1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হুমকির মুখে ভোঁদড়

২৫ মার্চ ২০১৪

বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলের আশেপাশে যেসব জেলেদের বাস, তাঁরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে অদ্ভুত এক কায়দায় মাছ ধরতে অভ্যস্ত৷ আর তা হলো ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ ধরা৷ কিন্তু সেই দিন আর নেই৷

Otter Fischerei in Bangladesch
মাছ ধরার জন্য ভোঁদড়দের প্রয়োজন বিশেষ প্রশিক্ষণছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

সুন্দরবনে মাছের সংখ্যা যেমন দ্রুত হারে কমছে, তেমনি কমছে ভোঁদড়ের সংখ্যা৷ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলেরা অদ্ভুত এক কায়দায় ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ ধরেন৷ মাছ ধরার এই পদ্ধতি চলে আসছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে৷ এমন নয় যে ভোঁদড়রা মুখে করে মাছ নিয়ে জেলেদের দিত৷ পদ্ধতিটা হলো, ভোঁদড়দের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া, যাতে তারা মাছকে ডাঙার কাছে বা মাছ ধরার জালের অদূরে নিয়ে যেতে সাহায্য করে৷ আর তার ফলে বিপুল সংখ্যক মাছ ধরা পড়ে জালে৷

৫০ বছর বয়সি শশধর বিশ্বাসের বাস সুন্দরবনে৷ তাঁর পরিবারের প্রত্যেকেই ভোঁদড়দের প্রশিক্ষণ দেয়ায় বেশ দক্ষ৷ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে তাঁরা এই কাজটি করছেন৷ শশধর জানালেন, ‘‘এই ভোঁদরদের উপরই তাঁদের জীবিকা নির্ভর করে৷''

ভোঁদড় আছে জার্মানিতেও...ছবি: picture-alliance/dpa

শশধরের ছেলে বিপুল জানান, ‘‘গাছের গুড়ির আশেপাশে প্রচুর মাছ থাকে৷ ভোঁদড়গুলো ঐ মাছগুলোকে ধাওয়া করে৷ ফলে মাছগুলো জালে আটকা পড়ে৷ এদের ছাড়া মাছ ধরতে গেলে এত বিপুল সংখ্যক মাছ ধরা কখনই সম্ভব না৷''

মাছ ধরার কাজটা সাধারণত করা হয় রাতে৷ শশধর জানান, কোনো কোনো দিন রাতে এই ভোঁদড়দের সাহায্যেই ১২ কেজি ওজনের মাছ, গলদা চিংড়ি এবং কাকড়া ধরেছেন তিনি৷ স্থানীয় বাজারে এ সব মাছ বিক্রি করে প্রতি মাসে এই পরিবার প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করেছে৷ কিন্তু সম্প্রতি কয়েক বছরে এমন বড় বড় মাছ আর ধরা পড়ে না, এমনকি কখনো কখনো জাল শূন্যই থেকে যায় বলে জানান শশধর-পুত্র বিপুল৷

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ জানান, গত কয়েক বছরে মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি ভয়াবহভাবে কমে গেছে৷ তিনি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, নদীর পানি দূষণ, ধানের জমিতে কীটনাশক ব্যবহার এবং বেশি পরিমাণে মাছ ধরার ফলে মাছের প্রজনন একেবারেই হচ্ছে না৷

গত ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন মোস্তফা ফিরোজ৷ তিনি জানান, এই ২৫ বছরে জেলে পরিবারের সংখ্যা ৫০০ থেকে কমে ১৫০ এ নেমে এসেছে৷ ৫০ বছর আগে থেকে লক্ষ্য করলে হয়ত দেখা যাবে যে, এই জীবিকা কমেছে ৯০ ভাগ৷ তাই তাঁর আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই দশকে মাছ ধরার জীবিকাটাই আর থাকবে না৷

শশধরের ছেলে ২০ বছর বয়সি বিপুল বলেন, ‘‘যদি কোনো মাছই না থাকে, তবে ভোঁদড় দিয়ে এই মাছ ধরার পদ্ধতির কোনো মানে হয় না৷ আমার পরিবারের বর্তমান অবস্থার দিতে তাঁকিয়ে দেখুন৷ আমার ভাই-বোন সবাই পড়ালেখা করতে চায়৷ তারা মোটেই পানিতে গিয়ে মাছ ধরতে আগ্রহী নয়৷ তারা যদি পড়ালেখায় উন্নতি করে, তবে একটা সময় তারা এই গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে ভালো চাকরি খুঁজবে৷''

বিপুল আরো জানান, প্রতি মাসে তাঁর উপার্জনের প্রায় অর্ধেকটা চলে যায় পাঁচটি ভোঁদড়কে খাওয়াতে৷ ভাবনার বিষয় হলো, কেবল যে বাংলাদেশ থেকে জেলে সম্প্রদায় বিলুপ্ত হতে চলেছে, তা নয়৷ ওয়াল্ডলাইফ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই ভোঁদড়রাও এখন হুমকির মুখে৷ ছোট লোমের এই ভোঁদড়গুলো ক্রমেই যে বিলুপ্ত হতে চলেছে!

এপিবি/ডিজি (এএফপি, এপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ