ছোট্ট একটি বিজ্ঞাপন৷ হিজাবে চুল ঢাকা এক নারী ম্যাগাজিন দেখতে দেখতে আপন মনে হাসছেন৷ একটু পর দেখা গেলো পরম মমতায় মাথায় শ্যাম্পু ঘষছেন তিনি, তবে তা হিজাবের উপর দিয়েই!
বিজ্ঞাপন
ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এই বিজ্ঞাপন৷ অনেকেই মালয়েশিয়ায় ধর্মীয় গোঁড়ামির এক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওটিকে৷ তবে বিজ্ঞাপনটি নিয়ে বিভ্রান্তিও আছে৷
আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে, নেহাত নির্বোধের কাজ এটি৷ হিজাবের উপর দিয়ে শ্যাম্পু ঘষলে কি মাথার চুল পরিষ্কার হবে? এমনটা ভাবাও তো বোকার মতো কাজ৷ তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন বিজ্ঞাপনের সমালোচনা খুব স্বাভাবিক৷ কিন্তু বিজ্ঞাপনটি যদি অন্য কিছুর হয়ে থাকে?
মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম বলছে, বিজ্ঞাপনটি নাকি আদতে কোনো শ্যাম্পুর নয়৷ বরং হিজাবের৷ আর এটা নাকি একটা প্যারোডি বিজ্ঞাপন৷ দু'দিন আগে ভিডিওটি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর সে দেশের একাধিক সংবাদপত্র এই নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ আর সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেছে, এমন বিজ্ঞাপন দেখে মালয়েশিয়া সম্পর্কে ভুল ধারণা না নিতে, কেননা, বিজ্ঞাপনটা আসলে ভুয়া!
এআই/এসিবি
মেয়েদের মাথা ঢাকা
খ্রিষ্টধর্ম, ইহুদি বা ইসলাম ধর্ম, সব ধর্মেই নারীদের মাথা ঢাকার প্রথা আছে – কোথাও বেশি, কোথাও কম৷ কিন্তু এই সব প্রথার মধ্যে সাদৃশ্যটা কোথায়? মাথা ঢাকার ব্যাপারে মহিলারাই বা কী ভাবেন?
ছবি: Jüdisches Museum Berlin/Yves Sucksdorff
হিজাব
যে সব মুসলিম মহিলারা মাথা ঢাকেন, তাঁরা সবাই যে শুধু ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন, এমন নয় – বলে ভিয়েনা নিবাসী তুর্কি শিল্পী নিলবর গ্যুরেজ-এর অভিমত৷ তাঁর একটি ভিডিও পার্ফর্মেন্সের নাম ‘সোয়ুনমা/আনড্রেসিং’ (২০০৬) – যার চারটি ছবি এখানে দেখতে পাচ্ছেন৷ ভিডিওতে শিল্পী একটির পর একটি ‘পর্দা’ সরাচ্ছেন ও সেই সঙ্গে তাঁর পরিবারের মহিলাদের নাম করছেন৷
ছবি: Nilbar Güres
পরচুলা
‘কভার্ড’ (আবৃত) শীর্ষক এই আত্মপ্রতিকৃতিতে আনা শ্টেনশ্লেগার দু’টি পরচুলা পরে রয়েছেন৷ ছবিটি তোলা হয় ২০০৯ সালে৷ আনা নিজে ধর্মনিষ্ঠ ইহুদি৷ সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত ইহুদি মহিলারা তাঁদের চুল ঢাকতেন একটি ‘টিকেল’ বা মাথা ঢাকার কাপড় দিয়ে৷ পরচুলাও তো মাথা ঢাকে – এই হলো আনার আত্মপ্রতিকৃতির বক্তব্য৷
ছবি: Anna Shteynshleyger
ধর্ম এক, কিন্তু মাথা ঢাকার পন্থা নানা
হিজাব, নিকাব, আল-আমিরা, শায়লা, এশার্প – মুসলিম মহিলাদের মাথা বা চুল ঢাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিধান আছে৷ দেশ হিসেবেও ‘পর্দা’ আলাদা হতে পারে, যেমন ইরানের মহিলাদের ‘চাদর’ বা ইন্দোনেশিয়ার মহিলাদের ‘কেরুডুং’ ও ‘টুডুং’৷ ছবিতে যে প্রদর্শনীটি দেখা যাচ্ছে, সেখানে এই বৈচিত্র্যই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: Jüdisches Museum Berlin/Yves Sucksdorff
গির্জায় মাথা ঢাকা
বার্লিনের একটি রুশ সনাতনপন্থি গির্জার এই দৃশ্যটি তুলেছেন আলোকচিত্রী মারিয়া মিহাইলোভা৷ ‘মাস’ বা প্রার্থনাসভার জন্য চুল ঢাকার প্রথা খ্রিষ্টধর্মের অপেক্ষাকৃত ছোট সম্প্রদায়গুলির মধ্যে আজও বজায় থাকলেও, ক্যাথলিক বা প্রটেস্টান্ট গির্জাগুলিতে তা আর প্রায় দেখা যায় না৷
ছবি: Marija Mihailova
চুল দিয়ে লজ্জা ঢাকা?
আরব দেশগুলিতে লম্বা কালো চুল নারীর সৌন্দর্যের একটি অপরিহার্য উপাদান বলে গণ্য হয়৷ ইরানি শিল্পী মন্দানা মোঘাদ্দাম তাঁর ‘প্রথম চেলগিস’ শীর্ষক ২০০২ সালের ‘মূর্তি’-টিকে শুধুমাত্র চুল দিয়ে সাজিয়েছেন – কিন্তু এমনভাবে যে, মেয়েটিকে দেখবার উপায় নেই৷ এর পিছনে রয়েছে এক অপহৃত কিশোরী সম্পর্কে একটি ইরানি রূপকথা: রূপকথার কিশোরীর নাকি ৪০টি বিনুনি ছিল৷
ছবি: Mandana Moghaddam
শুধু স্বামীর জন্য চুল?
ইদিশ ভাষায় ‘টিকেল’ হলো ধর্মনিষ্ঠ ইহুদি মহিলাদের মস্তকের পরিধান৷ ২০০১ সালে তোলা এই আলোকচিত্রে লিওরা লাওর জেরুসালেমের উগ্র সনাতনপন্থি মেয়া শেয়ারিম এলাকার মহিলাদের দেখিয়েছেন৷ প্রথা অনুযায়ী বিবাহের পর শুধুমাত্র মহিলার স্বামীই তাঁর চুল দেখতে পাবেন৷ কাজেই বিয়ের পর মহিলারা কাপড়, নানা ধরনের টুপি বা পরচুলা দিয়ে মাথা ঢাকেন৷
ছবি: Leora Laor
মাথা ঢাকা, চুল ঢাকা?
নিউ ইয়র্কের কোনি আইল্যান্ডের সৈকতের একটি দৃশ্য৷ ছবিটি তোলেন ফেডেরিকা ভালাব্রেগা, ২০১১ সালে৷ ছবিতে যে ইহুদি মহিলাদের দেখা যাচ্ছে, তারা সবাই মাথা ঢেকে রেখেছেন, যদিও তার তলা থেকে মাথার চুল বেরিয়ে রয়েছে৷ এভাবেই মাথা ঢাকার প্রথার নানান ব্যাখ্যা ও নানা সংস্করণ চালু আছে...৷
ছবি: Federica Valabrega
‘বুর্কিনি’
বোরকা আর বিকিনি, এই দু’টি শব্দ মিলিয়ে যে বস্তুটির সৃষ্টি, তা যে বিতর্ক সৃষ্টি করবে, তা তো জানাই৷ মুসলিম মহিলাদের সমুদ্রস্নানের জন্য সৃষ্ট এই পরিধেয়টি আবার পশ্চিমের অনেক নারীবাদীর কাছে অগ্রহণযোগ্য৷