হেলমুট কোল একটি ‘ইউরোপিয়ান জার্মানি’ চেয়েছিলেন, একটি ‘জার্মান ইউরোপ’ নয়৷ শনিবার ইউরোপীয় সংসদে সদ্য প্রয়াত জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর কোলের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এই মন্তব্য করেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল তাঁর বক্তব্য শেষে নীল রংয়ের ইইউ পতাকা দিয়ে কোলের মরদেহ বহন করা কফিন ঢেকে দেয়ার আগে মাথা নুইয়ে সাবেক চ্যান্সেলরের প্রতি শ্রদ্ধা জানান৷ নিজের বক্তব্যে ম্যার্কেল হেলমুট কোলকে একজন মহান ইউরোপীয় নাগরিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিবিদ হিসাবে আখ্যায়িত করেন৷ ‘‘হেলমুট কোল ছাড়া ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত দেয়ালের ওপারে বাস করা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন অন্যরকম হতো,’’ বলেন ম্যার্কেল৷ ‘‘আমার প্রিয় চ্যান্সেলর হেলমুট কোল, আমার আজ এই পর্যায়ে আসার পেছনে আপনার অনেক বড় অবদান আছে,’’ কাঁপা কণ্ঠে বলেন তিনি৷ জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ‘‘আমাকে সুযোগ দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ৷ অন্যান্যদেরও সুযোগ দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ৷ একজন জার্মান এবং একজন ইউরোপীয় হিসাবে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি সেজন্যও আপনাকে ধন্যবাদ৷’’
সাবেক পূর্ব জার্মানিতে বেড়ে ওঠা ম্যার্কেলকে বার্লিন প্রাচীর পতনের পর নিজের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন তৎকালীন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল৷ ম্যার্কেল স্বীকার করেন, তিনি সহ অন্য অনেকের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কোলের সমস্যা তৈরি হয়েছিল৷ ২০০০ সালে দলের তহবিল সংক্রান্ত কেলেংকারির সময় কোলের প্রতি সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থেকেছিলেন ম্যার্কেল৷ তবে এই ঘটনাটি ইতিহাসে একটি ছোট পাদটীকা হয়ে থাকবে বলে মনে করেন ম্যার্কেল৷ কারণ বার্লিন প্রাচীর পতনের আগে ও পরে, অর্থাৎ ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালের ঘটনা বেশ বড় ছিল৷ ‘‘ঐ ঘটনাটি হেলমুট কোলের ঐতিহাসিক ও অনন্য অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে৷ অন্য নেতাদের সঙ্গে মিলে তিনি জার্মানির পুনরেকত্রীকরণকে ইউরোপের একত্রীকরণের সঙ্গে মেলাতে পেরেছিলেন৷ ওটা ছিল একটা শান্তির কাজ, একটা স্বাধীনতার কাজ, একটা ঐক্যের কাজ৷’’
হেলমুট কোলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
শনিবার জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোলকে শেষ বিদায় জানান জার্মানি ও ইউরোপ সহ বিশ্বের নেতারা৷ গতমাসের ১৬ তারিখ ৮৭ বছর বয়সে মারা যান তিনি৷
ছবি: REUTERS
স্ট্রাসবুর্গে বিশ্বনেতারা
ইউরোপের বিশটি দেশের রাজনীতিবিদরা এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আয়োজিত হেলমুট কোলের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন৷ গত ১৬ জুন ৮৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের এই নায়ক৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
‘তিনি একজন সত্যিকারের ইউরোপিয়ান’
‘‘হেলমুট কোল ছিলেন একজন সত্যিকারের ইউরোপীয় এবং একজন বন্ধু৷ ইউরোপ তাঁর কাছে অনেক ঋণী,’’ বলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জঁ ক্লোদ ইয়ুঙ্কার৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Hoppe
‘কোল ছাড়া আমার জীবন সম্পূর্ণ ভিন্ন হতো’
দুই জার্মানিকে একত্রীকরণের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছিলেন কোল, স্ট্রাসবুর্গে সেকথা উল্লেখ করার পাশাপাশি নিজের জীবনে কোলের অবদানের কথাও অকপটে স্বীকার করেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ তিনি বলেন, ‘‘হেলমুট কোলের অবদান না থাকলে আমার জীবনও সম্পূর্ণ ভিন্ন হতো৷’’ জার্মান রাজনীতিতে ম্যার্কেল শক্ত অবস্থান গড়েছিলেন কোলের হাত ধরেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Euler
‘আমি এই মানুষটাকে ভালোবেসেছিলাম’
স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকায় ঢাকা হেলমুট কোলের কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন বলেন, ‘‘আমি এই মানুষটাকে (কোল) ভালোবেসেছিলাম কেননা তিনি এমন একটি বিশ্ব গড়তে চেয়েছিলেন যেখানে কেউই অধীনস্থ নয়৷ এমন একটি বিশ্ব যেখানে সংঘাতের চেয়ে সহযোগিতা ভালো৷ যেখানে বিভিন্ন গ্রুপ স্বতন্ত্র একনায়কদের চেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নেবে৷’’
ছবি: picture alliance / Sven Hoppe/dpa
‘কোল শুধু জোট সঙ্গী নন, বন্ধু ছিলেন’
স্ট্রাসবুর্গে কোলের শেষকৃত্যে অংশ নেয়া ফ্রান্সের নতুন প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেন, ‘‘ফ্রান্সের জন্য কোল ছিলেন একজন মুখ্য সংলাপে অংশগ্রহণকারী, একজন গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী, একজন নিরন্তর সেতুবন্ধনকারী - আর ফ্রান্সের কাছে এসবের চেয়েও বেশি হচ্ছে তিনি একজন বন্ধু ছিলেন৷’’
ছবি: picture alliance/dpa/S. Hoppe
জাহাজে করে স্পায়ারে
স্ট্রাসবুর্গে অনুষ্ঠান শেষে কোলের কফিন প্রথমে তাঁর জন্মস্থল ল্যুডভিগসহাফেনে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর কফিনটি এই জাহাজে করে রাইন নদী দিয়ে স্পায়ারে নিয়ে যাওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/U. Anspach
স্পায়ারে পৌঁছার পর
স্পায়ারে পৌঁছার পর কোলের কফিন এই গাড়িতে করে স্পায়ার ক্যাথিড্রালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে ‘রিকুইয়েম মাস’ (মৃত ব্যক্তির আত্মার সদগতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রার্থনা সংগীত) অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Kästle
স্পায়ার ক্যাথিড্রাল
এই ক্যাথিড্রালেই ‘রিকুইয়েম মাস’ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ কোল এই ক্যাথিড্রাল বেশ পছন্দ করতেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমার হাত থেকে বাঁচতে তিনি প্রায়ই এই ক্যাথিড্রালে আশ্রয় নিতেন বলে জানিয়েছেন৷ চ্যান্সেলর থাকাকালীন জার্মানি সফর করা উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রপ্রধানদের অনেককে তিনি এই ক্যাথিড্রাল দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন৷
ছবি: Klaus Landry
সমাধিস্থল
ছবিতে স্পায়ার ক্যাথিড্রাল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আডেনাওয়ার পার্ক দেখতে পাচ্ছেন৷ সেখানকার কবরস্থানেই সমাহিত করা হয়েছে জার্মানিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সময়, ১৬ বছর, চ্যান্সেলর পদে থাকা রাজনীতিবিদ কোলকে৷
ছবি: Klaus Landry
9 ছবি1 | 9
কোল, দ্য জায়ান্ট
স্ট্রাসবুর্গের ইউরোপীয় সংসদে হেলমুট কোলের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সবার পরে বক্তব্য রাখেন ম্যার্কেল৷ এই অনুষ্ঠানে ম্যার্কেলের উপস্থিতির বিরোধিতা করেছিলেন কোলের দ্বিতীয় স্ত্রী মাইকে কোল-রিশটার৷ তবে ম্যার্কেল তাঁর বক্তব্য শেষে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত প্রায় আটশ ব্যক্তির সামনে রিশটারের কাছে গিয়ে তাঁর প্রতি সমবেদনা জানান৷ বক্তব্য দেয়ার সময় ম্যার্কেল হেলমুট কোলের প্রথম স্ত্রী হানেলোরের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন৷ ২০০১ সালে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন৷ অনুষ্ঠানে রিশটার চোখে কালো সানগ্লাস পরে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ মাঝেমধ্যে তাঁকে চোখ মুছতে দেখা গেছে৷
ম্যার্কেলের আগে বক্তব্য রাখেন ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ কোলের অনুপ্রেরণায় উৎসাহিত হয়ে তিনি জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বকে আরও মজবুত করার অঙ্গীকার করেন৷ তিনি ইউরোপকে আরও সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান৷ ‘‘ইউরোপীয় মনোভাব থেকে যেন আমরা কখনও সরে না যাই,’’ হেলমুট কোলের এই বার্তা স্মরণ করিয়ে দেন মাক্রোঁ৷
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ-ক্লোদ ইয়ুংকারও তাঁর বন্ধু হেলমুট কোলকে বিদায় জানিয়ে বক্তব্য রাখেন৷ তিনি বলেন, কোল হচ্ছেন একমাত্র নেতা যিনি একবার ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের সময় আবেগে কয়েক মিনিট কেঁদেছিলেন৷ সময়টা ছিল ১৯৯৭ সাল৷ সেই সময় মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল৷ কোলকে তিনি একজন জার্মান ও ইউরোপিয়ান প্রেমিক হিসাবে আখ্যায়িত করেন৷ দুই জার্মানিকে একত্র করার সুযোগ কোল ঠিকমত কাজে লাগিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন ইয়ুংকার৷ কোল ছাড়া আর কারও পক্ষে সেটি করা সম্ভব ছিল না, বলেন তিনি৷ কয়েকটি ভাষায় কোলকে ধন্যবাদ জানান ইয়ুংকার৷
যেন ছোটখাটো একটি ইইউ সম্মেলন
কোলের সম্মানে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইইউর ১৪ জন বর্তমান সরকার প্রধান৷ ছিলেন জার্মান প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ এবং ইউরোপীয় ও জার্মান সংসদের সদস্যরা৷ আরও বক্তব্য রাখেন স্পেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফেলিপে গনজালেস ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন৷
ক্লিন্টনের বক্তব্যের খানিকটা ছিল রসবোধপূর্ণ আর কিছুটা ছিল ভাবুক প্রকৃতির৷ তিনি বলেন, জার্মানি সফররত রাষ্ট্রীয় অতিথিদের হেলমুট কোল ‘সাওমাগেন’ দিয়ে আপ্যায়ন করতেন৷ হেলমুট কোল জার্মানির যে অঞ্চলে জন্মেছেন সেই পালাটিনের একটি স্থানীয় খাবার হচ্ছে সাওমাগেন৷ জার্মানির মধ্যে পালাটিনে অঞ্চলের বাইরে অন্য কোনো অঞ্চলে এই খাবারটি বেশি প্রচলিত নয়৷ ক্লিন্টন বলেন, ‘‘আমি তাঁকে পছন্দ করতাম৷’’ ‘‘হিলারি বলত, আমি তাঁকে পছন্দ করতাম কারণ তিনি নাকি একমাত্র মানুষ ছিলেন যাঁর আমার চেয়ে খাবার খাওয়ার প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল,’’ বলেন ক্লিন্টন৷ তিনি কোলের সম্পর্ক গড়ে তোলার যে ক্ষমতা তার প্রশংসা করেন৷ জাতীয় স্বার্থের চেয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপরই কোল বেশি গুরুত্ব দিতেন, উল্লেখ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন বলেন, ‘‘আমাদের চেয়েও বড় কিছুর সঙ্গে জড়িত হওয়ার সুযোগ আমাদের দিয়েছিলেন হেলমুট কোল৷’’
রাশিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে ইউরোপীয় সংসদে আয়োজিত ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্বাচেভ অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি৷ জার্মানির একত্রীকরণের ব্যাপারে গর্ভাচেভের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন হেলমুট কোল৷ বিনিময়ে জার্মানি রাশিয়াকে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছিল৷ কোল রাশিয়ার সত্যিকারের বন্ধু ছিলেন বলে উল্লেখ করেন মেদভেদেভ৷ ‘‘তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ইউরোপের মধ্যে যে বিভাজন তা দূর করতে হবে,’’ বলেন তিনি৷ কোলকে বর্তমান বিশ্বের স্থপতি হিসেবেও উল্লেখ করেন মেদভেদেভ৷
শুলৎস: কোল একজন যোদ্ধা ছিলেন
ইউরোপীয় সংসদের সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে জার্মানির আসন্ন সংসদ নির্বাচনে চ্যান্সেলর পদে ম্যার্কেলের প্রতিদ্বন্দ্বী মার্টিন শুলৎসও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, হেলমুট কোলের নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর কৌশল থেকে অনেক কিছু শেখার আছে৷ ‘‘তিনি একজন যোদ্ধা ছিলেন, আসল যোদ্ধা,’’ কোল সম্পর্কে বলেন শুলৎস৷
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই একসঙ্গে জার্মান জাতীয় সংগীত গান এবং ইউরোপের জাতীয় সংগীত শোনেন৷ স্ট্রাসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্কেস্ট্রা ইউরোপীয় সংগীতটি পরিবেশন করে৷ অনুষ্ঠান শেষে জার্মান ও ফ্রান্সের সেনারা হেলমুট কোলের মরদেহ বহন করা কফিন সংসদ থেকে বের করেন৷ এরপর জার্মান পুলিশ সেটিকে উড়িয়ে কোলের জন্মস্থান ল্যুডভিগসহাফেনে নিয়ে যায়৷ সেখান থেকে রাইন নদীতে করে স্পায়ারে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানকার বিখ্যাত ক্যাথিড্রালে অনুষ্ঠান শেষে তাঁকে ক্যাথিড্রালের কাছে অবস্থিত আডেনাওয়ার পার্কে সমাহিত করা হয়েছে৷
ব্যার্নড রিগার্ট/জেডএইচ
জার্মানির ‘পুনর্মিলনের চ্যান্সেলর’ হেলমুট কোল (১৯৩০-২০১৭)
‘বিংশ শতাব্দীর বিসমার্ক’ হিসেবে গণ্য হতেন যুদ্ধোত্তর জার্মানির প্রবাদপ্রতিম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হেলমুট কোল৷প্রাক্তন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল পরলোক ৮৭ বছর বয়সে পরলোক গমন করেছেন৷
ছবি: dapd
আর কেউ এতদিন চ্যান্সেলর থাকেননি
১৯৮২ সালের ১লা অক্টোবর হেলমুট কোল প্রথমবার চ্যান্সেলর হন৷ ১৬ বছর ধরে এই পদে অধিষ্টিত ছিলেন, অন্য যে কোনো চ্যান্সেলরের চেয়ে বেশি৷ তাঁর রাজনৈতিক জীবনের পরম মুহূর্ত ছিল বার্লিন প্রাকারের পতন এবং জার্মানির পুনর্মিলনে৷ ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে তাঁর দল ব্যাপকভাবে হারার পর কোল সিডিইউ সভাপতি হিসেবে পদত্যাগ করেন - যে পদ তিনি ২৫ বছর ধরে অলঙ্কৃত করেছেন৷
ছবি: dapd
আডেনাউয়ার-এর আমলে রাজনৈতিক উত্থান
১৯৪৭ সালে হেলমুট কোল সিডিইউ-তে যোগদান করেন৷ তিনি তাঁর জন্মের শহর লুডভিগসহাফেনে ‘যুব ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিলেন৷ ১৯৫০ সালে আইন পড়তে শুরু করেন, পরে তার সঙ্গে যোগ হয় ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান৷ দলে খুব তাড়াতাড়ি পদোন্নতি ঘটে কোল-এর৷ ১৯৬৬ সাল থেকেই তিনি সিডিইউ দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য৷
ছবি: picture alliance / dpa
তরুণ মুখ্যমন্ত্রী
১৯৬৬ সালে হেলমুট কোল রাইনল্যান্ড-প্যালেটিনেট রাজ্যে সিডিইউ দলের সভাপতি হন, এবং তার তিন বছর পরে, ১৯৬৯ সালের মে মাসে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার-এর স্থলাভিষিক্ত হন৷ দু’বছর পরে আরেক সাফল্য: হেলমুট কোল-এর নেতৃত্বে সিডিইউ দল ১৯৭১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়৷
ছবি: AP
সুখি পরিবার
বিশেষ করে ছুটি কাটানোর ফটোগুলিতে হেলমুট কোল একটি সুখি পরিবারের ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন কিন্তু বাস্তবে তাঁর স্ত্রী হানেলোরে এবং দুই পুত্র ভাল্টার ও পেটার বাবা বাড়িতে না থেকে কাজে থাকায় কষ্ট পেয়েছেন৷ ভাল্টার কোল পরে সেই স্মৃতিচারণ করেন৷
ছবি: imago/Sven Simon
পঁচিশ বছর ধরে সিডিইউ প্রধান
১৯৭৩ সালের জুন মাসে হেলমুট কোল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দলের সভাপতি নির্বাচিত হন৷ ২৫ বছর ধরে তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন৷ প্রথমবারের সেই নির্বাচন ছিল বন শহরে, একটি বিশেষ দলীয় সম্মেলনে৷ কোল-এর অভিব্যক্তিতে বিজয়োল্লাস৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জীবন যেরকম
১৯৮২ সালে এসপিডি-এফডিপি সরকারি জোটে ভাঙণ ধরার পর মুক্ত গণতন্ত্রীরা ঝোঁকেন খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীদের দিকে৷ তৎকালীন চ্যান্সেলর হেলমুট স্মিট-কে আস্থাভোটে পরাজিত করে উভয় দল হেলমুট কোল-কে নতুন সরকারপ্রধান নির্বাচিত করে৷ স্মিট স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কোল-কে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অন্য এক পুনর্মিলন
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া মিতেরঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোল পরমসখার মতো হাতে হাত ধরে? ছবিটি বিশ্বের সর্বত্র ছাপা হয়েছিল৷ সময়: ১৯৮৪ সাল৷ স্থান: ভ্যার্দঁ-তে জার্মান-ফরাসি মৈত্রী অনুষ্ঠান, যে অনুষ্ঠানে দুই নেতা পরস্পরের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন৷
ছবি: MARCEL MOCHET/AFP/Getty Images
জার্মান পুনর্মিলন
১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর কোল বিভক্ত জার্মানির পুনর্মিলনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যান৷ ১৯৯০ সালের ৩রা অক্টোবর সাবেক পূর্ব জার্মানি ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রে যোগদান করে – কোল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের তুঙ্গে পৌঁছন৷ বার্লিনে রাইশটাগ-এর সোপান থেকে হাত নাড়ছেন কোল ও তাঁর তৎকালীন স্ত্রী হানেলোরে৷
ছবি: picture alliance/dpa
ম্যার্কেলের গুরুপ্রতিম
হেলমুট কোল ছাড়া বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জার্মান রাজনীতিতে এতোবড় ভূমিকা নিতে পারতেন কিনা, বলা শক্ত৷ নব্বইয়ের দশকে কোল সাবেক পূর্ব জার্মানির রাজনীতিকটিকে প্রথমে ফেডারাল পরিবার মন্ত্রক, পরে পরিবেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেন৷
ছবি: picture alliance / dpa
১৬ বছর চ্যান্সেলর থাকার পর বিদায়
১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সংসদীয় নির্বাচনে সিডিইউ দলের পরাজয় ঘটে, আসে চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার-এর লাল-সবুজ সরকার৷ প্রথা অনুযায়ী সামরিক প্যারেড সহ বিদায় দেওয়া হয় হেলমুট কোল-কে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ত্রীবিয়োগ
২০০১ সালে আত্মহত্যা করেন হেলমুট কোল-এর ৪১ বছরের সহধর্মিনী হানেলোরে কোল৷ একটি দুরারোগ্য ব্যাধির কারণে তিনি সূর্যালোক সহ্য করতে পারতেন না৷
ছবি: AP
নবজীবন
হানেলোরোর মৃত্যুর চার বছর পরে হেলমুট কোল তাঁর চেয়ে ৩৪ বছর কম বয়সের মাইকে রিশটার-কে বিবাহ করেন৷