বাংলাদেশে হেট স্পিচের বিরুদ্ধে যথেষ্ট আইন নেই৷ যেটুকু আছে বেশিভাগ সময়ই তার অপপ্রয়োগ হয়৷ যাঁরা ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ, তাঁরা এই আইনের সুবিধা নিতে পারেন না৷ এমনটিই মনে করেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: হেট স্পিচ বলতে আমরা কী বুঝবো, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কোন বিষয়গুলোকে আমরা এর অন্তর্ভুক্ত করতে পারি?
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ: হেট স্পিচের আসলে কোনো ইউনিভার্সাল ডেফিনেশন এখনো আমরা পাইনি৷ রাষ্ট্রভিত্তিক আইন রয়েছে৷ কেউ যদি ঘৃণা উদ্রেককারী কোনো বক্তব্য কোনো একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, কোনো একটি মানসিকতার বিরুদ্ধে, কোনো একটি চিন্তাধারার বিরুদ্ধে উচ্চারণ করে, সেটাকে আমরা হেট স্পিচ বলে ধরে নিই৷ কিন্তু এটার সার্বজনীন সংজ্ঞা এখনো আসেনি৷ আইনের দিক থেকে বলতে গেলে আমাদের যে পেনাল কোড আছে, সেখানে খুব লিমিটেড একটা জায়গা রয়েছে এ বিষয়ে৷ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে ঘৃণা উদ্রেককারী কোনো কথা যদি কেউ বলে, সেটা হয়ত আমরা হেট স্পিচের অংশ হিসেবে ধরতে পারি৷ কিন্তু হেট স্পিচের যে ব্যাপকতা, সেটা অনেক বেশি৷
সেই ব্যাপকতা যদি একটু ব্যাখ্যা করতেন....বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যে ধরনের কমেন্ট বা পোস্ট ব্যবহার করা হয়, তার বিভিন্ন দিক যদি একটু উল্লেখ করেন...
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমাদের বক্তব্যগুলো যে শুধু ঘৃণা উদ্রেককারী, তা কিন্তু নয়৷ আমরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অ্যাডভান্স হয়েছি, ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের আইনগুলো এখনো সেকেলে রয়ে গেছে৷ এই আইনগুলোর কারণে আমাদের এভিডেন্স অ্যাক্টের কারণে যখন কোনো একটা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তখন আইনের যথেষ্ট প্রয়োগ হতে দেখছি না৷ এমনকি অনেকক্ষেত্রে আইনের অভাবও দেখতে পাচ্ছি৷
ঐতিহাসিক হেট স্পিচ
পৃথিবী জুড়ে রাজনৈতিক নেতারা হেট স্পিচে মেতেছেন৷ তবে রাজনৈতিক ইতিহাসে হেট স্পিচ নতুন কিছু নয়৷ নানা সময়ে নানা নামে নানা কায়দায় হেট স্পিচ চালু ছিল৷ ছবিঘরে তারই কিছু উদাহরণ দেওয়া গেল৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media Co. Ltd
ডোনাল্ড ট্রাম্প
বিশ্ব রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি হেট স্পিচের জন্য নাম কিনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ একবার নয়, বার বার হেট স্পিচ দিয়েছেন৷ তাঁর টার্গেট হয়েছেন কখনো মুসলিমরা আবার কখনো আফ্রিকার মানুষেরা৷ একদা তিনি বলেছিলেন, মুসলিমদের দেশে ঢোকা বন্ধ করে দেবেন তিনি৷ আর আফ্রিকার কয়েকটি দেশের মানুষদের বিষয়ে বলেছিলেন, তাঁরা ‘শিটহোল’ দেশ থেকে এসেছেন৷ যা নিয়ে প্রভূত সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
খেয়ার্ট ভিল্ডার্স
গোটা ইউরোপেই এখন অতি দক্ষিণপন্থিদের বারবাড়ন্ত৷ হল্যান্ডে এখনো দক্ষিণপন্থিরা সেভাবে থাবা বসাতে না পারলেও ডাচ নেতা খেয়ার্ট ভিল্ডার্স সংসদে দাঁড়িয়ে যে বক্তৃতা করেছিলেন তা ডাচ ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কের দিন৷ ভিল্ডার্স বলেছিলেন, ইসলাম একটি খারাপ বিষয়৷ ইসলামের জন্য হল্যান্ডের সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে৷ সংসদেই ভিল্ডার্সকে এরপর চ্যালেঞ্জ করেছিলেন অন্যান্য সংসদেরা৷
ছবি: Imago/Hollandse Hoogte
যোগী আদিত্যনাথ
ভারতে বর্তমান শাসকদল বিজেপি এবং তার সহযোগীরা হেট স্পিচের জন্য বিখ্যাত৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরাসরি অভিযুক্ত গুজরাট দাঙ্গার জন্য৷ হেট স্পিচও দিয়েছেন তিনি একসময়৷ তবে সমসময়ে তাঁর শিষ্য এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হেট স্পিচের জন্য সবচেয়ে কুখ্যাত হয়েছেন৷ উত্তর প্রদেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একাধিক হেট স্পিচ দিয়েছেন তিনি প্রকাশ্যে৷ দাঙ্গাও বাঁধিয়েছেন৷
ছবি: Imago/Zumapress
প্রবীণ তোগাড়িয়া
বিশ্বহিন্দু পরিষদ বিজেপিরই অন্যতম শাখা সংগঠন৷ সেই সংগঠনের প্রধান প্রবীণ তোগাড়িয়া একটি জনসভায় মুসলিমদের কুকুরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন৷ এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বহু মামলা হয়েছে৷ সে সব মামলা এখনো চলছে৷
ছবি: UNI
জর্জ ডাব্লিউ বুশ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগেও বহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেট স্পিচের জন্য ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন৷ ট্রাম্পের সমকক্ষ না হলেও জর্জ ডাব্লিউ বুশ তাঁর অন্যতম৷ বর্ণবিদ্বেষমূলক নীতি গ্রহণের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে৷ বিশেষত স্কুলের ছাত্রদের ক্ষেত্রে তিনি বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/S. Wenig
জন ক্যালভিন কোলড্রিজ
১৯২৩ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন কোলড্রিজ৷ ১৯২৭ সালে হয় ভয়াবহ মিসিসিপি বন্যা৷ অভিযোগ, শ্বেতাঙ্গদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করলেও কোলড্রিজ কৃষ্ণাঙ্গদের উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থাই করেননি৷ বহু কৃষ্ণাঙ্গ সে সময় প্রাণ হারিয়ে ছিলেন৷ পৃথিবী জুড়ে কোলড্রিজের বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়েছিল৷
ছবি: Imago/Ralph Peters
উড্রো উইলসন
১৯১৩ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন উড্রো উইলসন৷ বহু ভালো কাজের জন্য প্রশংসিত হলেও অধিকাংশ মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতো তিনিও হেট স্পিচ দিয়েছেন৷ ক্ষমতায় এসে ফেডারেল শ্রমিকদের কাজের পুনর্নবিকরণ করেছিলেন৷ সে সময় অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গকে চাকরিচ্যূত করেছিলেন৷ যাঁদের কাজ বেঁচে গিয়েছিল, তাঁদের জন্য আলাদা খাওয়ার ঘর, কাজের পরিসরের ব্যবস্থা হয়েছিল৷ শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে কাজ করার অধিকার ছিল না তাঁদের৷
ছবি: Getty Images
আডল্ফ হিটলার
কমিউনিস্ট, মুসলিম এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধে তিনি যা বলেছেন, সবই হেট স্পিচ৷ শুধু বলেছেন না, ইহুদিদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানোরও ব্যবস্থা করেছেন৷ বিশ শতকের দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি হেট স্পিচের রেকর্ড আডল্ফ হিটলারের মুকুটেই৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media Co. Ltd
বেনিটো মুসোলিনি
তাঁর শাসনকালেই ‘ফাশিস্ত’ শব্দটির উদ্ভব৷ বিরোধীদের প্রসঙ্গে যে ধরনের মন্তব্য তিনি করতেন, তা এক কথায় হেট স্পিচ৷
ছবি: picture alliance/AP
ইদি আমিন
১৯৭১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত উগান্ডার স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন ইদি আমিন৷ তাঁর আগের শাসক আবোটের অনুগামীদের বিরুদ্ধে কুৎসিত মন্তব্য করে তিনি নিজের সমর্থকদের তাতিয়ে দিতেন৷ অভিযোগ, আকোলি এবং ল্যাঙ্গো উপজাতির বিরুদ্ধেও একইরকম মন্তব্য করতেন তিনি৷ এবং শেষ পর্যন্ত ওই দুই উপজাতির মানুষদের নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল তাঁর দলবল৷ উগান্ডার ইতিহাসে এখনো যা সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায়৷
ছবি: Getty Images
জোসেফ স্ট্যালিন
সোভিয়েত রাশিয়ার এই কমিউনিস্ট নেতার বিরুদ্ধেও হেট স্পিচের অভিযোগ আছে৷ কেবল অ্যামেরিকা নয়, তাঁর নিজের দেশের বিরোধীদের সম্পর্কেও বহু হেট স্পিচ দিয়েছেন তিনি৷ মানুষ উসকেছেন বিরোধীদের একঘরে করার জন্য৷ বস্তুত আয়রন ক্যাম্পও তাঁরই সৃষ্টি৷
ছবি: AFP/Getty Images
আশিন উইরাথু
তিনি ‘মিয়ানমারের বিন লাদেন’ হিসেবেও পরিচিত৷ এই কট্টর জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু ফেসবুকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে উস্কানি ও বিদ্বেষমূলক পোস্ট দিয়ে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন৷ তার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এতটাই প্রভাব বিস্তার করছিল যে ফেসবুক তাঁর পেজটি মুছে ফেলতে বাধ্য হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Gacad
জুলফিকার আলী ভুট্টো
বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণ পাকিস্তানের শোষণমূলক ব্যবস্থার বিরোধিতা করায় এ নিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোর খুবই মনোকষ্ট ছিল৷ তিনি কখনো মেনে নিতে পারেননি যে, এদেশের মানুষ তাঁর কথার বিরোধিতা করেছে৷ এমনকি প্রকাশ্যে তিনি জনসভাতেই বলে ফেলেছিলেন৷ ঢাকায় এক জনসভায় তিনি বলেই ফেলেছিলেন যে, ‘‘মঞ্জুর হ্যায় তো ঠিক হ্যায়, নেহি মঞ্জুর হ্যায় তো শুয়োর কে বাচ্চে, জাহান্নাম মে যায়ে৷’’
ছবি: STF/AFP/GettyImages
13 ছবি1 | 13
আর আরেকটি ব্যাপার হলো, শুধুমাত্র যে ঘৃণা উদ্রেককারী কথাই হচ্ছে তা নয়, নানারকম অশোভন ভাষায় কথা বলা, বাজে মন্তব্য করা, গালিগালাজ করা – অর্থাৎ, হেট স্পিচ বিষয়টা অনেক ব্যাপক৷ অন্যদিকে আমাদের বক্তব্যেও কোনো লাগাম নেই বলতে গেলে৷ এবং এই পুরো ব্যাপারটি কিন্তু আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না৷ কিছু জিনিস আনা যাচ্ছে৷ কিন্তু সেটার জন্য এত কাঠ-খড় পোড়াতে হচ্ছে যে যাঁরা ভুক্তভোগী তাঁরা সে পর্যন্ত যেতে পারছেন না৷ সুতরাং আমার মনে হয়, আইনের অনেক ব্যাপক পরিবর্তন দরকার এটাকে আপডেট করার জন্য৷
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মৃত্যুর পর আমরা দেখেছি যে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কেউ কেউ বিকৃত মন্তব্য করেছেন, অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করেছেন৷ এগুলো আপনি কীভাবে দেখেছেন?
এগুলো শুধু হেট স্পিচ হবে কেন, এগুলো মানহানিকর বক্তব্য৷ আমি যদি কারুর সুনাম নষ্ট করি, সেটা কিন্তু সুনামহানি ও মানহানিকর৷ আমাদের সংবিধানে যে আর্টিকেল ৩৯ রয়েছে, সেখানে মত বা ভাব প্রকাশের স্বাধীনতাকে আমরা মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছি৷ তবে সংবিধানে ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা যে একটা মৌলিক অধিকার, সেটি কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে৷ সেই শর্তগুলোই মানা হচ্ছে না৷ সেখানে স্পষ্ট করে লেখাই আছে বিষয়গুলো৷ যেমন আদালত অবমাননা করা যাবে না, অন্যের সুনাম হানি করা যাবে না ইত্যাদি৷ সুতরাং আজকে এটা খুবই দুঃখজনক যে, আমাদের হাতে সোশ্যাল মিডিয়া আছে বলেই যে যা খুশি তাই করছি৷ আমি অনেক সময় বলি, যদি একটি ছোট বাচ্চার হাতে একটি ছুরি তুলে দেয়া হয়, সে কিন্তু জানে না সেটা কীভাবে ব্যবহার করতে হবে৷ সে হয়ত সেটাকে খেলনা ভাববে৷ আমারা সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে এমনটাই তো দেখি৷ অথচ সোশ্যাল রেসপননিবিলিটির জায়গা থেকে কেউ কোনো চিন্তা করছি না৷ ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী সম্পর্কে বা অন্য কারুর সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য যখন করা হয়, তখন কেউ কিন্তু চিন্তা করে না তাঁর বন্ধু, তাঁর পরিবার, তাঁর সমাজ এতে কতখানি আহত হয়েছে, হচ্ছে৷
‘আইনের অনেক ব্যাপক পরিবর্তন দরকার’
এখন আমি যদি ফান্ডামেন্টাল রাইট নিয়ে একটি রিট করি, তবে আমাকে প্রমাণ করতে হবে যে, আমি কীভাবে এই হেট স্পিচের ভুক্তভোগী৷ এখানে কিন্তু লিগ্যাল বেরিয়ার অনেক বেশি৷ সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের অভ্যন্তরে এত বেশিভাবে ঢুকে গেছে যে, এবার এই আইনগুলো যুগোপযোগী করা দরকার৷
প্রচলিত আইনে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কতটুকু সুযোগ আছে? শাস্তির বিধানই বা কী আছে?
আমাদের দেশে ঠিকমতো হেট স্পিচের ডেফিনেশেনটাই ঠিক করা হয়নি৷ কোনটা হেট স্পিচ, কোনটা হেট স্পিচ নয়, এ সম্পর্কে আমদের স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই৷ পেনাল কোডের সেকশন ২৯৮-এ আছে ফিলিংকে (অনুভূতি) যদি কোনোভাবে আঘাত করা হয়, তবে তার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে৷ ২০০৬ সালের আইসিটি অ্যাক্টে বা ৫৭ ধারায় আমরা একটা নিয়ম বের করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেটার অপব্যবহার হয়েছে অনেক জায়গায়৷ সেজন্য আমরা চিন্তা করছি সেটা সরিয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ২০১৭ করা এবং তার নতুন সেকশন করা৷ ৫৭ ধারায় প্রথমে ছিল ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১কোটি টাকা জরিমানা৷ পরে সেটা সংশোধন করে ১৪ বছর করা হয়েছে৷ এখন যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন হচ্ছে, সেটা নিয়ে নানা কথা, নানা সমালোচনা হচ্ছে৷ কিন্তু এর কোনো আইনই পার্ট-বাই-পার্ট হেট স্পিচকে প্রভাবিত বা কাভার করার চেষ্টা করেনি৷ অর্থাৎ, আমি যখন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অযথা কথা বলা শুরু করব, সুনাম ক্ষুণ্ণ করব, আঘাত করার চেষ্টা করব, তা যদি মানসিক আঘাতও হয়, সেগুলোকে আমরা পুরোপুরি আইনের আওতায় আনতে পারিনি৷ বাংলাদেশের এর প্রতিকারের আইন যথেষ্ট নয়৷
দেশে দেশে ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ-লড়াই
অনলাইনে ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করতে জার্মানি একটি ‘সামাজিক মাধ্যম আইন’ করতে চায়৷ জার্মান সংসদে এ নিয়ে আলোচনা চলছে৷ এরই মধ্যে এর সমালোচনাও শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kastl
মুক্তমত, নাকি অবৈধ বিষয়বস্তু?
ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য, প্রপাগান্ডা, অ্যাক্টিভিজম ইত্যাদি অনলাইনে হরহামেশাই চলে৷ এগুলো নিয়ে দেশে দেশে বিতর্ক কম হয়নি৷ নানা দেশে তাই সামাজিক মাধ্যমে সরকারি হস্তক্ষেপও এসেছে৷ অনেকে এটাকে মুক্ত মতের উপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kastl
সামাজিক মাধ্যম আইন
জার্মানির আইনমন্ত্রী হাইকো মাস সামাজিক মাধ্যমের জন্য একটি আইনের প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন৷ সে আইনে বিদ্বেষমূলক পোস্ট অপসারণ না করলে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানির বিপুল জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু এতে বিগড়ে বসেছে ফেইসবুক৷ তারা বলছে, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এবং ভুয়া খবর ঠেকানোর দায় তাদের একার নয়৷ সরকারকেও এই দায়িত্ব নিতে হবে৷ আইনটি এখন পর্যালোচনার জন্য জার্মান সংসদীয় কমিটিতে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
ভুলে যাওয়ার অধিকার
২০১৪ সালে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের জারি করা এক আদেশে বলা হয়, গুগল, বিং-এর মতো সার্চ ইঞ্জিনকে তাদের অনুসন্ধানের ফলাফলে কোনো বিশেষ কিছু বাদ দিতে ইউরোপীয় নাগরিকরা অনুরোধ জানাতে পারবেন৷ গুগল সেই আদেশ বাস্তবায়ন করলেও আগে এ বিষয়ে বেশ অনাগ্রহ দেখিয়েছে৷ তখন তারা বলেছে, এটা ইন্টারনেটকে মুক্ত বিশ্বের আবদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে ফেলবে৷
ছবি: picture-alliance/ROPI/Eidon/Scavuzzo
ইউক্রেনের নিষেধাজ্ঞা
ইউক্রেন গত মে মাসে রাশিয়ার সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ বিষয়টি দেশটির লাখ লাখ মানুষের উপর প্রভাব ফেলে৷ অনেকেই তাদের ডাটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ এর প্রতিবাদে তরুণরা রাস্তায় নেমে আসে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Str
প্রসঙ্গ: সেফ হারবার
২০১৫ সালে ইউরোপীয় কোর্ট অব জাস্টিস এক রায়ে ইউএস এবং ইইউ’র মধ্যকার চুক্তি ‘সেফ হারবার’কে অকার্যকর ঘোষণা করে৷ যে চুক্তি বলে কারো ব্যক্তিগত তথ্য পূর্বানুমতি ছাড়াই হস্তান্তর করা যায়৷ অস্ট্রেলীয় আইনের ছাত্র ম্যাক্স স্ক্রিম ফেইসবুকের বিরুদ্ধে একটি মামলার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন৷ মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক ঠিকাদার অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন তথ্য ফাঁস করায় তিনি এই ব্যবস্থা নিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Warnand
কঠোর চীন
চীনে সরকার কঠোরভাবে সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷ ফেসবুক, টুইটার, ইনসটাগ্রামের মতো হাজার হাজার ওয়েবসাইট দেশটির সরকার নিষিদ্ধ করে রেখেছে৷ সেখানকার সরকার নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু করেছে৷ যেমন, ইউবো, উইচ্যাট৷ জনবহুল এই দেশটিতে এখন এগুলোরও কোটি কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/Da Qing
6 ছবি1 | 6
এই হেট স্পিচ আমাদের সমাজে কতটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে? কেউ কেউ তো আদর্শিকভাবেও হেট স্পিট তৈরি করে৷ আপনি কীভাবে বিষয়গুলো দেখছেন?
প্রথমত, যার বিরুদ্ধে, যাদের বিরুদ্ধে বা যে চিন্তাধারা বা মতাদর্শের বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে, তারা কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ তারা ভুক্তভোগী হচ্ছেন মানসিকভাবেও৷ দ্বিতীয়ত, সোশ্যাল মিডিয়ায় যেটা হয়, কারুর পারসেপশন সহজেই চেঞ্জ করা হয়৷ এর ফলে হেট স্পিচের বুস্টিং করা হচ্ছে৷ একটা গ্রুপ এ ধরনের তথ্য ডিজিটালি শেয়ার করছে, বুস্ট করছে৷ এর মাধ্যমে অযথাই একটা পারসেপশন তৈরি করে ফেলা হচ্ছে৷ আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই পারসেপশনকে কাউন্টার করতে পারে এমন তথ্য পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়৷
সাংবাদিকতায় যাঁরা বড় বড় মিডিয়া হাউজে কাজ করছেন, তাঁদের কেউ কেউ একতরফা একটা বিষয়কে তাঁদের ইচ্ছা অনুযায়ী রিপোর্টিং আইটেম করে তুলছেন৷ কিন্তু তাঁরা ভাবছেন না যে, বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে এর সম্পর্ক কতটুকু? তাই এক ব্যক্তি, একটি সমাজ বা গোষ্ঠীই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও কিন্তু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷
আমরা যেমন বলি দশ চক্রে ভগবানও ভুত হয়ে যায়, তেমনি যখন একটি মিথ্যা এভাবে চারপাশে চলতে থাকে, তখন অনেক মানুষ, যাদের বিষয়টি সম্পর্কে কোনো ধারণা নাই, তারাও এটা বিশ্বাস করতে শুরু করে৷ তারাও কথায় কথায় বিষয়টা ছড়িয়ে দেয়৷ তাই শুরুতেই যদি আমরা এটাকে কার্টেল করতে না পারি তাহলে পরবর্তিতে কিন্তু এটা রোধ করার কোনো উপায় থাকবে না৷