বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ফুটবল বিশ্লেষক গোলাম সারোয়ার টিপু৷ তিনি নিজে ব্রাজিলের সমর্থক৷ কিন্তু তাঁর বিচার-বিশ্লেষণ বলছে, এবার জার্মানি আর ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা বেশি৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সের চেয়েও জার্মানিকে এক্ষেত্রে এগিয়ে রাখছেন তিনি৷ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশের এই সাবেক ফুটবলার ও কোচের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷
শুরুতেই তিনি বললেন, পাঁচটি দলের এবার বিশ্বকাপ জেতার সামর্থ্য রয়েছে৷ এর মধ্যে তাঁর প্রিয় দল ব্রাজিল ছাড়াও আছে জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা ও স্পেন৷ এই পাঁচটির মধ্যে চারটি দল সেমিফাইনাল খেলবে বলেই তাঁর ধারণা৷
টিপু বলেন, বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার সুযোগ পাওয়ায় সব দলই ভালো৷ তবে বিশ্বকাপ জেতার জন্য প্রয়োজন ফুটবল ঐতিহ্য, নিয়মিত জেতার অভ্যাস, ফাইনাল খেলার অভ্যাস ইত্যাদি৷ ‘‘যেমন ধরুন, কলম্বিয়ার সবসময় ভালো প্লেয়ার ছিল, কিন্তু ঐ যে তাদের অভ্যাস নাই, কিলিং একটা অ্যাটিটিউড দরকার হয় ওয়ার্ল্ড কাপ জেতার জন্য, সেটা নাই৷ সেই জায়গায় সামহাউ দে ল্যাক,'' ব্যাখ্যা করে বোঝালেন তিনি৷
জার্মান দল নিয়ে টিপুর বিশ্লেষণ
তাই ২০ বার আয়োজিত বিশ্বকাপ এখন পর্যন্ত জিতেছে মাত্র আটটি দল৷ এরমধ্যে জার্মানি সবচেয়ে বেশি আটবার ফাইনালে উঠেছে৷ জিতেছে চারবার৷ ‘‘ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো দলও কিন্তু এতবার ফাইনালে খেলেনি,'' এই মন্তব্য করে টিপু জানান, জার্মানির ফুটবল সবসময় তাঁকে অবাক করে৷ তিনি বলেন, ‘‘...এটা (জার্মান দল) একটা মেশিনের মতো৷ মাঠে কোনো সময় কোনো প্লেয়ার একটা সেকেন্ডের জন্যও রিলাক্স করে না৷ এই যে অ্যাটিটিউড, এটা দুর্দান্ত একটা ব্যাপার৷ এটা তারা কীভাবে এত বছর ধরে মেনটেন করছে, তা আমি চিন্তা করে বের করতে পারি না৷ এমনি দেখেন, তাদের কিন্তু ইন্ডিভিজুয়ালি খুব ব্রিলিয়ান্ট প্লেয়ার নেই৷ তারা একটা গ্রুপ৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় জিনিস হলো তাদের বেঞ্চ একই রকমের৷ মাঠে যে ১১ জন খেলে আর বেঞ্চে যারা থাকে, তাদের মধ্যে বেশি ডিফারেন্স নেই৷ এমন দলেরই তো চ্যাম্পিয়ন হওয়া উচিত৷''
এরপর জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভের প্রতিও তাঁর ভালো লাগার কথা জানান৷ ‘‘দেখুন, কোচ ল্যোভ গতবছর কনফেডারেশন কাপে তরুণ দল খেলিয়েছে৷ এই তরুণদের কয়েকজনকে তিনি বিশ্বকাপের দলেও রেখেছেন৷ কনফেডারেশন কাপ খেলায় এই তরুণদের কাছে বিশ্বকাপ খেলাটা চাপের হবে না৷ দারুণ একটা কাজ করেছেন তিনি৷''
অন্যান্য দলের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে টিপু
তবে ফুটবল যে সবসময় নিয়ম মেনে চলে না, সেই কথা সাক্ষাৎকারের বিভিন্ন পর্যায়ে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি৷ জার্মানি যে ব্রাজিলকে সাত গোলে হারাবে, সেটি কেউ ভাবতে পারেনি৷ ‘‘এটিই ফুটবলের সৌন্দর্য,'' বলেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ টিপু৷ তাই তো ফ্রান্সেরও এবার কাপ জেতার বড় সম্ভাবনা দেখছেন তিনি৷ ‘‘ফ্রান্সের আসলে ভালো করা উচিত৷ কারণ, তাদের তরুণ আর অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের একটা ভালো কম্বিনেশন আছে৷ এই প্লেয়াররা যে যার ক্লাব দলে ভালো ভূমিকা রেখেছেন৷ এখন কোচ যদি তাদের মধ্যে টিউনিংটা ভালো করতে পারেন তাহলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা আছে,'' বলেন তিনি৷ সাক্ষাৎকারের এই পর্যায়ে টিপু বিশ্বকাপ জিততে কোচের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেন৷ তিনি বলেন, জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা একেকজন একেক ক্লাবে খেলায় ফুটবল দর্শনও ভিন্ন থাকে৷ ফলে কোচের কাজ হচ্ছে সবাইকে তাঁর নিজের দর্শন মেনে চলতে উদ্ধুদ্ধ করা৷ যে দলের সব ফুটবলার সেটি করতে পারবেন, তারাই সফল হবে বলে মনে করেন টিপু৷
ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা দলের দু'টি সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি৷ এক, প্লেয়ারদের ইনজুরি৷ ব্রাজিলে যেমন নেইমার কেবলই ইনজুরি থেকে ফিরে সরাসরি জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন৷ গত কয়েকমাস তিনি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের বাইরে ছিলেন৷ এছাড়া দানি আলভেস ইনজুরির কারণে দলে নেই৷ আর্জেন্টিনা দলে যেমন শেষ মুহূর্তে ইনজুরির কারণে বাদ পড়েছেন এক নম্বর গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো৷ টিপু বলেন, ‘‘দলের কম্বিনেশন থেকে এমন এক-দু'জন খসে পড়লে আপনি যতই গ্লু লাগান, রিপেয়ারটা তত ভালো হয় না৷''
গ্রুপ বিশ্লেষণ নিয়ে টিপু
টিপুর মতে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, দুই দলেরই প্রথম ১১ জন আর বাকি ফুটবলারদের পারফরমেন্সের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে৷ ফলে প্রথম দলের হঠাৎ কেউ ইনজুরিতে পড়লে বদলি হিসেবে একই মানের প্লেয়ার পাওয়া কঠিন হবে, বলে মনে করেন তিনি৷
টিপু বলেন, গ্রুপ পর্বের খেলা দেখার পর কোন দলের কী অবস্থা সেটি আরও স্পষ্ট হবে৷
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র জাপানের গ্রুপ পর্যায় পেরোনোর সম্ভাবনা দেখছেন তিনি৷ ‘‘টেকনিক্যালি ততটা সাউন্ড না হলেও তারা ব্রেকথ্রু দিতে পারদর্শী৷ ফলে বিরোধীরা সবসময় একটা চাপে থাকবে৷''
গোলাম সরোয়ার টিপুর সঙ্গে কি আপনি একমত? লিখুন নীচের ঘরে৷
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তারকাদের প্রিয় দল
মাশরাফি, সাকিব, তামিম, জেসি, আকরাম বা ক্রিকেটের বর্তমান ও সাবেক অন্য তারকাদের প্রিয় দল কোনটি? ফুটবল, দাবা, টেবিল টেনিসসহ অন্যান্য খেলার তারকারাই বা কোন দলের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে চান? ছবিঘরে থাকছে তারই বিস্তারিত...
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাশরাফি বিন মুর্তজা
মারাদোনাকে দেখে আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়েছেন৷ কিন্তু গতবার আর্জেন্টিনা ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ফুটবল দেখাই বন্ধ করে দিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘‘২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর টিভিতে আর কোনো ফুটবল দেখিনি৷ চার বছর পর সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল দেখলাম একটু৷’’ বিশ্বকাপ অবশ্য দেখবেন, তবে সেটি কোনো প্রত্যাশা নিয়ে নয়, ‘‘তারপর যদি মেসি জিতিয়ে দেয়, তো ভালো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/I.S. Kodikara
সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির
তাঁর আদুরে নাম ছিল ‘বাংলার ম্যারাডোনা’৷ অথচ সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বিরের প্রিয় দল ব্রাজিল! সে দল এবার ২০১৪ সালের মতো হতাশ করবে না বলেই সাবেক এই বলপ্লেয়ারের বিশ্বাস, ‘‘গত বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে নেইমার খেলতে না পারায় জার্মানির কাছে ওভাবে হারতে হয়েছে৷ এবার সেই নেইমার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতাবে বলে আমার বিশ্বাস৷’’
ছবি: Noman Mohammad
সাথিরা জাকির জেসি
২০০২ বিশ্বকাপের সময় বিকেএসপিতে পড়তেন৷ প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর যা করেছিলেন তা মনে করে এখনো হাসেন সাথিরা জাকির জেসি, ‘‘তখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়তাম৷ আর্জেন্টিনা বাদ পড়ার পর হাত কেটে-টেটে খুব বাজে অবস্থা করেছিলাম৷’’ বিশ্বকাপে এখন আরেকটি দলও সমর্থন করছেন এই নারী ক্রিকেটার, ‘‘আর্জেন্টিনার পর আমি জার্মানি৷ গত তিন বিশ্বকাপেই জার্মানির কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা৷ আমার তাই বেশি দুঃখ নেই৷’’
ছবি: Mir Farid
শেখ মোহাম্মদ আসলাম
বাংলাদেশ ফুটবলের স্বর্ণসময়ের প্রতিনিধি তিনি৷ আর বিশ্ব ফুটবলের সুবর্ণ সময়ের দলটির সমর্থক শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ‘‘পেলের ব্রাজিলকেই সমর্থন করেছি সব সময়৷’’ এখন না হয় পেলে নেই, তবে উত্তরসূরিদের কাছে প্রত্যাশা কমেনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের, ‘‘ফুটবল গোলের খেলা৷ আর সেই গোল করার মতো অনেক ফুটবলার রয়েছেন এখনকার ব্রাজিল দলে৷ আমার তাই মনে হয়, তাঁদের বিশ্বকাপ জয়ের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
সাকিব আল হাসান
মেসি আর আর্জেন্টিনার পাগলপারা ভক্ত তিনি৷ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সতীর্থদের সঙ্গে এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের তর্কযুদ্ধ চলে নিয়মিত৷ বছরজুড়ে তা মেসির দল বার্সেলোনাকে নিয়ে, বিশ্বকাপে হবে আর্জেন্টিনার পক্ষ নিয়ে৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল হতাশ করেছে বারবার; কিন্তু আবারও আশায় বুক বাঁধেন সাকিব৷ এবার মেসির হাতে উঠবে বিশ্বকাপ– এ আশায় জাতীয় দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময়ও টিভিতে খেলা দেখবেন চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাবিয়া আক্তার সীমান্ত
১৪ জনের এক দল আছে তাঁদের– কাজিন ও বন্ধু মিলিয়ে৷ বিশ্বকাপের সময় তাঁরা তিন ভাগ– ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল৷ মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ব্রাজিলের পক্ষে৷ কিন্তু বিশ্বকাপের সময় তাঁদের এই গ্রুপের কী যে হবে, এ নিয়ে কপট দুশ্চিন্তায় এসএ গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী এই ভারোত্তলক, ‘‘আমরা বলেছি, বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিলের ম্যাচ সবাই মিলে দেখতে হবে৷’’ প্রিয় দল ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের ব্যাপারে খুব আশাবাদী সীমান্ত৷
ছবি: Khandakar Tarek
কায়সার হামিদ
১৯৮২-র বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ব্রাজিল, কিন্তু হৃদয় জিতে নিয়েছিল বিশ্বজোড়া অনেক ভক্তের৷ কায়সার হামিদেরও৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই ডিফেন্ডারের চোখে এখনো ভাসে জিকো-সক্রেতিসের খেলা৷ এখনকার ব্রাজিল দল নিয়েও আশাবাদী৷ প্রিয় দল ফাইনালে গেলে ইচ্ছে আছে রাশিয়া যাবার, ‘‘২০০২-র ফাইনাল গ্যালারিতে বসে দেখেছি৷ জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল৷ এবারও সেমিফাইনাল, ফাইনালের টিকেটের জন্য চেষ্টা করছি৷ ’’
ছবি: Noman Mohammad
ইমতিয়াজ সুলতান জনি
বাংলাদেশে সমর্থকদের মূল বিভক্তি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়৷ জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার ইমতিয়াজ সুলতান জনি সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম৷ জার্মানির কট্টর সমর্থক তিনি৷ কেন? ‘‘জার্মানরা ম্যাচ শেষ হবার আগে কখনো হাল ছাড়ে না৷ আর লড়াই করে সবাই মিলে,’’ কারণটা জানান এভাবে৷ এই বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যাচ্ছে প্রিয় দল৷ শিরোপা ধরে রাখায় আশাবাদী তিনি, ‘‘অবশ্য ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-স্পেনকে গোনায় ধরতে হবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
তামিম ইকবাল
বন্ধু সাকিব আল হাসানের সঙ্গে প্রিয় দল, প্রিয় খেলোয়াড় কিছুই মেলে না তামিম ইকবালের! বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার ভক্ত সাকিব; রিয়াল মাদ্রিদ ও ব্রাজিলের ভক্ত তামিম৷ ব্রাজিলের সমর্থক হয়েছেন তিনি চট্টগ্রামের বিখ্যাত খান পরিবারের আবহের কারণে৷ বাবা-চাচা সবাই যে ওই দলের সমর্থক! এবারের টুর্নামেন্টে নেইমারের হাতে ট্রফিটা খুব করে দেখতে চান তামিম৷ প্রিয় বন্ধু সাকিবকে তাহলে খোঁচানো যাবে খুব!
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
সাবিনা খাতুন
নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর্জেন্টিনাকে ভালোবেসেছেন মেসিকে দেখে৷ যেমন, সাবিনা খাতুন৷ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘ফুটবল যখন থেকে বুঝি, তখন থেকে তো মেসিকেই কেবল দেখছি৷ মেসির কারণেই আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক৷’’ এ বছর ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে খেলে আসা সাবিনা জানালেন, ‘‘প্রতি বিশ্বকাপই আশা নিয়ে দেখতে বসি৷ এবারও আশায় থাকবো, মেসি যেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেন৷’’
ছবি: Mir Farid
আলফাজ আহমেদ
কিশোর লিগ খেলা ছোট্ট ছেলেটি প্রথম বিশ্বকাপ দেখে ১৯৮৬ সালে৷ আর দিয়েগো মারাদোনাকে দেখার পর মনে হয়, ফুটবলার তাঁকে হতেই হবে৷ তা হয়েছেন আলফাজ আহমেদ৷ প্রিয় দল আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন মারাদোনা৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের এবারের প্রত্যাশা লিওনেল মেসির কাছে, ‘‘ও তো ফুটবলে সব শিরোপাই পেয়েছে৷ আশা করি এবার বিশ্বকাপটাও পাবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
শফিকুল ইসলাম মানিক
১৯৯৮ সালে এক কোচিং কোর্সের জন্য ব্রাজিলে গিয়ে দেখা হয় রোমারিও, বেবেতো, কার্লোস আলবের্তো পারেইরা, মারিও জাগালোর মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে৷ জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক অবশ্য ব্রাজিলকে সমর্থন করেন আরো অনেক আগে থেকেই৷ প্রিয় দলকে নিয়ে এবারও আশাবাদী তিনি, ‘‘আগে গ্রুপ পর্ব পেরোতে হবে৷ এরপর তো নকআউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচই ফাইনাল৷ তবে এবারের ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী৷’’
ছবি: Noman Mohammad
জোবেরা রহমান লিনু
ছিলেন ব্রাজিলের সমর্থক৷ কিন্তু ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মারাদোনার খেলা দেখে সমর্থন পাল্টে যায় জোবেরা রহমান লিনুর, ‘‘মারাদোনার খেলা দেখার পর থেকে আমি আর্জেন্টিনার ভক্ত৷’’ টেবিল টেনিসে জাতীয় পর্যায়ে সর্বাধিক শিরোপায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখানো এই খেলোয়াড় বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেন নিয়মিত৷ বাবার অসুস্থতার কারণে এবার সেদিকে মনোযোগ নেই খুব একটা৷ ‘‘তবে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতলে ভালো লাগবে’’–বলেছেন লিনু৷
ছবি: Khandakar Tarek
আমিনুল হক
তাঁর কাজ ছিল গোল ঠেকানো৷ কিন্তু আমিনুল হক ব্রাজিলের ভক্ত হয়ে যান দলটির গোল করার ক্ষমতা দেখে৷ ‘‘ছোটবেলা থেকেই বিশ্বকাপ দেখি নিয়মিত৷ আর সব সময়ই দেখেছি, ব্রাজিলের গোল করতে সমস্যা হয় না কোনো৷ ডিফেন্সে সমস্যা থাকে৷ কিন্তু এবারের দলটির ডিফেন্সও ভালো৷ আমার তাই মনে হয়, এই ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিততে পারবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
জাহিদ হাসান এমিলি
মারাদোনার শেষ বিশ্বকাপেই তাঁকে প্রথম দেখেন জাহিদ হাসান এমিলি; ১৯৯৪ সালে৷ তাঁর নিজের বয়স তখন সাত বছর৷ কান্নাভেজা ওই আর্জেন্টাইনকে দেখে আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়ে যান বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড৷ তবে প্রিয় দলকে বিশ্বকাপ জিততে দেখেননি কখনো৷ এবারও সে সম্ভাবনা বেশি দেখেন না এমিলি, ‘‘আবেগ একপাশে রেখে বললে, আর্জেন্টিনার জন্য বিশ্বকাপ জয় কঠিন৷ ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেনকেই বরং আমি এগিয়ে রাখবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
আকরাম খান
শুধু বিশ্বকাপ নয়, ইউরোপিয়ান ফুটবলের বিভিন্ন লিগের খেলাও নিয়মিত দেখেন আকরাম খান৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল ব্রাজিল৷ ২০১২ অলিম্পিকে ব্রাজিলের ম্যাচ দেখেছেন গ্যালারি থেকে৷ এবারও যাবেন বিশ্বকাপে৷ সেখানে প্রিয় দলের হাতে ট্রফি দেখতে চান আইসিসি ট্রফিজয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, ‘‘আমি জুলাইয়ের ১০ তারিখ রাশিয়া যাবো৷ একটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল দেখবো৷ আশা করি, নেইমারের হাতে ট্রফি দেখেই ফিরতে পারবো দেশে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
রানী হামিদ
বাংলাদেশে ‘দাবার রানী’ তিনি৷ ছেলে কায়সার হামিদ আবার ফুটবলের কিংবদন্তি৷ রানী হামিদের তাই ফুটবলও প্রিয়৷ আর বিশ্বকাপের প্রিয় দল? ‘‘বাসার সবাই ব্রাজিল সমর্থন করতো বলে আমাকেও তা করতে হতো৷ আমার কিন্তু মনে মনে ইংল্যান্ডকে ভালো লাগতো৷ কারণ, আমাদের সিলেটিদের জন্য ইংল্যান্ড দ্বিতীয় বাড়ির মতো৷ এবারের বিশ্বকাপে এ দুটো দলের একটি চ্যাম্পিয়ন হলে ভালো লাগবে৷’’
ছবি: Khandakar Tarek
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু
৮৬ বিশ্বকাপের সময় মাইনর কাউন্টি খেলার জন্য ইংল্যান্ডে ছিলেন৷ আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড ম্যাচের কথা মনে আছে স্পষ্ট, ‘‘আমি আর নোবেল একটি পাবে খেলা দেখছিলাম৷ মারাদোনা হাত দিয়ে গোল করার পর চিত্কার করে উঠেছিল নোবেল৷ বাকি সবাই চোখ ঘুরিয়ে দেখছিলো ওকে৷’’ ভাইয়ের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কের প্রিয় দল অবশ্য আর্জেন্টিনা নয়, ‘‘আমার পছন্দ ইংল্যান্ড৷ ওরা বাদ পড়ে গেলে জার্মানিকে সমর্থন করবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
হাবিবুল বাশার সুমন
১৯৮২ বিশ্বকাপ তাঁর মনে আছে আবছা৷ ১৯৮৬ বিশ্বকাপ পুরোপুরি৷ এ দুটো আসর ব্রাজিলের জন্য হতাশার হলেও হাবিবুল বাশার সুমনের ভালোবাসার বদল হয়নি৷ এবারও প্রিয় দলের বিশ্বকাপ জয়ের আশায় টিভির সামনে থাকবেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, ‘‘আর্জেন্টিনার ব্যক্তিবিশেষের খেলা হয়তো ভালো লাগে৷ আগে যেমন ছিলেন মারাদোনা, এখন মেসি৷ কিন্তু ব্রাজিল দল হিসেবে খেলে চমত্কার৷ আশা করছি এবার বিশ্বকাপ জিতে সে হতাশা কাটাবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
আবদুল্লাহ হেল বাকি
কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্যপদকজয়ী শুটার আবদুল্লাহ-হেল বাকি আর্জেন্টিনার পাঁড় সমর্থক৷ কেন? উত্তরটাও ওই পাঁড় সমর্থকের মতো, ‘‘খেলা যাঁরা বোঝেন, তাঁরা সবাই আর্জেন্টিনাই সমর্থন করেন৷’’ কিন্তু সেই ‘খেলা বুঝেই’ প্রিয় দলকে নিয়ে এবার খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না বাকী, ‘‘সত্যি বলতে কী, খুব একটা আশা আমি দেখছি না৷ তবে একজন মেসি যখন রয়েছে আর্জেন্টিনার, তখন কিছুই অসম্ভব না৷’’