হৃদরোগকে ছাপিয়ে গেল ক্যানসার৷ সম্পন্ন বিশ্ব বা বিশ্বের ধনী দেশগুলির ক্ষেত্রে এটাই এখন সত্যি৷ গবেষকেরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে সারা দুনিয়ায় সব থেকে বেশি লোকের মৃত্যুর কারণ হবে ক্যানসার৷
বিজ্ঞাপন
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের সমীক্ষা বলছে, বিশ্বের ধনী দেশগুলিতে এখন ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন৷ অদূর ভবিষ্যতে সারা পৃথিবীতে একই প্রবণতা দেখা যাবে৷ এতদিন সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ ছিল হৃদরোগ৷ কিন্তু ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের দুটি সমীক্ষায় এই বদল দেখা যাচ্ছে৷
বিশ্বে এখনও মধ্যবয়সীদের মধ্যে ৪০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ৷ কিন্তু ধনী দেশগুলিতে এর প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ লোক ক্যানসারে মারা যাচ্ছেন৷ কানাডার লাভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গিলেস ড্যাজেনাইস বলেছেন, ‘‘আমাদের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে ২৬ শতাংশ লোক ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন৷ এক্ষেত্রে এক নম্বরে ছিল হৃদরোগ ও দু-নম্বরে ক্যান্সার৷ কিন্তু হৃদরোগে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ কমছে, তাই কয়েক দশকের মধ্যে ক্যান্সারেই সবথেকে বেশি লোক মারা যাবেন৷''
ক্যানসারের যে ধরনের চিকিৎসা সম্ভব
ক্যানসার চিকিৎসার নানা উপায় রয়েছে৷ রোগের ধরন, মাত্রা এবং নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো অবলম্বন করা হয়৷ চলুন জেনে নেই ক্যানসার চিকিৎসার সাত উপায় সম্পর্কে৷
ছবি: Imago/photothek
সার্জারি
একজন রোগীর দেহ থেকে ক্যানসারের জীবাণু বের করে ফেলতে অনেক সময় সার্জারি করা হয়৷ এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ছোট এবং পাতলা ছুরি ব্যবহার করে চামড়া, মাংস, এমনকি কখনো কখনো হাড় কেটেও রোগীর ক্যানসার আক্রান্ত অংশ বের করে আনেন৷ এই অপারেশনের সময় ব্যথা অনুভূত না হলেও পরবর্তীতে চামড়ার ক্ষত শুকাতে বেশ সময় লাগে এবং সেই সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Philbey
রেডিয়েশন থেরাপি
রেডিয়েশন থেরাপি বা রেডিওথেরাপিতে উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন ব্যবহার করে ক্যানসার সেল ধ্বংস করা হয় এবং টিউমার ছোট করে ফেলা হয়৷ বিষয়টি অনেকটা এক্স-রে’র মতো৷ এক্সরে-তে কম মাত্রার রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়৷ ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে মাত্রাটা বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কেমোথেরাপি
কেমোথিরাপির মাধ্যমে আসলে ঔষধ ব্যবহার করে ক্যানসার সেল ধ্বংস করা হয়৷ এই প্রক্রিয়ায় ক্যানসার সেলের বৃদ্ধি থামানো কিংবা কমানো হয়৷ অনেক সময় শরীরের ভেতরে ক্যানসার টিউমারের আকার ছোট করে ব্যথা কমাতেও কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
ইমিউনথেরাপি
ইমিউনথেরাপির মাধ্যমে আসলে একজন ক্যানসার রোগীর শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করা হয়৷ এটি একটি বায়োলজিক্যাল থেরাপি৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Thompson
টার্গেটেড থেরাপি
টার্গেটেড থেরাপির ক্ষেত্রে ক্যানসার সেলের বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কারণ বের করে তা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়৷ এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা একজন রোগীকে নিয়ে যত গবেষণা করেন, ততই নির্ভুলভাবে রোগ প্রতিরোধের উপায় বের করতে পারেন৷
ছবি: Rhombos Verlag
হরমোনথেরাপি
যেসব ক্যানসার হরমোন ব্যবহার করে শরীরের মধ্যে বৃদ্ধি ঘটায়, সেগুলো প্রতিরোধে হরমোনথেরাপি ব্যবহার করা হয়৷ এই থেরাপির মাধ্যমে রোগ নিরাময় করা হলে তা আবার ফিরে আসার ঝুঁকি কম থাকে৷
ছবি: Colourbox
স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট
উচ্চমাত্রার কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনথেরাপি ব্যবহারের ফলে যেসব ক্যানসার রোগীর শরীরের রক্ত উৎপাদনকারী স্টেমসেল ধ্বংস হয়ে যায়, তাদের চিকিৎসায় স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট থেরাপি ব্যবহার করা হয়৷ এই প্রক্রিয়ায় রোগীর শিরায় সিরিঞ্জের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবান স্টেমসেল প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়৷ এরপর সেগুলো বোন মেরো০তে পৌঁছে কাজ শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ Waltraud Grubitzsch
প্রিসিশন মেডিসিন
এই প্রক্রিয়ায় একজন ক্যানসার রোগীর ‘জেনেটিক্যাল’ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে চিকিৎসকরা তাঁর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন৷ কেউ কেউ এটাকে ‘পার্সোনালাইজড মেডিসিন’-ও বলেন৷ তথ্যসূত্র: ক্যানসার ডটগভ
ছবি: Colourbox/Pressmaster
8 ছবি1 | 8
দু-বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিলেন৷ তার মধ্যে এক কোটি ৭৭ লাখ হৃদরোগে মারা গিয়েছেন৷ আর ৭০ শতাংশ হৃদরোগের কারণ ছিল উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস, বেশি মাত্রায় কোলেস্টোরেল এবং জীবনধারনের অভ্যাসগত ত্রুটি৷ ধনী দেশগুলিতে ওষুধ খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টোরেলের পরিমাণ কম থাকছে৷ ফলে হৃদরোগে মৃত্যুর সংখ্যাও অনেকটা কমে গিয়েছে৷ কিন্তু গরিব দেশগুলোতে অনুন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে হৃদরোগে মৃত্যুর সংখ্যা যথেষ্ট বেশি৷ গরিব ও মাঝারি আয়ের দেশগুলিতে হার্ট অ্যাটাক হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা ও জরুরি ওষুধের স্বল্পতার কারণে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে৷
যে সব দেশে সমীক্ষা করা হয়েছিল তার মধ্যে আছে বাংলাদেশ, ভারত, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কানাডা, চিলি, চীন, পোল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিপিন্স, কলম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ইত্যাদি৷