হার্ট অ্যাটাক বা হৃদযন্ত্রের অন্যান্য সমস্যার ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচাতে ঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি৷ এ জন্য চাই উপযুক্ত হাতিয়ার এবং সেটি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানও৷
বিজ্ঞাপন
দুঃখজনক হলেও এমন ঘটনা প্রতিদিন ঘটে৷ বুকে ব্যথা, নিঃশ্বাসের কষ্ট, বুক চেপে ধরে বসে পড়া, সংজ্ঞা হারানো৷ তখন সময়ের মূল্য টের পাওয়া যায়৷ তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া পরীক্ষা করা৷ কয়েক ধরনের কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া-র ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন৷ তাই অনেক প্রকাশ্য জায়গায় মোবাইল ডিফিলিব্রেটর প্রস্তুত রাখার প্রবণতা বাড়ছে৷
বেশিরভাগ ইউনিটের মধ্যেই সাহায্যকারীদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশ লেখা থাকে৷ সবার আগে ইসিজি করতে হয়৷ এই ইউনিট হৃদযন্ত্রের মাইক্রো-ইলেকট্রিক কারেন্ট পরিমাপ করে৷ হৃদযন্ত্রের পেসমেকার – অর্থাৎ সাইনাস নোড এই মাইক্রো-ইলেকট্রিক স্পন্দন সৃষ্টি করে৷ সাধারণত সেগুলি একটি নির্দিষ্ট ছন্দে হৃদযন্ত্রের পেশির মধ্যে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে৷ এই স্টিমুলাসের কারণে উদ্দীপিত হয়ে হৃদযন্ত্রের পেশি সঙ্কুচিত হয়৷ এই সঙ্কোচনের ফলে হৃদযন্ত্র তার পাম্প করার কাজ চালিয়ে যেতে পারে৷ তারপর পেশিগুলি শিথিল হয়৷ হৃদযন্ত্র আবার রক্তে ভরে যায়৷ ক্রিয়া আবার নতুন করে শুরু হয়৷ ইসিজি অনুযায়ী এই ক্রিয়ায় যদি ব্যাঘাত ধরা পড়ে, তখন সেই যন্ত্র ডিফিব্রিলেটর চালু করে দেয়৷ সেটি তখন নির্দিষ্ট ও শক্তিশালী বিদ্যুতের স্পন্দন দিতে থাকে৷ সেটি হৃৎপিণ্ডের গোটা পেশিকে উদ্দীপিত করে৷ তখন সাইনাস নোড হৃৎপিণ্ডের নিয়ন্ত্রিত ছন্দ আবার চালু করে৷ তখন হৃৎস্পন্দন ঠিকমতো শুরু হয়ে যায় এবং তা শরীরকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন দিতে পারে৷
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ চিনুন, জীবন বাঁচান
জার্মানির হার্ট ফাউন্ডেশনের হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছর আনুমানিক তিন লক্ষ মানুষ হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় জার্মানিতে৷ কিছু নিয়ম মেনে চললে হার্ট অ্যাটাক থেকে দূরে থাকা যায়, সেরকম কিছু টিপস থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Fotolia/Kzenon
হার্টের অসুখ মানেই মৃত্যু নয়!
সারা বিশ্বে হার্ট অ্যাটাকেই সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়৷ তবে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু অবধারিত নয়৷ জার্মানির হামবুর্গ শহরের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. টোমাস স্টাইন বলেন, ‘‘একটু সচেতন হলেই হার্ট অ্যাটাককে দূরে রাখা সম্ভব৷ অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাক কিন্তু কখনো কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে হয় না৷’’
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
পেশাগত চাপ নয়
‘‘আজকের এই প্রতিযোগিতার যুগে যেসব মানুষ নিয়মিত কর্মক্ষেত্রে, অর্থাৎ পেশাগত কারণে চাপের ভেতর থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি৷ তাই কর্মক্ষেত্রে সুস্থ পরিবেশ রক্ষা করতে দ্বন্দ্ব বা সংঘাত এড়িয়ে চলতে হবে’’, বলেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ স্টাইন৷
ছবি: Fotolia/Pfluegl
হার্ট অ্যাটাক কি জানিয়ে আসে?
অনেকের ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাক একেবারে হঠাৎ করেই হয়৷ অর্থাৎ আগে থেকে কিছুই বোঝা যায় না বা বোঝার উপায়ও থাকে না৷ কারো কারো ক্ষেত্রে অবশ্য দেখা যায় যে, আগেরদিন বা কয়েক ঘণ্টা আগেই শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ যেমন বুকে ব্যথা হচ্ছে, আবার কারো বা মনে হয় দম বা নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো কী?
এক নাগাড়ে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে বুকের খাঁচা এবং পেটের ওপরের দিকটায় ব্যথা হয় এবং বমি হয়৷ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ টোমাস বলেন, ‘‘হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবার সময় অনেক রোগীকেই বলতে শুনেছি, ‘আর সহ্য করতে পারছি না, বুকে প্রচণ্ড কষ্ট, ব্যথা আর অসম্ভব জ্বালা হচ্ছে’৷’’
ছবি: Max Tactic - Fotolia.com
হার্ট অ্যাটাকের কারণ বা ঝুঁকিগুলো কী?
অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, মদ্যপান, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, কম হাঁটা-চলা, ডায়বেটিস ইত্যাদি৷ তাছাড়াও বংশগত কারণেও হৃদরোগ বা স্ট্রোক হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance / Sven Simon
কিভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব?
বিশেষজ্ঞদের মতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিগুলো থেকে সাবধান থাকলেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব৷ এ জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া, অর্থাৎ অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার, মাংস থেকে দূরে থাকা৷ ডায়বেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করা উচিত৷ জীবনযাত্রার মান অনেকক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে সক্ষম৷
ছবি: lunamarina/Fotolia.com
হার্ট অ্যাটাক মানেই মৃত্যু নয়!
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা গেলে রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখানো উচিত৷ সময়মতো সঠিক চিকিৎসা হলে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন
পেশাগত দায়িত্ব, পরিবার, সন্তান এবং অন্যান্য সব কিছু মিলিয়ে আজকের যান্ত্রিক জীবনে ‘স্ট্রেস’ বা মানসিক চাপ যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে৷ স্ট্রেস হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে বড় ভূমিকা পালন করে৷ তাই স্ট্রেস থেকে বেরিয়ে আসতে হাঁটাহাঁটি, খেলাধুলা, নাচ, গান, বাগান করা বা অন্য কোনো সখকে বেছে নিন, সপ্তাহে অন্তত দু’দিন৷
ছবি: Fotolia/Kzenon
8 ছবি1 | 8
দ্রুত পদক্ষেপ নিলে প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে, কারণ হৃদযন্ত্র জনিত বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ ফিব্রিলেশন৷ প্রতি মিনিটে বিশ্বের কোথাও না কোথাও কোনো মানুষ কার্ডিয়াক ফিব্রিলেশনের শিকার হচ্ছে৷ ঠিক সময়ে ডিফিলিব্রেটর প্রয়োগ করলে অনেকেরই প্রাণ বাঁচতে পারে৷ শরীরে মধ্যে বসানো ডিফিলিব্রেটরও একইভাবে কাজ করে৷ অপারেশন করে রোগীর বুকের ত্বকের নীচে ইসিজি-র সঙ্গে সংযুক্ত ডিফিব্রিলেটর বসানো হয়৷ হৃদযন্ত্রের পেশির সঙ্গে তা সংযুক্ত করা হয়৷ ইসিজি ফিলিব্রেশন শনাক্ত করলেই ডিফিব্রিলেটর শক্তিশালী বিদ্যুতের স্পন্দন পাঠায়৷
এই ধরনের প্রক্রিয়া রুটিন হয়ে উঠছে৷ দুই-তিন দিনের মধ্যেই রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছে৷ এভাবে অ্যারিথমিয়ার ঝুঁকি আছে – এমন মানুষকে আচমকা হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে মৃত্যু থেকে বাঁচানো সম্ভব৷