটাতে শুরু করে। অমানবিক কাজ, কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এই ঘটনা ভারতে হামেশাই ঘটে। সেই পিটুনি ঘিরেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পৌঁছে যায় শাহিনবাগে। তবে উত্তেজনা ছড়ানোর আগেই পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাটালা হাউসের জাকির নগরের অবস্থা আরও খারাপ। রবিবার সেখানে বাজার বসে। গুজবের চোটে মুহূর্তে বাজার ফাঁকা। সেই দোড়াদৌড়ির ফলে একজন নালায় পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। পরে তিনি মারা গিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যম 'আজ তক' জানাচ্ছে।
দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
ভারতের দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কমপক্ষে ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ এই ঘটনায় অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন৷
ছবি: DW/S. Ghosh
বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি
বাংলাদেশের ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিক ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়েছেন৷ তাঁরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ভারত সরকার ও নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ ভারত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে প্রতিবেশী দেশগুলোতে শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হতে পারে বলেও বিবৃতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা৷
ছবি: DW/S. Ghosh
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জাভেদ জারিফ সোমবার এক টুইটে লিখেছেন, ‘‘ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ সহিংসতার সমালোচনা করছে ইরান৷ গত কয়েক শতাব্দী ধরে ইরান ভারতের বন্ধু৷ সব ভারতীয়র মঙ্গল নিশ্চিত করতে এবং অর্থহীন গুন্ডামি চলতে না দিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা৷’’ এদিকে, জারিফের প্রতিক্রিয়ার প্রতিবাদ জানাতে ভারত মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
ডনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়েছিলেন৷ সেই সময় দিল্লিতে দাঙ্গা শুরু হয়৷ তবে এই বিষয় নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ অবশ্য সহিংসতার বিষয়টি তিনি শুনেছেন বলে স্বীকার করেছেন৷
ছবি: Reuters/A. Drago
মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
ডেমোক্র্যাট দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে আগ্রহী দুই প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স ও এলিজাবেথ ওয়ারেন টুইটারে প্রকাশিত বিবৃতিতে ভারতে সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ ‘‘২০ কোটির বেশি মুসলমান ভারতকে নিজেদের দেশ মনে করেন,’’ বলেন স্যান্ডার্স৷ জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘‘এটা ভারতের ব্যাপার৷ মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা নেতৃত্বের ব্যর্থতা এটা৷’’
ছবি: picture-alliance/newscom/E. M. PioRoda
ইমরান খান
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ‘‘ভারতে ২০ কোটি মুসলমানকে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে৷ বিশ্ব সম্প্রদায়কে এখন অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে৷’’
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এলিয়ট অ্যাঙ্গেল বলেছেন, ‘‘গত কয়েকদিন ধরে ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রাণহানির খবরে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন৷’’
ছবি: Getty Images/S. Corum
ওআইসি
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ‘অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন’ ওআইসি ‘ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে চলমান ভয়াবহ হামলা এবং মসজিদ ও মুসলমানদের সম্পত্তিতে আগুন দেয়া ও ভাঙচুরের’ সমালোচনা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে বলেন, ‘‘বর্তমানে ভারত এমন এক দেশে পরিণত হয়েছে যেখানে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চলছে৷ কাদের হত্যা করা হচ্ছে? মুসলমানদের৷ কারা করছে? হিন্দুরা৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান
‘অফিস অফ দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস’ ওএইচসিএইচআর কমিশনার মিশেল বাচেলেট ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হামলার সময় পুলিশের নীরব ভূমিকার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Agencio Uno/S. B. Gaete
ইউএসসিআইএফআর
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস কমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল রেলিজিয়াস ফ্রিডম’ ইউএসসিআইএফআর এক টুইটে দিল্লিতে মুসলমানদের উপর হামলার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে মোদী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
ছবি: DW/S. Ghosh
রাশিদা তালিব
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য রাশিদা তালিব ভারতে ট্রাম্পের সফরের সময় টুইটে বলেছিলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হওয়া উচিত মুসলমানদের লক্ষ্য করে চলা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা৷ ‘‘মুসলমানবিরোধী সহিংসতা চলার সময় আমরা বসে থাকতে পারি না,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Sancya
ভারতের সমালোচনা
দাঙ্গা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এক বিবৃতিতে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনাকে ‘বিভ্রান্তিকর ও অসত্য’ বলে আখ্যায়িত করেছে৷ একই সঙ্গে ভারতের এমন ‘স্পর্শকাতর সময়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য’ না করারও আহ্বান জানানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Hussain
12 ছবি1 | 12
উত্তর পূর্ব দিল্লিতে দিন পাঁচেক ধরে যে ভয়াবহ হিংসা হয়েছে তার ছবি সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে সকলে দেখে ফেলেছেন। সেই আতঙ্ক এখনও গ্রাস করে রেখেছ দিল্লিবাসীকে। আতঙ্ক থেকেই ছড়াচ্ছে উত্তেজনা। ফলে গুজব আসতেই লোকে তা বিশ্বাস করে ভয়ে কাঁপছেন। তার ওপর লোকে এটাও জেনেছেন, কলকাতায় অমিত শাহের সভায় যাওয়ার পথে বিজেপি সমর্থকরা আবার স্লোগান দিয়েছে, 'দেশ কা গদ্দারো কো, গোলি মারো শালো কো।' লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ''এটা কী হচ্ছে? পুরো হিন্দুস্তান তোমাদের শালা নয়। তোমরা কোন জামাইবাবু এসেছ? পুরো হিন্দুস্তানকে গুলি মারার কথা বলছ? হিন্দুস্তান গুলির জবাবে ভোট দেবে। এখানে রাম ও রহিম সকলের বাঁচার অধিকার আছে।''
রাত দশটা। এমনিতে খুবই শান্ত এলাকা চিত্তরঞ্জন পার্ক পুলিশে পুলিশে ছয়ালাপ। মোটর সাইকেল দেখলেই তল্লাশি হচ্ছে। রেড লাইটে গাড়ি আটকে পড়লেও পুলিশ বলছে, ''চলে যান। দাঁড়াবেন না।'' প্রশ্ন করে জানা গেল, সব শান্ত। কিন্তু গুজব এমনই প্রবল যে, লোকে ভয়ে আছেন। আর এই ফুলকি থেকে শুরু হয়ে যেতে পারে গণ্ডগোল। তবে এ দিন পুলিশের ভূমিকা ছিল খুবই সক্রিয়া।
সোমবার সকাল। দিল্লি আবার স্বাভাবিক। আপাত শান্ত। তবে অশান্ত সংসদ। দিল্লির হিংসা নিয়ে বিরোধীদের হই হল্লায় লোকসভা ও রাজ্যসভা তিন ঘণ্টার জন্য মুলতুবি হল। রাহুল গান্ধী সহ কংগ্রেসের সাংসদরা সংসদ ভবন চত্বরে অমিত শাহের ইস্তফার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলেন। তৃণমূলের সাংসদরা চোখে কালো ফেট্টি বেঁধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলেন। অভিযোগ, ''সরকার অন্ধ। হিংসা থামাতে ব্যর্থ। তাই এই প্রতিবাদ।''