বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন– হিমালয়ের হিমবাহ গলে যাবার হার বেড়ে যাওয়ায় পর্বতমালার পাদদেশে ইমজার মতো লেকগুলো আরো এমনভাবে ফুলে ফেঁপে উঠবে যে বন্যায় তলিয়ে যেতে পারে নেপালের একাংশ৷
বিজ্ঞাপন
পরিবেশবিদদের ধারণা, এই বন্যায় পানি, কাদা ও পাথরের ঢল নামতে পারে৷ সেই ঢল নেপালের দক্ষিণাঞ্চলের জনঅধ্যুষিত সমতল, রাস্তাঘাট, গ্রাম, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে৷
পরিবেশবিজ্ঞানী অরুন ভক্ত শ্রেষ্ঠ'র মতে, ‘‘দিন দিন ঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে৷ এই ভূখন্ডে বাড়ছে মানুষ, বাড়ছে অবকাঠামো৷'' বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন তিনি৷
গত কয়েক দশকে হিমালয়ের বরফ গলা পানিতে শত শত লেক তৈরি হয়েছে৷ ২০১৪ সালের এক জরিপ বলছে, ১৯৭৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৪শ' ৬৬টি লেক তৈরি হয়েছে৷ এর মধ্যে ২১টি বিপজ্জনক৷
নেপালের পানি ও আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের মহাপরিচালক ঋষি রাম শর্মা বলেন, ‘‘ছোট দেশ হিসেবে হিমবাহ থেকে যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তার খুব অল্পই আমাদের ঠেকানোর সামর্থ্য আছে৷''
বিপজ্জনক লেকগুলোর একটি সুর্কে গ্রামের ইমজা৷ অদ্ভুত সুন্দর এই লেকটি এক সময় বিপজ্জনক ছিল না৷ ১৯৮০ সালে লেকটি অনেক ছোট ছিল৷ ২০১৪ সাল নাগাদ এর আয়তন বেড়েছে তিনগুণ৷ ৫০১০ মিটার উঁচুর এই লেকটির পানি খুব বেশিদিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে বলে মনে করছেন না পরিবেশবিদরা৷
২০১৫ সালে নেপাল ভূমিকম্পের সময় সুর্কে গ্রামের অধিবাসীরা ধরেই নিয়েচিলেন যে, লেকটি থেকে পানি উপচে পড়বে এবং তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাবে৷
হিমালয় কন্যার কান্না
২৫শে এপ্রিল নেপালে ৭.৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ বিধ্বস্ত হয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা স্থাপনা ও ঐতিহাসিক স্থান৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
৬৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
আট দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নেপালের প্রায় ৬৬ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কাঠমান্ডুর জাতিসংঘ কার্যালয়৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
উদ্ধার কাজ
ইট, সিমেন্ট, কাঠের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে হতাহত ব্যক্তিদের বের করে আনছেন উদ্ধারকর্মীরা৷ তবে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় উদ্ধার অভিযানে সময় লাগছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Shrestha
খোলা আকাশের নীচে লাখো মানুষ
ভূমিকম্পের পর থেমে থেমে হচ্ছে পরাঘাত (আফটার শক)৷ তাই আতঙ্ক নিয়ে তাঁবু আর খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছেন ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপালের বাসিন্দারা৷ যাদের ঘর বিধ্বস্ত হয়নি, তাঁরাও ঘরে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন৷ শনিবারের ওই ভূমিকম্পের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷
ছবি: imago/Xinhua
বেসক্যাম্পে উদ্ধার কাজ
ভূমিকম্পের প্রভাবে তুষার ধসের ফলে মাউন্ট এভারেস্টের বেসক্যাম্পের কিছু অংশ বরফের নীচে চাপা পড়ে৷ এতে মারা গেছেন ১৮ জন৷ মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ চলছে৷
প্রাথমিক সহায়তা হিসেবে ১০ লাখ ডলার দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএসএইড৷ জার্মানির একটি ত্রাণ দল এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে৷ ভারত বেশ কিছু হেলিকপ্টার, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল এবং ৪০টি শক্তিশালী উদ্ধারকর্মী দল ও ডগ স্কোয়াড পাঠিয়েছে৷ রবিবার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি কার্গো বিমানে করে মোট ৩৪ জনের একটি দল কাঠমান্ডু পৌঁছায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Shrestha
আগের দরবার স্কোয়ার
২০১১ সালে তোলা দরবার স্কোয়ারের ছবি এটি৷
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
বিশ্ব ঐতিহ্য বিধ্বস্ত
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া দরবার স্কয়ার ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছে৷ কাঠমান্ডুতে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়েই সাতটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনা রয়েছে, যা বিধ্বস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
বিধ্বস্ত ভীমসেন টাওয়ার
কাঠমান্ডুর অন্যতম পর্যটন স্থান ভীমসেন টাওয়ার৷ ভূমিকম্পে ন’তলা এই টাওয়ারটির কয়েক ফুট ধসে পড়েছে৷ ১৮৩২ সালে এটি নির্মাণ করেছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী ভীমসেন থাপরা৷
ছবি: P. Mathema/AFP/Getty Images
ভক্তপুর
ভক্তপুরের বেশিরভাগ ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষ
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটা মানুষের কেবল মাথাটা ধ্বংসস্তূপের বাইরে৷ তাই সবাই মিলে চেষ্টা করছেন তাকে উদ্ধারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Shrestha
10 ছবি1 | 10
গ্রামের অধিবাসী ফুদোমা শেরপা বলেন, ‘‘আমরা তো ভয়ে দৌঁড়ই দিয়েছিলাম৷'' তবে আশ্চর্যজনকভাবে লেক থেকে পানি গড়ায়নি৷ ১২ হাজার মানুষ বেঁচে গেছেন৷
কিন্তু এই ভূমিকম্পে নড়ে চড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ৷ এখন খোঁজা হচ্ছে কীভাবে এই সংকট মোকাবেলা করা যায় তার উপায়৷ এরই মধ্যে লেকের পানি সরিয়ে নেবার বিশাল যজ্ঞ শুরু করা হয়েছে৷ একটি চ্যানেল দিয়ে পঞ্চাশ লাখ কিউবিক মিটার পানি সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ এতে লেকের পানির উচ্চতা কমেছে সাড়ে তিন মিটার৷
তবে এ ধরনের প্রকল্পের খরচ অনেক৷ হিসেব করে দেখা গেছে, পানি সরিয়ে নেয়ার এই প্রকল্পের খরচ ৭৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি নামের একটি আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে প্রকল্পের ৮০ ভাগ খরচ দেয়া হয়েছে৷ বাকিটা দিয়েছে ইউএনডিপি৷
তবে শুধু লেক ইনজাই নয়, এমন অসংখ্য লেক নেপালের জন্য বিরাট আকারের পরিবেশ সংকট তৈরি করছে৷ এ থেকে বের হবার জন্য নেপালকে আরো বড় আকারে প্রতিরক্ষা ও অভিযোজন প্রকল্প নেয়া দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷