1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফুকোশিমার এক বছর

৯ মার্চ ২০১২

১১ই মার্চ প্রথমে ভূমিকম্প, তার হাত ধরে সুনামি এবং তারও পরে পারমাণবিক স্থাপনার বিস্ফোরণ তছনছ করে দিয়েছিল জাপানকে৷ আর এক বছর পরও সে ঘটনা যেন পিছু ছাড়েনি উপকূলীয় মানুষদের৷

Foto: David Guttenfelder/AP/dapd
Japan Erdbeben und Tsunami Fukushima Trümmer in Kesennumaছবি: dapd

সে দিনের সেই সুউচ্চ ঢেউ আঘাত হানে জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে৷ কর্দমাক্ত ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব কিছু – গাড়ি, বাড়ি, দালানকোঠা, উড়োজাহাজ এবং পড়ে থাকা যতোসব ধ্বংসসামগ্রী৷ প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ভেঙ্গে যায় ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দেয়ালও৷

এই সমন্বিত ধ্বংসযজ্ঞের ফলে উপকূলের ছোট্ট শহর মিয়াকো'য় যেন মহাবিপর্যয় নেমে আসে৷ ঐ অঞ্চলের মাটি দুই ফুটের মতো দেবে যায়৷ তীরভূমি থেকে প্রায় ছয় মাইল ভিতরে তীব্রবেগে ঢুকে পড়ে ফলে সুনামির ঢেউ৷ রাতারাতি হারিয়ে যায় অন্ততপক্ষে চারশো মানুষের প্রাণ৷

ফলত দেশের চুয়ান্নটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে এগারটিই বন্ধ করে দিতে হয়৷ প্রশ্ন ওঠে, পৃথিবী নামের প্রিয় গ্রহটির প্রকৃতিতে যে বিপুল পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত রয়েছে, তা মানুষ যদি পরিবর্তন করতে চায় তাহলে প্রকৃতির আক্রোশ কতোটা প্রবল হতে পারে?

মিয়াকো শহরে জলোচ্ছ্বাসছবি: dapd

এর উত্তর যাই হোক না কেন, আজও কিন্তু মিয়াকো'কে দেখলে চেনা যায় না৷ সমুদ্রের তীর ঘেঁষে জায়গায় জায়গায় শুধু তাঁবু – অর্থাৎ শরণার্থী শিবির৷ তারই মাঝখানে একটা খাবার-দাবারের দোকান দিয়েছেন শিরো ওটাটে৷ ভাগ্যই বলতে হবে৷ কারণ যেদিন সুনামি এসেছিল, তার আগেই কেন জানি পাহাড়ের ওপর স্ত্রীর বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন তিনি৷ তা না হলে...ওটাটে'র কথায়, ‘‘আমি যখন এখানে ছিলাম না, ঠিক সে সময় সুনামি এসেছিল৷ নিয়ে গিয়েছিল সবকিছু৷ সবকিছু ডুবে গিয়েছিল জলে৷ আমার তিন দিন লেগেছিল এই দোকানে পৌঁছাতে৷ অবশ্য দোকানটাও ডুবে গিয়েছিল৷ পরে ছাদটা সারাতে হয়েছে৷''

তবে ওটাটে'র মতো কপাল তো আর সবার না৷ তাই যাদের বাড়ি-ঘর ভেঙে গিয়েছিল, তাদের অনেককে আজও জাপানী ‘টাটামি-ম্যাট' দিয়ে তৈরি অস্থায়ী বাড়িতে বাস করতে হচ্ছে৷ সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য তো দূরের কথা, নিজের আগেকার বাসস্থান বা বাড়িতে ফিরে যাওয়ারও জো নেই৷ এই যেমন কাটসুনোরি কোনারি৷ তিনি জানান, ‘‘গত গ্রীষ্মেই সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, দু'বছরের মধ্যেই বাড়িঘর মেরামতির কাজ হয়ে যাবে৷ কিন্তু এখন তো আমার মনে হচ্ছে আগামী তিন-চার বছরেও এতো অসংখ্য বাড়িঘর সারানো সম্ভব নয়৷ তাই আবারো নিজের বাড়িতে, নিজের ভিটেতে ফেরা – আজ আমার কাছে স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়৷''

ফুকুশিমার অভিশপ্ত পরমাণু কেন্দ্রছবি: picture alliance / abaca

এখানেই শেষ নয়৷ বাতাসে ভেসে বেড়ানো পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয়তা আজ পরিবেশ ও স্থানীয় মানুষদের জন্য হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর৷ তাই পারমাণবিক স্থাপনা কেন্দ্রগুলির আশেপাশের অঞ্চল থেকে অন্তত দু লাখের মতো মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে জাপান সরকার৷

অথচ, মানবজাতির পদার্পণের আগে এ গ্রহে পারমাণবিক বিক্রিয়া থেকে কোনো রকমের আণবিক শক্তি সৃষ্টি হয় নি৷ মানুষের হাতই এ গ্রহের আকাশে-বাতাসে তেজষ্ক্রিয়তার প্রচলন ঘটে৷ অবাক করার বিষয়, সে ঘটনার সূত্রপাতও সেই জাপানেই৷ আজ থেকে প্রায় ৬৭ বছর আগে দেশটির হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে মার্কিন বোমারু বিমান আণবিক বোমা নিক্ষেপ করে৷ তাই জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাওতো কান'এর ভাষায়, ‘‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফুকুশিমা'র এই বিস্ফোরণই জাপানে সবচেয়ে কঠিন ও ভয়াবহ সংকট৷'' স্বাভাবিকভাবেই, যার প্রভাব থেকে আজও মুক্তি পায় নি জাপানের মানুষ, পরিবেশ ও প্রকৃতি৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ