বাংলাদেশে হেট স্পিচের সবচেয়ে বেশি শিকার কারা? হেট স্পিচ কারা, কেন দিচ্ছেন? এর প্রতিরোধে কি কোনো আইন আছে? এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন আর্টিকেল ১৯-এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক তাহমিনা রহমান৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে : বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বা হেট স্পিচ আসলে কী?
তাহমিনা রহমান : বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে আইনি ভাষায় আমরা হেট স্পিচ বলে থাকি৷ এর ব্যাখা যদি আমি সংক্ষেপে বলি তাহলে বলব, সব বক্তব্যই কিন্তু বিদ্বেষমূলক না৷ বিদ্বেষমূলক হতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে৷ যেমন, কোন প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে, কে বলেছে, তার উদ্দেশ্য কী ছিল - এমন ৬টি কনডিশন আছে, সেগুলো পূরণ না করলে বিদ্বেষমূলক বা উত্তেজনামূলক বক্তব্য বলা যাবে না৷
কেবল কি মেয়েদের লক্ষ্য করেই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়?
অবশ্যই না৷ আপনি যদি আন্তর্জাতিকভাবে দেখেন বা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও দেখেন, সেখানে কোনো গোষ্ঠীকে টার্গেট করে করা হয়, নারীদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় বা অনলাইনে অনেক বক্তব্য রয়েছে৷ আমাদের কাছে এমন উদাহরণও আছে যে, অনেক নারী ব্লগারের লেখার প্রেক্ষিতে এমন সব বিদ্বেষমূলক জবাব এসেছে যে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে৷ আবার ধর্মীয় বিষয়েও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়া হয়ে থাকে৷ যেমন, হিন্দুদের অনেক সময় ‘মালাউন' বলা হয়৷ আবার যদি আন্তর্জাতিকভাবে দেখেন, মুসলমানদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সব মুসলমানই যেন জঙ্গি৷ টার্গেট করে এই যেসব বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, তাকেই আমরা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বলছি৷ এটা শুধু আমাদের দেশে না, সারা বিশ্বেই এই প্রবণতা আমরা দেখছি৷
ঐতিহাসিক হেট স্পিচ
পৃথিবী জুড়ে রাজনৈতিক নেতারা হেট স্পিচে মেতেছেন৷ তবে রাজনৈতিক ইতিহাসে হেট স্পিচ নতুন কিছু নয়৷ নানা সময়ে নানা নামে নানা কায়দায় হেট স্পিচ চালু ছিল৷ ছবিঘরে তারই কিছু উদাহরণ দেওয়া গেল৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media Co. Ltd
ডোনাল্ড ট্রাম্প
বিশ্ব রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি হেট স্পিচের জন্য নাম কিনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ একবার নয়, বার বার হেট স্পিচ দিয়েছেন৷ তাঁর টার্গেট হয়েছেন কখনো মুসলিমরা আবার কখনো আফ্রিকার মানুষেরা৷ একদা তিনি বলেছিলেন, মুসলিমদের দেশে ঢোকা বন্ধ করে দেবেন তিনি৷ আর আফ্রিকার কয়েকটি দেশের মানুষদের বিষয়ে বলেছিলেন, তাঁরা ‘শিটহোল’ দেশ থেকে এসেছেন৷ যা নিয়ে প্রভূত সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
খেয়ার্ট ভিল্ডার্স
গোটা ইউরোপেই এখন অতি দক্ষিণপন্থিদের বারবাড়ন্ত৷ হল্যান্ডে এখনো দক্ষিণপন্থিরা সেভাবে থাবা বসাতে না পারলেও ডাচ নেতা খেয়ার্ট ভিল্ডার্স সংসদে দাঁড়িয়ে যে বক্তৃতা করেছিলেন তা ডাচ ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কের দিন৷ ভিল্ডার্স বলেছিলেন, ইসলাম একটি খারাপ বিষয়৷ ইসলামের জন্য হল্যান্ডের সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে৷ সংসদেই ভিল্ডার্সকে এরপর চ্যালেঞ্জ করেছিলেন অন্যান্য সংসদেরা৷
ছবি: Imago/Hollandse Hoogte
যোগী আদিত্যনাথ
ভারতে বর্তমান শাসকদল বিজেপি এবং তার সহযোগীরা হেট স্পিচের জন্য বিখ্যাত৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরাসরি অভিযুক্ত গুজরাট দাঙ্গার জন্য৷ হেট স্পিচও দিয়েছেন তিনি একসময়৷ তবে সমসময়ে তাঁর শিষ্য এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হেট স্পিচের জন্য সবচেয়ে কুখ্যাত হয়েছেন৷ উত্তর প্রদেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একাধিক হেট স্পিচ দিয়েছেন তিনি প্রকাশ্যে৷ দাঙ্গাও বাঁধিয়েছেন৷
ছবি: Imago/Zumapress
প্রবীণ তোগাড়িয়া
বিশ্বহিন্দু পরিষদ বিজেপিরই অন্যতম শাখা সংগঠন৷ সেই সংগঠনের প্রধান প্রবীণ তোগাড়িয়া একটি জনসভায় মুসলিমদের কুকুরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন৷ এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বহু মামলা হয়েছে৷ সে সব মামলা এখনো চলছে৷
ছবি: UNI
জর্জ ডাব্লিউ বুশ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগেও বহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেট স্পিচের জন্য ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন৷ ট্রাম্পের সমকক্ষ না হলেও জর্জ ডাব্লিউ বুশ তাঁর অন্যতম৷ বর্ণবিদ্বেষমূলক নীতি গ্রহণের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে৷ বিশেষত স্কুলের ছাত্রদের ক্ষেত্রে তিনি বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/S. Wenig
জন ক্যালভিন কোলড্রিজ
১৯২৩ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন কোলড্রিজ৷ ১৯২৭ সালে হয় ভয়াবহ মিসিসিপি বন্যা৷ অভিযোগ, শ্বেতাঙ্গদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করলেও কোলড্রিজ কৃষ্ণাঙ্গদের উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থাই করেননি৷ বহু কৃষ্ণাঙ্গ সে সময় প্রাণ হারিয়ে ছিলেন৷ পৃথিবী জুড়ে কোলড্রিজের বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়েছিল৷
ছবি: Imago/Ralph Peters
উড্রো উইলসন
১৯১৩ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন উড্রো উইলসন৷ বহু ভালো কাজের জন্য প্রশংসিত হলেও অধিকাংশ মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতো তিনিও হেট স্পিচ দিয়েছেন৷ ক্ষমতায় এসে ফেডারেল শ্রমিকদের কাজের পুনর্নবিকরণ করেছিলেন৷ সে সময় অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গকে চাকরিচ্যূত করেছিলেন৷ যাঁদের কাজ বেঁচে গিয়েছিল, তাঁদের জন্য আলাদা খাওয়ার ঘর, কাজের পরিসরের ব্যবস্থা হয়েছিল৷ শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে কাজ করার অধিকার ছিল না তাঁদের৷
ছবি: Getty Images
আডল্ফ হিটলার
কমিউনিস্ট, মুসলিম এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধে তিনি যা বলেছেন, সবই হেট স্পিচ৷ শুধু বলেছেন না, ইহুদিদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানোরও ব্যবস্থা করেছেন৷ বিশ শতকের দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি হেট স্পিচের রেকর্ড আডল্ফ হিটলারের মুকুটেই৷
ছবি: picture-alliance/CPA Media Co. Ltd
বেনিটো মুসোলিনি
তাঁর শাসনকালেই ‘ফাশিস্ত’ শব্দটির উদ্ভব৷ বিরোধীদের প্রসঙ্গে যে ধরনের মন্তব্য তিনি করতেন, তা এক কথায় হেট স্পিচ৷
ছবি: picture alliance/AP
ইদি আমিন
১৯৭১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত উগান্ডার স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন ইদি আমিন৷ তাঁর আগের শাসক আবোটের অনুগামীদের বিরুদ্ধে কুৎসিত মন্তব্য করে তিনি নিজের সমর্থকদের তাতিয়ে দিতেন৷ অভিযোগ, আকোলি এবং ল্যাঙ্গো উপজাতির বিরুদ্ধেও একইরকম মন্তব্য করতেন তিনি৷ এবং শেষ পর্যন্ত ওই দুই উপজাতির মানুষদের নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল তাঁর দলবল৷ উগান্ডার ইতিহাসে এখনো যা সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায়৷
ছবি: Getty Images
জোসেফ স্ট্যালিন
সোভিয়েত রাশিয়ার এই কমিউনিস্ট নেতার বিরুদ্ধেও হেট স্পিচের অভিযোগ আছে৷ কেবল অ্যামেরিকা নয়, তাঁর নিজের দেশের বিরোধীদের সম্পর্কেও বহু হেট স্পিচ দিয়েছেন তিনি৷ মানুষ উসকেছেন বিরোধীদের একঘরে করার জন্য৷ বস্তুত আয়রন ক্যাম্পও তাঁরই সৃষ্টি৷
ছবি: AFP/Getty Images
আশিন উইরাথু
তিনি ‘মিয়ানমারের বিন লাদেন’ হিসেবেও পরিচিত৷ এই কট্টর জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু ফেসবুকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে উস্কানি ও বিদ্বেষমূলক পোস্ট দিয়ে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন৷ তার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এতটাই প্রভাব বিস্তার করছিল যে ফেসবুক তাঁর পেজটি মুছে ফেলতে বাধ্য হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Gacad
জুলফিকার আলী ভুট্টো
বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণ পাকিস্তানের শোষণমূলক ব্যবস্থার বিরোধিতা করায় এ নিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোর খুবই মনোকষ্ট ছিল৷ তিনি কখনো মেনে নিতে পারেননি যে, এদেশের মানুষ তাঁর কথার বিরোধিতা করেছে৷ এমনকি প্রকাশ্যে তিনি জনসভাতেই বলে ফেলেছিলেন৷ ঢাকায় এক জনসভায় তিনি বলেই ফেলেছিলেন যে, ‘‘মঞ্জুর হ্যায় তো ঠিক হ্যায়, নেহি মঞ্জুর হ্যায় তো শুয়োর কে বাচ্চে, জাহান্নাম মে যায়ে৷’’
ছবি: STF/AFP/GettyImages
13 ছবি1 | 13
ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কি একটু ব্যাখা করবেন?
যে কোনো সমালোচনামূলক বক্তব্য কিন্তু বিদ্বেষমূলক বক্তব্য না৷ সমালোচনা করতে গেলে অনেক বক্তব্যই আসবে, কিন্তু এগুলো সব বিদ্বেষমূলক বক্তব্য না৷ এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে৷ কোন প্রেক্ষাপটে এটা বলা হচ্ছে বা কোনো ঘটনা যদি হয়, তাহলে ঘটনার সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা কী, এসব বিষয় দেখতে হবে৷ তারপর বুঝতে হবে সেটা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কিনা৷
ইভ টিজিং কি এর মধ্যে পড়ে?
ইভ টিজিং এর মধ্যে পড়বে না৷ এটা একটা ক্রাইম৷ সারা বিশ্বেই এটাকে হয়রানি বলা হয়ে থাকে৷ এখন কোনো নারীকে হয়রানি করার জন্য না, নারীসমাজকে খাট করার জন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেয়া হয়, তাতে যদি দেখা যায় বিদ্বেষ রয়েছে, তাহলে সেটা হেট স্পিচ৷ কিন্তু ইভ টিজিং একজনকে টার্গেট করে করা হয়, সে কারণে এটাকে আমরা হেট স্পিচ বলতে পারব না৷
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের হার কেমন?
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর আলোচনা হয়ে থাকে৷ এটা এমন একটা মাধ্যম, যেখানে প্রচুর আলোচনা হয়৷ এটার উপকারিতা অসীম৷ তথ্যের প্রবাহকে দ্রুত থেকে দ্রুততর করে দিয়েছে৷ আলোচনাকে পাবলিক প্লাটফর্মে আনার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে৷ এই মাধ্যম সকলেই ব্যবহার করছে৷ এটা নারীরা যেমন ব্যবহার করছেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ব্যবহার করছেন৷ এখানে নানা আলোচনা হয়৷ সেটা সমালোচনামূলক হতে পারে, বিরক্তিকর হতে পারে, এখানে বিদ্বেষের উদ্রেক করে এমন আলোচনাও হচ্ছে৷ সর্বোপরি রাষ্ট্রের এখানে বিরাট ভুমিকা রয়েছে৷
‘হেট স্পিচ বন্ধে রাষ্ট্রের বিশাল ভূমিকা রয়েছে’
আপনারা এটা প্রতিরোধে কী ধরনের কাজ করছেন?
আর্টিকেল-১৯ এটা প্রতিরোধে অনেক ধরনের কাজ করছে৷ জাতিসংঘের যে ৮টি গাইডলাইন আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা প্রচার করছি৷ এখানে আমরা আলোচনা ও প্রচারণার কাজটা করছি৷ আমরা কর্মশালা করছি৷ বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কী সেটা আমরা জানানোর চেষ্টা করছি৷ নারীদের নিয়ে প্রযুক্তিতে যে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য আসছে, সেগুলো নিয়ে আমরা গবেষণা করেছি৷ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোন কোন আইন নারীদের এক্ষেত্রে প্রোটেকশন দিতে পারে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করছি৷ এই আইনগুলো প্রচারে রাষ্ট্রের আর কী কী করা উচিত, সেগুলো নিয়েও আমরা কাজ করছি৷
এটা প্রতিরোধে সরকার কী ভূমিকা পালন করতে পারে? আর সরকার কি সেটা করছে?
আমাদের দেশে কিছু আইন রয়েছে যেগুলো ধর্মকে প্রটেক্ট করে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনে বলা আছে, কোনো রাষ্ট্রে কোনো নির্দিষ্ট আইন ধর্মকে প্রটেক্ট করতে পারবে না৷ এখানে যেটা প্রটেক্ট করতে পারবে, সেটা হলো ধর্মের ভিত্তিতে যদি কোনো ব্যাখা দেয়া হয়, সেটা৷ ধর্ম, ইতিহাস, মূল্যবোধ এগুলো নিয়ে সব সময়ই আলোচনা হবে৷ আমি বলব, এসব আইন উত্তেজনামূলক বক্তব্যকে আরো বেশি প্রটেকশন দেয়৷ এই সব আইনের রিফর্ম প্রয়োজন রয়েছে৷ যখন হেট স্পিচ হয়ে থাকে, তখন রাষ্ট্র থেকেই শক্তভাবে একটা বক্তব্য দেয়া উচিত যে, এটা হেট স্পিস, এটাকে রাষ্ট্র কোনোভাবেই সমর্থন করে না৷ আমি মনে করি, এখানে রাষ্ট্রের একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে৷
সাম্প্রদায়িকতা কীভাবে দূর করা যায়?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের আট নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁদের কথা৷
ছবি: AFP/Getty Images
সাদেকা হালিম, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে৷ শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে৷ এছাড়া দেশের প্রতিটি মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে একসঙ্গে কাজ করলে অসাম্প্রদায়িক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব৷ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা আছে৷ আরেকটি বিষয় হলো, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সকল ধর্মের সবাই মিলে যার যার অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করতে হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
গোলাম কুদ্দুস, সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট
কোনো ধর্মই মানুষের অকল্যাণের কথা বলে না৷ পৃথিবীর সব ধর্মই মানুষের কল্যাণের কথা বলে৷ তাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে কেউ যাতে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে তাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে৷ দেশের প্রতিটি মানুষকে যদি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায় তাহলেও দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
আইনুন নাহার সিদ্দিকা, আইনজীবী
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সব রকমের রাজনৈতিক উস্কানি বন্ধ করতে হবে৷ আমরা যেন এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের পেছনে কখনো না লাগি৷ সবাই সবার ধর্মকে সম্মান করি৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
শেখ শাফায়াতুর রহমান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কখনো শক্তি আর অস্ত্র দিয়ে লড়াই করা যাবে না৷ আমাদেরকে আমাদের বুদ্ধি আর মেধা দিয়ে লড়াই করতে হবে৷ গ্রামে-গঞ্জে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
রেখা শাহা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে দেশের সর্বত্র সকল ধর্মের উৎসব নির্বিঘ্নে পালন করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে৷ সবাই যেন সবার ধর্মীয় উৎসবগুলোতে অংশ নিতে পারেন, সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে৷ এছাড়া সবাই মিলে একটি দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারলে সাম্প্রদায়িকতাও দেশ থেকে দূর হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
খরাজ মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা, পশ্চিমবঙ্গ
আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ৮৫ শতাংশ মেকআপ আর্টিস্টই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের৷ কই, আমাদের তো সমস্যা হয় না! আমরা মন থেকে কোনও বিভেদে বিশ্বাস রাখি না৷ তাই নিজেদের মধ্যেও বিভেদ জন্মায় না৷ মনের অন্ধকার দূর করাটাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বড় হাতিয়ার৷
সত্যিকারের জ্ঞান মনের সংকীর্ণতা দূর করে৷ তাই শুধু ডিগ্রি দিয়ে লাভ নেই৷ জ্ঞানের আলো জ্বালাতে প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃত শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে৷ সেটাই হবে আদর্শ জ্ঞাননির্ভর সমাজ৷ সেই সমাজ এমন মানুষ তৈরি করবে, যার মধ্যে উগ্রতা থাকবে না৷
ছবি: DW/P. Samanta
পতিতপাবন রায়, পিয়ারলেস, পশ্চিমবঙ্গ
ব্যক্তিগতস্তরে ধর্মীয় অনুশাসন মানতে অসুবিধে নেই৷ কিন্তু সমষ্টিগতস্তরে মানতে হবে রাষ্ট্রীয় অনুশাসন৷ দেওয়ানি বিধির অধীনে সবাইকে রাখতে হবে৷ রাজনীতির অনুপ্রবেশ রুখে সবার জন্য সমান আইন প্রণয়ন দরকার৷ তবেই রাস্তা আটকে নামাজ পড়া বা মণ্ডপ তৈরি নিয়ে দাঙ্গা হবে না বা রক্তও ঝরবে না৷
ছবি: DW/P. Samanta
8 ছবি1 | 8
বিদ্বেষমূলক বক্তব্য শহরে না গ্রামে বেশি? কোনো হিসাব আছে?
এটা গ্রামে বেশি না, শহরে বেশি এর কোনো হিসাব আমাদের কাছে নেই৷ তবে গ্রামে বেশি এটা বলা যাবে না৷ আসলে সব জায়গাতেই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়া হয়ে থাকে৷
সমাজের কোন শ্রেণির মেয়েরা বেশি বিদ্বেষের শিকার হন?
বাস্তবে নারীরা ব্যাপকভাবে এর শিকার হন৷ তবে আমি বলব, ইয়াং বয়সের মেয়েরা সবচেয়ে বেশি বিদ্বেষের শিকার হন৷
রাজনৈতিক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সম্পর্কে কোনো কিছু বলবেন?
আমি বলব যে, যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের আরো বেশি সাবধান হতে হবে৷ তারা যখন বক্তব্য দেন, তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে তাদের কোনো বক্তব্য যেন নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী বা ধর্মের মানুষকে আঘাত না করে৷ এটা কিন্তু সহিংসতার উদ্রেক ঘটাতে পারে৷