নতুন আন্দোলন শুরু করেছেন ইরানের মহিলারা৷ লাঠির মাথায় হিজাব বেঁধে পতাকার মতো ওড়াচ্ছেন তাঁরা৷ নারী স্বাধীনতার দাবিতেই এই আন্দোলন৷ পুলিশ সম্প্রতি এমন ২৯ জনকে গ্রেফতার করেছে৷
বিজ্ঞাপন
ইরান সরকারের অন্যতম ভাবনার বিষয় এখন ‘হ্যাশট্যাগ হোয়াইটওয়েডনেসডেজ’৷ সম্প্রতি যে হ্যাশট্যাগের জন্য ২৯জন মহিলাকে গ্রেফতার করেছে ইরান প্রশাসন৷ অভিযোগ, লাঠির মাথায় নিজেদের হিজাব বেঁধে তাঁরা ভিডিও শ্যুট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ১৯৭৯ সাল পরবর্তী ইরানে ইসলামিক আইনের শাসন৷ সেখানে মহিলাদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক৷ আইনে স্পষ্ট বলা আছে, মেয়েদের মাথা এমনভাবে ঢাকতে হবে যাতে চুল দেখা না যায়৷ আর পরতে হবে ঢোলা বোরকা, যা পা পর্যন্ত ঢেকে রাখবে৷ এর বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিবাদ করছেন ইরানের মহিলারা৷ সেই প্রতিবাদের সূত্রেই হিজাব উড়িয়েছিলেন ২৯ জন মহিলা৷ পুলিশও তাঁদের গ্রেফতার করে৷
ঘটনার সূত্রপাত গত বছর৷ ইরানের বিখ্যাত সাংবাদিক মিসাহ আলিনেজাদ প্রথম ‘হ্যাশট্যাগ হোয়াইটওয়েডনেসডেজ’ আন্দোলন চালু করেন৷ নিজের হিজাব খুলে লাঠির গোড়ায় বেঁধে সেটি উড়িয়েছিলেন তিনি৷ গোটা ঘটনার ভিডিও করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি৷ কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ এখনো তিনি জেলে৷ কিন্তু মিসাহ-র সেই আন্দোলন ভাইরালের মতো ছড়িয়ে পড়ে ইরান জুড়ে৷ বহু মহিলা এরপর একই কাজ করতে থাকেন এবং গ্রেফতার হন৷ এমনটি সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে কয়েকদিন আগে৷ ২৯জন মহিলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷
এত কাণ্ডের পরও ইরান সরকার এখনো পর্যন্ত মহিলাদের এই আন্দোলন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি৷ কেবল ইরানের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, মানুষের ভালোর জন্যই আইন৷ মানুষের যা পছন্দ নয়, ইরান সরকার সেই আইন বলবৎ করতে চায় না৷ কিন্তু হিজাব প্রসঙ্গে কোনো কথাই তিনি বলেননি৷ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এভাবে মহিলাদের গ্রেফতার করলে হিজাব বিদ্রোহ আরো বড় আকার ধারণ করবে৷ তাঁরা মনে করেন, সরকারের উচিত এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা৷
এসজি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
২০১৬ সালের আগস্টের এই ছবিঘরটি দেখুন...
পোশাক নিয়ে ইরানি মহিলাদের চোর-পুলিশ খেলা
ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানের মহিলাদের পোশাক-আশাকের ব্যাপারে কড়া বিধিনিয়ম মেনে চলতে হয়৷ তবে প্রতিরোধ দানা বাঁধছে, তরুণীরা ক্রমেই আরো বেশি করে রঙিন সাজপোশাকের দিকে ঝুঁকছেন৷
ছবি: IRNA
মাথার চুল দেখানো চলবে না
১৯৭৯ সালের পর থেকে ইরানের শাসকবর্গ মহিলাদের ‘শালীন’ পোশাক-আশাক পরিধানের নির্দেশ দিয়েছেন৷ এই ‘ড্রেস কোড’ অনুযায়ী মহিলাদের মাথার চুল পুরোপুরি ঢাকা থাকতে হবে; লম্বা ঢোলা পাতলুন আর ওভারকোট পড়তে হবে; সেগুলো যতদূর সম্ভব কালো বা ছাই রঙের হলেই ভালো৷
ছবি: Isna
নীরব প্রতিরোধ
প্রায় চার দশকের নিপীড়ন সত্ত্বেও মহিলাদের সাহস অটুট৷ বহু ইরানি মহিলা কড়া ড্রেস কোডের নিজস্ব ব্যাখ্যা করে নিয়েছেন৷ তারা হিজাব আর বোরখা পরেন বটে, তবে নিজেদের মতো করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
সর্বত্র নিয়ন্ত্রণ
রঙচঙে আর খোলামেলা ফ্যাশন কাম্য নয়৷ প্রতিবছর গরমে পথেঘাটে নৈতিকতার প্রহরীদের নজরদারি বাড়ে৷ বিধিনিয়ম মেনে না চললে, পুলিশ পথ আটকায়, শুরু হয় লম্বা তর্ক-বিতর্ক, বাগবিতণ্ডা...
ছবি: ISNA
ফলশ্রুতি
‘মরাল পুলিশ’-কে সন্তোষজনক কারণ না দেখাতে পারলে অর্থদণ্ড, এমনকি কারাদণ্ডও হতে পারে৷ আটক মহিলাদের মুচলেকা দিতে হয় যে, তারা ভবিষ্যতে নিয়ম মেনে চলবেন৷ জেলহাজতে থাকাকালীন মহিলাদের জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে নোংরা কালো ‘চাদর’ পরিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়৷
ছবি: FARS
রঙচঙে, আঁটোসাটো আর ছোট...
অনেক তরুণী শাস্তির ভয়েও সাজ ছাড়তে রাজি নন৷ নৈতিকতার প্রহরীদের দৌরাত্ম্য সত্ত্বেও কমবয়সি মহিলারা ক্রমেই আরো বেশি করে আধুনিক সাজপোশাকের দিকে ঝুঁকছেন৷ বহু মডেল সোশ্যাল মিডিয়ায় এই হালফ্যাশন পরিবেশন করে থাকেন৷
ছবি: Hasan Koleini
নিপীড়ন সত্ত্বেও ফ্যাশন
ইরানি মডেল শবনম মোলাভি এমনকি মার্কিন ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘এফএসএইচএন’-এর প্রচ্ছদও অলঙ্কৃত করেছেন৷ গত মে মাসে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, ‘ইসলাম পরিপন্থি সংস্কৃতি’ প্রচারের দায়ে৷ কয়েকদিন পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান৷
ছবি: fshnmagazine.com
রোহানির আমলেও বোরখা বাধ্যতামূলক
তবে ফ্যাশন সচেতনতাকে অত সহজে নিষিদ্ধ করা যায় না৷ নৈতিকতার প্রহরীদের যাবতীয় উৎপাত ইরানি মহিলাদের ফ্যাশনেবল জামাকাপড় পরার শখ রোধ করতে পারেনি৷
ছবি: Isna
নিষ্ফল প্রতিশ্রুতি
প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি ২০১২ সালের নির্বাচনি প্রচার অভিযানে ‘খোলা রাস্তায় হয়রানি’ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্তু যে বিশটির বেশি সংস্থা মহিলাদের পোশাক-আশাকের উপর নজর রাখার দায়িত্বে, তাদের একটি বড় অংশ রোহানির নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত৷
ছবি: FARS
নৈতিক গোয়েন্দা পুলিশ
২০১৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে সরকার নিজেই আরো প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ তেহরানের পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন যে, মোট সাত হাজার পুরুষ ও মহিলা সাদাপোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ হিসেবে মহিলাদের সাজপোশাক ও আচার-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছেন৷
ছবি: cdn
ইন্টারনেটে সংহতি
গত জুলাই মাসের শেষে ইরানি পুরুষরা #মাইনহিজাব (অর্থাৎ আমার হিজাব) হ্যাশট্যাগ দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অভিযান শুরু করেন৷ তারা ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম নিজেদের হিজাব পরা অবস্থায় ছবি পোস্ট করে ইরানি মহিলাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছেন৷