জনরোষের মুখে মুসলিম নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য হিজাব বিক্রির পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে ফরাসি স্পোর্টস সামগ্রী বিক্রেতা কোম্পানি ডিকেটল্যুঁ৷
বিজ্ঞাপন
ডিকেটল্যুঁ-র কর্মকর্তা জাভিয়ের রিভোয়া মঙ্গলবার স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, মুসলিম নারী দৌড়বিদদের জন্য হিজাব বিক্রির পরিকল্পনা করছিলেন তারা৷ কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে, বলে জানান তিনি৷
এর আগে কোম্পানিটি জানিয়েছিলেন, হাতে গোনা কয়েকজন বিশেষ ক্রীড়াবিদদের জন্য তারা হিজাব বিক্রি করবে৷
কিন্তু ফ্রান্সে হিজাববিক্রির পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন ফরাসি রাজনীতিবিদ ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আইনে এ বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই৷ কিন্তু এটা নারীদের প্রতি একটা বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, যা আমি সমর্থন করি না৷ তাই আমি চাইবো কোনো ফরাসি ব্র্যান্ড নারীদের হিজাবকে প্রোমোট করবে না৷''
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ'র এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘এটা কোনো অবদমন নয়, এটা সেই পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে, যারা জনসমক্ষে নারীদের উপস্থিতি সহ্য করতে পারে না৷''
হিজাব পরা ফ্যাশন মডেল
উদ্বাস্তু-সন্তান ও মার্কিন নাগরিক হালিমা এডেন ফ্যাশনের জগতে এক পথিকৃৎ৷ নিউ ইয়র্ক, মিলান ও লন্ডনের ফ্যাশন শো-তে প্রথম যে মডেল হিজাব পরে রানওয়েতে নামেন, তিনি হলেন হালিমা৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
মার্কিন জাতীয় পতাকার রঙে হিজাব
ছবিতে লাল-সাদা-নীল রঙের হিজাব পরে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন ১৯ বছরের তরুণী হালিমা এডেন, যিনি ধর্মপ্রাণ মুসলিম৷ হালিমা শুধু হিজাবই পরেন না, তিনি মুসলিম নারীদের মতো শরীর ঢেকে রাখেন৷ তবুও ফ্যাশনের জগতে তাঁর সাফল্য দেখবার মতো...
ছবি: Reuters/B. McDermid
মার্কিন ‘অ্যালিওর’ থেকে আর্বি ‘ভোগ’-এর প্রচ্ছদে
হালিমা সম্প্রতি মার্কিন মহিলা পত্রিকা ‘অ্যালিওর’-কে বলেছেন যে, তিনি ‘‘মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কে ভুল ও বস্তাপচা ধারণা’’ দূর করতে চান৷ ‘অ্যালিওর’ পত্রিকার জুলাই মাসের ইস্যুর প্রচ্ছদে রয়েছেন হালিমা, যেমন তিনি ‘ভোগ’ পত্রিকার আর্বি সংস্করণের আগস্ট মাসের ইস্যুর প্রচ্ছদে ছিলেন৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
হিজাব পরে রানওয়েতে
২০১৭ সালের গোড়া থেকে হালিমা আইএমজি মডেলস সংস্থার মডেল – হাদিদ ভগিনীদ্বয় অথবা জিসেল ব্যুন্ডসেন-এর মতো সুপারমডেলরা যে সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ৷ ছবিতে হালিমাকে মিলানে ম্যাক্স মারা কোম্পানির হয়ে মডেলিং করতে দেখা যাচ্ছে৷ ব়্যাপার কেনি ওয়েস্ট-এর ফ্যাশন লেবেল ‘ইজি’ অথবা আলবের্তো ফেরেত্তি-র হয়েও তিনি রানওয়েতে নেমেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Medina
উদ্বাস্তু থেকে ফ্যাশন মডেল
হালিমার জন্ম কেনিয়ার একটি উদ্বাস্তু শিবিরে৷ ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় আসেন – আজ সেখানেই পড়াশুনা করছেন৷ হালিমা জন্মসূত্রে সোমালি৷ তাঁর পরিবার সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে কেনিয়ায় পলায়ন করেছিল৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
মিস মিনেসোটা হতে গিয়ে...
...২০১৬ সালে বিকিনির বদলে বুর্কিনি পরেন হালিমা৷ মিস মিনেসোটা হলো মিস ইউএসএ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্যায়৷ গোড়ার দিকেই বাদ পড়েন হালিমা, কিন্তু প্রতিযোগিতার আয়োজক আইএমজি মডেলস সংস্থা তাঁকে মডেল হিসেবে চুক্তিবদ্ধ করে৷ মনে করা যেতে পারে, ২০১৫ সাল অবধি মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Imago
দু’পক্ষ থেকেই সমালোচনা
হালিমা যে মডেলিং করছেন, রক্ষণশীল মুসলিমদের সেটা পছন্দ নয়৷ অপরদিকে উদারপন্থি মুসলিমদের কাছে নারীদের পরিধেয়র উপর বাধানিষেধ গ্রহণযোগ্য নয়৷ হালিমা বলেন, সৌন্দর্যই তাঁর সব কথা নয়; এছাড়া হিজাব পরার ফলে তাঁকে ‘‘তুই বড় মোটা হয়ে গেছিস’’, ‘‘তুই বড় রোগা হয়ে গেছিস’’, এ সব কথা শুনতে হয় না৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
6 ছবি1 | 6
২০১৪ সালে স্কুল এবং সরকারি অফিসে ফ্রান্স এমন ধরণের হিজাব নিষিদ্ধ করেছে, যা দিয়ে চুল ঢাকা থাকে, কিন্তু চেহারা দেখা যায়৷ কিন্তু রাস্তায় হিজাব পরিহিত নারীদের অহরহ দেখা যায়৷
তবে স্পোর্টস হিজাব পরিধানের পক্ষে যাঁরা, তাঁরা বলছেন, হিজাব পরতে দিলে মুসলমান নারীরা বিভিন্ন খেলা ও অন্যান্য কাজে অংশ নিতে পারবে এবং এর ফলে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে৷
ডিকেটল্যুঁ-র দৌড়ের পোশাকের ডিজাইন করেন আঞ্জেলিক টিবো৷ তিনি জানান, ‘‘আমি চাই প্রত্যেক শহরের, প্রতিটি দেশের, প্রত্যেকটি এলাকার নারীরা তাদের ইচ্ছা পূরণে এগিয়ে আসুক৷ সেটা তাদের সংস্কৃতির প্রতি সম্মান রেখে যদি তারা করতে চায় এতে বাধা দেয়া উচিত নয়৷''
তিন বছর আগে বুর্কিনি যখন বাণিজ্যিকভাবে প্রচার পায়, তখন ফ্রান্সের কয়েকজন মেয়র পুরো শরীর ঢাকা সাঁতারের পোশাক নিষিদ্ধ করেছিলেন৷
উল্লেখ্য,মার্কিন কোম্পানি নাইকি স্পোর্টস হিজাব বিক্রি করে৷ অনেক প্রখ্যাত মুসলিম অলিম্পিক পদকজয়ী নারী তাঁদের তৈরি হিজাব পরেন৷
এপিবি/জেডএইচ (এএফপি, এপি, ডিপিএ)
মুসলিম মেয়েদের সাঁতার শেখা সহজ করছে জার্মানি
সাঁতার জানা প্রতিটি মানুষের জন্যই জরুরি৷ তাই ধর্ম বিশ্বাসের কারণে সাঁতার শেখা থেকে মুসলিম মেয়েরা যাতে বিরত না থাকে, সেজন্য জার্মানির একটি স্কুলে তাদের ‘বুর্কিনি’ পরে সাঁতার শেখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Rolf Haid
কোনো কারণেই শিশুরা যেন পিছিয়ে না পড়ে
কোনো শিশুর মাতৃভূমি অন্য দেশ কিংবা সে ভিন্ন ধর্মের হলেও সে যেন সাঁতার শেখার সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে মুসলিম মেয়েদের শরীর ঢাকা সাঁতারের পোশাক ‘বুর্কিনি’ পরেই সাঁতার শেখার সুযোগ দেয়া হয়েছে জার্মানির একটি স্কুলে৷ জানান জার্মনির পরিবারমন্ত্রী ফ্রান্সিসকা গিফে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শিশুর মা-বাবাকেই বুঝতে হবে
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, জার্মানিতে শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ শিশুই ঠিকমতো সাঁতার জানে না, যা আসলে বিপজ্জনক৷ মুসলিম মেয়েরা যাতে এ দেশের শিক্ষার নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়, সাঁতারের ক্লাসেও যাতে তারা অংশ নেয়, তা নিশ্চিত করারই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Skolimowska
কিন্তু বাবাদের আপত্তি...
কিন্তু অনেক মুসলিম মেয়ের বাবা কোনোভাবেই মেয়েকে সাঁতার শিখতে দিতে রাজি নন৷ ফলে মুসলিম মেয়েদের সাঁতার শেখানোর উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ শিক্ষকরাই ডয়চে ভেলেকে এ কথা জানিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/ZB
জার্মান মেয়েদের লাইফস্টাইল তাদের অপছন্দ
জার্মানিতে বসবাসরত মুসলিমদের অনেকের কাছে জার্মান মেয়েদের জীবনযাত্রা বা পোশাক-আশাক এখনো গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি৷ এ কারণেও মুসলিম পরিবারের অভিবাবকরা তাঁদের মেয়েদের ব্যাপারে একটু বেশি রক্ষণশীল থেকে যাচ্ছেন বলে অনেকের ধারণা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
যেখানে অনুমতি মিলেছে
জার্মানির নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের হ্যার্নে শহরের একটি স্কুলে মুসলিম মেয়েরা বুর্কিনি পরে সাঁতার শেখার অনুমতি পেয়েছে৷ ভাড়া দেওয়ার জন্য ২০টি বুর্কিনিও রাখা হয়েছে সেখানে৷
ছবি: DW
আর কোনো বাধা নেই...
২০১৩ সালে ফেডারেল সাংবিধানিক আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, বুর্কিনি অনুমোদন পেলে সাঁতার শেখার ক্লাসে মুসলিম মেয়েদের অংশ নেয়াও ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করবে৷ হ্যার্নে শহরের স্কুলটিতে বুর্কিনি পরে সাঁতার শেখার অনুমতি দিয়ে দেয়ায় এবার হয়ত মুসলিম মেয়েদের সাঁতার শেখার পথে কোনো বাধা থাকবে না৷