আহত অবস্থাতেই সভা করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসকরা এখনো তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়েনি।
বিজ্ঞাপন
এখনো হাসপাতালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ছয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকেই এক ভিডিওবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, দ্রুত তিনি প্রচারে যেতে চান। প্রয়োজনে হুইল চেয়ারে করে তিনি ঘুরতে চান। সে বিষয়েও শুক্রবার সিদ্ধান্ত নেবে মেডিক্যাল বোর্ড। অন্যদিকে, শুক্রবারই দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিজেপির একাধিক নেতার নামে অভিযোগ জানাতে জানাচ্ছে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল।
বুধবার নন্দীগ্রামে ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে আহত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, পাঁচ-ছয়জন তার গাড়ির উপর হামলে পড়ে। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দিনই মমতাকে নিয়ে আসা হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।
পশ্চিমবঙ্গে কীভাবে লড়ছেন মমতা
আগামী ২৭ মার্চ থেকে আট পর্বের বিধানসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে। কেমনভাবে লড়ছেন গত দশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছবি: Prabhakarmani Tewari/DW
মমতাই প্রথম
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই ২৯১টি কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন। পাহাড়ের তিনটি আসন ছেড়ে দিয়েছেন শরিক গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে। বিজেপি ও বাম জোট প্রথম দুই দফার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। এক্ষেত্রে তিনি বাকিদের থেকে এগিয়ে রইলেন।
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
বাদ ৬৪ জন বিধায়ক
এবার কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। গতবারের ৬৪ জন বিধায়ককে এবার আর প্রার্থী করেননি তৃণমূল-সুপ্রিমো। তাদের কেউ বিজেপি-তে গেছেন। অন্যরা জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। সবমিলিয়ে গতবারের তুলনায় শতাধিক প্রার্থী বদল করেছেন মমতা। নেতাদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ থাকলে তাকে আর প্রার্থী করা হয়নি। ৮০ বছরের বেশি বয়সীরা বাদ পড়েছেন। তাই অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ভোটে লড়ছেন না। উপরের ছবিটি বাজেট পেশ করার সময় অমিত মিত্রর।
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
নতুন কেন্দ্রে মমতা
মুখ্যমন্ত্রী নিজে লড়ছেন নতুন কেন্দ্র নন্দীগ্রামে। তার আগের কেন্দ্র ভবানীপুরে নয়। বিজেপি-তে যোগ দেয়া তার একদা লেফটন্যান্ট শুভেন্দু অধিকারীর চ্যালেঞ্জ ভোঁতা করে দিতে তিনি এই সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ১০ মার্চ তিনি মনোনয়নপত্র পেশ করবেন। নন্দীগ্রামে ইতিমধ্যে বড়সড় জনসভা করেছেন মমতা।
ছবি: DW
কম মুসলিম প্রার্থী
গতবারের তুলনায় এবার তৃণমূলে মুসলিম প্রার্থীদের সংখ্যা কম। তৃণমূল এবার ৪৭ জন মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে। গতবার দিয়েছিল ৫৭ জন। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, হিন্দুরা ক্ষুব্ধ বুঝে মুসলিম প্রার্থী কমিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। পশ্চিমবঙ্গে ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট আছে।
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
প্রচার মমতাময়
তৃণমূলের প্রচার মমতাময়। মুখ্যমন্ত্রী সবকটি কেন্দ্রে প্রচারে যাবেন। জনসভা করবেন। পদযাত্রাও। ইতিমধ্যে কলকাতা ও শিলিগুড়িতে পদযাত্রা করে ফলেছেন। তাই নন্দীগ্রামে তিনি বেশি সময় দিতে পারবেন না, তা আগেই জানিয়ে এসেছেন। সেখানে তার ভোটের দায়িত্বে পূর্ণেন্দু বসু।
ছবি: DW/Sirsho Bandopadhyay
আক্রমণাত্মক প্রচার
বিজেপি-র প্রধান দুই নেতা নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ যে অভিযোগ করবেন, তার জবাব দেয়ার কৌশল নিয়েছেন মমতা ও তার ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোর। বিজেপি এবার প্রচারে অভিষেককে টার্গেট করেছে। মমতা তার জবাব দিয়েছেন। পাল্টা টেনে এনেছেন অমিত শাহের ছেলে জয় শাহের প্রসঙ্গ। প্রধানমন্ত্রীকেও আক্রমণ করেছেন।
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
প্রচারের ভাষা
আক্রমণ করতে গিয়ে অনেক সময়ই ভাষার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না তৃণমূল নেতাদের। মোদী-শাহকে হোঁদলকুতকুত ও কিম্ভূতকিমাকার বলেছেন তৃণমূল নেত্রী। এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করা নিয়ে আপত্তিও উঠেছে।
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
আমল দিচ্ছে না তৃণমূল
অনেকে প্রার্থী হতে পারেননি। অনেকে বাদ পড়েছেন। তা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তুঙ্গে। আরাবুল ইসলাম, সোনালি গুহরা প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছেন। তবে এই ক্ষোভ আমল দিতে চাইছেন না মমতা। তিনি এখন নেমে পড়েছেন ভোটের ময়দানে। শুধু একটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আবার জিতলে তিনি বিধান পরিষদ বানাবেন। বেশ কিছু নেতাকে বিধান পরিষদের সদস্য করা হবে।
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
পিকে-র কৌশল
তৃণমূলের ভোট কৌশল তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে প্রশান্ত কিশোর বা পিকে-র। তিনি একদিকে সামাজিক মাধ্যমে তৃণমূলকে খুবই সক্রিয় করেছেন। অন্যদিকে কীভাবে বিজেপি-র প্রচারের জবাব দিতে হবে, তার পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রার্থীদের বিষয়ে একের পর এক সমীক্ষা করেছেন। দুর্নীতি ও অন্য অভিযোগ নিয়ে মানুষের ক্ষোভ কমানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ছবি: Hindustan Times/Imago Images
কঠিন লড়াই
এবার কঠিন লড়াইয়ের মুখে মমতা। তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে বিজেপি। ফলে পশ্চিমবঙ্গের এবারের ভোট খুবই চিত্তাকর্ষক হবে। মমতার সামনেও লড়াই রীতিমতো কঠিন।
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
10 ছবি1 | 10
মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসক তথা এসএসকেএম-এর প্রধান মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মমতার বাঁ পায়ে গুরুতর আঘাত আছে। এছাড়াও বাঁ কাঁধ এবং হাতেও চোট আছে। মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দৃশ্যত কাহিল ছিলেন। তার মাথায় ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট ছিল। তবে শুক্রবার সকালে তিনি অনেকটাই ভালো আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ওষুধে কাজ হচ্ছে। তবে এখনই তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আহত অবস্থাতেই সভা করতে চাইছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর আঘাত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নানা রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। কোনো কোনো রাজনীতিবিদ যেমন তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন, তেমনই কেউ কেউ বিষয়টিকে 'নাটক' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তৃণমূল অবশ্য গোড়া থেকেই এর পিছনে বিজেপির চক্রান্ত আছে বলে দাবি করছে। নন্দীগ্রামে ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্যও সামনে আসছিল। তবে বৃহস্পতিবার রাতে একটি ভিডিও সামনে এসেছে। তাতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, মমতার গাড়ি ঘিরে ধস্তাধস্তি চলছে।
সম্প্রতি ব্রিগেডে সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তিনি বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্কুটার নন্দীগ্রাম পৌঁছে কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে বিজেপি তার দায় নেবে না। দিলীপ ঘোষ এবং বিজেপি যুব মোর্চার বর্তমান সভাপতি সৌমিত্রও খাঁ-ও একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। সেই মন্তব্যগুলির ভিডিও ক্লিপিং নিয়ে শুক্রবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ জানাতে যাচ্ছে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল। তৃণমূলের দাবি, প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্য সভাপতির বক্তব্যের পরেই নন্দীগ্রামে আক্রান্ত হয়েছেন মমতা। ফলে এর পিছনে যে চক্রান্ত আছে, তা স্পষ্ট। বিজেপি অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।