মাউন্ট এভারেস্ট মানুষকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে৷ তার টানে অনেকেই বিশাল ঝুঁকি নিয়ে অভিযানে বেরিয়ে পড়েন৷ এবার জার্মান বিজ্ঞানীরা আকাশপথে এক অভিনব অভিযান চালিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই পর্বত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
‘পৃথিবীর ছাদ' বলে পরিচিত অঞ্চলে মোটরচালিত গ্লাইডার চালিয়ে যাওয়া সত্যি সাহসি আইডিয়া৷ ডানার নীচে দু'টি অংশে ক্যামেরা রাখার যথেষ্ট জায়গা রয়েছে৷ বিমানটি ভালোই উড়তে পারে৷ পেটার ডামান-এর তাই গর্ব ও আনন্দের শেষ নেই৷ ইঞ্জিনিয়ার ও পাইলট প্রোফেসর পেটার ডামান বলেন, ‘‘হিমালয় অভিযানের লক্ষ্য ছিল এক ঢিলে দুই পাখি মারা৷ একদিকে শক্তিশালী বিমানের প্রয়োজন ছিল৷ সেই বিমানকে আবার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাপের যন্ত্র ও ক্যামেরাও বহন করতে হবে৷ আমাদের কাছে সেটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ৷ এটা ছিল আমাদের কাছে এক অনন্য সুযোগ, কারণ আমরা এভাবে এমন উড়ালের জন্য প্রয়োজনীয় গতিপথ ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারলাম৷''
বিমানে ছিল এই অভিযানের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এক থ্রিডি ক্যামেরা সিস্টেম, যা স্যাটেলাইটের চেয়েও নিখুঁতভাবে পরিমাপ করতে পারে৷ জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টার ডিএলআর-এর ইয়র্গ ব্রাউখলে সেটি তৈরি করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা এমন এক এরিয়াল ক্যামেরা সিস্টেম, যা খুব কঠিন পরিবেশেও কাজ করে৷ এর মধ্যে সরাসরি ছবির নিখুঁত অবস্থান নির্ণয় করতে ন্যাভিগেশন সিস্টেম রয়েছে৷ চারটি ক্যামেরা হেড রয়েছে, যার মধ্যে দু'টি নীচের দিকে চেয়ে রয়েছে – একটি ডানে, অন্যটি বামে৷ উঁচু অবস্থানেও কাজ করতে পারে, উচ্চ মানের এমন এক কম্পিউটার সিস্টেমও আছে৷ তাতে এক্সটার্নাল হার্ড ডিস্ক রয়েছে, যাতে বিমান অবতরণের পরই তা খুলে নেওয়া যায়৷''
হিমালয় কন্যার কান্না
২৫শে এপ্রিল নেপালে ৭.৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ বিধ্বস্ত হয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা স্থাপনা ও ঐতিহাসিক স্থান৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
৬৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
আট দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নেপালের প্রায় ৬৬ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কাঠমান্ডুর জাতিসংঘ কার্যালয়৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
উদ্ধার কাজ
ইট, সিমেন্ট, কাঠের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে হতাহত ব্যক্তিদের বের করে আনছেন উদ্ধারকর্মীরা৷ তবে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় উদ্ধার অভিযানে সময় লাগছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Shrestha
খোলা আকাশের নীচে লাখো মানুষ
ভূমিকম্পের পর থেমে থেমে হচ্ছে পরাঘাত (আফটার শক)৷ তাই আতঙ্ক নিয়ে তাঁবু আর খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছেন ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপালের বাসিন্দারা৷ যাদের ঘর বিধ্বস্ত হয়নি, তাঁরাও ঘরে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন৷ শনিবারের ওই ভূমিকম্পের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷
ছবি: imago/Xinhua
বেসক্যাম্পে উদ্ধার কাজ
ভূমিকম্পের প্রভাবে তুষার ধসের ফলে মাউন্ট এভারেস্টের বেসক্যাম্পের কিছু অংশ বরফের নীচে চাপা পড়ে৷ এতে মারা গেছেন ১৮ জন৷ মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে৷
প্রাথমিক সহায়তা হিসেবে ১০ লাখ ডলার দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএসএইড৷ জার্মানির একটি ত্রাণ দল এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে৷ ভারত বেশ কিছু হেলিকপ্টার, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল এবং ৪০টি শক্তিশালী উদ্ধারকর্মী দল ও ডগ স্কোয়াড পাঠিয়েছে৷ রবিবার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি কার্গো বিমানে করে মোট ৩৪ জনের একটি দল কাঠমান্ডু পৌঁছায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Shrestha
আগের দরবার স্কোয়ার
২০১১ সালে তোলা দরবার স্কোয়ারের ছবি এটি৷
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
বিশ্ব ঐতিহ্য বিধ্বস্ত
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া দরবার স্কয়ার ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছে৷ কাঠমান্ডুতে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়েই সাতটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনা রয়েছে, যা বিধ্বস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
বিধ্বস্ত ভীমসেন টাওয়ার
কাঠমান্ডুর অন্যতম পর্যটন স্থান ভীমসেন টাওয়ার৷ ভূমিকম্পে ন’তলা এই টাওয়ারটির কয়েক ফুট ধসে পড়েছে৷ ১৮৩২ সালে এটি নির্মাণ করেছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী ভীমসেন থাপরা৷
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
ভক্তপুর
ভক্তপুরের বেশিরভাগ ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষ
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটা মানুষের কেবল মাথাটা ধ্বংসস্তূপের বাইরে৷ তাই সবাই মিলে চেষ্টা করছেন তাকে উদ্ধারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Shrestha
10 ছবি1 | 10
একটি ম্যারাথন উড়ালের পর টিম এসে পৌঁছেছে৷ হিমালয়ের উপর দিয়ে ওড়ার জন্য বিশেষ অনুমতি নিতে হয়েছিল৷ গ্লাইডারের টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন ৮,০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত কাজ করে৷ অর্থাৎ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার ক্ষমতা তার নেই৷ আরও উপরে উঠতে পাইলটদের উষ্ণ বায়ুর প্রবাহ কাজে লাগাতে হয়েছে৷ সেইসঙ্গে বিমানের গ্লাইডিং ক্ষমতারও সদ্ব্যবহার করতে হয়েছে৷ পাইলট ইয়োনা কাইমার বলেন, ‘‘এই উচ্চতায় পৌঁছনো ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ৷ ইঞ্জিন চালু থাকা সত্ত্বেও বাতাসের প্রবাহ শনাক্ত করে তা কাজে লাগাতে হয়েছে৷ হিমালয় পর্বতের শৃঙ্গগুলির কাছে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতির বাতাস বইতে থাকে৷ দুই পাইলটের প্রত্যেকের জন্য দু'টি করে অক্সিজেনের ট্যাংক রাখতে হয়েছে, সঙ্গে ব্যাকআপ সিস্টেমও ছিল৷ সেই উচ্চতায় তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে গিয়েছে৷ তাই মানানসই গরম জামাকাপড় ও অন্তর্বাসও পরতে হয়েছে৷''
হিমালয়ে প্রথম উড়াল এই টিমের জন্য খুবই সফল হয়েছে৷ আদর্শ পরিবেশ পেলে অসাধারণ ছবি তোলারও সুযোগ পাওয়া যায়৷ পাইলটরা এমন অভিজ্ঞতা কোনোদিন ভুলতে পারবেন না৷ এই উড়ালের ফলে অভূতপূর্ব থ্রিডি মডেল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে৷ ফলে এবার আরও নিখুঁতভাবে ধস বা তুষার ধসের পূর্বাভাষ দেওয়া সম্ভব হবে৷ অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো যাবে৷ প্রোফেসর পেটার ডামান বলেন, ‘‘প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এই অভিযানের ফলাফল দেখে খুবই সন্তুষ্ট৷ আমাদের জন্য এ একেবারে নতুন ও ভালো জ্ঞান, এমন উড়াল থেকে যা পাওয়া যায়৷ এমন টিমের সঙ্গে, এমন সিস্টেম তৈরি করে, তা ওড়ার উপযোগী করে তুলে আমরা খুবই সমৃদ্ধ হয়েছি৷ এ সবের ফলে অসাধারণ পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে৷''
হিমালয়ের অহংকার: নেপালে এলজিবিটি প্যারেড
নেপালের ‘লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডার’ বা এলজিবিটি সম্প্রদায় ১১ই আগস্ট পঞ্চমবারের মতো বার্ষিক সমকামী প্যারেডের আয়োজন করে, যার নাম ‘গাইযাত্রা প্রাইড ফেস্টিভাল৷’
ছবি: picture alliance/AP
সমকামী বিয়ের আশা
নেপালের সর্বোচ্চ আদালত সমলিঙ্গের বিয়ের ব্যাপারটি নিয়ে গবেষণা করছে৷ সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে এবং নতুন সংবিধানে একটি ধারা থাকবে এ বিষয়ে৷ এছাড়া শিশু দত্তক নেয়া, সম্পত্তির সমান অধিকার, যৌন ব্যাংক হিসাবসহ বিভিন্ন অধিকার থাকবে এই ধারার আওতায়৷
ছবি: picture alliance/AP
সংখ্যালঘুদের অনুষ্ঠান
কয়েকশ লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল এবং ট্রান্সজেন্ডার বা ট্রান্সভেস্টাইট সদস্য রাজধানী কাঠমান্ডুতে ঐ প্যারেডে অংশ নেন৷ গাইযাত্রার অর্থ হলো নেপালিদের গরু উৎসব৷ এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি উৎসব যেখানে ঐ বছর যেসব ব্যক্তি মারা গেছেন তাঁদের স্মরণ করা হয়৷ প্রথাগতভাবে এই একমাত্র দিন যেদিন নেপালের মানুষ যা ইচ্ছে পোশাক পড়তে পারে৷ গত পাঁচ বছর ধরে এই একই উৎসব এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য উৎসবে পরিণত হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
প্রথায় পরিণত
শত শত বছর ধরে যে দেশে ধর্মীয় রাজতন্ত্রের প্রচলন ছিল, সেখানে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার যেন এটা একটা উদাহরণ৷ দরিদ্র হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এই জাতিটি একসময় সামাজিকভাবে ভীষণ রক্ষণশীল ছিল৷ ফলে এই পরিবর্তন বেশ চোখে পড়ার মতো৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সমকামী ও সংখ্যালঘু অন্য সম্প্রদায়ের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার হয় ২০০৭ সালে এই দেশটি৷
ছবি: picture alliance/AP
বাস্তবতা
কাঠমান্ডুর সেন্ট্রাল স্কয়ারে এত মানুষ ঐ প্যারেডে অংশ নেয় যে প্যারেডটির দীর্ঘ হয় এক কিলোমিটার৷ প্রায় ৩ হাজার পুরুষ ও নারী সমকামী প্যারেডে যোগ দেন৷ নেপালি পুরুষরা মেয়েদের পোশাক পরে ঐতিহ্যবাহী এক উৎসব পালন করে আসছে৷
ছবি: picture alliance/AP
তৃতীয় লিঙ্গ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমকামী সম্প্রদায়ই প্রথম যাঁরা নিজেদের পরিচয়ের অধিকার চেয়েছে৷ তবে তাঁরা দেশের সংখ্যালঘু উপজাতি সম্প্রদায়ের অধিকারের সাথে নিজেদের অধিকারটির দাবি জানিয়েছিল ২০০৭ সালে৷ পরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়৷
ছবি: picture alliance/landov
অঙ্গীকার পূরণের দাবি
গাইযাত্রা উৎসবের এবছরের স্লোগান ছিল – ‘আমার দেশ, আমার সংবিধান, আমার অধিকার, আমার পরিচিতি, আমার অহংকার’৷ বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে প্যারেডে অংশ নেন এলজিবিটি সম্প্রদায়৷ সেখানে সরকারকে অঙ্গীকার পূরণের দাবি জানানো হয়৷ এছাড়া সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধ করার দাবিও উঠে আসে ব্যানারে৷ প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা এ বছরই এ অঙ্গীকার পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/AP
6 ছবি1 | 6
মাউন্ট এভারেস্ট সার্ভে করা সত্যি বিমান চলাচলের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য সাফল্য৷ সেইসঙ্গে সর্বাধুনিক ডিজিটাল সরঞ্জামের দৌড়ও দেখা গেছে৷