আফগানিস্তানের আরো দুইটি গুরুত্বপূর্ণ শহর তালেবানের দখলে। সূত্র জানাচ্ছে, কান্দাহারও তালেবান দখল করেছে। তবে আফগান প্রশাসন এখনো তার সত্যতা স্বীকার করেনি।
বিজ্ঞাপন
কাবুল থেকে তালেবানের দূরত্ব এখন আর মাত্র ১৫০ কিলোমিটার। বৃহস্পতিবার তালেবান ফৌজ দখল করে নিয়েছে গজনি। সেখানে গভর্নরের বাসভবনে তারা তালেবানের পতাকা লাগিয়ে দিয়েছে। পুলিশ স্টেশন তাদের দখলে। জেল থেকে ছাড়া হয়েছে আটক তালেবান বন্দিদের। একই ঘটনা ঘটেছে হেরাতেও। আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম শহরে তালেবান ফৌজ সমস্ত সরকারি দফতরে ঢুকে পড়েছে। স্থানীয় মানুষেরা সংবাদসংস্থা ডিপিএ-কে জানিয়েছেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টারে তালেবান ঢুকে পড়েছে। আফগান প্রশাসনেরএক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সংবাদসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, হিরাট ছেড়ে পালিয়ে গেছে সরকারি বাহিনী। এখন আর সেখানে লড়াই হচ্ছে না। তালেবান পুরো শহরের দখল নিয়ে নিয়েছে।
নিজ দেশেই শরণার্থী আফগানরা
দ্রুত রাজধানী কাবুলের দিকে এগোচ্ছে তালেবান৷ এক সপ্তাহেই দেশটির বেশ কয়েকটি প্রাদেশিক রাজধানীর পতন ঘটেছে৷ বিভিন্ন স্থানে আফগান সৈন্যদের সঙ্গে চলছে তালেবানের তুমুল লড়াই৷ সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে রাজধানীতে পালাচ্ছেন অনেকে৷
ছবি: REUTERS
এগিয়ে আসছে তালেবান
কুন্দুজ প্রদেশের রাজধানী আগেই দখল করেছিল তালেবান৷ কিন্তু বিমানবন্দরটির দখল নিতে পারছিল না সশস্ত্র গোষ্ঠীটি৷ এবার সেটিরও দখল গেল তালেবানের হাতে৷ বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আফগান ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যরা তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম৷
ছবি: REUTERS
এক সপ্তাহে নয়টি প্রদেশ
গত এক সপ্তাহে নিজেদের আক্রমণ আরো শাণিত করেছে তালেবান৷ এই এক সপ্তাহেই দেশটির নয়টি প্রদেশের রাজধানী দখল করেছে তারা৷ বুধবার তাজিকিস্তান সীমান্তবর্তী বাদাখশান প্রদেশের রাজধানী ফয়জাবাদ সিটির নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে তারা৷
ছবি: Danish Siddiqui/REUTERS
স্থানীয়রা সংকটে
তুমুল লড়াই ছড়িয়ে পড়ায় অনেক আফগান নিজেদের এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছেন৷ বেশিরভাগ এলাকা তালেবান আক্রান্ত হওয়ায় তাদের অনেকের শেষ ভরসা রাজধানী কাবুল৷
ছবি: REUTERS
নিজ দেশে শরণার্থী
গত কয়েকদিনে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ায় হাজার হাজার আফগান আশ্রয় নিয়েছেন কাবুলে৷ তাদের অনেককেই অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়া হয়েছে কাবুলের বিভিন্ন পাবলিক পার্কে৷
ছবি: REUTERS
মানবিক বিপর্যয়
ভিটেমাটি থেকে অনেকেই এক কাপড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন৷ পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অনেকে জীবনের সমস্ত সঞ্চয় পেছনে ফেলে এসেছেন৷ কেউ কেউ রাতে ঘুমানোর জন্য মাথাগোঁজার ঠাঁই হিসাবে ছোট তাঁবু পেলেও অনেক পরিবারের শিশু ও নারীদেরও রাত কাটাতে হচ্ছে খোলা আকাশের নীচে৷
ছবি: REUTERS
খাদ্যসংকট
রাজধানীতে পুরো দেশ থেকে হাজার হাজার শরণার্থী জড়ো হওয়ায় আবাসন সংকটের পাশাপাশি খাবার সংকটও দেখা দিয়েছে৷ বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেও তাতে বিপুল পরিমাণ চাপ সামলানো সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: REUTERS
চিকিৎসা সেবা
সংঘর্ষ চলতে থাকা এলাকা থেকে পালিয়ে আসা অনেকেই আহত৷ বেশ কিছু শিশুও গোলা ও বোমার আঘাতে আহত অবস্থায় কাবুলে এসেছে৷ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য কাবুলের পার্কে অস্থায়ী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছে৷
ছবি: REUTERS
মাজার-ই-শরীফে গনি
তালেবানের হাতে যখন একের পর এক প্রদেশের পতন ঘটছে, তখনই উত্তরের বিভিন্ন প্রদেশের পরিস্থিতি দেখতে মাজার-ই-শরীফ সফরে গেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি৷ স্থানীয় বিমানবন্দরে নামার পর রাজনীতিবিদ ও আফগান সেনা কমান্ডাররা তাকে সবশেষ পরিস্থিতির বিষয়ে অবগত করেন৷
ছবি: REUTERS
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
কবে শান্তি ফিরবে, কবে নিজের ঘরে ফিরতে পারবেন, কিছুই জানা নেই৷ অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায়ও খোলা নেই তাদের সামনে৷ পরবর্তী প্রজন্মকে যুদ্ধের সহিংসতা থেকে রক্ষাই প্রথম উদ্দেশ্য৷
ছবি: REUTERS
9 ছবি1 | 9
স্থানীয় সূত্র কোনো কোনো সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছে, কান্দাহার শহরও তালেবানের দখলে চলে গেছে। কিন্তু এই তথ্যের সত্যতা এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। হেরাত আফগানিস্তানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। ইরান এবং তুর্কমেনিস্তানের সীমান্ত অঞ্চল বাণিজ্যের জন্য প্রসিদ্ধ। হেরাতের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েও বহু মানুষ যাতায়াত করেন। সেই বিমানবন্দরেও তালেবান নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করেছে।
অ্যামেরিকা-যুক্তরাজ্যের সেনা
অ্যামেরিকা এবং যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানে নতুন করে সেনা পাঠিয়েছে। দেশের সমস্ত কূটনৈতিক অফিস এবং দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সেখানকার কর্মীদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মীরা যাতে ঠিকমতো ফিরতে পারেন, তার জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কর্মীরা ফিরলে সেনাও ফিরে যাবে। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তালেবান ক্ষমতায় এলে আফগানিস্তানে যুক্তরাজ্যের কোনো কর্মীকে রাখা হবে না। ন্যাশনাল সিকিওরিটি কাউন্সিলের প্রধান ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এলে ইউরোপে জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে বলে তারা মনে করছেন।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস জানিয়েছেন, তালেবান ক্ষমতায় এলে জার্মানি আফগানিস্তানকে আর কোনো সাহায্য করবে না। আর্থিক এবং অন্যান্য দিক থেকে জার্মানি বিপুল সাহায্য করে আফগানিস্তানকে। সেই সমস্ত কিছু বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে জার্মানি। জাতিসংঘ ফের তালেবান বাহিনীকে লড়াই থামিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসার প্রস্তাব দিয়েছে।
তালেবানের কর্মকাণ্ড
বিশ্ব যা-ই বলুক, তালেবান বাহিনী তাতে কান দিচ্ছে না। বৃহস্পতিবার হেরাত এবং গজনির বেশ কিছু ছবি তারা প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দুইটি শহরেই প্রকাশ্য রাস্তায় তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওই ছবিগুলি দিয়েই শহর দুইটি দখলের প্রমাণ দিয়েছে তালেবান।