1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিন্দুদের উপর হামলা: রংপুরে তিন গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি

আবদুস সাহেদ মন্টু রংপুর
১৮ অক্টোবর ২০২১

ফেসবুকে একটি কথিত পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরে হিন্দুদের উপরে হামলার ঘটনার পর সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ এদিকে, হামলায় ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নীচের মানবেতর জীবনযাপন করছেন৷

রংপুরে হামলায় ঘরবাড়ি হারানো এক হিন্দু নারীছবি: bdnews24.com

রংপুরের পীরগঞ্জ রামনাথপুর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে হামলাকারীদের দেয়া আগুনে পুড়ে গেছে হিন্দুদের ২৫টি ঘরবাড়ি৷ মন্দির ভাংচুরসহ ঘরবাড়ি-দোকানপাট লুটপাট করা হয়েছে৷ এক রাতেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেকগুলো পরিবার৷ উচ্ছৃঙ্খল জনতার হামলায় ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন করছেন৷

কথিত ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে উত্তেজনা  

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়ার এক হিন্দু কিশোর রবিবার ইসলাম ধর্মকে ‘অবমাননা করে’ ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে৷ এরপর কয়েকশত মানুষ সেই কিশোরের বাড়ি ঘেরাও করে৷ তবে তার আগেই সেই বাড়ির সদস্যরা অন্যত্র সরে যায়৷   

সেসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পীরগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্যরা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেই বাড়িতে যান৷ পুলিশ তখন পুরো বাড়ি ঘেরাও করে স্থানীয়দের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে৷ 

কিন্তু সেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মাঝেই রবিবার রাত ১০টায় ইউনিয়নটির হিন্দু অধ্যুষিত বড় করিমপুর, কসবা ও উত্তরপাড়া এলাকায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট, মন্দিরে ভাংচুর ও লুটপাট করে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা৷ তারা ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়৷ 

হিন্দুদের ঘরে আগুন দেয়ার পাশাপাশি অর্থসম্পদও লুট করেছে দুর্বৃত্তরা ছবি: bdnews24.com

হামলার সময় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষক, মৎসজীবী ও দিনমজুর মানুষজন প্রাণ রক্ষায় ঘর থেকে পালিয়ে যায়৷ তারা অভিযোগ করেন, দুর্বৃত্তরা হিন্দু বাড়িগুলো থেকে টাকা, স্বর্ণালংঙ্কার, গবাদিপশু লুটপাট করেছে৷ শেষে পেট্রোল ঢেলে ঘরবাড়িগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে৷

পরিকল্পিত আক্রমণ, বলছে পুলিশ 

হিন্দু কিশোরের বাড়ির পার্শ্ববর্তী গ্রামে অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়৷ কিন্তু ততক্ষণে বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে উত্তেজিত জনতা৷ এসময় নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ৬১ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা৷

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার মনে করেন, সুপরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের উপর হামলা চালানো হয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ফেসবুকে ধিক্কারজনক একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে ৩টি গ্রামে নৃশংস ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে৷ অসংখ্য দুস্কৃতিকারী নাশকতা চালিয়েছেন৷ নিরীহ মানুষের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে৷

তিনি বলেন, ‘‘রোববার রাতে প্রায় তিনশ মানুষ মাঝিপাড়ায় সমবেত হয়েছিল৷ তারা মুহূর্তের মধ্যে গ্রামে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করেছে৷ তাৎক্ষণিকভাবে পেট্রোল ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি আমরা মনে করছি সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে৷’’

এদিকে, হিন্দুদের বাড়িতে হামলার ঘটনার পর পুলিশ অন্তত ৪২ জনকে গ্রেফতার করেছে৷ গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ 

পুড়ে ছাই ঘরবাড়ি, সম্পদ: সর্বস্বহারাদের কান্নার রোল

হিন্দু বাড়িতের হামলার ঘটনায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে অনেকের শখের ঘরবাড়ি, খড়ের গাদা, গবাদি পশু৷ কারো কারো ঘরের সকল আসবাবপত্র, কাপড়ও পুড়ে গেছে৷ টাকা-স্বর্ণালংঙ্কার হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব বড় করিমপুর, কসবা ও উত্তরপাড়ার ২৫টি বাড়ির প্রায় ৬৬টি পরিবার৷ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা৷ 

রংপুরে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়িছবি: bdnews24.com

রাতের দুঃসহ স্মৃতি মনে পড়তেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন অনেকে৷ কান্নাজড়িত কন্ঠে বড় করিমপুরের কৃষক ননী গোপাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি চার সন্তান নিয়ে বাড়িতে বসবাস করি৷ রোববার রাত ৮টায় শুনতে পেলাম পাশের গ্রামে একটি হিন্দুবাড়ির খড়ের গাদায় আগুন দেয়া হয়েছে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, পুলিশ, চেয়ারম্যান গাড়িতে করে ছুটে যান সেখানে৷ সেখানে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়৷ পুলিশ যাওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এরপর শত শত মানুষ আমাদের গ্রামে এসে একটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ আমার পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে আগুন দেয়৷’’ 

৫৫ বছর বয়স গোপাল বলেন, ‘‘আমি প্রাণ ভয়ে আমার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে পালিয়ে যাই৷ দূর থেকে দেখেছি আমার বাড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে৷ ঠেকানোর মত উপায় নেই৷’’ 

তিনি বলেন, ‘‘এখন আমার আর কিছুই নেই৷ খাবার নেই, কাপড় নেই৷ কি দোষ করেছিলাম আমরা?’’

উজালী রানী নামে ভুক্তভোগী এক নারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আগুনে আমার সব পুড়ে গেছে৷ এর ক্ষতিপূরণ সরকারও দিতে পারবে না৷ আমি এর বিচার চাই৷’’ 

সরলা রায় নামের আরেক হিন্দু নারী রোববার রাতের কথা স্মরণ করে জানান যে একদল মানুষ তাদের গ্রামে এসে হিন্দু বাড়ি পুড়িয়ে ফেলতে বলে৷ 

৪৩ বছর বয়সি এই গৃহিনী বলেন, ‘‘আমি এই কথা শুনে গোয়াল থেকে গরু বের করে ঘর থেকে পালিয়ে যাই৷ ওরা আমার ঘরে ঢুকে আমার মেয়ের বিয়ের জন্য রাখা ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণালংঙ্কারসহ সব কিছু নিয়ে গেছে৷ আমার ঘর নেই, টাকা নেই, আমি কি নিয়ে থাকবো?’’

পুলিশের সতকর্তার মাঝে হামলা

এদিকে, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, প্রশাসন সতর্ক থাকায় হামলাকারীরা বড় কোনো ক্ষতি করতে পারেনি৷ 

তিনি বলেন, ‘‘দূর্গাপূজায় বিভিন্ন স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক ছিলাম৷ তাই আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারেনি দুস্কৃতিকারীরা৷’’ 

রংপুরে হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে একটি মামলা হয়েছে৷ আরো মামলা হবে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ৷ আর ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছে স্থানীয় রাজনীতিবিদর৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ