চলতি নির্বাচনে হিন্দু মৌলবাদীদের ‘সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক' ভাষণে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী কেন নীরব? এটা কি বিজেপির ‘মৌনম সম্মতি লক্ষণম'? এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখলেই তো সব দোষ স্খলন হয় না মোদীর৷
বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন হলো, তবে কি হিন্দু অ্যাজেন্ডাকে জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছেন মোদী?
প্রথমে বিহারের বিজেপি প্রার্থী গিরিরাজ সিং এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা শুধু বিতর্কিত নয়, বিস্ফোরকও বটে৷ কী বলে ছিলেন তিনি? বলেছিলেন মোদীকে যাঁরা ভোট দেবে না আগামী দিনে তাঁদের স্থান হবে ভারতে নয়, পাকিস্তানে৷ এরপর আরো একধাপ এগিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সভাপতি প্রবীণ তোগাড়িয়া হিন্দু মৌলবাদীবজরং দলের কর্মীসভায় নাকি বলেছেন, হিন্দু প্রধান এলাকায় মুসলিমদের ঘর বাড়ি কিনতে দেয়া হবে না৷ গুজরাটের আমেদাবাদে উপদ্রুত এলাকা আইনে এমনটাই বলা আছে, দাবি করেন তোগাড়িয়া৷ হুমকি দেন তিনি যে, হিন্দু প্রধান পাড়ায় মুসলিমদের বাড়ি খালি করে চলে যেতে হবে৷ নাহলে বজরং দলের কর্মীরা বাড়ি দখল করে নেবে এবং বজরং দলের স্টিকার লাগাবে৷ এই ধরণের সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেবার অভিযোগে তোগাড়িয়ার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এফআইআর করা হয়৷ তোগাড়িয়া তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন৷
আসল কথা মোদী কেন নীরব? তিনি তো নির্বাচনি প্রচারে উন্নয়ন ও সুশাসনকেই করেছেন পাখির চোখ৷ ভোট যখন অর্ধেকের বেশি আসনে হয়ে গেছে তখন তিনি তাঁর দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলিকে ভোটের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতিতে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিচ্ছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোট বিজেপির ঝুলিতে ভরতে৷ জেডি (ইউ) মুখপাত্র অজয় অলোক মনে করেন, এইসব বিদ্বেষমূলক বিবৃতি নির্বাচনি পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে৷ মোদীর বিরুদ্ধে ভোট দিলে ভারতে জায়গা হবে না বলে ভোটারদের যেভাবে সংঘ পরিবার হুমকি দিচ্ছে তা ভারতের ভবিষ্যতকে বিপন্ন করে তুলবে৷ মোদী এখন ভালো মানুষ সাজতে চাইলেও গোহত্যা ও গোমাংস রপ্তানি নিষিদ্ধ করার মত বিতর্কিত উক্তি করেছেন তিনি৷ এমনকি, মুসলিমদের তোষণ করছেন বলে যাতে কেউ আঙুল তুলতে না পারে, তার জন্য মোদী মুসলিম স্কাল-ক্যাপ পরতে অস্বীকার করেন৷ এমনকি মোদীর ডানহাত অমিত শাহ উত্তর প্রদেশের মুজফ্ফরনগরের দাঙ্গার বদলা নেবার কথা বলেছেন৷ মোদী যদি ক্ষমতায় আসেন, তাহলে এইসব সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি সহিংস আকার ধারণ করতে পারে, এমনটাই নাগরিক সমাজের আশঙ্কা৷
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
কংগ্রেসও বিদ্বেষ বিষ থেকে মুক্ত নয় পুরোপুরি৷ কংগ্রেসের ইমরাণ মাসুদ প্রকাশ্যে রাহুল গান্ধীর জ্ঞাতসারে বিস্ফোরক মন্তব্যে বলেছেন মোদীকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলবে, এমনটাই শোনা গেছে৷ এটাও শোনা গেছে রাহুল তার প্রতিবাদ করেছেন৷ বিহার বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিং-এর উক্তি টেনে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেছেন যে, তিনি পাকিস্তানে যেতেও রাজি, তবু মোদী বিরোধীতা থেকে পিছু হটবেন না৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফারুক আবদুল্লার প্রতিক্রিয়া, এই ধরণের মানসিকতার ফলেই পাকিস্তান হয়েছে, বিজেপি এই মানসিকতা না বদলালে আর একটা ‘নতুন পাকিস্তান' জন্ম নিতে পারে৷ যাঁরা মোদী বিরোধী তাঁরাই পাকিস্তানের সমর্থক, এটা শুধু হাস্যকরই নয় নোংরা চিন্তাভাবনা, বলেন ফারুক আবদুল্লা৷