ছবিটিতে মোট ছয়জন মডেল৷ দুই জন পুরুষ, অন্যরা নারী৷ মোটামুটি সবারই গায়ে পোশাক অতি অল্প৷ কিন্তু মাথায় আছে হেলমেট৷ ইংরেজিতে লেখা স্লোগানটির বাংলা অনেকটা এরকম, ‘‘দেখতে বাজে লাগলেও, জীবন বাঁচায়৷'' সচেতনতা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিজ্ঞাপনটি দিয়েছে জার্মান যোগাযোগ মন্ত্রণালয়৷ কিন্তু এটি নিয়ে দেশটির রাজনীতিবিদদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক৷
‘‘ নগ্ন দেহ ব্যবহারকরে যোগাযোগমন্ত্রী তাঁর নীতি বাস্তবায়ন করছেন৷ এটা বিব্রতকর, কাণ্ডজ্ঞানহীন, আর যৌন সংবেদনশীল ব্যাপার,'' এমন মন্তব্য করেছেন ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অফ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক উইমেন' এর চেয়ারপার্সন মারিয়া নোয়খল৷ জার্মানির জনপ্রিয় ‘বিল্ড আম জনটাগ' পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘বিজ্ঞাপনটি অবশ্যই তুলে নিতে হবে৷''
অবশ্য এ নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে মন্ত্রণালয়ও৷ তারা বলছে, ‘‘অনেক তরুণ নান্দনিক কারণে হেলমেট ছাড়াই বের হয়৷ এই মনোভাব পরিবর্তনই প্রচারের লক্ষ্য৷''
করদাতাদের অর্থে
সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডির নারী বিষয়ক সংসদীয় গ্রুপের উপ-প্রধান কাটিয়া মাস্টও বিজ্ঞাপনটিকে ‘‘লজ্জাকর, পুরাতন ধ্যান ধারণার ও যৌন সংবেদনশীল'' হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷ একটি সংবাদপত্রকে শনিবার তিনি বলেন, ‘‘করদাতাদের অর্থ অর্ধনগ্ন নারী ও পুরুষের পোস্টারের পেছনে খরচ করা উচিত নয়৷''
এসপিডির নারী বিষয়ক সংসদীয় গ্রুপের আরেক সদস্য ইয়োসেফিন অর্টলেব বলেছেন, ‘‘নারী, নগ্ন দেহ, কিংবা যৌনতা কোনোটাই তরুণদের সাইক্লিংয়ের নিরাপত্তায় সচেতন করার জন্য নয়৷'' তিনি জেন্ডার বা নারী-পুরুষ সমতার ক্ষেত্রে সরকারকে দ্রুত একটি কৌশল প্রণয়নের তাগিদও দেন৷
এদিকে, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, ১৭-৩০ বছর বয়সি বাইক চালকদের মাত্র ৮ ভাগ হেলমেট ব্যবহার করে৷ বিজ্ঞাপনটির মূল লক্ষ্য এসব তরুণরা, যাঁরা হেলমেট পরতে আগ্রহী নন৷ বিজ্ঞাপনটির মাধ্যমে তাঁদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে বলে প্রাথমিক মূল্যায়নে উঠে এসেছে, বার্তা সংস্থা ইপিডির কাছে এমনটা দাবি করেছেন এই কর্মকর্তা৷
এটি একটি বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয়৷ হেলমুট নিউটন থেকে গাই বো দ্যঁ পর্যন্ত বিখ্যাত সব ফ্যাশন ফটোগ্রাফার নারীদের কামনার বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করেছেন বিজ্ঞাপনে৷ যুগে যুগে এর বিরোধিতাও হয়েছে, সমর্থনও আছে৷
ছবি: Courtesy the artistরং দিয়ে একজন নারী তাঁর শরীর ঢাকছেন৷ ফ্যাশন ব্র্যান্ড লিভাইসের একটি বিজ্ঞাপনের ছবি এটি৷ তুলেছেন ক্রিস্টোফে গিলবার্ট নামের এক ফটোগ্রাফার৷ তাঁর এই সিরিজের ছবিগুলোতে নারীকে ফ্যাশনের চেয়ে কামোদ্দীপক করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে৷ তবে ভিন্নমতও আছে৷
ছবি: Courtesy the artistবিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে একটা অভিযোগ সবসময় করা হয় যে, নারীর শরীর বা শরীরের অংশকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে৷ ১৯৯৮ সালের অন্তর্বাসের এই বিজ্ঞাপনটি তেমনই একটি বিতর্কিত ছবি৷
ছবি: Courtesy the artistএকজন নারী সুন্দর লাল পোশাকে সজ্জিত, হাতে প্রদীপদান৷ জার্মান ফটোগ্রাফার এলেন ফন উনব্যর্থের এই ছবিতে ফটোগ্রাফির সমসাময়িক ধারণা নিয়ে কাজ করা হয়েছে, যেখানে মূল পণ্যের চেয়ে বরং লাইফস্টাইলকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়৷ এই বিজ্ঞাপনটির পণ্য আসলে ভদকা, যা ছবিতে অতটা প্রাধান্য পায়নি৷
ছবি: Courtesy the artistফ্রেঞ্চ ফটোগ্রাফার গাই বো দ্যঁ বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ফটোগ্রাফারদের একজন৷ তাঁর ছবি বিখ্যাত ম্যাগাজিন ভোগ-এর সম্পাদকীয় পাতায় ঠাঁই পেয়েছে৷ প্রচুর বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন তিনি৷ তাঁর অনেক ছবিই যৌন আবেদনময়৷ কিছু কিছু একেবারে ধাক্কা খাওয়ার মতো বলে সমালোচনা আছে৷
ছবি: The Guy Bourdin Estate 2018বাস্তবে একটি পারফিউম বোতলের সঙ্গে সমুদ্রতীরের যোগাযোগ থাকার কথা নয়৷ কিন্তু বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় একটি ছোট বোতলও একটি আকর্ষণীয় লাইফস্টাইলের অংশ হতে পারে, যার সঙ্গে একজন রোদে পোড়া আকর্ষণীয়ার নুয়ে পড়া শরীরেরও যোগ থাকতে পারে৷ আশির দশকে বিজ্ঞাপনের জগৎ যৌন আবেদনময়তায় ভরপুর ছিল৷ এই ছবিটি তখনকার সময়ের৷
ছবি: Courtesy the artistষাটের দশকে ভোগ ম্যাগাজিনে মনে রাখার মতো বেশ কিছু ছবি ছাপানো হয়েছিল ফটোগ্রাফার ফ্রাঙ্কো রুবার্তেল্লির৷ ১৯৬৮ সালের এই ছবিটিতে তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ফেরুস্কা ফন লেনডর্ফকে মডেল বানিয়েছেন৷ যদিও ঔপনিবেশিক যুগের এই ছবি ‘শিকারী জীবন’-এর ‘মুক্ত আত্মা’-কে চিত্রায়িত করছে, তারপরও এর পেছনে নারীকে পণ্য হিসেবে মূর্ত করার বাসনাই প্রকাশ পেয়েছে বলে সমালোচনা আছে৷
ছবি: Courtesy Ira Stehmann Fine Artএফএস/জেডএইচ