উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন আবহে হিজাব বিতর্ক আরো উসকে দিলেন যোগী আদিত্যনাথ৷ জানালেন, ভারত শরিয়ত আইনে চলবে না৷
বিজ্ঞাপন
কর্ণাটকের হিজাব বিতর্ক নিয়ে এবার মুখ খুললেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ৷ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ভারতীয় সংবিধান পোশাকের অধিকার দিয়েছে৷ কিন্তু সেই অধিকার সার্বিক নয়৷ স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিফর্ম সকলকেই মানতে হবে৷ সেখানে ধর্মীয় পোশাক মেনে নেওয়া যায় না৷ শুধু তা-ই নয়, যোগীর মন্তব্য, ‘‘নতুন ভারত সংবিধান মেনে চলবে৷ ভারত শরিয়াত আইন মেনে চলবে না৷’’
উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আবহে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন যোগী৷ এর আগে তিনি বলেছিলেন, উত্তরপ্রদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ বিজেপিকে সমর্থন জানাবে, ২০ শতাংশ মানুষ অন্যদিকে থাকবেন৷ হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণের কথা মাথায় রেখেই তিনি একথা বলেছিলেন বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিল৷ কারণ, উত্তরপ্রদেশে হিন্দু-মুসলিম অনুপাত এর কাছাকাছি৷ যোগী অবশ্য সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ধর্মীয় মেরুকরণের জন্য তিনি একথা বলেননি৷
কর্নাটকের স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
হিজাব নিয়ে বিতর্ক ও তুমুল উত্তেজনার মধ্যে কর্নাটক রাজ্যের সব স্কুল তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ তারপরও বিক্ষোভ, প্রতিবাদ চলছে৷দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Rupak De Chowdhuri/REUTERS
‘হিজাব আমাদের অধিকার’
কর্নাটক রাজ্যের বেশ কিছু স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ করার পর থেকে এ নিয়ে বিতর্ক চলছে ভারতে৷ নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলাও হয়েছে আদালতে৷ওপরের ছবিটি দিল্লিতে মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশন আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশের৷ সমাবেশে অংশ নেয়া এক মুসলিম ছাত্রীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘হিজাব আমাদের অধিকার৷’’
ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রতিবাদ
এদিকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সরাসরি জানিয়েছেন তিনি হিজাব নিষিদ্ধের ঘোর বিরোধী৷ কংগ্রেস নেত্রী বলেন, ‘‘একজন নারী কী পোশাক পরবেন, মাথা ঢাকবেন কিনা, সেটা তার নিজস্ব বিষয়। চাইলে তিনি ঘোমটা দেবেন, চাইলে হিজাব পরবেন, কেউ নারীর এই অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।’’
ছবি: Reuters/A. Dave
নারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ
কর্নাটকের স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন ভারতের মুসলিম স্টুডেন্টস ফ্রন্টের নারী শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: MOHSIN JAVED/DW
হায়দ্রাবাদে বিক্ষোভ
কর্নাটকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদ হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন শহরে৷ ওপরের ছবিটি হায়দ্রাবাদের৷
ছবি: AFP
সরব মালালা
শান্তিতে নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফজাই-ও মনে করেন হিজাব পরার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের স্কুলে ঢুকতে না দেওয়া খুব অন্যায়। টুইটারে তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘বেশি কাপড় বা কম কাপড় পরা - যে-কোনো অছিলাতে নারীদের পণ্য বানানোর প্রবণতা চলছেই।" টুইট বার্তায় মালালা ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘‘মুসলিম নারীদের কোণঠাসা করা বন্ধ করুন৷’’
ছবি: Joe Giddens/PA Wire/empics/picture alliance
‘সংবিধান আমাদের মাথার মুকুট, হিজাব আমাদের অধিকার’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করা যে ভারতের সংবিধানও অনুমোদন করে না- সেই বিষয়টির দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন মুসলিম শিক্ষার্থীরা৷ কলকাতার সমাবেশে যোগ দেয়া এক শিক্ষার্থীর হাতের ব্যানারেও তাই লেখা, ‘‘সংবিধান আমাদের মুকুট, হিজাব আমাদের অধিকার৷’’
ছবি: Rupak De Chowdhuri/REUTERS
প্রতিবাদ চলবে...
এক বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘ সরকার শিক্ষার্থীদের অপমান বন্ধ না করা পর্যন্ত আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাবো৷আমাদের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হোক... আমাদের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না৷’’
ছবি: DIBYANGSHU SARKAR/AFP
7 ছবি1 | 7
বাংলাকে তোপ
এদিন পশ্চিমবঙ্গকেও আলাদা করে নিশানা করেছেন যোগী৷ বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে মানুষ এসে উত্তরপ্রদেশে গন্ডগোল ছড়ানোর চেষ্টা করছেন৷ নাম না করলেও তিনি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুলছেন, তা কার্যত স্পষ্ট৷ বস্তুত, সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে গিয়ে সমাজবাদী পার্টির নেতা এবং যোগী আদিত্যনাথের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী অখিলেশ যাদবের হয়ে প্রচার করেছিলেন মমতা৷ তারপরেই যোগীর এই বক্তব্য রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
যোগীর এদিনের সাক্ষাৎকার নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে৷ লাভ জিহাদের মতো আইন উত্তরপ্রদেশে পাশ করেছে যোগীর সরকার৷ তার আমলে একের পর এক লিঞ্চিংয়ের ঘটনা ঘটেছে রাজ্যে৷ এগুলি কতটা সংবিধানসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা৷ ভারত কখনোই শরিয়ত আইনে চলে না৷ তাহলে হঠাৎ কেন যোগী সেই বিষয়ে কথা বললেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে৷ বিরোধীদের বক্তব্য, এসব কথা বলে যোগী আসলে মেরুকরণ আরো বাড়াতে চাইছেন৷ তবে বিজেপির বক্তব্য, এই কথাগুলি বলে যোগী কংগ্রেসের ‘তোষণে’র রাজনীতির বিরোধিতা করার চেষ্টা করেছেন৷ বিজেপি বরাবরই অভিযোগ করে, কংগ্রেস সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি করে৷