তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় হ্যারি পটারের লেখিকা জে কে রাওলিং এখনো তোপের মুখে৷ তবে বিবিসি মনে করে রাসেল পুরস্কারের জন্য রাওলিংয়ের মনোনয়ন যুক্তিসঙ্গত৷
বিজ্ঞাপন
২০১৭ সাল থেকে ব্রিটিশ লেখক, দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের নামে লেখক, সাংবাদিকদের পুরস্কার দিয়ে আসছে বিবিসি৷ এ বছর পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকায় জে কে রাওলিংকে রাখায় যেমন প্রতিবাদের ঝড় উঠছে, আগের বছরগুলোতে অবশ্য এমন কখনো হয়নি৷
সম্প্রতি এক লেখায় হ্যারি পটারের স্রষ্টা রাওলিংজেন্ডারদেরও মেয়েদের টয়লেটে প্রবেশাধিকার দেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ তার মতে, ট্র্যান্স জেন্ডারদের নিয়ে অ্যাক্টিভিজম যে জায়গায় পৌঁছেছে তাতে নারীত্বের ধারণাটাই ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে৷
তুমুল বিতর্কের জন্ম দেয়া লেখাটিতে রাওলিং লিখেছেন, ‘‘আমি ট্র্যান্স নারীদের নিরাপত্তা চাই৷ তবে একই সঙ্গে আমি জন্মগতভাবে যারা মেয়ে বা নারী, তাদের নিরাপত্তাও কম চাই না৷ নিজেকে নারী মনে করেন এমন যে কোনো মানুষের জন্য যদি বাথরুম বা চেঞ্জরুম খোলা রাখা হয়, তাহলে আমি বলছি, দরজাটা যে মানুষই ভেতরে ঢুকতে চায় তার জন্যই খুলে দিন!’’
হ্যারি পটার আর টাকা-তৈরির যন্ত্র
হ্যারি পটার পর্যায়ের কাহিনিগুলির জন্ম বিশ বছর আগে, কিন্তু আজও তারা টাকা আয় করে চলেছে৷ সাতটা বই তো আছেই, সঙ্গে যোগ হয়েছে তিনটি থিম পার্ক ও লন্ডনের থিয়েটারে একটি নাটক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Warner
বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতনামা জাদুকর
জে কে রোওলিংয়ের লেখা প্রথম হ্যারি পটার বইটি বেরোয় ১৯৯৭ সালে, যার পর আরো ছয়টি কাহিনি বেরিয়েছে৷ খোকা জাদুকর হ্যারি পটারের ভূমিকায় ড্যানিয়েল ব়্যাডক্লিফকে নিয়ে প্রথম হ্যারি পটার ফিল্মটি আসে ২০০১ সালে (ছবিতে ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া দ্বিতীয় পর্বে ড্যানিয়েল ব়্যাডক্লিফ)৷ হ্যারি পটার পর্যায়ের শেষ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে আসে ২০১১ সালে৷ মাঝখানে ছিল হ্যারি পটারকে নিয়ে চুটিয়ে মার্চেন্ডাইজিং, বা টাকা কামানো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Warner
থিম পার্ক
‘দ্য উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ড অফ হ্যারি পটার’ নাম দিয়ে প্রথম হ্যারি পটার থিম পার্কটি খোলা হয় ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো-তে, ২০১০ সালে৷ তারপর জাপানের ওসাকা ও লস এঞ্জেলেসে আরো দু’টি হ্যারি পটার থিম পার্ক খোলা হয়েছে৷ পার্কগুলোয় হগসমিড গ্রাম আর হগওয়্যার্টস ক্যাসল সৃষ্টি করা হয়েছে, দর্শনার্থীরা একটি ‘জাদু বেঞ্চি’-তে চড়ে যা ঘুরে দেখতে পারেন৷ লাইনে দাঁড়াতে হয় এক ঘণ্টা, বেঞ্চিতে চড়ে ঘুরে দেখতে লাগে চার মিনিট৷
ছবি: picture alliance/AA/M. N. Eroglu
শপিং প্যারাডাইজ
২০১৪ সালে অরল্যান্ডো থিম পার্কের অন্য দিকে ডায়াগন অ্যালি খোলা হয়৷ ডায়াগন অ্যালিতে কেনাকাটার জন্য এটিএম-এর দরকার পড়লে সামনেই রয়েছে গ্রিংগটস উইজার্ডিং ব্যাংক৷ বাড়িটার মাথায় আবার একটা ড্রাগন বসে! ডায়াগন অ্যালিতে জাদুকর বা ডাইনিদের জন্য সব কিছু পাওয়া যায়৷ তবে আকাশে ওড়ার ঝাড়ু কিনতে লাগে ২৫০ ডলার (২২৫ ইউরো); একটা গ্রিফিন্ডর স্কার্ফ কিন্তু ৩৫ ডলারেই পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Gray
মিষ্টি, কিন্তু মিষ্টি না-ও হতে পারে
সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বার্টি বট’স এভরি ফ্লেভার বিনস৷ জেলি বেলি কোম্পানির তৈরি এই জেলি বিনগুলোর স্বাদে কিন্তু ঘাবড়ে যেতে পারেন৷ এগুলোর মধ্যে কেঁচো বা পচা ডিম, সাবান কিংবা ঘাসের স্বাদ দেওয়া বিন অর্থাৎ লজেন্সও আছে৷ আর কপাল ভালো থাকলে মেলন বা কটন ক্যান্ডি কিংবা চেরি ফ্লেভারের বিন পেয়ে যেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/S. Stache
কিংস ক্রস
লন্ডনের এই ট্রেন স্টেশনটিতে ‘পৌনে দশ’ নম্বর জাদু প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার জন্য একটি অদৃশ্য গেট আছে৷ ঐ জাদু প্ল্যাটফর্ম থেকেই জাদুবিদ্যার স্কুলে যাওয়ার হগওয়্যার্টস এক্সপ্রেস ছাড়ে কিনা৷ লাগেজ বয়ে নেয়ার কার্ট বা ঠেলা গাড়িটা সোজা দেয়ালের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে৷ অবশ্য ‘মাগলস’, অর্থাৎ যাদের জাদুবিদ্যা আসে না, তারা খুব বেশিদূর এগোতে পারবেন না৷ তাদের কপালে ঐ কিংস ক্রস স্টেশন ঘুরে আসা ছাড়া আর কিছু করার নেই৷
ছবি: AP
হগওয়্যার্টসে যাবার ব্রিজ
ব্রিজটা কিন্তু থিম পার্কের নয়, স্কটিশ হাইল্যান্ডসের একটি রক্তমাংসের, মানে ইটপাথরের ব্রিজ৷ উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে এই গ্লেনফিনান ভায়াডাক্টটি তৈরি করা হয়েছিল৷ আজ এটি ওয়েস্ট হাইল্যান্ড রেলওয়ে লাইনের অংশ৷ হ্যারি পটার সাইটসিয়িং টুরে কিন্তু এই ব্রিজটি বাদ দিলে চলবে না, তা ট্রেনটা হগওয়্যার্টস এক্সপ্রেস না হয়ে টুরিস্টদের জন্য চালু একটা কয়লার ট্রেন হলেই বা কী হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Robinson
লেগো ব্রিক দিয়ে তৈরি হ্যারি পটার
সঙ্গে তার পরম শত্রু ড্র্যাকো ম্যালফয়৷ এগুলো তৈরি করেছেন হামবুর্গের মিডাস কেম্পকে, যিনি দশ বছর বয়স থেকে হ্যারি পটারের ফ্যান৷ হ্যারি পটারকে নিয়ে তাঁর নিজের গল্প-কাহিনি, নাটক রচনা করেছেন মিডাস, ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপও বাদ পড়েনি৷ আবার শুধু লেগো ব্রিকস দিয়ে গোটা হগওয়্যার্টস তৈরি করেছেন কেম্পকে৷
ছবি: youtube.com
কুইডিচ
আসল কুইডিচ খেলা হয় আকাশে, ডাইনিদের জাদু ঝাড়ুতে চড়ে৷ লক্ষ্য হলো, ‘ব্লাজার’-এর ধাক্কায় মাটিতে পড়ে না গিয়ে ‘কোয়াফল’-টিকে বিপক্ষদলের তিনটি গোলাকৃতি গেটের মধ্যে দিয়ে পাঠানো৷ যে খেলোয়াড় সোনার ‘স্নিচ’টিকে ধরে ফেলতে পারবে, সে-ই জিতবে৷ কিছু বুঝলেন? না বুঝলে হ্যারি পটার পড়ুন৷ ছবিতে আমাদের এই বন শহরেই মাগলসরা কুইডিচ খেলছে, তবে মাটিতেই, জাদুবিদ্যে জানা নেই কিনা৷
ছবি: Volker Lannert/Uni Bonn
পটারমোর
এই ওয়েবসাইটটিকে জাদু জগতের ডিজিটাল প্রাণভোমরা বলা হয়ে থাকে৷ হ্যারি পটার ফ্যানরা যা কিছু চান, তার সবই এখানে পেতে পারেন৷ অনলাইন শপ তো আছেই, পটারমোর ছাড়া অন্য কোথাও ই-বুক হিসেবে হ্যারি পটার কেনা যায় না – অ্যামাজোনেও নয়৷ ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে লন্ডনে ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য কার্সড চাইল্ড’ নাটকটি চলেছে: তার খবরাখবর পেতে হলেও ঐ পটারমোর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Rain
কিন্তু হরি কর্মকার?
সে বেচারা তো আর লন্ডনে গিয়ে ‘হ্যারি পটার ও সেই অভিশপ্ত শিশু’ দেখতে পারবে না; তাই রোওলিং ঐ নাটকের ওপর ভিত্তি করে লেখা একটি বইও বাজারে ছেড়েছেন, নামও একই৷ কাহিনি? শেষ হ্যারি পটার অ্যাডভেঞ্চারের পর আরো উনিশ বছর কেটে গেছে...
ছবি: picture-alliance/empics/C. Gray
10 ছবি1 | 10
তার এ মন্তব্য খুব সমালোচিত হয়৷ হ্যারি পটার তারকা এমা ওয়াটসন এবং ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফসহ অনেকেই রাওয়ালিংয়ের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন৷
রা্সেল পুরস্কারে মনোনীতদের মাঝে রাওলিংকেও রাখায় বিবিসিও পড়েছে তোপের মুখে৷ তারপরও নিজেদের অবস্থান থেকে সরেনি তারা৷ এক বিবৃতিতে ব্রিটেনের এই সংবাদ মাধ্যম বলেছে, রাসেলের মন্তব্য ‘মুক্তমতের মূল্য’৷ তারা আরো জানায়, প্রবল বিরোধিতা এবং নানা ধরনের আক্রমণের শিকার হবেন জেনেও জে কে রাওলিং যে সাহস করে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি লিখেছেন, সে কারণেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাকে৷ বিবিসি আরো জানায়, রাওলিংকে মনোনয়ন দেয়ার মানে এই নয় যে তিনি যা বলেছেন বিবিসি তা সমর্থন সমর্থন করে৷