‘সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই' – জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এ কথাটিকেই ‘মন্ত্র' ভেবেছি, ভালোবেসেছি মানবজাতিকে৷ অথচ আজ আমারই দেশের মানুষ দেশমাতৃকাকে কলঙ্কিত করছে৷ ধর্মের দোহাই দিয়ে হত্যা করছে ‘নাস্তিক' মানুষদের৷
বিজ্ঞাপন
হিন্দু বাড়িতে জন্ম৷ তাই খুব ছোটবেলা থেকেই দেব-দেবীদের নানা রকম গল্প – রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ – সব কিছুই পড়তে হয়েছিল৷ আর যতই পড়তাম, বাড়তো প্রশ্ন৷ স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল – শুনতাম এই তিনের অস্তিত্ব৷ পৃথিবী যদি মর্ত্য হয়, আর মাটির তলায় থাকে দৈত্য-দানবে ভরা পাতালপুরি, তাহলে স্বর্গ নিশ্চয় আকাশ৷ তা দেবতারা কি সত্যিই আকাশে থাকে? ইন্দ্রের সভায় ঊর্বশী, মেনকারা সত্যিই নাচে? ছোট বলেই হয়ত এদের নিজের চোখে দেখতে ইচ্ছে করতো খুব৷ কিন্তু দেখতে আর পেলাম কোথায়? এমনকি প্রথমবার যখন বিমানে চেপে আকাশপথে পাড়ি দিলাম, তখন অনেক চেষ্টাতেও মেঘের আনাচে-কানাচে দেব-দেবীর দেখা পাইনি৷
এরপর বয়স বাড়লো, আর তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়লো পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, রসায়ন নিয়ে আগ্রহ৷ সব কার্যকারণের পিছনেই যে বিজ্ঞানের মস্ত বড় একটা হাত আছে, সেটাও ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম৷ একদিকে গ্যালিলিও-কোপার্নিকাস-ডারউইন, অন্যদিকে প্লেটো-সক্রেটিস-মিকেলঅ্যাঞ্জেলো-হেগেল-মার্ক্স অথবা জন স্টুয়ার্ট মিল – পড়াশোনার পরিধি বাড়ার সাথে সাথে মুগ্ধ হলাম ফরাসি বিপ্লবের ‘লিবার্টি, ইকুয়ালিটি, ফ্র্যাটারনিটি'-র মন্ত্রে, বিশ্বাস জন্মালো ঈশ্বরে নয়, ব্যক্তিস্বাধীনতায়৷
ধর্মবিশ্বাস, ধর্মান্তর এবং ধর্মের স্বাধীনতা
ডেভিড স্ট্যাং খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হয়েছেন৷ তবে তিনি সালাফিস্টদের উগ্রতা এড়িয়ে চলেন৷ জার্মানিতে অনেকেই মনে করেন, মানবাধিকারগুলোর মধ্যে ধর্মের স্বাধীনতাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷এসব নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কৌতূহল
ডেভিড স্ট্যাংয়ের কৈশোর থেকেই ধর্মের প্রতি বেশ অনুরাগ৷ নিয়মিত গির্জায় যেতেন, বাইবেল পড়তেন৷ তখন সবকিছু বুঝতে পারতেন না৷ অনেক প্রশ্ন জাগতো৷ কিন্তু উত্তর জানা হতো না৷ এখনো মনে আছে, দম্পতিদের নিয়ে একটা প্রশ্ন জেগেছিল, কিন্তু গির্জার পাদ্রী সে প্রশ্নের উত্তর তাঁকে বলেননি৷
ছবি: DW/K. Dahmann
হতাশা এবং মুসলমান হওয়া
একসময় ক্যাথলিক চার্চ, অর্থাৎ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের গির্জা সম্পর্কে কেমন যেন হতাশ হয়ে পড়লেন ডেভিড স্ট্যাং৷ অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা শুরু করলেন৷ এক মুসলিম আইনজীবীর সঙ্গে পরিচয় হলো৷ তিনি বললেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো৷’’ তাঁর কথা মেনে একসময় সত্যিই মুসলমান হয়েছেন এবং সেই সুবাদে সবকিছুর নতুন মানেও খুঁজে পেয়েছেন স্ট্যাং৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্ম চর্চার দীর্ঘ প্রক্রিয়া
ডেভিড স্ট্যাং মনে করেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার মানে হলো, নতুন করে অনেক কিছু শেখা৷ তিনি জানতেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে মদ্যপান করা এবং শূকরের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ রাখতে হবে দাড়ি৷ যিনি তাঁকে মুসলমান হতে বলেছিলেন, তিনি এ-ও বলেছিলেন যে, মুসলিম হওয়ার অনুভূতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রক্রিয়াটাও অত্যন্ত দীর্ঘ৷
ছবি: DW/K. Dahmann
বিশ্বাসে আপোশ
কাজের সূত্রে ডেভিড স্ট্যাংকে প্রতিদিন হানোফার-বন যাওয়া-আসা করতে হতো৷ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সব সময় হয়ে উঠতো না৷ তাই সকাল আর সন্ধ্যার নামাজের সময়টা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন৷ তিনি মনে করেন, জীবনের সঙ্গে বিশ্বাসের মেলবন্ধন ঘটানোটাই আসল৷
ছবি: DW/K. Dahmann
উগ্রতা পরিহার
২০১২ সালে উগ্র সালাফিস্টদের সহিংসতা দেখেছেন ডেভিড৷ তারা যেভাবে সন্ত্রাসবাদের পক্ষে যুক্ত দেখায়, তা মানতে পারেননি তিনি৷ সন্ত্রাসবাদীদের মতো ভয় দেখাতে তারা গলার কাছে বোমাও ঠেকায়৷ সালাফিস্ট সম্পর্কে তাঁর একটাই কথা, ‘‘আমি এমন কিছুর সঙ্গে থাকতে চাইনা৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যাথলিক চার্চ ছাড়লেন উটে
উটে লাস-এর জন্ম ক্যাথলিক পরিবারে৷ ধর্মতত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী ছিলেন৷ কিন্তু ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে কিছু সমস্যাও যে হবে তা তিনি বুঝতেন৷ উটে বুঝতেন, ‘‘ক্যাথলিক থাকলে ধর্মতাত্ত্বিক হয়েও তেমন কিছু করতে পারবো না৷’’ এ সব ভেবে চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন উটে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
অন্তর্দ্বন্দ্ব...
উটের স্বামী প্রটেস্ট্যান্ট হলেন৷ ফলে এবার প্রটেস্ট্যান্টদের গির্জায় যাওয়ার সুযোগ পেলেন উটে৷ তাঁর ছেলেটা সমবয়সিদের সঙ্গে খেলতো৷ ওরও চার্চে যাওয়ার ইচ্ছা৷ কয়্যারে যোগ দিতে চায় সে৷ এ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পাঁচ বছর সময় নিয়েছিলেন উটে৷ নারী যাজক আনেগ্রেট কোহেন (বাঁ দিকে) এবং নিনা গুটমান (মাঝে) উটের এ সব অন্তর্দ্বন্দ্ব সমাধানে সহায়তা করেছিলেন৷
ছবি: DW/K. Dahmann
সহনশীলতা
ব্যাপারটিকে উটের বন্ধুরাও খুব ভালোভাবেই নিয়েছিলেন৷ বন্ধুদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে দীক্ষা নিয়ে চার্চে যাওয়া শুরু করলেন উটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গির্জায় ভিড় কমছে
কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে লোকজনের গির্জায় যাওয়ার প্রবণতা কমছে৷ গির্জার সদস্য বাড়াতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ৷ বন শহরের ক্যাথলিক তথ্যকেন্দ্র ফিডেস-এ ধর্মের বিষয়ে সবাইকে আগ্রহী করে তোলার কাজটি করেন যাজক টোমাস ব্যার্নার্ড (ডানে)৷
ছবি: DW/K. Dahmann
কারণ কেলেঙ্কারি?
গির্জায় আর আগের মতো বেশি মানুষ আসছে না কেন? অনেকে মনে করেন, সাম্প্রতিক কালে পাদ্রিদের যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর খবর এক্ষেত্রে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে৷ যাজক টোমাস ব্যার্নার্ডও এ সম্পর্কে কিছুটা একমত৷ তিনি মনে করেন, এসব খবর বেশি প্রচার করে মিডিয়া বেশ ক্ষতি করেছে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্মের স্বাধীনতা
ধর্মান্তরিত হয়েছেন, এমন অনেকেই মিউনিখ শহরের একটা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন৷ প্রদর্শনীতে মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের স্বাধীনতার কথাও প্রচার করা হয়৷
ছবি: Jüdisches Museum München 2013
11 ছবি1 | 11
তাহলে কি আমি ‘নাস্তিক'? নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করলাম একদিন৷ কিন্তু উত্তর এলো – না, আমি ধর্মনিরপেক্ষ৷ হিন্দুর বাড়িতে জন্ম হলেও, পরিবারে, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে বহু ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ ছিল আমার চারপাশে৷ তাছাড়া ছোটবেলা থেকে দুর্গা পূজার পাশাপাশি ঈদের খুশি আর বড়দিনের আনন্দও উপভোগ করেছি আমি, আমরা, এখনও করি৷ পরবর্তীতে ইউরোপে থাকার সুবাদে খ্রিষ্টধর্ম, বিশেষ করে ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রতি আমার অনুরাগও কম নয়৷ ইউরোপীয় স্থাপত্য, কলা, সংগীত ঘরানা, এমনকি রাজনীতিতেও ধর্মের পরোক্ষ অথবা প্রত্যক্ষ ছাপ আমি দেখেছি৷ বিয়েও করেছি এক খ্রিষ্টান পরিবারে৷ তাই অন্যের ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতাকেই আমার কাছে শ্রেয় মনে হয়েছে, মনে হয়েছে মানুষ, মানবতা, মানবিকতার প্রতি আস্থাই পরম ‘ধর্ম'৷
হ্যাঁ, ধর্মের আসল অর্থ আমার কাছে জীবনদর্শন৷ আর সেটা যদি হয়, তাহলে আমার জীবনবোধের সঙ্গে আপনার যে মিল থাকবেই – এমনটা তো না-ও হতে পারে৷ নাস্তিক্যবাদ বা নাস্তিকতা – ইংরেজি ভাষায় যাকে বলে ‘এথিইসম' (গ্রিক শব্দ এথোস থেকে যার উৎপত্তি) – এটাও কি একটা দর্শন, একটা ‘ধর্ম' নয়? হিন্দুত্ববাদ, ইসলাম বা খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে এর পার্থক্য এটাই যে এই দর্শনে ঈশ্বর বা ‘স্রষ্টার' অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয় না৷ বরং এখানে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া হয় সম্পূর্ণ ভৌত বা প্রাকৃতিক উপায়ে৷ অর্থাৎ এই মতবাদ বিশ্বাস নয় যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত৷ অনেকে একে নিরীশ্বরবাদ বলেও চিহ্নিত করেন৷
জীবন, ধর্ম, আচার-অনুষ্ঠানে শুভ-অশুভ শক্তি
‘গুড অ্যান্ড ইভিল পাওয়ার’, শুভ এবং অশুভ শক্তি – তা সে আপনি মানুন আর না মানুন – একে অগ্রাহ্য করার কিন্তু উপায় নেই৷ বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিষ্টান, এমনকি ইসলাম ধর্মেও আমরা অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির জয়ের কথা পাই৷
ছবি: Reuters/S. Pring
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝে
শুভ শক্তি থাকুক আর না থাকুক, শুভ বোধ, আদর্শ মানবজীবনকে অবশ্যই সত্য ও সুন্দরের পথ দেখায়৷ আর তাই, এর বিপরীতের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সৃষ্টির সেই আদি কাল থেকে৷ ভূত-প্রেত, আত্মা বা জিন নিয়ে তাই রয়েছে অসংখ্য গল্প, কল্প-কাহিনি আর তার সঙ্গে সঙ্গে অজস্র আচার-অনুষ্ঠান, অন্ধ বিশ্বাস৷
ছবি: Reuters/S. Pring
আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা
অসুরের অত্যাচার, পাপীদের অনাচার আর অশুভ শক্তির উত্থানে মানবতা যখন ভূলুণ্ঠিত, নিষ্পেষিত, তখন সমস্ত দেবতারা, অর্থাৎ সমস্ত শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা, সব নিপীড়িত-নির্যাতিতরা সংঘবদ্ধ হন৷ তাঁদের আকুল আবেদনেই আবির্ভূতা হন আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গা৷ হিন্দুধর্ম অনুসারে, মহিষাসুর বধের মাধ্যমে শুভ শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি...
বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী, চিন্তা জগতে অশুভ ভাবনার নাম হলো ‘মার’৷ অবশ্য শব্দটি রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা এবং মাইকেল মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্যেও চোখে পড়ে৷ মহাযান বৌদ্ধধর্ম বলে, অশুভ শক্তি ধ্বংস হলে পৃথিবী স্বর্গীয় হয়৷ বুদ্ধদেবের কথায়, ‘‘কাম, ক্ষুধা, পিপাসা থেকে বিরত থাকে ‘মার’-কে দূরে রাখতে পারলে প্রত্যেক জীব ‘বুদ্ধ’ হয়ে উঠতে হতে পারে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
রূপকথা আর ইতিহাসের পাতায়
এশিয়া বা আফ্রিকার মতো ইউরোপেও অশুভ ও শুভ শক্তি নিয়ে নানা লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে৷ একটা সময় ইউরোপে ‘ডাইনি’-দের পুড়িয়ে মারার চল ছিল৷ আবার রূপকথাগুলিতেও ছিল আশ্চর্য সব জাদুর গন্ধ৷ গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয়ের ‘স্নো হোয়াইট’ বা ‘স্লিপিং বিউটি’-তেও আমরা ডাইনি, এঞ্জেল এবং শুভ-অশুভ শক্তির সংঘাতের নজির পাই৷
ছবি: picture-alliance / akg-images
জিন-পরীর অস্তিত্ব
বৌদ্ধ, হিন্দু আর খ্রিষ্টধর্মের পাশাপাশি ইসলামেও রয়েছে জিন-পরীর উল্লেখ, আছে ‘ইবলিশ’ বা শয়তানের কথা৷ এই ‘ইবলিশ’, ‘সিলা’ বা ‘ইফরিত’-রা নাকি সব দুষ্টপ্রকৃতির জিন বা আত্মা, যারা কবরস্থানে থাকে আর যে কোনো আকার ধারণ করতে পারে৷ অবশ্য শুধু অশুভ জিন নয়, আলাদিনের মতো শুভ জিন বা ফেরেশতার কথাও রয়েছে ‘সহস্র এক আরব্য রজনি’ -তে৷
ছবি: Fotolia/ThorstenSchmitt
‘প্রিং কা-এক’ উৎসব
আধুনিক সমাজেও কিন্তু এমন হাজারো আচার-অনুষ্ঠান চোখে পড়ে৷ কম্বোডিয়ার মানুষদের যেমন আজও বিশ্বাস, অশুভ শক্তি অসুখ-বিসুখ নিয়ে আসে, মানুষের ক্ষতি করে৷ তাই ‘প্রিং কা-এক’ উৎসবে সারা গায়ে কালি মেখে, অশুভ আত্মাকে দূর করার কাজে নেমে পড়ে সহজ-সরল গ্রামবাসী৷ উৎসবের শেষ হয় ভূরিভোজ দিয়ে৷
ছবি: Reuters/S. Pring
6 ছবি1 | 6
তাছাড়া নাস্তিকদের মধ্যেও নানান বিভেদ আছে৷ পশ্চিমের দেশগুলোতে নাস্তিকদের সাধারণত পারলৌকিক বিষয়ে আস্থা নেই৷ তাঁরা কোনো বিশেষ মতাদর্শের অনুসারী নয় এবং বিশেষ কোনো আচার-অনুষ্ঠানও পালন করেন না৷ অনেকে আবার ‘নাস্তিক’ শব্দের শিকড়ে গিয়ে এর একটা ব্যাখা খোঁজেন৷ তাঁদের মতে, বেদের প্রতি যাঁদের বিশ্বাস নেই, তাঁরাই নাস্তিক৷ এই যেমন বৌদ্ধ বা জৈন ধর্মাবলম্বীরা৷ অন্যদিকে যাঁরা বেদে বিশ্বাসী, তাঁরা আস্তিক৷
অবশ্য এমন মানুষও আছেন, যাঁরা আমার মতো ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী, বিশ্বাসী যুক্তিবাদ এবং প্রকৃতিবাদে৷ আমার মতে, ধর্ম বিশ্বাস ব্যক্তিগত৷ আর যাঁরা কোনো একটি বিশেষ ধর্মে বিশ্বাস করেন, তাঁদের সঙ্গে তর্ক করা চলে না৷ কথায় আছে না ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর’? তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরধর্ম-সহিষ্ণুতা৷ অর্থাৎ নিজের যে ধর্মের প্রতিই বিশ্বাস অথবা অবিশ্বাস থাকুক না কেন, অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া চাই৷ ইসলাম শব্দের অর্থও কিন্তু শান্তি৷ তাই আপনি হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান অথবা নাস্তিক – যা-ই হোন না কেন, অন্যের ধর্মে আঘাত করা অথবা অন্যের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা – কোনোটাই যে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক সমাজে কাম্য নয়! তাছাড়া ধার্মিক হলেই যে সেই ব্যক্তি ধর্মসহিষ্ণু হবেন, তেমন কোনো কথা নেই৷ তাই তো বহু ধর্মপ্রাণ হিন্দু এবং মুসলমানের মধ্যে আমরা গোঁড়ামি, অসহিষ্ণুতা দেখতে পাই৷ অন্যদিকে এমন মানুষও আছেন, ইংরেজিতে যাঁদের বলা হয় ‘অ্যাগনস্টিক', তাঁরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত নন, অর্থাৎ তাঁরা আস্তিক বা নাস্তিক কোনোটাই নন৷
বলা বাহুল্য, মুক্ত চিন্তা, সংশয়বাদী চিন্তাধারা এবং প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলোর সমালোচনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘অ্যাগনস্টিক' এবং ‘এথিইস্ট'-দের প্রসার ঘটেছে৷ সেই অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বহু মানুষ নিজেদের ‘নাস্তিক' বলে পরিচয় দিয়েছেন, দিচ্ছেন৷ সময়ের সঙ্গে ‘এথিইস্ট’ – এই শব্দটির গুণগত নানা পরিবর্তন ঘটেছে৷ নাস্তিক শব্দটি কখনও একটি নঞর্থক বা ‘নেগেটিভ’ শব্দ হিসেবে, কখনও আবার ‘গালি’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ অথচ বিশ্বে আজ এমন অনেক দেশ আছে, এই যেমন জাপান অথবা সুইডেন, যেখানে অধিকাংশ মানুষই নিজেকে নাস্তিক বলে মনে করেন৷ কিন্তু তাই বলে তাঁরা কি কোনো অংশে ছোট? তাঁরা কি আমার-আপনার বা অন্য কারুর ধর্মকে অবজ্ঞা করছে? না৷ তাহলে? তাহলে উপমহাদেশের মানুষ নাস্তিক হলে তা দোষের কেন? কারুর ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বা অন্যের ধর্মকে আঘাত করে কথা বলা অবশ্যই অন্যায়৷ কিন্তু প্রচলিত ধর্ম না মেনে কেউ যদি আমার মতো মানবধর্মে বিশ্বাসী হন, তাহলে দোষটা কোথায়?
দেবারতি গুহ’র বক্তব্যের সঙ্গে আপনিও কি একমত? ভিন্নমত থাকলে লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷