উপার্জনের তাগিদে টোমাসকে রোজ সকালে দুঘণ্টার জন্য বরফের গভীরে নামতে হয়৷ ১,৩০০ মিটার উচ্চতায় হিমবাহের মধ্যে তাঁর কাজের জায়গা৷ সেখানে পৌঁছনোই একটা অ্যাডভে়ঞ্চার৷ প্রায় ৭৫০ মিটার পুরু হিমবাহের উপর দিয়ে সামরিক বাহিনীর এক রূপান্তরিত গাড়িতে করে সেখানে পৌঁছতে হয়৷
আইসল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিমবাহ লাংইয়োকুল-এর মধ্যে সুড়ঙ্গ তৈরির পরিকল্পনাকে প্রথমে চরম অবাস্তব মনে হতো৷ প্রকল্পের প্রধান কিয়ারটান টর টরবিয়র্নসসন বলেন, ‘‘আর্থিক সংকটের পর এখানে অর্থনীতি যখন আবার মাথা তুলে দাঁড়ালো, তখন তেমন কাজ ছিল না৷ তখন এই আইডিয়াটা আসে৷ এখন সেটা বাস্তব হয়ে উঠেছে৷''
বরফে ছাওয়া অ্যান্টার্কটিকা থেকে প্রতি বছর ১৬ হাজার কোটি টন বরফ গলে যাচ্ছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে বরফ গলার হার চার বছর আগের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে, যাতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর বাড়তে পারে আধা মিলিমিটার করে৷
ছবি: APবিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে মহাসাগরগুলোর উষ্ণ স্রোত এসে পৌঁছাচ্ছে অ্যান্টার্কটিকায়৷ এর সংস্পর্শে এসে গলে যাচ্ছে পশ্চিম, পূর্ব এবং অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপের গ্লেসিয়ার বা হিমবাহগুলো৷ বরফ গলার এই হার ক্রমশ দ্রুততর হচ্ছে৷
ছবি: ESA/dpaঅ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে ঢেকে রাখা বরফের স্তর কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে – তার ওপর বিজ্ঞানীরা নজর রাখছেন ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের মহাকাশযান ক্রাইয়োস্যাটের মাধ্যমে৷ ক্রাইয়োস্যাটের পাঠানো ছবি পরীক্ষা করে তাঁরা বলছেন, সেখানে বরফ স্তরের উচ্চতা প্রতিবছর গড়ে দুই সেন্টিমিটার করে কমছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/NASA‘জিওগ্রাফিক্যাল রিসার্চ লেটার’ জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যান্টার্কটিকার ছয়টি হিমবাহ যেভাবে গলে যাচ্ছে তা আর থামানো সম্ভব নয়৷ বরফের এই নদীগুলো হয়ত কয়েকশ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpaএর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছিলেন, ১৯৫০ থেকে এখন পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা বেড়ে গেছে ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকায় যে পরিমাণ বরফ রয়েছে তার সব যদি গলে যায়, তাহলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ১১ ফুট বেড়ে যাবে৷
ছবি: NASA's Goddard Space Flight Centerউত্তর মেরুর সাগরে বরফের পরিমাণ ২০১২ সালের অক্টোবরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়লেও ১৯৮০ সালের তুলনায় বরফের পরিমাণ এখন প্রায় অর্ধেক৷ যুক্তরাজ্যের গবেষকরা বলছেন, ১৯৮০ সালের অক্টোবরে উত্তর মেরুর সাগরে বরফের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ঘন কিলোমিটার৷ সেখানে গতবছর বরফ পাওয়া গেছে মাত্র নয় হাজার ঘন কিলোমিটার এলাকায়৷
ছবি: picture alliance/ZBঅস্ট্রিয়ার আল্পসে পাস্টেয়ার্সে হিমবাহ গলে যাওয়ার হার সাম্প্রতিক সময়ে নাটকীয় হারে বাড়ছে৷ ফলে হিমবাহে বরফের উচ্চতা বছরে প্রায় ৫০ ফুট করে কমছে৷ ১৯৬৮ সালে হিমবাহটি কোন উচ্চতায় বইতো – তা দেখানো হয়েছে ২০০৬ সালে তোলা এই ছবিতে৷
ছবি: picture-alliance/OKAPIAমানুষ্যসৃষ্ট দূষণেই বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ু৷ এর প্রভাব কতটা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে – তা এক প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেখিয়েছেন ব্রাজিলের শিল্পী নেলে আজেভেদো৷ ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের সহযোগিতায় ২০০৯ সালে জার্মানির বার্লিনে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়৷
ছবি: AP
ইউরোপের সবচেয়ে বড় হিমবাহ সুড়ঙ্গের কাজ শেষ৷ শ্রমিকরা বরফের ৫০০ মিটার নীচে খোঁড়াখুঁড়ি করেছেন৷ টোমাসকে গোটা শীতকাল এখানে কাটাতে হয়েছে৷ শুধু তুষার ঝড়ের সময় প্রবেশপথ রুদ্ধ হলে সুড়ঙ্গের কাজ বন্ধ রাখতে হতো৷ টোমাস আরনাসন বলেন, ‘‘খুবই কঠিন কাজ ছিল৷ কখনো দিনে মাত্র কয়েক মিটার এগোতে পারতাম৷ ফলে অনেক মাস সময় লেগেছে৷''
হিমবাহের মধ্যে ঢুকে দর্শকদের মনে বিস্ময় জাগে৷ এই সুড়ঙ্গ না থাকলে বিজ্ঞানীদের কাছেও অনেক কিছু গোপন থেকে যেত৷ ৩০ মিটার উপরে বরফের প্রাচীন স্তরের নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে৷ আবহাওয়া ইনস্টিটিউটের টরস্টাইন টরস্টাইন্সসন বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, ভিতরে আগ্নেয়গিরির ছাই রয়েছে৷ সম্ভবত ২০১০ সালে এইয়াফিয়াদলাইয়োকুল পাহাড় থেকে৷ সেটি ইউরোপে বিমান চলাচল বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল৷''
উপরে বরফের খোলস প্রায় দিগন্ত পর্যন্ত ছেয়ে রয়েছে৷ আইসল্যান্ডে ইউরোপের সবচেয়ে বড় হিমবাহগুলি দেখা যায়৷ গভীরে নেমে দর্শকরা অবাক হয়ে যান৷ তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে বাঁধা থাকে বলে নয়, তাঁদের মনে গভীর সম্ভ্রম জাগে৷