স্থানীয় একটি গির্জায় নাৎসি আমলের (হিটলারের নাম লেখা) একটি ঘণ্টা রেখে দেয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির হেরসাইম আম ব্যার্গ শহরের কাউন্সিলররা৷ এর ফলে কট্টরপন্থি দলগুলোর আরো উত্থান হবে বলে আশংকা স্থানীয়দের৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার রাতে দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির ছোট্ট গ্রামটিতে নাৎসি আমলের এই ঘণ্টাটি রাখার পক্ষে ভোট দেন ১০ জন কাউন্সিলর, বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন মাত্র তিনজন৷ ঘণ্টায় লেখা রয়েছে, ‘পিতৃভূমির জন্য সবকিছু–আডলফ হিটলার', যেটি এখন ঐ গির্জায় ঝুলবে৷
হাইডেলবার্গ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে হেরসাইম আম ব্যার্গ গ্রাম৷ পক্ষে ভোট দেয়া কাউন্সিলরদের বক্তব্য হলো, ঘণ্টায় সস্ত্বিকা চিহ্ন রয়েছে, যেটা সেই সময়ের সহিংসতা আর অন্যায়ের কথা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেবে এবং মানুষকে অহিংস হওয়ার পথে উদ্বুদ্ধ করবে৷
তবে বেশ কিছু বাসিন্দা এর প্রতিবাদ করে ঘণ্টাটিকে নষ্ট করে ফেলার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ স্থানীয় এক প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ নতুন একটি ঘণ্টা লাগানোর খরচ বহন করার প্রস্তাবও দিয়েছিল৷
১৯৩৪ সাল থেকে ঐ চার্চে এই ঘণ্টাটি ঝুলছে৷ এতদিন ঘণ্টাটির কথা কারো খেয়ালই হয়নি৷ সম্প্রতি চার্চের এক প্রাক্তন অর্গ্যান বাদক সিগরিদ পেটার্স ঘণ্টার উপর লেখা নিয়ে অভিযোগ তোলেন৷ আর তারপরই বিষয়টি সবার নজরে আসে৷ সংবাদ সংস্থা ডিপিএকে সিগরিদ বলেছেন, ‘‘আমি কখনোই চাইবো না এমন একটি স্থানে কোনো শিশুর ব্যাপটিজম হোক, যেখানে লেখা থাকবে ‘পিতৃভূমির জন্য সবকিছু'৷''
অনেক বাসিন্দাই মনে করেন, এই ঘণ্টাটি এত সুন্দর চার্চটির মর্যাদা ক্ষুন্ন করছে এবং এর অস্তিত্ব নাৎসিপন্থি দলগুলোর কর্মকাণ্ডকে আরও উৎসাহিত করবে৷ তবে অন্য পক্ষের যুক্তি হলো, এর অপসারণ শহরের ইতিহাসকে ঢেকে ফেলার শামিল৷
কয়েক মাস আগেও চার্চে ঘণ্টা রাখা হবে কিনা, এ নিয়ে ভোটাভুটিতে ‘না'-এর পক্ষেই মতামত দিয়েছিলেন বেশিরভাগ মানুষ৷
এপিবি/এসিবি (নিক মার্টিন/ডিপিএ)
হিটলার এবং নাৎসিরা যেভাবে শিল্পকলার অবমাননা করেছে
একনায়ক হিসেবে সারা বিশ্বে কুখ্যাতি অর্জন শুরুর আগে হিটলার ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী৷ ‘ফ্যুহরার’ যেসব শিল্পকর্মকে ঘৃণা করতেন, সেগুলোর ভাগ্যে ‘পতিত শিল্পকর্ম’-র তকমা জুটতো এবং জাদুঘর থেকে তা সরিয়ে ফেলা হতো৷
ছবি: Bundesarchiv, Bild 183-C10110/CC-BY-SA
‘পতিত’ শিল্প
মডার্ন আর্ট-এর ধরন, এর শিল্পী বা বিষয়বস্তু হিটলারের একেবারেই পছন্দ ছিল না, তাই নাৎসিরা একে বলতো ‘পতিত শিল্পকর্ম’৷ ১৯৩৭ সাল থেকে নাৎসিরা জার্মানির জাদুঘর থেকে এসব শিল্পকর্ম সরিয়ে দিয়েছিল৷ এই ছবিতে হিটলার এবং সেসময়কার প্রচারণা মন্ত্রী গোয়েবেলসকে মিউনিখের একটি জাদুঘরের প্রদর্শনীতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হিটলারের শিল্পকর্ম
রোমান্টিকতা এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর শিল্পকর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল হিটলারের৷ তিনি পছন্দ করতেন সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য৷ তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে তাই ছিল ক্রানাখ, টিনটোরেটো এবং বোর্ডোনের ছবি৷ আর তার অনুসরণীয় ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাভেরিয়ার লুদভিগ আই এবং ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট৷ অবসরের পর নিজের শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর ইচ্ছে ছিল হিটলারের৷ নিৎস শহরে ফ্যুহরার জাদুঘরে প্রদর্শনী আয়োজনের ইচ্ছা ছিল তার৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection/Actual Films
বাজেয়াপ্ত
নাৎসিরা কেবল প্রগতিশীল শিল্পীদের নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা জাদুঘরে তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল৷ ১৯৩৭ সালে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ১০১ টি জার্মান জাদুঘর থেকে ২০ হাজার শিল্পকর্ম সরিয়ে ফেলে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Victoria & Alber Museum
হিটলারের জাতীয়তাবাদী ধরন
হিটলারের জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনায় বিমূর্ত শিল্পের যে কোনো স্থান নেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল ১৯৩৭ সালের ১৮ই জুলাই মিউনিখে অনুষ্ঠিত ‘গ্রেট জার্মান আর্ট’ প্রদর্শনীতে৷ সেখানে চিরাচরিত প্রাকৃতিক দৃশ্য, ইতিহাস এবং নগ্ন চিত্রকর্মের প্রদর্শন হয়েছিল, এর বাইরে বিমূর্ত কোনো শিল্পকর্ম ছিল না৷
ছবি: Bundesarchiv, Bild 183-C10110/CC-BY-SA
‘পতিত শিল্প’ হিসেবে চিহ্নিত করার কারণ
কখনো কখনো হিটলারের ঘনিষ্টজনরাও নিশ্চিত হতে পারতো না, কোন শিল্পীর কাজ হিটলার অনুমোদন দেবেন৷ তবে, আধুনিক কালের সৃজনশীল শিল্পী মাক্স বেকমান, ওটো ডিক্স, আর্নেস্ট লুদভিগ ক্রিসনারের কাজের অনুমোদন দেননি তিনি৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
পতিত শিল্পকর্মের প্রদর্শনী
‘পতিত শিল্পকর্ম’ নামের প্রদর্শনীতে ৩২ টি জার্মান জাদুঘর থেকে বাজেয়াপ্ত করা ৬৫০ টি শিল্পকর্মের প্রদর্শন হয়েছিল৷ সেখানে মানসিক প্রতিবন্ধীদের আঁকা স্কেচও স্থান পেয়েছে৷ বিভিন্ন শহরে এটির প্রদর্শন হয়, যা দেখেছিল ২০ লাখ মানুষ৷
ছবি: cc-by-sa/Bundesarchiv
নিষেধাজ্ঞা যখন বৈধতা পেল
১৯৩৮ সালের ৩১ শে মে ‘পতিত শিল্পকর্ম বাজেয়াপ্ত’ আইন প্রণয়ন করা হয়, যার মাধ্যমে ঐ শিল্পকর্মে নিষেধাজ্ঞা আরোপকে বৈধতা দেয়া হয়৷ যুদ্ধপরবর্তী কালেও ঐ আইনটি কার্যকর ছিল৷
ছবি: CC by Österreichische Nationalbibliothek
পতিত শিল্পকর্ম পোড়ানো
বাজেয়াপ্ত হওয়া শিল্পকর্মগুলো বার্লিনের গুদামঘর এবং শ্যোনহাউজেন প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ ১৯৩৯ সালের ২০শে মার্চ বার্লিনের অগ্নি নির্বাপন বিভাগ ৫০০০ শিল্প নির্দশন পুড়িয়ে ফেলে, যেটা তারা ‘মহড়ার’ অংশ বলে চালিয়ে দেয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
সুইজারল্যান্ডে নিলাম
১৯৩৯ সালের ৩০শে জুন সুইজারল্যান্ডে নিলামের সময় ১২৫টি ‘পতিত শিল্পকর্ম’ চিহ্নিত হয়েছিল, যা বিশ্বব্যাপী আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়৷