1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোনো ধর্ম নয়, বড় মানবতা

৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

‘সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই' – জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এ কথাটিকেই ‘মন্ত্র' ভেবেছি, ভালোবেসেছি মানবজাতিকে৷ অথচ আজ আমারই দেশের মানুষ দেশমাতৃকাকে কলঙ্কিত করছে৷ ধর্মের দোহাই দিয়ে হত্যা করছে ‘নাস্তিক' মানুষদের৷

Palliativmedizin
ছবি: picture-alliance/dpa

হিন্দু বাড়িতে জন্ম৷ তাই খুব ছোটবেলা থেকেই দেব-দেবীদের নানা রকম গল্প – রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ – সব কিছুই পড়তে হয়েছিল৷ আর যতই পড়তাম, বাড়তো প্রশ্ন৷ স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল – শুনতাম এই তিনের অস্তিত্ব৷ পৃথিবী যদি মর্ত্য হয়, আর মাটির তলায় থাকে দৈত্য-দানবে ভরা পাতালপুরি, তাহলে স্বর্গ নিশ্চয় আকাশ৷ তা দেবতারা কি সত্যিই আকাশে থাকে? ইন্দ্রের সভায় ঊর্বশী, মেনকারা সত্যিই নাচে? ছোট বলেই হয়ত এদের নিজের চোখে দেখতে ইচ্ছে করতো খুব৷ কিন্তু দেখতে আর পেলাম কোথায়? এমনকি প্রথমবার যখন বিমানে চেপে আকাশপথে পাড়ি দিলাম, তখন অনেক চেষ্টাতেও মেঘের আনাচে-কানাচে দেব-দেবীর দেখা পাইনি৷

এরপর বয়স বাড়লো, আর তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়লো পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, রসায়ন নিয়ে আগ্রহ৷ সব কার্যকারণের পিছনেই যে বিজ্ঞানের মস্ত বড় একটা হাত আছে, সেটাও ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম৷ একদিকে গ্যালিলিও-কোপার্নিকাস-ডারউইন, অন্যদিকে প্লেটো-সক্রেটিস-মিকেলঅ্যাঞ্জেলো-হেগেল-মার্ক্স অথবা জন স্টুয়ার্ট মিল – পড়াশোনার পরিধি বাড়ার সাথে সাথে মুগ্ধ হলাম ফরাসি বিপ্লবের ‘লিবার্টি, ইকুয়ালিটি, ফ্র্যাটারনিটি'-র মন্ত্রে, বিশ্বাস জন্মালো ঈশ্বরে নয়, ব্যক্তিস্বাধীনতায়৷

তাহলে কি আমি ‘নাস্তিক'? নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করলাম একদিন৷ কিন্তু উত্তর এলো – না, আমি ধর্মনিরপেক্ষ৷ হিন্দুর বাড়িতে জন্ম হলেও, পরিবারে, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে বহু ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ ছিল আমার চারপাশে৷ তাছাড়া ছোটবেলা থেকে দুর্গা পূজার পাশাপাশি ঈদের খুশি আর বড়দিনের আনন্দও উপভোগ করেছি আমি, আমরা, এখনও করি৷ পরবর্তীতে ইউরোপে থাকার সুবাদে খ্রিষ্টধর্ম, বিশেষ করে ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রতি আমার অনুরাগও কম নয়৷ ইউরোপীয় স্থাপত্য, কলা, সংগীত ঘরানা, এমনকি রাজনীতিতেও ধর্মের পরোক্ষ অথবা প্রত্যক্ষ ছাপ আমি দেখেছি৷ বিয়েও করেছি এক খ্রিষ্টান পরিবারে৷ তাই অন্যের ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতাকেই আমার কাছে শ্রেয় মনে হয়েছে, মনে হয়েছে মানুষ, মানবতা, মানবিকতার প্রতি আস্থাই পরম ‘ধর্ম'৷

হ্যাঁ, ধর্মের আসল অর্থ আমার কাছে জীবনদর্শন৷ আর সেটা যদি হয়, তাহলে আমার জীবনবোধের সঙ্গে আপনার যে মিল থাকবেই – এমনটা তো না-ও হতে পারে৷ নাস্তিক্যবাদ বা নাস্তিকতা – ইংরেজি ভাষায় যাকে বলে ‘এথিইসম' (গ্রিক শব্দ এথোস থেকে যার উৎপত্তি) – এটাও কি একটা দর্শন, একটা ‘ধর্ম' নয়? হিন্দুত্ববাদ, ইসলাম বা খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে এর পার্থক্য এটাই যে এই দর্শনে ঈশ্বর বা ‘স্রষ্টার' অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয় না৷ বরং এখানে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া হয় সম্পূর্ণ ভৌত বা প্রাকৃতিক উপায়ে৷ অর্থাৎ এই মতবাদ বিশ্বাস নয় যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত৷ অনেকে একে নিরীশ্বরবাদ বলেও চিহ্নিত করেন৷

তাছাড়া নাস্তিকদের মধ্যেও নানান বিভেদ আছে৷ পশ্চিমের দেশগুলোতে নাস্তিকদের সাধারণত পারলৌকিক বিষয়ে আস্থা নেই৷ তাঁরা কোনো বিশেষ মতাদর্শের অনুসারী নয় এবং বিশেষ কোনো আচার-অনুষ্ঠানও পালন করেন না৷ অনেকে আবার ‘নাস্তিক’ শব্দের শিকড়ে গিয়ে এর একটা ব্যাখা খোঁজেন৷ তাঁদের মতে, বেদের প্রতি যাঁদের বিশ্বাস নেই, তাঁরাই নাস্তিক৷ এই যেমন বৌদ্ধ বা জৈন ধর্মাবলম্বীরা৷ অন্যদিকে যাঁরা বেদে বিশ্বাসী, তাঁরা আস্তিক৷

অবশ্য এমন মানুষও আছেন, যাঁরা আমার মতো ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী, বিশ্বাসী যুক্তিবাদ এবং প্রকৃতিবাদে৷ আমার মতে, ধর্ম বিশ্বাস ব্যক্তিগত৷ আর যাঁরা কোনো একটি বিশেষ ধর্মে বিশ্বাস করেন, তাঁদের সঙ্গে তর্ক করা চলে না৷ কথায় আছে না ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর’? তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরধর্ম-সহিষ্ণুতা৷ অর্থাৎ নিজের যে ধর্মের প্রতিই বিশ্বাস অথবা অবিশ্বাস থাকুক না কেন, অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া চাই৷ ইসলাম শব্দের অর্থও কিন্তু শান্তি৷ তাই আপনি হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান অথবা নাস্তিক – যা-ই হোন না কেন, অন্যের ধর্মে আঘাত করা অথবা অন্যের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা – কোনোটাই যে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক সমাজে কাম্য নয়! তাছাড়া ধার্মিক হলেই যে সেই ব্যক্তি ধর্মসহিষ্ণু হবেন, তেমন কোনো কথা নেই৷ তাই তো বহু ধর্মপ্রাণ হিন্দু এবং মুসলমানের মধ্যে আমরা গোঁড়ামি, অসহিষ্ণুতা দেখতে পাই৷ অন্যদিকে এমন মানুষও আছেন, ইংরেজিতে যাঁদের বলা হয় ‘অ্যাগনস্টিক', তাঁরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত নন, অর্থাৎ তাঁরা আস্তিক বা নাস্তিক কোনোটাই নন৷

দেবারতি গুহ, ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের সম্পাদকছবি: DW

বলা বাহুল্য, মুক্ত চিন্তা, সংশয়বাদী চিন্তাধারা এবং প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলোর সমালোচনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘অ্যাগনস্টিক' এবং ‘এথিইস্ট'-দের প্রসার ঘটেছে৷ সেই অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বহু মানুষ নিজেদের ‘নাস্তিক' বলে পরিচয় দিয়েছেন, দিচ্ছেন৷ সময়ের সঙ্গে ‘এথিইস্ট’ – এই শব্দটির গুণগত নানা পরিবর্তন ঘটেছে৷ নাস্তিক শব্দটি কখনও একটি নঞর্থক বা ‘নেগেটিভ’ শব্দ হিসেবে, কখনও আবার ‘গালি’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ অথচ বিশ্বে আজ এমন অনেক দেশ আছে, এই যেমন জাপান অথবা সুইডেন, যেখানে অধিকাংশ মানুষই নিজেকে নাস্তিক বলে মনে করেন৷ কিন্তু তাই বলে তাঁরা কি কোনো অংশে ছোট? তাঁরা কি আমার-আপনার বা অন্য কারুর ধর্মকে অবজ্ঞা করছে? না৷ তাহলে? তাহলে উপমহাদেশের মানুষ নাস্তিক হলে তা দোষের কেন? কারুর ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বা অন্যের ধর্মকে আঘাত করে কথা বলা অবশ্যই অন্যায়৷ কিন্তু প্রচলিত ধর্ম না মেনে কেউ যদি আমার মতো মানবধর্মে বিশ্বাসী হন, তাহলে দোষটা কোথায়?

দেবারতি গুহ’র বক্তব্যের সঙ্গে আপনিও কি একমত? ভিন্নমত থাকলে লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ