1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিরাপত্তাহীনতায় ব্লগার রাসেল

আরাফাতুল ইসলাম১৭ মে ২০১৩

জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন ১২ মে৷ এখন পরিবারকে সময় দিচ্ছেন তিনি৷ ছোট্ট মেয়েটা বাবা বলতেই পাগল৷ একমাস পর বাবাকে পেয়ে তাই কোল ছাড়তে রাজি নয় সে এক মুহূর্তের জন্য৷ এ সবের ফাঁকেই ডয়চে ভেলেকে সময় দিলেন ব্লগার রাসেল পারভেজ৷

বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারে অত্যন্ত সুপরিচিত নাম রাসেল পারভেজ৷ কমিউনিটি বাংলা ব্লগ সামহয়্যার ইন ব্লগের একেবারে শুরুর দিকের ব্লগার তিনি৷ বিভিন্ন সময় তাঁর লেখা সাড়া জাগিয়েছে ব্লগ আঙ্গিনায়৷ ব্লগার পরিচয়ের বাইরে তাঁর সাধাসিধে জীবনযাপন আর দেশপ্রেমে মুগ্ধ অনেকেই৷

সেই রাসেল পারভেজ, যাঁর পুরো নাম মোহাম্মদ রাসেল পারভেজ, গ্রেপ্তার হন গত পহেলা এপ্রিল৷ তিনিসহ ব্লগার মশিউর রহমান বিপ্লব এবং সুব্রত শুভকে একইদিনে গ্রেপ্তার করা হয়৷ দু'দিন পর তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে বাধ্য হন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন৷

গত ১২ মে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন রাসেল এবং শুভ৷ আপাতত মুক্ত জীবন তাঁদের৷ কিন্তু অপর দুই ব্লগার মুক্ত না হওয়ায় তাঁদের উদ্বেগ রয়ে গেছে৷ একইসঙ্গে ভবিষ্যতে মামলার ভার কিভাবে সইবেন, তা নিয়েও রয়েছে চিন্তা৷ এসবের মাঝেই বৃহস্পতিবার রাতে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেন ব্লগার রাসেল পারভেজ

‘ধর্মবিদ্বেষী লেখালেখি আমি করিনি'

২০০৬ সালে কমিউনিটি বাংলা ব্লগে লেখালেখি শুরু করেন রাসেল পারভেজ৷ সেসময় তাঁর লেখার বিষয় ছিল বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু৷ রাসেল বলেন, ‘‘বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার সময় বিভিন্ন বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ আমি পদার্থ বিজ্ঞান পড়েছি এবং আমার পড়াশোনার মূল জায়গাটি ছিল সৃষ্টিতত্ত্ব৷ এখন সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে পদার্থ বিজ্ঞানের বক্তব্যের সঙ্গে অনেকক্ষেত্রেই অনেকের দ্বিমত আছে৷ এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কিছু ধর্ম বিষয়ক বিতর্ক হয়েছে৷ কিন্তু ধর্ম এবং বিজ্ঞানের বাইরে কোনো ধরনের ধর্ম বিদ্বেষী লেখালেখি আমি করিনি৷''

‘হেফাজতে ইসলাম অসহিষ্ণু এবং উগ্রবাদী’

This browser does not support the audio element.

রাসেলের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযোগ হচ্ছে, তিনি ‘ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন এবং ধর্মীয় মর্যাদাবান ব্যক্তিদের অবমাননা করেছেন'৷ এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাসেল বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে যে কোনো ধর্মের এবং যে কোনো ধর্ম বিশ্বাসী মানুষকেই সমানভাবে শ্রদ্ধা করি৷ এবং আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসের জায়গা থেকে আমি ধারণা করি সমস্ত মানুষই আসলে সমান৷ ফলে কোনো ধর্ম বিশ্বাসী ব্যক্তিকে বা ধর্মের প্রধানপুরুষকে অশালীন কোনো কথা বলা অগ্রহণযোগ্য মনে করি আমি৷''

তাহলে কি রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার?

গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের একজন সক্রিয় কর্মী রাসেল পারভেজ৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তিনি অত্যন্ত সোচ্চার৷ শাহবাগে তাঁর বিচরণ ছিল নিয়মিত৷ এই গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টির একটি পর্যায় পর হঠাৎ করেই বাংলাদেশে সক্রিয় হয়ে ওঠে হেফাজতে ইসলাম৷ অনেকেই মনে করেন, হেফাজত কার্যত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের শীর্ষনেতাদের বাঁচাতেই মাঠে নেমেছে এবং এজন্য ব্লগারদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে অবস্থান তাদের৷

রাসেলদের গ্রেপ্তারের আগে হেফাজত ‘নাস্তিক ব্লগারদের' গ্রেপ্তার এবং শাস্তির দাবি তুলেছিল৷ এরপরই গ্রেপ্তার হন চার ব্লগার৷ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর সেসময় আরো কয়েক ব্লগারকে গ্রেপ্তারের ইঙ্গিত দেন৷ স্বাভাবিকভাবেই তাই যে প্রশ্নটি উঠেছে তা হচ্ছে, সেসময় কি তাহলে হেফাজতকে ‘খুশি করতে' ব্লগারদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল? রাসেল এই বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কিছুটা রাজনৈতিক চাপ তো ছিল সেসময়৷ আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে একটা আন্দোলন করছিলাম সেসময়৷ আন্দোলনটা ব্যাপক জনসমর্থন পায়৷ কেননা দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন অসন্তোষণের কারণে যাঁরা ক্ষুব্ধ ছিল, তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশের জায়গা হয়েছিল আমাদের গণজাগরণ মঞ্চ৷''

পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন খবরকে প্রমাণ হিসেবে গণ্য করে রাসেল বলেন, ‘‘হেফাজতে ইসলাম আসলে সেই রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে আক্রান্ত বোধ করছে৷ আমি যতটুকু ইসলামের ইতিহাস পড়েছি তাতে আমার সব সময় মনে হয়েছে, যিনি মক্কায় ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেছিলেন, তিনি আসলে মক্কায় বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে ঐক্য চেয়েছিলেন৷ এবং ঐক্য আনার জায়গা থেকে তিনি অনেক বেশি সহনশীল এবং অনেক বেশি সমঝোতার পথ খোলা রেখেছিলেন৷ হেফাজতে ইসলাম যদিও ইসলামের হেফাজত করছে বলে দাবি করছে, কিন্তু তাদের আচরণ আসলে ঠিক তাদের যে প্রধান ধর্মপ্রচারক তাঁর আচরণের একেবারে সম্পূর্ণ বিপরীত৷ তারা একেবারে অসহিষ্ণু এবং খুব উগ্রবাদী৷'' 

নিরাপত্তাহীন জীবন

বর্তমানে মুক্তজীবনে ফিরে আসলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাসেল পারভেজ৷ তাঁকে হত্যার জন্য প্রকাশ্যে অর্থ পুরস্কারও ঘোষণা করা হচ্ছে৷ একটি সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণে মন্তব্যের ঘরে এরকম হুমকি দিয়েছেন এক ব্যক্তি৷ সব মিলিয়ে নিরাপত্তাহীন একটি পরিস্থিতিতে সময় কাটাচ্ছেন রাসেল পারভেজ৷

অথচ তিনি এবং তাঁর স্ত্রী গত দু'বছর ধরে গণমানুষের উপকারে ব্যবহার উপযোগী একটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই গবেষণা কতটা চালিয়ে নেওয়া যাবে সে বিষয়ে সন্দিহান রাসেল৷ তিনি বলেন, ‘‘অল্প খরচে যাতে ভালোমানের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় এবং অপারেশন থিয়েটারে যাতে কোনো ইনফেকশন না হয়, ‘পোস্ট অপারেটিভ' পর্যায়ে যাতে কোনো ইনফেকশন না হয়, সেজন্য আমরা একটি যন্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করছিলাম বাংলাদেশকে মাথায় রেখে৷ এখন আমাকে যদি এরকম নিরাপত্তাহীন অবস্থায় ঘোরাঘুরি করতে হয়, তাহলে আমি বুঝছি না কিভাবে কাজটি করবো৷''

তাহলে কি দেশত্যাগের চিন্তা করছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে রাসেল বলেন, ‘‘আমার যদি দেশে থাকা সম্ভব না হয়, যদি আমি দেশের বাইরেও যাই, তাহলেও এই যন্ত্র তৈরির কাজটি করে যাবো৷ কারণ আমার একার জীবনের চেয়ে আমি যদি বাংলাদেশের কয়েকজন মানুষকে আমার সামান্য অবদানে বাঁচিয়ে রাখতে পারি, তাহলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো৷ তাদের জীবন অনেক গুরুত্বপূর্ণ৷''

হাসপাতালে আসিফ মহিউদ্দীন

কারাগারের মধ্যে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনের শারীরিক অবস্থার অবনতি এবং তাঁর আতঙ্ক নিয়ে গত ২৩ এপ্রিল একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডয়চে ভেলে৷ এরপর ২৫ এপ্রিল গ্রেপ্তারকৃত চার ব্লগারকে কারাগার থেকে হাসপাতালে স্থানান্তর করে কারা কর্তৃপক্ষ৷ রাসেল পারভেজ জানান, ১২ মে অবধি হাসপাতালেই ছিলেন আসিফ মহিউদ্দীন এবং অন্যান্য ব্লগাররা৷ তাই তাঁর ধারণা, আসিফ এবং বিপ্লব এখনও কারা হাসপাতালেই আছেন৷ আসিফের পরিবারও এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷

কারাগারে আসিফের সঙ্গে একই সেলে ছিলেন রাসেল পারভেজ৷ আসিফের শারীরিক অবস্থার দিকে নিয়মিত নজর রেখেছেন তিনি৷ গত জানুয়ারি মাসে দুবৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত এই ব্লগারের ঘাড়ে সমস্যা রয়েছে৷ এই বিষয়ে রাসেল বলেন, ‘‘আসিফ যে ঘাড়ের আঘাতটার কথা বলেছে, সেই আঘাতের জন্য তাঁর ঘাড় নাড়াতে সমস্যা হয়৷ এবং সে দীর্ঘ সময় আসলে নরম বালিশে ঘুমিয়ে চেষ্টা করেছে বিষয়টি কোনোভাবে মানিয়ে নেওয়ার৷ জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কারাগারে প্রবেশের চার-পাঁচদিন পর একটা বালিশের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷''

ব্লগারদের মুক্তির দাবিতে চলছে আন্দোলনছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images

রাসেল পারভেজ এবং অন্যান্য ব্লগারদের বিরুদ্ধে করা মামলা এখন বিচারাধীন রয়েছে৷ তাই এই বিষয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাননি রাসেল৷ তবে তিনি জানিয়েছেন, যে ধারায় মামলা করা হয়েছে তা কয়েকশো বছরের পুরনো এবং বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷ এখন দেখা যাক, বিচারক এই বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ