তাঁকে নিয়ে লেখা হয়েছে বই, হয়েছে টিভি সিরিয়াল, এমনকি চলচ্চিত্রও হয়েছে হলিউডে৷ অসম সাহস নিয়ে হিটলারের বিপক্ষে দাঁড়ানো ইওয়াখিম রনবার্গকে এখন শ্রদ্ধা জানাচ্ছে বিশ্বের অনেক মানবতাবাদী, শান্তিপ্রিয় মানুষ৷
১৯৪৩ সালে তরুণ সৈনিক ইওয়াখিম ‘অপারেশন গানারসাইড'-এর নেতৃত্ব দেন৷ এই অপারেশন নরস্ক হাইড্রো প্লান্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে ধ্বংস করার ফলে নাৎসি জার্মানির পরমাণু অস্ত্র গবেষণা বন্ধ হয়ে যায়৷
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সলবার্গ বলেন, ‘‘নাৎসি আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়া সৈনিক রনবার্গ আমাদের হিরো ছিলেন৷''
১৯১৯ সালে জন্মানো রনবার্গ জার্মান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে ব্রিটেনে যান৷ সেখানে অন্যান্য নরওয়েজিয়ান নাৎসি-বিরোধী প্রতিরোধ বাহিনীর সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেন৷
ততদিনে তাঁর স্বদেশ নরওয়ে নাৎসিদের দখলে চলে গেছে৷ ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেখানে ফেরেন তিনি৷ তাঁর নেতৃত্বে ছয় জনের একটি দল হাইড্রো প্ল্যান্টে হামলা চালায়৷
হিটলার কে ছিলেন?
‘হিটলার কে ছিলেন’ প্রশ্নটি হ্যারমান প্যোল্কিং-এর বহুল পঠিত বইয়ের বিষয়৷ হিটলারের নিজের এবং তার সম্পর্কে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন উদ্বৃতিও উঠে এসেছে এই তথ্যচিত্রে৷ সেগুলোরই কয়েকটি থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/AP
শিশু অ্যাডলফ হিটলার (১৮৯০)
‘‘পরিবারের অন্য সবার চেয়ে সে ব্যতিক্রম ছিল৷’’ – মা ক্লারা হিটলারকে উদ্বৃত করে অ্যাডলফ হিটলার সম্পর্কে এ কথা জানিয়েছিলেন তার ছোটবেলার বন্ধু অগুস্ট ক্যুবিসেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লিন্সে ক্লাসের ছবি, ১৯০০/০১
‘‘সে নিঃসন্দেহে মেধাবী ছিল, ভারসাম্যহীনও ছিল, তবে সহিংস ছিল না৷ অবশ্য অবাধ্য হিসেবে বিবেচিত ছিল৷ আর সে কঠোর পরিশ্রমীও ছিল না’’ – বলেছেন হিটলারের ফরাসি শিক্ষক ড. এডওয়ার্ড হুয়েমার৷ (ছবিতে একেবারে উপরের সারির ডানদিকের কোণায় হিটলারকে দেখা যাচ্ছে৷)
ছবি: picture-alliance/akg-images
অ্যাডলফ হিটলারের নিজের পোট্রেট
‘‘আত্মীয়স্বজনরা তাকে এমন ফালতু মনে করতো, যে কিনা সব ধরনের কঠিন কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতো,’’ অ্যাডলফ হিটলারের ছোটবেলার বন্ধু অগুস্ট কুবিসেক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কর্পোরাল হিটলার
‘‘ইহুদিদের প্রতি হিটলারের তীব্র ঘৃণা কেন ছিল তার কারণ আমি কখনো প্রকাশ করিনি৷ বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা হয়ত এতে সামান্য অবদান রেখেছিল,’’ লিস্ট রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট ফ্রিৎস ভিডারমান৷
ছবি: Getty Images
অ্যাডলফ হিটলার (১৯৩৩)
‘‘উচ্চশ্রেণির মানুষেরা হিটলারের কাছে ঘেঁষতে চেয়েছে৷ এ রকম পরিবর্তনশীল মানুষদের জন্য আমার দাদার এক জুতসই ফর্মুলা ছিল: আপনি তাদের চোখে থুতু ছিটাবেন আর তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা’’, জার্মান ইহুদি সাংবাদিক বেলা ফ্রম৷ (জানুয়ারি ২৯, ১৯৩২)
ছবি: Ullstein
প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গের কাছ থেকে ক্ষমতা নিচ্ছেন চ্যান্সেলর হিটলার, ১৯৩৩
‘‘আমি ক্ষণিকের জন্যও ভুলিনি যে, নাৎসিরা শত্রু – আমার শত্রু এবং আমার প্রিয় সবার শত্রু৷ তবে আমি একটা ক্ষেত্রে ভুল করেছিলাম, তা হচ্ছে, তারা কতটা ভয়াবহ শত্রু হবে সেটা আন্দাজ করতে পারিনি৷’’ – সেবাস্তিয়ান হাফনার, সাংবাদিক৷
ছবি: ullstein bild
ব্যাইরুথে হিটলার (১৯৩৮)
‘‘আমি এটা নিঃসঙ্কোচে বলতে পারি যে, সান ফ্রান্সিসকো যাওয়ার আগে আমি হিটলারের যুদ্ধ চলাকালে অনারোগ্য রোগীদের ধ্বংস করে দেয়ার আকাঙ্খা সম্পর্কে জেনেছিলাম৷ তিনি বলেছিলেন তারা নাকি অপ্রয়োজনীয় ভক্ষক৷’’ – ফ্রিৎস ভিডারমান, ১৯৩৯ সালের ১৯ জানুয়ারি অবধি অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি পার্টির অ্যাডজুটেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ওবারসাল্সবার্গে হিটলার
‘‘আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে, ইংল্যান্ড বা ফ্রান্স একটি সাধারণ যুদ্ধে জড়াবে না৷’’ ১৯৩৯ সালের ১৩ আগস্ট ওবারসাল্ফবার্গে আর্মি জেনারেলদের বলেছিলেন হিটলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
আলবার্ট স্পিয়ার এবং অ্যাডলফ হিটলার, ১৯৩৮
‘‘যুদ্ধের পুরো সময়টাতে হিটলার কখনো বোমাবর্ষণের শিকার কোনো শহর দেখতে যাননি৷’’ আলবার্ট স্পেয়ার, রাইশ মিনিষ্টার অফ আর্মামেন্টস অ্যান্ড ওয়ার প্রোডাকশন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
ভোল্ফ’স লেয়ারে গুপ্তহত্যা চেষ্টা ব্যর্থ হবার পর হিটলার, ১৯৪৪
‘‘আমি সেখানে হিটলারকে দেখেছি, যিনি কিনা আমার বিক্ষিপ্ত অভিব্যক্তির দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন৷ তিনি শান্তভাবে বলেছিলেন, ‘লিঙ্গে, কেউ একজন আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল৷’’’ – অ্যাডলফ হিটলারের খানসামা হাইন্স লিঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance
অ্যাডলফ হিটলার এবং হ্যারমান গ্যোরিং, ১৯৪৪
‘‘আমি জানি, যুদ্ধে আমরা পরাজিত হয়েছি৷ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব পরিষ্কার৷ আমি এখন আমার মাথায় গুলি করতে চাই৷ [কিন্তু] আমরা আত্মসমর্পন করি না৷ কখনো না৷ আমরা হারতে পারি৷ কিন্তু নিজেদের সঙ্গে একটা দুনিয়া নিয়ে যাবো৷’’ ১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরের শেষে অ্যাডজুট্যান্ট নিকোলাউস ফন বেলো-কে বলেছিলেন হিটলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Fine Art Images
সংবাদপত্রে হিটলারের মৃত্যু সংবাদ, ১৯৪৫
‘‘একজনের মনে হতে পারে, হিটলারের মৃত্যু এখন বরং অর্থহীন৷ তার আরো আগে মরা উচিত ছিল৷ আমি ভাবছি, কতজন মানুষ তিনি চড়চড় করে পুড়ছেন ভেবে নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছে৷’’ – স্কটিশ লেখক নাওমি মিচিসন৷
ছবি: picture alliance/Everett Collection
12 ছবি1 | 12
এই প্ল্যান্টটি নাৎসিদের কাছে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
তখনকার দিনে বিশাল মাত্রায় ডিটুও বা ভারি জল উৎপাদন করতে পারা বিশ্বের বৃহত্তম প্ল্যান্ট ছিল সেটি৷
ডিটুও মূলত ডিউটেরিয়াম-সমৃদ্ধ একটি পদার্থ, যা পারমানবিক অস্ত্র তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
প্রথমে আকাশপথে ও পরে পায়ে হেঁটে সেই পাহারায় ঘেরা প্ল্যান্টে পৌঁছান রনবার্গ ও তাঁর দল৷
ডিটুও প্রস্তুতকারী মেশিনগুলি যখন তাঁদের লাগানো বোমায় ছিন্নভিন্ন হচ্ছিল, রনবার্গ তাঁর সাথের সৈনিকদের নিয়ে তখন যাচ্ছিলেন কয়েকশ' কিলোমিটার দূরের সুইডেনের দিকে৷
এই দুঃসাহসী অভিযানের অনুপ্রেরণায় ১৯৬৫ সালের হলিউডে ‘দা হিরোস অফ টেলিমার্ক' ছবিটি তৈরি হয়৷
এছাড়া একই গল্প থেকে তৈরি হয়েছে অসংখ্য বই, তথ্যচিত্র ও টেলিভিশন নাটক৷
যুদ্ধ শেষে রনবার্গ রেডিও সাংবাদিকতায় নামলেও নাৎসি-বিরোধী সৈনিক হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি৷
অবশেষে ১৯৭০ সালে নীরবতা ভেঙে জনসমক্ষে যুদ্ধ ও স্বৈরতন্ত্রের বিপদ বিষয়ে সোচ্চার হন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নায়ক ইওয়াখিম রনবার্গ৷