ইউক্রেনকে সামরিক হেলিকপ্টার দিতে রাজি হলো জার্মানি। কিন্তু ইউক্রেন জার্মানির কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র চায়।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা জার্মানির কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র চায়। সে জন্য আলোচনাও করছে। কিন্তু তাদের এই অনুরোধ গত সপ্তাহে জার্মানির পার্লামেন্ট খারিজ করে দিয়েছে।
একদিন আগেই জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ছয়টি সামরিক হেলিকপ্টার ও তার যন্ত্রাংশ দেয়া হবে। ইউক্রেনের সেনাকে এই হেলিকপ্টার চালানোর প্রশিক্ষণও দেবে জার্মানি।
কেন ইউক্রেন ক্ষেপণাস্ত্র চায়?
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুলেবা জানিয়েছেন, রাশিয়ার ভূখণ্ডে গিয়ে আক্রমণ চালানোর জন্য তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের দরকার নেই।
কুলেবা বলেছেন, ''মস্কো আক্রমণ করার জন্য আমাদের এই ক্ষেপণাস্ত্র দরকার নেই। রাশিয়া ইউক্রেনের যে জায়গাগুলি নিয়ে রেখেছে, সেখানে তাদের পরিকাঠামোর উপর আক্রমণ করার জন্য এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের দরকার।''
জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎস এখনো পর্যন্ত এই ক্ষেপণাস্ত্র দিতে অস্বীকার করেছেন। জার্মানির আশঙ্কা, ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র দিলে রাশিয়া আক্রমণের তীব্রতা আরো বাড়াবে।
লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক কী, ইউক্রেন কেন তা চাইছে?
যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ করতে জার্মানির তৈরি লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক চাইছে ইউক্রেন৷ কিন্তু জার্মানি তা দিতে চাইছে না৷ কিন্তু কেন, আর কেনইবা লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক এত গুরুত্বপূর্ণ?
ছবি: Philipp Schulze/dpa/picture-alliance
লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক চায় ইউক্রেন
ইউক্রেন ও তার মিত্ররা মনে করছে, রাশিয়া ইউক্রেনের যে অংশগুলো দখল করেছে সেগুলো থেকে রুশদের সরাতে পারলে যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে৷ কিন্তু সেটা করতে হলে জার্মানির তৈরি লিওপার্ড টু এর মতো ট্যাঙ্ক দরকার বলে জানিয়েছে ইউক্রেন৷ কারণ তাদের কাছে থাকা ট্যাঙ্কগুলো সেই সোভিয়েত আমলের৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
কেন লিওপার্ড টু?
১৯৭৯ সাল থেকে এই ট্যাঙ্ক ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ এটি প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে৷ সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৬৮ কিলোমিটার৷ এতে ১২০ মিমি নলের বন্দুক ছাড়াও আছে দুটি লাইট মেশিন গান৷ যুক্তরাষ্ট্রের আব্রামস ট্যাঙ্কের চেয়ে লিওপার্ড টু চালাতে কম জ্বালানি লাগে বলে ইউক্রেনের জন্য এটি বেশি উপযোগী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Moritz Frankenberg/dpa/picture-alliance
ইউরোপে বহুল ব্যবহৃত
ইউরোপের এক ডজনেরও বেশি দেশে বর্তমানে দুই হাজারেরও বেশি লিওপার্ড টু ব্যবহৃত হচ্ছে৷ ক্যানাডাও এটি ব্যবহার করছে৷ কসোভো, বসনিয়া, আফগানিস্তান ও সিরিয়া এটি ব্যবহৃত হয়েছে৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
জার্মানির চাওয়া
জার্মানি এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে সাঁজোয়া যানসহ অনেক অস্ত্র দিলেও একা লিওপার্ড ২ ট্যাঙ্ক দিতে রাজি হচ্ছে না৷ কারণ তারা মনে করছে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে যা দেয়া হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হচ্ছে লিওপার্ড টু- যা একটি সমস্যার বিষয় বলে মনে করছে জার্মানি৷ তবে কোনো জোটের আওতায় ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক দেয়া হলে তার অংশ হিসেবে লিওপার্ড টু দেয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Moritz Frankenberg/dpa/picture-alliance
পোল্যান্ড দিতে চায়
পোল্যান্ড বলেছে তারা ইউক্রেনকে লিওপার্ড টু দিবে৷ কিন্তু জার্মানির অনুমতি ছাড়া পোল্যান্ড সেটি ইউক্রেনকে দিতে পারবে না৷ তবে রোববার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক জানিয়েছেন, পোল্যান্ড ইউক্রেনকে ওই ট্যাঙ্ক পাঠালে জার্মানি আপত্তি করবে না৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture-alliance
৩০০, নাকি ১০০?
ইউক্রেন বলছে, তাদের ৩০০টি লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক দরকার৷ তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ১০০টি ট্যাঙ্ক হলেই যুদ্ধের ভারসাম্যে পরিবর্তন আনা সম্ভব হতে পারে৷
ছবি: Philipp Schulze/dpa/picture-alliance
6 ছবি1 | 6
পার্লামেন্টে বিরোধীরা ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু শলৎসের নেতৃত্বাধীন জোট গতসপ্তাহে সেই অনুরোধ খারিজ করে দেয়।
হেলিকপ্টার দেয়া হবে
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার বলেছেন, ইউক্রেনকে ছয়টি সি কিং এমকে ৪১ মাল্টিপারপাস হেলিকপ্টার দেয়া হবে।
তিনি বলেছেন, সি কিং খুবই শক্তিশালী হেলিকপ্টার, এটা হাতে পেলে অনেক জায়গায় ইউক্রেনের সুবিধা হবে। তারা প্রয়োজনে কৃষ্ণসাগরে সেনাও পাঠাতে পারবে। জার্মানি থেকে এই প্রথম এই ধরনের হেলিকপ্টার দেয়া হলো।
এক দশক পুরনো এই হেলিকপ্টারগুলি এখন মূলত সমুদ্রে উদ্ধারকাজে ব্যবহার করা হয়। নতুন এনএইচ-৯০ সি লায়ন হেলিকপ্টার এখন জার্মানির হাতে রয়েছে। এই নতুন হেলিকপ্টারই সি কিং-এর জায়গা নেবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জার্মানি ছয়শ কোটি ডলারের সমরাস্ত্র ও সামরিক জিনিস ইউক্রেনকে দিয়েছে।