1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিন্দু-মুসলিম দম্পতিদের অসহায়ত্ব

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৩ জানুয়ারি ২০২১

লাভ জিহাদের ছায়া ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে ভারতে৷ সংস্কৃতিমনস্ক, প্রগতিশীলদের অঞ্চল হিসাবে পরিচিত বাংলাতেও তার নমুনা মিলছে৷ এমন নজির অবশ্য একরযুগ আগেও ছিল

লাভ জিহাদের ছায়া ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে ভারতে৷ সংস্কৃতিমনস্ক, প্রগতিশীলদের অঞ্চল হিসাবে পরিচিত বাংলাতেও তার নমুনা মিলছে৷ এমন নজির অবশ্য একরযুগ আগেও ছিল
ছবি: Aletta Andre

উত্তরপ্রদেশ বা মধ্যপ্রদেশে ভিন্ন ধর্মে বিবাহিত যুগলদের মাঝেমধ্যেই লাভ জিহাদের দায়ে পুলিশি জুলুমের মুখে পড়তে হয়৷ একাধিক গ্রেপ্তারি ইতিমধ্যেই হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে এখানেও সেই আইন কার্যকর করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক নরোত্তম মিশ্র৷ তবে তার আগেই পশ্চিমবঙ্গে দেখা যাচ্ছে তার ইঙ্গিত৷

দক্ষিণবঙ্গের হুগলি জেলার শহরতলির একটি লজে ঘরভাড়া নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন চিত্রশিল্পী তৌসিফ হক ও তার স্ত্রী জয়ন্তী বিশ্বাস৷ সোশ্যাল মিডিয়ার জন্যই বিষয়টি সকলের নজরে আসে৷ 

শুভজিৎ রায়

This browser does not support the audio element.

কী ঘটেছিল?

স্বামী-স্ত্রীর পদবী আলাদা৷ তার জেরেই হুগলির সদর শহর চুঁচুঁড়ায় একটি লজে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে জায়গা পাননি বর্ধমানের বাসিন্দা তৌসিফ৷ তিনি ফেসবুকে দাবি করেছেন, ‘‘আমাদের কাছে ভোটার, আধার, প্যান কার্ড সবই ছিল৷ তা-ও ঘর দেওয়া হয়নি৷’’ সঠিক পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও কেন তৌসিফ ঘর পেলেন না? লজ পরিচালকদের দাবি, ওই দম্পতি নথি দেখাতে চাননি৷ তৌসিফ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘পিকনিকে বিয়ের সার্টিফিকেট কে নিয়ে যায়? শুধু পিকনিকে কেন, যেখানেই যাই মানিব্যাগে এক কপি জেরক্স ও ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে রেখে দিই৷ কারণ, এর আগেও অনেক জায়গায় সার্টিফিকেট দেখতে চেয়েছে৷ কারণটা শুধু ভিন্ন ধর্ম নয়, দুটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েকে অনেক জায়গাতেই রুম দেওয়া হয় না৷’’

বিষয়টি নিয়ে তৌসিফ প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে চাননি৷ শিল্পীর বক্তব্য, তারা আইনত স্বামী-স্ত্রী৷ স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে তাদের বিয়ে হয়েছে৷ সেই সার্টিফিকেট দেখানোর পরেও ঘর দেওয়া হয়নি৷

কী বলছেন অন্যরা?

ঘর ভাড়া নেওয়ার জন্য নথি দেখানোর রেওয়াজ তৈরির বিষয়ে আইনজীবী অঙ্কন বিশ্বাস বলেন, ‘‘এটা অত্যাবশ্যকীয় নয় যে কোথাও বিবাহিতরা থাকলেই তাদের বিয়ের নথি দেখাতে হবে৷ আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হলে কোথায় কাকে নিয়ে গেলেন, সেটা নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ নাক গলাতে পারেন না৷ কিন্তু সাধারণভাবে তারা নাক গলান পুলিশি ভয়ে৷’’

সুহৃতা সাহা

This browser does not support the audio element.

সমাজতত্ত্বের অধ্যাপিকা সুহৃতা সাহা এই প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট আছে৷ দেশে আইন যখন আছে, বাকি জিনিসগুলি অমূলক৷’’ ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘আমাদেরও এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে৷ স্বামীর পদবি ব্যবহার না করার দরুণ আমার আলাদা পদবী ছিল৷ তাই ম্যারেজ সার্টিফিকেট ছাড়া ঢুকতে দেবে না বলা হয়েছিল৷ এসব খুবই নিন্দনীয়৷ প্রাপ্তবয়স্ক যুগলকে একসঙ্গে থাকতে কেউ বাধা দিতে পারে না৷’’ এটা শুধু ধর্মান্তরকরণ-বিরোধী লাভ জিহাদের বিষয় না-ও হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি৷

দুবরাজপুর মহকুমা হাসপাতালের ডাক্তার শুভজিৎ রায় ও তাঁর স্ত্রী নাজমা খাতুনের ১০ বছর আগেই হয়েছিল তিক্ত অভিজ্ঞতা৷ কলকাতার নিকটবর্তী শহরতলিতে ২০০৮ সালেও এই দম্পতি বসবাসের জন্য কোনো ঘরভাড়া পাননি৷ বাড়ির মালিকরা হিন্দু স্বামীর মুসলিম স্ত্রী পরিচয় দেখেই বাড়িভাড়া দিতে আপত্তি করেন৷  ডয়চে ভেলেকে সে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে নাজমা বলেন, ‘‘ডাক্তার রায় একা গিয়ে বাড়ি ভাড়া ঠিক করে আসতেন৷ কিন্তু পরে আমি গেলেই আমার নাম শুনে, শাঁখাসিঁদুর না দেখতে পেয়ে বাড়িভাড়া দেওয়া হতো না৷ প্রকাশ্যে তারা বাড়িভাড়া না দেওয়ার কারণ দেখাতেন না৷ বেশ কয়েকবার এই অভিজ্ঞতার মুখে আমরা পড়েছি৷’’ তৌসিফ ও জয়ন্তীর ঘটনা শুনে এই দম্পতি সেই অতীতকেই রোমন্থন করছেন যেন৷ শুভজিৎ বলেন, ‘‘ব্যাপারটা খুবই ভয়ের৷ সুশিক্ষিত নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে সমাজের এই বিষময় প্রভাব কাটাতে৷ সঙ্গী নির্বাচনের স্বাধীনতাটুকু প্রাপ্তবয়স্কদের মৌলিক অধিকার নয় কি?’’ এই ঘটনার প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা যেমন বিরক্তি দেখিয়েছে, তেমনি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন চুঁচুড়ার ওই লজের সামনে বিক্ষোভও জানিয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ