একটি আসবাব প্রতিষ্ঠান চীনে কফির কাপ তৈরি করতে দিয়ে পড়েছিল সমস্যায়৷ কারণ তাতে আঁকা ছিল হিটলারের ছবি ও স্বস্তিকা চিহ্ন৷ ইতিমধ্যে কাপগুলিকে বাজার থেকে উঠিয়ে নেওয়া হলেও, বনের ‘ইতিহাস ভবন’ একটি কাপ রাখার ব্যাপারে আগ্রহী৷
বিজ্ঞাপন
একটি লাল গোলাপ, একটি ইংরেজি পংক্তি ও সিল দেওয়া একটি ডাকটিকিট অলঙ্কৃত করেছে কাপটিকে৷ কাপটি শুধু সস্তা মানেরই নয়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদের আমলের একটি ঐতিহাসিক ডাকটিকিটও আঁকা রয়েছে এতে৷ যাতে দেখা যায় হিটলারের প্রতিকৃতি ও স্বস্তিকা চিহ্ন৷
ক্রেতারা ক্ষতিপূরণ পাবেন
যে সব কাপ ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে, সেগুলো ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবার৷ ক্রেতাদের প্রতি কাপের জন্য ২০ ইউরোর একটি কুপন দেওয়া হচ্ছে৷ যদিও একটি কাপের দাম ছিল ১.৯৯ ইউরো৷ বলা হয়েছে আসবাব-পত্রের দোকানটির তরফ থেকে৷
হিটলারের নকল ডায়েরি প্রকাশের ৩০ বছর
১৯৮৩ সালের ২৫ এপ্রিল জার্মানির হামবুর্গে এক সংবাদ সম্মেলনে হিটলারের ডায়েরি পাওয়া যাওয়ার খবর দেয়া হয়৷ পরে যেটা নকল বলে প্রমাণিত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংবাদ সম্মেলন ডেকে ডায়েরি প্রকাশ
১৯৮৩ সালের ২৫ এপ্রিল জার্মানির হামবুর্গে একটি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন সাংবাদিক গের্ড হাইডেমান৷ সেখানে সারা বিশ্ব থেকে যাওয়া সাংবাদিকদের সামনে তিনি হিটলারের হাতে লেখা একটি ডায়েরি উপস্থাপন করেন৷ পরবর্তীতে যেটা নকল বলে প্রমাণিত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বড় গল্পের সন্ধান’
গের্ড হাইডেমান ছিলেন একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক৷ যখন তাঁর কাছে নকল ডায়েরিটা নিয়ে যাওয়া হয় তখন তিনি সেটা দিয়ে বড় ব্যবসা করার পরিকল্পনা করেন৷
ছবি: ullstein bild
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞের উপস্থিতি
হিটলারের ডায়েরিকে আসল প্রমাণ করতে হামবুর্গের সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ও হিটলার বিশেষজ্ঞ হিউ ট্রেভর-রোপার ও মার্কিন ইতিহাসবিদ গেরহার্ড লুডভিগ ভাইনবের্গকে হাজির করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নকল প্রমাণিত
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করার মাত্র ১১ দিনের মাথায় সেটা নকল বলে খবর প্রকাশ করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম৷ সরকারের দুটো মন্ত্রণালয় প্রমাণ করে দেখায় যে, ঐ ডায়েরি বাঁধাই করতে যে উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে সেটা তৈরিই হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
যিনি নকল করেছেন
ইনি হলেন কনরাড কুয়াও৷ তাঁকে দিয়েই হিটলারের হাতের লেখা নকল করে ডায়েরিটা বানানো হয়েছিল৷ এ জন্য কুয়াওকে মোটা অংকের টাকা দেয়া হয়৷
ছবি: AP
কারাভোগ
ধরা পড়ার পর বিচার প্রক্রিয়া শেষে হাইডেমানকে চার বছর আট মাস আর কুয়াওকে চার বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মঞ্চনাটক
এই ঘটনা নিয়ে ১৯৯২ সালে জার্মানিতে একটি হাস্যরসাত্মক মঞ্চনাটক হয়েছে৷ ছবিতে তার একটি দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: imago stock&people
‘জনপ্রিয়তা’ অর্জন
গলায় ক্যান্সারের কারণে কুয়াওকে মাত্র তিন বছর জেল খাটতে হয়েছে৷ হিটলারের ডায়েরি নকলের ঘটনায় পাওয়া ‘জনপ্রিয়তা’-কে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে তিনি একটি দোকান খোলেন যেখানে তিনি ‘আসল কুয়াও-নকল’ ছবি বিক্রি করতেন৷ ২০০০ সালে তিনি মারা যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাইডেমানের করুণ দশা
নকল ডায়েরি ঘটনার কারণে হাইডেমানের সাংবাদিক জীবন শেষ হয়ে যায়৷ বর্তমানে ৮১ বছর বয়সি হাইডেমান হামবুর্গে অনেকটা দরিদ্র জীবনযাপন করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
এদিকে বনে অবস্থিত সমসাময়িক ইতিহাসের মিউজিয়াম বা ‘ইতিহাস ভবন' এর একটি নিদর্শনকে তার সংগ্রহে রাখার জন্য বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে৷ ‘‘আমাদের ইচ্ছা কাপটিকে আমাদের সংগ্রহের জন্য রাখতে৷ এটিকে প্রদর্শন করা হবে না৷'' বলেন মিউজিয়ামের মুখপাত্র পেটার হফমান৷ গণমাধ্যমের প্রচারের ফলে এই কাপের বিষয়টি নজরে আসে তাদের৷ অবশ্য আসবাব-পত্রের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা হয়নি৷
‘‘এখানে নাৎসি অতীতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি উঠে এসেছে'', বলেন হফমান৷ এক্ষেত্রে দুটি প্রশ্ন দেখা দেয়: আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে উৎপাদনের শর্তাবলী কীভাবে বদলে যাচ্ছে? হিটলারের প্রতিকৃতি যে কাপে আঁকা ছিল, তা জার্মানিতে কারো চোখে পড়লো না কেন?
প্রথমে কারো চোখে পড়েনি
‘ইতিহাস ভবনে' এই বিষয়টি নিয়ে খুব হৈচৈ হয়নি৷ ‘‘আমাদের সংগ্রহের জন্য দৈনিক শয়ে শয়ে সামগ্রীর খোঁজখবর পাওয়া যায়৷ বর্তমানে আমাদের ৭০০,০০০ প্রদর্শনী-সামগ্রী রয়েছে৷'' জানান হফমান৷
আসবাব-পত্রের ঐ প্রতিষ্ঠানটি চীনের এক বাণিজ্যমেলায় এই কাপ তৈরির অর্ডারটি দেয়৷ অন্য আঁকাজোখার মধ্যে কাপটিতে হিটলারের প্রতিকৃতি ও স্বস্তিকাচিহ্নের ছবি প্রথমে কারো চোখে পড়েনি৷
এইগুলি প্রথমদিকে দোকানের সেল্ফে বা তাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল৷ এমনকি ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার আগে বিক্রিও হয়ে যায় ১৭৫টি কাপ৷ বিষয়টির একটি আইনগত দিকও রয়েছে৷ জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদের প্রতীক, স্বস্তিকাচিহ্ন জার্মানিতে নিষিদ্ধ৷ মিডিয়ার তথ্যমতে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দপ্তর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে৷