অতিরিক্ত মাছ ধরা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্লাস্টিকের দূষণের কারণে বিশ্বের সাগর-মহাসাগর এখন হুমকির মুখে৷ তাই ‘ব্লু ইকোনমি'-র মাধ্যমে সমুদ্র সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
বিজ্ঞাপন
মেক্সিকোতে ৭ই মার্চ থেকে ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হলো বিশ্ব সমুদ্র সম্মেলন, যেখানে বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি বিশ্বের ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদরাও হাজির হয়েছিলেন৷ প্রতি বছর মূলত এতে আলোচনা হয় সাগরকে ঘিরে কীভাবে অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা যায়৷ কিন্তু এবার বক্তাদের কথায় উঠে এলো কীভাবে সমুদ্র সম্পদ রক্ষা করা যায় এবং সাগরকে বাঁচানো যায়৷
মূলত ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সাগরকে রক্ষা করার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উঠে আসে আলোচনায়৷ এই পরিকল্পনার নাম দেয়া হয় ‘ব্লু ইকোনমি' বা নীল অর্থনীতি৷ বিশেষজ্ঞ আলেকজান্ডার কস্তো বলেন, ‘‘নীল অর্থনীতি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশকে রক্ষায় ভূমিকা রাখবে৷'' যেসব মানুষের জীবিকা সাগর-নির্ভর, তাদের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে এর মাধ্যমে৷
আমাদের গ্রহের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি কি ও কোথায়?
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিপদ কোনদিক থেকে ঘটতে পারে? প্রতিবছর ডাভোসের বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সুশীল সমাজের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জরিপ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/NASA
চরম আবহাওয়া
গত বছরের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্টে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিশেষজ্ঞরা ব্রেক্সিট ও নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতিগতি সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছিলেন৷ এবার তার স্থান নিয়েছে চরম আবহাওয়া: ছবিতে যেমন ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ইরমা ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
...তারপরেই আসছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়
ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, ধস নামা, সুনামি, ঝড়ঝঞ্ঝা, বন্যা ও অপরাপর প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুঁকি৷ আবার সাইবার আক্রমণও একটা ঝুঁকি! তবে পঞ্চম স্থানে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ফলশ্রুতি৷ ছবিতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
প্রকৃতি ও জলবায়ু
জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়জনিত ঝুঁকি এবার গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট জুড়ে৷ নজর দেওয়া হয়েছে আগামী দশ বছরে কী ঘটতে চলেছে, তার দিকে: যেমন গত বছরের জুন মাসে বাংলাদেশে বিশাল ধস নেমে একাধিক গ্রাম ও রাস্তা ডুবিয়ে দেয়৷ ছবিতে ত্রাণকর্মীরা চাপা পড়াদের উদ্ধারের কাজে ব্যস্ত৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Str
ধ্বংস ও লীলা
গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র বলতে আজও প্রধানত পারমাণবিক, রাসায়নিক ও জীবাণু বোমাকেই বোঝায়৷ এ ধরনের মারণ প্রযুক্তি যে একটানা এগিয়ে চলেছে ও ছড়িয়ে পড়ছে, তার বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছে গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্ট৷ ছবিতে গত সেপ্টেম্বর মাসে বার্লিনের মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন আন্দোলনকারীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
বুদ্ধিতে ব্যাখ্যা আছে – কিন্তু সমাধান?
স্বল্পমেয়াদে আমাদের বিশ্বের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে চরম আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়৷যেমন গত নভেম্বর মাসে ইরানের কেরমানশাহের ভূমিকম্প (ওপরের ছবি)৷ মোদ্দা কথা হলো, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ব্যবস্থা না করে মানবজাতির নিস্তার নেই৷
ছবি: Hadi Mokhtarian
তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে দিয়েছেন যে, পানির অভাব স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে৷ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পানীয় জলের অভাব মানুষ ও জীবজন্তুকে কষ্টে ফেলা ছাড়াও বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি করছে৷ ছবিতে আফগানিস্তান সীমান্তের কাছে ইরানের জাবোলে একটি উটের লাশ৷
ছবি: Mehr News
বিবেকের দংশন?
এ বছর বিশ্বের প্রথম পাঁচটি ঝুঁকির মধ্যে কোনোটিই অর্থনৈতিক নয়, অথচ ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সে ধরনের ঝুঁকি প্রাধান্য পেয়েছিল৷ তবে অর্থনৈতিক সংকটের ঝুঁকি যে একেবারে লোপ পেয়েছে, এমন নয়৷ ছবিতে এথেন্সের রাজপথে ভিক্ষার আশায় হাত বাড়িয়ে রয়েছেন এক নারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
7 ছবি1 | 7
বিশ্বের অন্তত একশ' কোটি মানুষ মৎস বা মাছের উপর নির্ভরশীল৷ আর কিছু ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র রয়েছে, যারা কেবল মাছ খেয়েই বেঁচে থাকে৷ এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ বিশ্ব ব্যাংকের পরিবেশ বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ক্যারিন ক্যাম্পার জানালেন, ‘‘অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে সমুদ্রের জীববৈচিত্রে অসামঞ্জস্যতা দেখা দিচ্ছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা পড়ছে ঝুঁকির মুখে৷''
জলবায়ু পরিবর্তনেরকারণে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, অম্লতা বাড়ছে, যা প্রবালের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বলা বাহুল্য, এই প্রবালপ্রাচীর মাছেদের অন্যতম আবাসস্থল৷ তাই মাছ তাদের আশ্রয় হারাচ্ছে৷
মাছ কমে যাওয়ার আরো একটি বড় কারণ হলো প্লাস্টিক দূষণ৷ সাগরে প্লাস্টিকের পরিমাণ এত বেড়ে গেছে যে, তা পরিষ্কার করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে৷ বিশ্বের অন্যান্য জলাশয় থেকে যে পরিমাণ মাছ ধরা হয়, সাগর থেকে ধরা হয় তার চারগুণ৷
প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব
গত ১ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে৷ প্লাস্টিক বিক্রি, ব্যবহার এবং তৈরির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে৷ আগামী বছর আরও দেশ এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করবে বলেই বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
প্লাস্টিকহীন সুপারমার্কেট
২০১৮ সালের গোড়াতেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে জানিয়েছেন, ২০৪২ সালের মধ্যে ব্রিটেনকে সম্পূর্ণ প্লাস্টিকমুক্ত করাই তাঁর লক্ষ্য৷ একটি স্লোগানও দিয়েছেন তিনি, ‘‘ক্লিনার, গ্রিনার ব্রিটেন৷’’ সুপারমার্কেটগুলির কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করুন৷’’
ছবি: picture-alliance/Photoshot
প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ কমছে৷ লুক্সেমবুর্গ, ডেনমার্কের মতো বহু দেশ প্লাস্টিক ব্যাগের উপর বিপুল পরিমাণ কর বসিয়েছে৷ জার্মানির সুপারমার্কেটগুলি প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে বার বার ব্যবহার করা যায় এমন অন্য ব্যাগের ব্যবহার চালু করেছে৷
ছবি: Getty Images
কেনিয়ার অবদান
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে সুদূরপ্রসারী এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেনিয়া৷ দেশের কোথাও প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদন করা যাবে না৷ ব্যবহারও করা যাবে না৷ পরিসংখ্যান বলছে, মাসে কেনিয়ায় প্রায় ২৪ মিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহৃত হতো৷ সরকার জানিয়েছে, কেউ নতুন নিয়ম না মানলে তার চার বছর পর্যন্ত জেল এবং ৩৮হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে৷
ছবি: Reuters/T. Mukoya
জিম্বাবোয়ের পদক্ষেপ
জিম্বাবোয়েও তাদের প্যাকেজিং নীতি বদলে দিচ্ছে৷ প্লাস্টিকের তৈরি স্টাইরোফোম বাক্স বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ সাধারণত, যে ধরনের বাক্সে খাবার প্যাক করে দেওয়া হয়৷ কাগজের তৈরি নতুন বাক্স তৈরি করার চেষ্টা করছে তারা৷ বিভিন্ন ফাস্টফুড সেন্টারে প্যাক করে খাবার না দিয়ে ক্রেতাদের রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়াদাওয়া করতে উৎসাহ দেওয়া আহ্বান জানানো হয়েছে৷
ছবি: Environment Management Agency of Zimbabwe
প্লাস্টিকের ইয়ারবাড নয়
স্কটিশ সরকার জানিয়েছে, প্লাস্টিকের তৈরি ইয়ারবাড বা কানখোঁচানি আর সে দেশে ব্যবহার করা যাবে না৷ সাধারণত এগুলি ব্যবহার করে কমোডে ফেলে দেওয়াই অভ্যাস স্কটিশদের৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমোড থেকে পিটে গিয়ে সেই বাডগুলি চলে যাচ্ছে সমুদ্রে৷ সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত৷ বায়োডিগ্রেডেবল বাড অবশ্য ব্যবহার করা যাবে৷
ছবি: Colourbox
5 ছবি1 | 5
অ্যাকোয়াকালচার হতে পারে সাগরের মাছের বিকল্প৷ এরই মধ্যে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক ‘সি ফুড' অ্যাকোয়াকালচারের মাধ্যমে সরবরাহ হয়৷ ফলে এর মাধ্যমে সমুদ্রের মাছের উপর থেকে চাপ কমানো যেতে পারে৷ সমালোচকরা অবশ্য বলছেন, এই পদ্ধতিতে পরিবেশ দূষণ আরও বাড়বে এবং জীববৈচিত্রের জন্য এটি আরো একটি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে৷ তাই ব্লু ইকোনমির মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকাগুলোকে রক্ষা এবং সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা৷
ইরেনে বানোস রুইথ/এপিবি
প্লাস্টিক দূষণ ছাড়া মাছ কমে যাওয়ার আর কী কারণ থাকতে পারে? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷