1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিজাব না পরায় ৯ ছাত্রীর চুল কেটে বহিষ্কৃত শিক্ষক

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

মুন্সিগঞ্জের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব না পরায় ৯ জন ছাত্রীর চুল কেটে দেন এক শিক্ষক৷ অভিযুক্ত শিক্ষক রুনিয়া সরকারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের সৈয়দপুর আব্দুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজ
মুন্সিগঞ্জের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব না পরায় ৯ জন ছাত্রীর চুল কেটে দেন এক শিক্ষকছবি: Arafat Sakib/DW Arafat Sakib

ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে উপজেলা প্রশাসন জানতে পেরেছে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের ইউনিফর্মের সঙ্গে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক।

বুধবার মুন্সিগঞ্জের সিরজদিখান উপজেলার সৈয়দপুর আব্দুর রহমান স্কুল অ্যান্ড কলেজে হিজাব না পরায় ক্লাসেই ৯ শিক্ষার্থীর  চুল কেটে দেয়া হয়। ৯জন শিক্ষার্থীই ৭ম শ্রেণির ছাত্রী।

সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার আমি নিজে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে সরেজমিন তদন্ত করেছি। তদন্ত করে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর বিজ্ঞান শিক্ষক রুনিয়া সরকারকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করেছি। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দেয়ার পর তাকে চাকরিতে রাখা হবে কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন জেলা প্রশাসক।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে বাসায় গিয়ে কথা বলেছি। তাদের চুল ক্লাসেই কাঁচি দিয়ে কেটে দেয়া হয়েছে হিজাব না পরায়। তাদের বকাঝকাও করা হয়েছে।’’

‘‘আর ওই কলেজের মেয়েদের ড্রেস কোডে হিজাব পরার নির্দেশনা আছে। তারা  আমাকে জানিয়েছেন; নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ইউনিফর্মের সঙ্গে তারা হিজাব রেখেছেন,’’ বলেন ইউএনও।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ড্রেস কোডে হিজাব রাখা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক স্কুলেরই তো ড্রেস কোড থাকে। তো ওনাদের এখানে চেক করে দেখলাম ড্রেস কোডে হিজাব আছে। সে যা-ই হোক, হিজাব না পরার কারণে তো আর চুল কেটে দিতে পারে না।’’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. ফরিদ আহমেদ দাবি করেন, ‘‘হিজাব পরার মৌখিক নির্দেশনা আছে। কোনো লিখিত নির্দেশনা নেই। নীতি-নৈতিকতার কারণে আমরা হিজাব পরতে বলি। তবে বাধ্যতামূলক নয়। ২০-২৫ ভাগ পরে না।’’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ড্রেসে হিজাব বাধ্যতামূলক করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সেই কারণেই তো আমরা শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। ছাত্রীরা বা অভিভাবকরা কোনো অভিযোগ করেননি। আমরাই ব্যবস্থা নিয়েছি।’’

তবে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার দুপুরের পর ক্লাসে চুল কেটে দেয়ার পরপরই শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে জানালে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। তিনি তখন ‘সামান্য' ঘটনা বলে উড়িয়ে দেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সাংবাদিকরা জানালে অধ্যক্ষ তৎপর হন।

নাসিমা বেগম নামে একজন অভিভাবক বলেন, ‘‘তাদের পুরো মাথার চুলে যেমন খুশি তেমন কাঁচি চালিয়েছেন ওই শিক্ষক। ফলে তারা এখন ওইভাবে বাইরেও বের হতে পারছে না। আমি বাসায় আমার মেয়ের চুল কেটে সাইজ করে দিয়েছি। চুল কাটার সময় তারা কান্নাকাটি করে ও শিক্ষকের পা ধরেও রেহাই পায়নি। তদের একাধিক হিজাব না থাকায় কেউ কেউ ধুতে দিয়েছিল। কয়েকজন ভুলে হিজাব পরেনি।এসব বলেও কাজ হয়নি। তারা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফেরে।’’

আমরাই ব্যবস্থা নিয়েছি: ফরিদ

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘চুল কাটার সময় তাদের উপহাস করা হয়, হাসাহাসি করা হয়। এতে মেয়েরা লজ্জা পেয়ে আরো কান্নাকাটি করে। অন্য কোনো শিক্ষকও চুল কাটা থামাতে আসেনি। বাসায় আসার পর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে আমি জানিয়েছি।’’

কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গোলাম মাহমুদ বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে সহ-শিক্ষা। কয়েক বছর আগে একটি প্রেমের ঘটনা ঘটে। তখন থেকে আমরা মেয়েদের হিজাব পরতে উৎসাহিত করি। আমরা চাই সবাই হিজাব পরুক, কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। তবে কেউ গয়না পরতে পারবে না। এতে অনেক ঝামেলা হয়।’’

তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম হিসাবে হিজাব বাধ্যতামূলক করা যায় না।’’

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান স্পষ্ট করেই বলেন, ‘‘ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানেজিং কমিটি শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতা শিখাতে ইউনিফর্ম হিসেবে হিজাব বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু হিজাব নিয়ে ওখানে যে বাড়াবাড়ি হয়েছে, তা আমি আর কোথাও দেখিনি।’’

তবে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ড্রেসকোড কেমন হবে তা নিয়ে সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা আছে বলে আমরা জানা নাই।’’

অভিযুক্ত শিক্ষক রুনিয়া সরকারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি প্রথমে ফোন ধরেননি, পরে একসময় ফোন বন্ধই করে দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা মনে করেন, ‘‘এই যে হিজাব পরার জন্য চাপ, এটার মধ্যে পর্দার চেয়ে রাজনীতি কাজ করে বেশি। এটা হলো ইসলামাইজেশনের রাজনীতি। ক্ষমতার রাজনীতি। রাজস্থানের মানুষ ঐতিহাসিকভাবে পর্দা করে। বাঙালি মেয়েরাও পর্দা করে নিজস্ব পদ্ধতিতে। হিজাব দিয়ে ইসলামাইজেশন করা- এটা পলিটিক্যাল মুভমেন্টের অংশ। এটা ওই শিক্ষকের ব্যক্তিগত বিষয় বলে আমি মনে করি না। আপনি খেয়াল করবেন, এখন গ্রামের হাটবাজারে, কৃষকের বাজারে গত ৫-১০ বছরে নারীদের অংশগ্রহণ বিপুলভাবে হ্রাস পেয়েছে। আবার ২০১১ সাল থেকে যাত্রাপালা বন্ধ আছে। এখন ব্যাপক ওয়াজ হয়৷ যাদের এগুলো নিয়ে কথা বলার কথা, তারা বলে না। তারা নানা হিসাব করেন।’’

পর্দার চেয়ে রাজনীতি বেশি: রিজওয়ানা

This browser does not support the audio element.

তার কথা, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্মেহিজাব তো চাপিয়ে দেয়া যায় না। এটা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কথা বলার কথা। কিন্তু তারা তো কথা বলছে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ভর্তি পরীক্ষা চলছে। আমি তো পরীক্ষার্থীদের মুখমণ্ডল স্পষ্টভাবে দেখতে চাই। এখানে আইডেন্টিফিকেশনের ব্যাপার আছে। আমি লিখিভাবে জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো জবাব পাইনি। এটা শুধু এখানে নয়, অন্যান্য জায়গায়ও হচ্ছে।’’

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ বলেন, ‘‘হিজাব পরার নির্দেশনা সরকার দেয়নি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও দেয়নি। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ধর্মীয় পোশাক ইউনিফর্মের অংশ হতে পারে না। কেউ পরতে চাইলে পরতে পারেন। কিন্তু আমি আজকাল এটা নিয়ে অসহিষ্ণুতা দেখি। যারা হিজাব পরে না তাদের অপদস্থও করা হয়। আবার হিজাব পরলেও তারা একই পরিস্থিতির শিকার হন। পোশাকের স্বাধীনতা থাকা উচিত। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে।’’

তার কথা, ‘‘আমাদের সমাজে এই সময়ে ধর্মীয় গোড়ামি আবার বাড়ছে। এটা নানা ফর্মে আমরা দেখতে পাচ্ছি।’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ