দেশের অন্তত তিনটি এলাকার থানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো ধরনের আশঙ্কার কথা অস্বীকার করলেও ওইসব জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা হেফাজতে ইসলামের হামলার আশঙ্কার কথা বলেছেন৷
বৃহস্পতিবার সিলেটে এবং শুক্রবার সকালে ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের থানাগুলোতে হালকা মেশিন গান (এলএমজি) ও বালুর বস্তার বাঙ্কার বানিয়ে থানাগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার থানাগুলোরও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়৷ পুলিশ সদর দপ্তরে কয়েকটি জেলা থেকে অপারেশনাল ফোর্স বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে৷
সিলেট জেলার ১২টি এবং সিলেট মহানগরের ছয়টি- এই ১৮টি থানার নিরপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ জানা গেছে, বুধবার রাতে সিলেট রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে হামলার আশঙ্কা থেকে ওই থানাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়৷
বৈঠকে সব থানার ওসিরা ছিলেন৷ যেসব থানা এলাকায় কওমি মাদ্রাসা বেশি, সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ এমনিতে পুরো সিলেট এলাকায় কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা অনেক বেশি৷
‘আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি’
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি৷ সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের যে কর্মকাণ্ড হলো, বেশ কিছু জেলায় এই ঘটনা ঘটলো৷ এই কারণেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ যাতে আরা কোনো ধরনের হামলা বা নাশকতা না হয় তার জন্যই এই ব্যবস্থা৷ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি৷''
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম বলেন, ‘‘থানার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা নিয়মিত কাজ করি৷ আর যাতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় তার জন্য আমরা নিরাপত্তা মহড়া দিচ্ছি৷’’
নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের বিরোধিতায় এবং হরতালে ওই এলাকায় নাশকতা হয়েছে৷ তারপর এক রিসোর্টে মামুনুল হককে ঘেরাওয়ের ঘটনায় ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে৷ পুলিশ সুপার জানান, ওই সব ঘটনায় তারা এ পর্যন্ত ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন৷ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান এখনো অব্যাহত আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
‘সরকার এখন আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য এসব করছে’
নারায়ণগঞ্জের মোট ছয়টি থানা ছাড়াও পুলিশের সব ধরনের স্থাপনার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ ওই এলাকায় অনেক কওমি মাদ্রাসা আছে৷ তাই হেফাজত সেখানে বেশ শক্তিশালী৷
এদিকে দেশের মাদ্রাসাগুলো করোনার সময়ে চালু হলেও এখন বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ কওমি মাদ্রাসাগুলো বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে৷ আলিয়া মাদ্রাসাগুলো এরই মধ্যে বন্ধ হলেও সব কওমি মাদ্রাসা বন্ধ হয়নি৷ আপাতত মসজিদের সামনে কোনো সমাবেশ ও করা যাবে না৷
তবে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মুখপাত্র মাওলানা আজিজুল ইসলাম ইসলামাবাদী দাবি করেন, ‘‘হেফাজত কোথাও কোনো হামলা করেনি৷ হেফাজতের দিক থেকে কোনো হামলার আশঙ্কাও নেই৷ সরকার এখন আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য এসব করছে৷''
তিনি থানায় হামলা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হেফাজতের হামলার কথাও অস্বীকার করেন তিনি৷
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
কওমি মাদ্রাসা বেসরকারি ইসলাম ধর্ম ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ ঢাকার কামরাঙ্গির চরে এমনই এক মাদ্রাসা জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া৷ সেখানে একটা গোটা দিন কাটিয়ে কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার নানা দিক ক্যামেরায় তুলে ধরেছেন মুস্তাফিজ মামুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি
বাংলাদেশে প্রচলিত দু’ ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কওমি মাদ্রাসা একটি৷ উনিশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার মাধ্যমে বাংলাদেশেও কওমি শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন হয়৷ দীর্ঘকাল ধরে কওমি মাদ্রাসা সরকারের আর্থিক সহায়তা ছাড়াই সাধারণ জনগণের সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছিল৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করেছে ইসলামি এ শিক্ষা ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/M. Mamun
১৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)-এর ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখেরও বেশি৷ তবে বেসরকারি হিসেব মতে, সারা দেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
মাদ্রাসার একটি ক্লাসরুম
কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিচালিত ঢাকার জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রাথমিক স্তরের একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্তরে আরবির পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজিসহ সাধারণ শিক্ষাও দেওয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
সহশিক্ষায় বাধা নেই শিশুদের
কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় সহশিক্ষা স্বীকৃত নয়৷ তাই মহিলাদের শিক্ষার জন্য আলাদা কিছু প্রতিষ্ঠান আছে৷ তবে প্রাথমিক স্তরে শিশুদের সহশিক্ষার কোনো বাধা নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্বতন্ত্র শিক্ষা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত
বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর একাংশ পরিচালিত হয় স্বতন্ত্র একটি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে৷ ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া’ (বেফাক) নামের এই শিক্ষা বোর্ড কওমি মাদ্রাসার পরীক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্লাস হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সেশন পরিচালনা হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী৷ সাধারণত বেফাক আওতাধীন মাদ্রাসাগুলোর নতুন সেশন শুরু হয় আরবি ক্যালেন্ডারের শাওয়াল মাসের ১০ তারিখ থেকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পড়া ও শোয়ার জায়গা একটাই
ঢাকার জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এই কক্ষটি শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গাও৷ সাধারণত কওমি মাদ্রাসাগুলিতে পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা একই হয়ে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সর্বক্ষণের সঙ্গী একজন শিক্ষক
কওমি মাদ্রাসার প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একজন শিক্ষকও থাকেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
রুটিনমাফিক জীবন
কওমি মাদ্রাসাগুলো সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্থায় পরিচালিত৷ তাই শিক্ষার্থীদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন রুটিনের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করতে হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
উচ্চশিক্ষার সুযোগ
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ হিফজুল কোরান (বানানভেদে কোরআন)৷ এ বিষয়ের শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র পবিত্র কোরান শরীফ মুখস্থ করে থাকেন৷ তবে হিফজুল কোরান শেষ হলে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে অন্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষারো সুযোগ আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সর্ব্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিস
জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এটি কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ শ্রেণি৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এই শ্রেণিকেই মাস্টার্স-এর সমমান বলে ঘোষণা করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পড়াশোনার মূল মাধ্যম আরবি
কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের হাদিস সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত পড়ানো হয়৷ এ বিষয়ে পড়ানোর মূল মাধ্যম আরবি ভাষা৷ হাদিসের যথাযথ ব্যাখ্যা আরবি ভাষাতেই সম্ভব, এমনটাই মনে করা হয়ে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
আছে উর্দু এবং ফারসি ভাষাও
বাংলাদেশের কাওমি মাদ্রাসাগুলোয় প্রাথমিক স্তরে আরবির সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি পড়ানো হলেও উচ্চস্তরে আরবি ছাড়াও পড়ানো হয় উর্দু এবং ফারসি ভাষা৷
ছবি: DW/M. Mamun
গরিব ছাত্রদের জন্য ফ্রি খাবার
কওমি মাদ্রাসাগুলোয় গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে৷ তবে সামর্থবানদের থাকা ও খাওয়ার জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
মেঝেতেই খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা
শিক্ষা কার্যক্রম, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে টেবিল-চেয়ারের ব্যবহার নেই কওমি মাদ্রাসাগুলোয়৷ ইসলামি সুন্নত অনুসরণে পাঠদান কার্যক্রম, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি সম্পন্ন হয় মেঝেতেই৷