সরকার দলীয় হুইপ শামসুল হক চৌধুরীকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহমদু সাইফুল আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ তবে স্ট্যাটাসে তিনি যে অভিযোগ করেছেন তার তদন্ত হবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷
ছবি: bdnews24.com/A. Al Momin
বিজ্ঞাপন
গত ২০ সেপ্টেম্বর ইন্সপেক্টর সাইফুল আমিন নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেন, চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের জুয়ার আসর থেকে গত পাঁচ বছরে ক্লাবটির মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ১৮০ কোটি টাকা আয় করেছেন৷
ইন্সপেক্টর সাইফুল আমিন সর্বশেষ ঢাকার উত্তরা আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নে কর্মরত থাকলেও এর আগে তিনি চট্টগ্রামের হালিশহর থানাসহ আরো কয়েকটি থানায় কর্মরত ছিলেন৷
এই ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর বুধবার তাকে সাময়িব বরখাস্ত করেছে পুলিশ সদরদপ্তর৷ বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ ও পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগে এই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়৷
আদেশে বলা হয়েছে, বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপ, জনসসমক্ষে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন করা ও অসদাচরণের দায়ে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ১২ (১) অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো৷ পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, বিভাগীয় তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ তাকে এখন রংপুর রেঞ্জের ডিজাইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে৷
বড় কথা হলো তিনি সত্য প্রকাশ করেছেন কিনা: ব্যারিস্টার সুমন
This browser does not support the audio element.
এদিকে এই পুলিশ ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে হুইপ শামসুল হক চৌধুরী বুধবারই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন৷
আর এই মামলায় ইন্সপেক্টরের পক্ষে আইনি লড়াই চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইন্সপেক্টর সাহেবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো৷ কিন্তু তিনি হুইপের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তার তো তদন্ত হওয়া দরকার৷ কিন্তু সেই তদন্তের কোনো লক্ষণ আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি না৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি যে তথ্য প্রকাশ করেছেন তার সত্যতা যাচাই করা প্রযোজন৷ তিনি যদি সত্য প্রকাশ করে থাকেন, তাহলে সেটা অপরাধ হতে পারে না৷ তিনি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন কিনা সেটা বড় কথা নয়৷ বড় কথা হলো, তিনি সত্য প্রকাশ করেছেন কিনা৷’’
সুমন বলেন, ‘‘সমাজে সত্য প্রকাশে সাহসী লোকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে৷ আর যারা সাহস করে সত্য প্রকাশ করছেন, তাদের যদি মামলা ও শাস্তির মধ্য দিয়ে দমিয়ে দেয়া হয় তা সমাজের জন্য ভালো নয়৷ এজন্যই আমি তার পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো৷’’
দুই দিকেই তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার: ড. ইফতেখারুজ্জামান
This browser does not support the audio element.
হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত হবে কিনা জানতে চাইলে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত আইজি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী ডয়চে ভেলের কাছে কোনো মন্তব্য না করে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন৷ জনসংযোগ বিভাগের এআইজিকে এ নিয়ে ফোন করে এবং টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি৷
এদিকে হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ও ইন্সপেক্টর সাইফুল আমিন কাউকেই ফোনে পাওয়া যায়নি৷ তবে গত শনিবার চট্টগ্রামে আবাহনী, মোহামেডানসহ পাঁচটি ক্লাবে র্যাবের অভিযানের পর সামশুল হক চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে, মদের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে৷ কিন্তু জুয়ার নামে ক্লাবগুলোতে অভিযান মানা যায় না৷’’
এদিকে টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে দুই দিকেই তদন্ত এবং আইনি ব্যাবস্থা নেয়া দরকার৷ হুইপের বিরুদ্ধে ইন্সপেক্টর যে অভিযোগ করেছেন তার তদন্ত হওয়া দরকার৷ তিনি ওই অবৈধ আয় করেছেন কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিত৷ অন্যদিকে ইন্সপেক্টর সাহেব যেহেতু জানতেন তিনি তো কর্তৃপক্ষকে আগেই জানাতে পারতেন৷ আইনগতভাবেও ব্যবস্থা নেয় যেতো৷’’
কোন দেশে কত বেশি ক্যাসিনো
বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের ব্যবসা চলে ক্যাসিনো নির্ভর গ্যাম্বলিং বা জুয়াকে ঘিরে৷ চীনের মূল ভূখণ্ড আর মুসলিম কিছু দেশ ছাড়া পর্যটন নির্ভর অর্থনীতির প্রায় সব দেশ আর বড় শহরগুলোতেই আছে ক্যাসিনোর রমরমা আয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/F. Fell
যুক্তরাষ্ট্র সবার উপরে
ক্যাসিনোর কথা উঠলে প্রথমেই আসবে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের নাম, নেভাদায় যার অবস্থান৷ ৩৬০ টি ক্যাসিনোর অস্তিত্ব শুধু এই এক অঙ্গরাজ্যেই৷ ইউটাহ, হাওয়াই আর আলাস্কা ছাড়া ক্যাসিনো আছে দেশটির বাকি সব রাজ্যেই৷ সব মিলিয়ে ১৯৫৪ টি ক্যাসিনো চালু আছে যুক্তরাষ্ট্রে, আছে ৯ লাখের উপর স্লট মেশিন৷ ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান আর বছরে ৭০ বিলিয়ন ডলার আয়ের জোগান দেয় সেখানকার এই শিল্প৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/F. Fell
জুয়া ভালোবাসে ক্যানাডার মানুষ
সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্যাসিনো আছে ক্যানাডাতে৷ জনগণকে ক্যাসিনোর মালিকানা আর পরিচালনার প্রথম অনুমতি দিয়েছে উদারমনা দেশটি৷ তাতে সেখানে মোট ক্যাসিনোর সংখ্যা ২১৯ টিতে দাঁড়িয়েছে৷ সবচেয়ে বেশি ৭৩ টি আছে অন্টারিওতে৷ এরপর তালিকায় আছে আলবার্টা আর ব্রিটিশ কলম্বিয়া৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশটির ৭৬ ভাগ মানুষই কোনো-না -কোনো জুয়ার সাথে জড়িত৷ বছরে সাড়ে ১৫ বিলয়ন ডলার লেনদেন হয় এর মাধ্যমে৷
ছবি: imago/imagebroker
মেক্সিকোতে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত
২০৬ টি ক্যসিনো আছে উত্তর আমেরিকার আরেক দেশ মেক্সিকোতে৷ গেম পরিচালনায় এর কোনোটিরই নিজস্ব কোনো প্রোগ্রাম নেই, গোটাটাই কেন্দ্রীয় সার্ভারের মাধ্যমে পরিচালিত৷ কোডারে, বিগ বোলা আর ইমোশন— এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের দখলে অবশ্য মেক্সিকোর ক্যাসিনো শিল্পের বড় অংশটাই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J.Mendez
অতীতের আবহে ফ্রান্স
উত্তর অ্যামেরিকার দেশগুলোকে বাদ দিলে সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্যাসিনো ফ্রান্সে৷ বলতে গেলে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ক্যাসিনোগুলোর দেখা মিলবে এই দেশটিতেই৷ তবে অ্যামেরিকার মতো জাঁকজমকপূর্ণ না হলেও ঐতিহাসিক দিক থেকে এসব খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ যেমন, ১৯১২ সালে চালু হওয়া ক্যাসিনো ব্যারিয়ো দাভিলা৷ সব মিলিয়ে ১৮১ টি ক্যাসিনো চালু আছে ফ্রান্সে৷ এর পরের অবস্থানটি নেদারল্যান্ডসের, ১৬৬ টি আছে সেখানে৷
ছবি: JOHN GURZINSKI/AFP/Getty Images
কথায় কথায় বাজি ব্রিটিশদের
রাজপ্রাসাদ থেকে শুরু করে রাজপথ, বাজি যদি জুয়ার মধ্যে পড়ে তাহলে ব্রিটিশদের চেয়ে এগিয়ে আর কেউ নেই৷ শুধু লন্ডনেই হাজারের উপর বেটিং শপ আছে৷ ২০ লাখের বেশি ব্রিটিশ অনলাইনে জুয়া খেলে৷ এর বাইরে মেফেয়ার আর পিকাডিলির মতো খ্যাতনামা ক্যাসিনোতো আছেই৷ সব মিলিয়ে সংখ্যাটি ১৫৮৷
ছবি: picture-alliance/prismaonline
ম্যাকাও মানেই ক্যাসিনো
সংখ্যায় বেশি না হলে নামিদামি ক্যাসিনোর দিক থেকে লাস ভেগাসের পরেই আসে চীনের স্বায়ত্ত্বশাসিত অঙ্গরাজ্য ম্যাকাওয়ের নাম৷ বলতে গেলে সেখানকার অর্থনীতিই এই শিল্প নির্ভর৷ যুক্তরাষ্ট্রের উইনস্টারের পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাসিনো ভেনিটিয়ানের অবস্থানও এখানে৷ সিটি অব ড্রিমস, পন্টে সিক্সটিন, স্যান্ডস, এমজিএম গ্র্যান্ডও আছে দশের ভিতরে৷ মাত্র অর্ধশত ক্যাসিনোই ম্যাকাওয়ের সরকারের ৮০ ভাগ রাজস্বের যোগান দেয়৷
ছবি: AP
আছে মুসলিম অধ্যুষিত দেশেও
বিশ্বের অনেক মুসলমান প্রধান দেশেও বৈধ ক্যাসিনো আছে৷ সবচেয়ে বেশি ১৭ টি আছে মিশরে, যার ১৪ টি শুধু রাজধানী কায়রোতেই৷ ৯ টি আছে তুরস্কে৷ আফ্রিকার মরক্কোতে আছে সাতটি৷ এছাড়াও মধ্যাপ্রাচ্যের আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, আরব আমিরাত আর এশিয়ার মালয়েশিয়াতেও ক্যাসিনোর অনুমোদন আছে৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/F. Hall
দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশে
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১টি ক্যাসিনো আছে ভারতে৷ গোয়ার পানাজি, গ্যাংটক, মুম্বাইসহ মোট ১১ টি শহরে সেগুলোর অবস্থান৷ ৫ টি ক্যাসিনো আছে শ্রীলঙ্কায়, যার সবগুলোই রাজধানী কলম্বোয়৷ এছাড়া ১১ টি ক্যাসিনো আছে নেপালে আর ৫ টি মিয়ানমারে৷