প্রকাশ হওয়ার মাত্র এক বছরের মধ্যে জার্মানিতে অ্যাডলফ হিটলারের লেখা বই ‘মাইন কাম্ফ'-এর টীকা সংস্করণটির ৮৫ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে৷ প্রকাশক অবশ্য বলছেন, বইটির বেশিরভাগ ক্রেতা শিক্ষক এবং ইতিহাসপ্রেমী, ডানপন্থি নয়৷
বিজ্ঞাপন
দুই খণ্ডের সংস্করণটি এক বছরে জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে বলে ৩ জানুয়ারি ঘোষণা করেন এর প্রকাশক৷ এই বইটির নাম ‘হিটলার, মাইন কাম্ফ: আ ক্রিটিকাল এডিশন', যা এ পর্যন্ত ৮৫ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে৷ এতে বিস্মিত হয়েছেন প্রকাশক৷ প্রকাশনা সংস্থা মিউনিখের ইনস্টিটিউট ফর কনটেম্পোরারি হিস্ট্রি আইএফজেড জানিয়েছে, এ মাসের শেষেই বইটির ষষ্ঠ সংস্করণ বের করতে তারা৷ আইএফজেড-এর কর্ণধার আন্দ্রেয়াস ভির্সিং সংবাদ সংস্থা ডিপিএ কে জানিয়েছেন, ‘‘ঝড়ের গতিতে বই বিক্রি হচ্ছে৷ এমনটা আমি কেন কেউই আশা করেনি৷ ''
বহু বছর ধরে হিটলারের মূল বইটির উপর নানা মন্তব্য ও বক্তব্য জোগাড় করে আসছে প্রকাশনা সংস্থাটি৷ বর্তমান বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ১,৯৪৮ এবং এটির দাম ৫৯ ইউরো৷ ষষ্ঠ সংস্করণে চার হাজার কপি বের করার পরিকল্পনা আছে তাদের৷ বইয়ের বিক্রি যদি আগের মতোই অব্যাহত থাকে তবে আরও প্রিন্ট বের হবে বলে জানিয়েছে তারা৷ ২০১৬ সালের এপ্রিলে জার্মানির সাপ্তাহিক ‘ডেয়ার স্পিগেল' এ বেস্ট সেলার নন-ফিকশন বইয়ের তালিকার শীর্ষে ছিল এটি৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর বাভারিয়ান রাজ্য সরকার হিটলারের ঐ আত্মজীবনীটির কপিরাইট নিষিদ্ধ করে দেয়৷ ২০১৫ সালে সেই নিষিদ্ধ সময় পেরিয়ে গেলে জার্মানিতে এই নতুন সংস্করণটি প্রথম প্রকাশিত হয়৷ নতুন এই বইটির প্রচারণার জন্য কেবল জার্মানি নয় পুরো ইউরোপ জুড়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশ করেছে প্রকাশনা সংস্থাটি৷ এটা যে নাৎসিবাদ বা ডানপন্থি মতাবাদ ছড়ানোর জন্য প্রকাশ করা হচ্ছে না সেটাও তুলে ধরা হয়েছে সেমিনারগুলোতে৷
আন্দ্রেয়াস ভির্সিং জানান, ‘‘অনেকের মনেই আতঙ্ক ছিল যে, এই সংস্করণটি হয়ত হিটলারের মতাবাদ ছড়িয়ে দেবে এবং নব্য নাৎসিদের উৎসাহিত করবে৷ কিন্তু এমনটা হয়নি৷'' এ কারণে প্রকাশনা সংস্থাটি বই ক্রেতাদের তথ্য রাখতে বলেছিলেন এবং ক্রেতাদের তালিকায় বেশিরভাগই এমন ছিলেন যাদের রাজনীতির বা ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ আছে, তবে এদের মধ্যে কোনো ডানপন্থিকে পাননি তারা৷
3700 Footnotes against "Mein Kampf"
05:45
হিটলার তার নাৎসি মতাবাদ নিয়ে ‘মাইন কাম্ফ' লিখেছিলেন ১৯২৫ থেকে ২৬ এর মধ্যে কোনো এক সময়৷ ১৯২৩ সালে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় এটি লেখেন তিনি৷ ইংরেজিতে ‘মাই স্ট্রাগল' নামে ঐ বইটিতে জার্মানির রক্ষণশীল সমাজে নিজের চিন্তাভাবনার বিস্ফোরণ ঘটাতে এই বইয়ের আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি, যেখানে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন জার্মানির ত্রাণকর্তা হিসেবে৷ গত ৭০ বছর ধরে জার্মানিতে হিটলার সম্পর্কিত সব ধরনের বই প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা ছিল৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)
আমাদের দেশে পথে-ঘাটেই পাওয়া যায় ‘মাইন কাম্ফ’৷ বইটি আপনি কি পড়েছেন? জানান আপনার মন্তব্য, নীচের ঘরে৷
স্মরণে হিটলারের পরাজয়ের দিন
৭০ বছর আগের এই দিনে প্রায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধের দামামা বন্ধ হয়েছিল৷ সেদিনই হিটলারের বাহিনী আত্মসমর্পন করেছিল৷ তাই জার্মানি প্রতি বছর স্মরণ করে সেই দিনটিকে৷
ছবি: DW/F. Müller
দীর্ঘতম যুদ্ধের স্মৃতি
আখেন শহরের হ্যুর্টিগেনের কাছের এই জঙ্গলে হিটলারের বাহিনীর সঙ্গে মিত্র বাহিনীর ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিল৷ ১৯৪৪ সালের অক্টোবরে শুরু হয়ে ১৯৪৫ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে এই যুদ্ধ৷ তারপর আত্মসমর্পন করে জার্মানরা৷ জার্মানির মাটিতে আর কোথাও এত দীর্ঘ যুদ্ধ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Oliver Berg
রেমাগেনের সেই ‘অলৌকিক’ সেতু
রেমাগেন শহরের এই সেতুটি ‘মিরাকল অফ রেমাগেন’ নামে পরিচিত৷ এমন নামকরণের কারণও আছে৷ ১৯৪৫ সালের ৭ই মার্চ প্রথমবারের মতো রাইন নদীর ওপরের এই সেতু অতিক্রম করে মিত্র বাহিনী৷ শুরু হয় জার্মান বাহিনীর বোমা বর্ষণ৷ মিত্র বাহিনী দখল করে নেয়ার দশ দিন পর ধসে পড়ে ব্রিজটি৷ কিন্তু আধুনিক জার্মানি সেই ইতিহাস ভুলেনি৷ ব্রিজটির ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘শান্তির জাদুঘর’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thomas Frey
রাইশভাল্ডের সমাধি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত অ্যামেরিকান যোদ্ধাদের মৃতদেহ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হলেও ব্রিটিশ যোদ্ধাদের জার্মানিতেই সমাধিস্থ করা হয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের ১৫টি সমাধি রয়েছে জার্মানিতে৷ এর মধ্যে রাইশভাল্ড বনাঞ্চলের এই ‘কমনওয়েলথ ওয়ার সেমেট্রি’-ই সবচেয়ে বড়৷ ৭৬৫৪ জনকে সমাধিস্থ করা হয় এখানে৷
ছবি: Gemeinfrei/DennisPeeters
সবচেয়ে বড় যুদ্ধের স্মৃতি
জার্মানির মাটিতে সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি হয়েছিল এই সিলো হাইটসে৷ ১৯৪৫ সালের ১৬ এপ্রিল বার্লিন অভিমুখে অভিযানের অংশ হিসেবে আক্রমণ শুরু করে সোভিয়েত বাহিনী৷ ৯ লাখ সৈন্য নিয়ে গড়া সোভিয়েত বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছিল ৯০ হাজার জার্মান৷ অনেক সৈন্য মারা যায় সেই যুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Patrick Pleul
রুশ-জার্মান জাদুঘর
১৯৪৫ সালের ৮ই থেকে ৯ই মে-র মধ্যে বার্লিন-কার্লহোর্স্ট অফিসার্স মেস-এ আত্মসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষর করে জার্মান বাহিনী৷ সেখানেও গড়ে তোলা হয়েছে জাদুঘর৷ জাদুঘরের মূল আকর্ষণ ইংরেজি, জার্মান এবং রুশ ভাষায় লেখা আত্মসমর্পনের সেই দলিল৷
ছবি: picture-alliance/ZB
সোভিয়েত সৈন্যদের স্মরণে
১ হাজার বর্গ মিটার জায়গা জুড়ে ট্রেপটাওয়ারের এই স্মৃতিসৌধ৷ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় বার্লিন অভিযানে যেসব সোভিয়েত সৈন্য প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই গড়ে তোলা হয় এটি৷ স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামোটি আসলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুটি প্রতীকি পতাকা৷ ‘রেড আর্মির’ প্রয়াত সদস্যদের স্মরণ করতে পতাকা দুটির আদল তৈরি করা হয়েছে লাল গ্রানাইট পাথর দিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Matthias Tödt
পস্টডাম সম্মেলন
নাৎসি বাহিনীর আত্মসমর্পনের পর জার্মানির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় বসে মিত্র শক্তির প্রধান তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং রাশিয়ার প্রধান৷ পস্টডামের সেসিলিয়ানহোফ প্যালেসে বসে সেই বৈঠক৷ হ্যারি ট্রুম্যান, উইনস্টন চার্ইল এবং জোসেফ স্ট্যালিন অংশ নিয়েছিলেন সেই বৈঠকে৷