রোগীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে এক প্রতিবন্ধী হুইল চেয়ারে ২৫০ মিটার উঁচুতে ওঠেন৷ গাড়ি দূর্ঘটনায় পা হারানোর আগে ক্লাইম্বিংয়ে চারবার এশিয়া চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলেন হংকংয়ের এই অসম সাহসী৷
বিজ্ঞাপন
মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে শনিবার ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হুইল চেয়ার চালিয়ে চালিয়ে ২৫০ মিটার উঁচুতে ওঠেন ৩৭ বছর বয়সি লাই চি ওয়াই৷ দশ বছর আগে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় সাবেক এই পর্বতারোহীর কোমরের নীচের অংশ অবশ হয়ে যাওয়ায় কোলুন উপত্যকার ৩০০ মিটার উঁচু নীনা টাওয়ারের চুড়ায় আর উঠতে পারেননি৷ লাই ২০১১ সালের আগে ক্লাইম্বিংয়ে চারবার এশিয়া চ্যাম্পিয়ানহয়েছেন৷ এক সময় সারা বিশ্বে অষ্টম ছিলেন তিনি ৷
শনিবার প্রায় অসাধ্য সাধনের পর তিনি বলেন, ‘‘আমি সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম, পাহাড়ে ওঠার সময় পাথর বা ছোট ছোট গর্তগুলোতে ধরা যায়, কিন্তু এখন আমার গ্লাস দিয়ে শুধু তারের দড়ির ওপর ঝুলে থাকতে হয় ৷'' তবে তার এই প্রচেষ্টায় রোগীদের জন্য ৬৭০,৬৩৯ ডলার সংগ্রহ করতে পেরে তিনি আনন্দিত৷
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের সুযোগ-সুবিধা
অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের পথে রয়েছে বাংলাদেশ৷ জাতিসংঘের জন্য জার্মান সোসাইটির এক গবেষণায় ডয়চে ভেলে দেখাচ্ছে প্রতিবন্ধীরা দেশটিতে কী কী করতে পারেন৷
ছবি: PFDA-VTC
চ্যালেঞ্জ সারাদেশেই
সরকারি পরিসখ্যান বলছে, বাংলাদেশের প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন প্রতিবন্ধী৷ এই হিসেবে দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৬ মিলিয়ন প্রতিবন্ধী৷
ছবি: PFDA-VTC
সহায়তা খুব কম
প্রতিবন্ধীরা সংখ্যায় অনেক হলেও তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে খুব বেশি সহায়তা পায় না৷ ২০১৪ সালে বাংলাদেশে প্যারেন্টস ফোরাম ফর ডিফারেন্সলি অ্যাবিলিটি (পিএফডিএ) নামে একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়৷
ছবি: PFDA-VTC
বাধা পেরিয়ে
এই সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সাজিদা রহমান ড্যানির একজন প্রতিবন্ধী ছেলে আছে৷ ওই সন্তান জন্মের পর তার স্বামী ও পরিবার তাকে ছেড়ে গেলে তিনি একাই সেই সন্তানকে দেখাশোনার পাশাপাশি এই কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করেন৷ তিনি বলেন, "আমার ছেলে আমার প্রেরণা এবং আমার সেরা শিক্ষক।"
ছবি: DW/ R. Ebbighausen
স্বাবলম্বী
প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়ন এবং তাদের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো৷ এই বিদ্যালয়টি প্রমাণ করে যে শিশুদের মধ্যে যারা অটিস্টিক বা ক্রোমোসোমাল ডিসঅর্ডার ট্রাইসমি ২১ এ ভুগছেন তারাও শিখছে এবং ভাল করছে।
ছবি: PFDA-VTC
রোজগারের ক্ষমতা
এই উদ্যোগটি প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রশিক্ষণে জোর দেয় যেন তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে পারেন৷ তারা নিজেদের জন্য উপযোগী পরিবেশ পেলে ভালো চাকরিও করতে পারবে৷ সমাজে এবং পরিবারে তাদের গ্রহণযোগ্যতার মূল চাবিকাঠি হলো কেউ তাদের বাঁকাচোখে দেখছে না৷
ছবি: PFDA-VTC
দোকানি
কারিগরি শিক্ষা নিয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা চিনির তৈরি মিষ্টান্ন তৈরি ও সেগুলো সজ্জিত করতে শেখেন। মিষ্টিগুলো ভাল বিক্রি হয় কারণ তারা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তা তৈরি করেন৷ বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানেও খাবার সরবারহেরও কাজ পান তারা৷
ছবি: DW/R. Ebbighausen
আত্মবিশ্বাস ও গর্ব
শিক্ষার্থীরা তাদের তৈরি পণ্য নিয়ে গর্বিত। বেকারী ছাড়াও তারা গহনার নকশা, ওয়েব ডিজাইন বা সিল্ক পেইন্টিংয়ের কাজ করেন৷ এসব কাজের মধ্য দিয়ে তারা সমাজে নিজেদের অবস্থান এবং আত্মবিশ্বাস খুঁজে পান৷
ছবি: DW/R. Ebbighausen
প্রশিক্ষক এবং থেরাপি
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষকরা অনেক ধৈর্য নিয়ে কাজ করেন৷ অনেকটা ফিজিওথেরাপিস্টদের মত করেই শিক্ষার্থীদের ‘ব্যথাগুলো’ দূর করেন তারা৷
ছবি: PFDA-VTC
সফল্যের উপায়
বিদ্যালয়ে সাফল্যের পর সামিয়া সুলতানা (বাম থেকে প্রথম) এবং তার সহকর্মীদের একটি ক্যাফেতে দেখা যাচ্ছে৷ ২৬ বছর বয়সের এই নারীটি আজ প্রথম উপার্জন করেছেন। সহকর্মীরা তাকে ব্যাংকে নিয়ে গেলেও সম্প্রতি তিনি একটি নাকফুল কিনেছেন, যিনি গত বছর বিয়ে করেছেন৷
ছবি: DW/R. Ebbighausen
আত্মনির্ভরশীল
এই কেন্দ্রর প্রতিষ্ঠার ছেলে এখন স্বনির্ভর জীবনযাপন করছেন৷ তিনি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি দোকানে কাজ করেন এবং বাসে করে সেখানে যাতায়াত করেন৷ একা বাসে যাওয়া-আসা আয়ত্ব করতে দুই বছর সময় লেগেছিল তার৷ কারণ একজন অটিস্টিক হিসেব তিনি ভিড় এবং অন্যের স্পর্শকে বেশ ভয় পান।
ছবি: PFDA-VTC
প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এখন প্রকল্পটিতে সহায়তা করছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর নাততীও একজন অটিস্টিট৷ এই প্রকল্পটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: PFDA-VTC
11 ছবি1 | 11
দুর্ঘটনার পরেও লাই তার হুইলচেয়ারেবিশেষ পুলি সিস্টেম লাগিয়ে ক্লাইম্বিং চালিয়ে যান৷ পাঁচ বছর আগে তিনি ৪৯৫ মিটার উঁচু লায়ন রক পর্বতে উঠেছিলেন৷
লাই বলেন, ‘‘আমি যে একজন প্রতিবন্ধী তা ভুলে গিয়েছিলাম৷ আমি এখনও স্বপ্ন দেখতে পারি , যা পছন্দ করি সেটা করতে পারি৷ তবে অনেকেই প্রতিবন্ধীদের অসুবিধাগুলো বুঝতে পারে না৷ তাদের ধারণা, আমরা দুর্বল, অসহায়, আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি শুধু সবাইকে বলতে চাই, প্রতিবন্ধীদের এমন দুর্বল ভাবা উচিত নয়৷ তারাও অন্যদের মতোই এগিয়ে যেতে পারে, দেখাতে পারে অন্যদেরও আশার আলো৷''