উত্তর সাগরে জার্মানির হেলিগোল্যান্ড দ্বীপ ছোট হলেও পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়৷ বাংকার ছাড়াও নানা দ্রষ্টব্য ছড়িয়ে রয়েছে সেখানে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের বোমাবর্ষণের চিহ্নেরও অভাব নেই৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির একটি দ্বীপের আকর্ষণ
04:24
বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে হেলিগোল্যান্ডে আসা সার্থক হতে পারে৷ যেমন, জুন মাসে ‘কমন মার' প্রজাতির পাখির ছানারা ৪০ মিটার উচ্চতা থেকে উত্তর সাগরে ঝাঁপ দেয়৷ অথবা জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর সময় পর্যন্ত উত্তর সাগরের সৈকত বড়ই মনোরম থাকে৷
এই মরসুমে দিনে প্রায় ১০,০০০ পর্যটক এখানে আসেন৷ ব্যুসুম ও কুক্সহাফেন থেকে জাহাজ-বোঝাই মানুষ দুপুরের দিকে সেখানে পৌঁছান৷ তারপর নৌকা-চালকদের ব্যস্ততা শুরু হয়৷ কয়েক দশক ধরে তাঁরা তাঁদের কাঠের নৌকায় যাত্রীদের দ্বীপে পৌঁছে দেন৷ একমাত্র হেলিগোল্যান্ড দ্বীপেই বিরল এই নৌকা দেখা যায়৷ নৌকাচালক গেরল্ড ল্যোসেকান বলেন, ‘‘এখানে যেমন ‘ফেয়ার লেডি' জাহাজটি রয়েছে, যা হোকসিল থেকে মাঝে মধ্যে এখানে আসে৷ কখনো তিনটি জাহাজই একসঙ্গে এসে পৌঁছায়৷ তখন অবশ্যই আমাদের উপর একটু চাপ বাড়ে৷ তবে সাধারণত সবকিছু ঠিকমতো চলে৷ জাহাজগুলি পরপর আসে৷ এখন ‘ফানিগে' জাহাজটি প্রায় খালি, এবার ‘লেডি ফন ব্যুসুম' জাহাজ আসছে৷ সেটি খালি হলে ‘ফেয়ার লেডি' আসবে৷''
শীতকালে বেড়ানোর জন্য জার্মানির শীর্ষ দশটি দ্বীপ
গরমের সময় জার্মানির দ্বীপগুলোতে পর্যটকদের বেশ আনাগোনা থাকে৷ কিন্তু যাঁরা অনেক মানুষের সমাগম পছন্দ করেন না, তাঁরা চাইলে শীতেও সেখানে যেতে পারেন৷ এমনই কয়েকটি দ্বীপের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/ZB/Sauer
ঝোড়ো হাওয়ায় ঘোরাঘুরি
জার্মানির সবচেয়ে বড় দ্বীপ ব়্যুগেন৷ বাল্টিক উপকূলের এই দ্বীপটি গ্রীষ্মকালে জমজমাট থাকলেও শীতে অল্প সংখ্যক পর্যটকের দেখা মেলে৷ ঝোড়ো আবহাওয়ার মধ্যেও যেন তাঁরা ঘুরতে পারেন সেজন্য রয়েছে নানারকম টুর-এর ব্যবস্থা৷ আছে স্কেটিং-এর সুবিধাও৷ আর যাঁদের একটু গরম পছন্দ তাঁদের জন্য হোটেলগুলোতে রয়েছে ব্যবস্থা৷
ছবি: picture alliance/ZB/Sauer
সৈকতে স্কি!
জার্মান-পোল্যান্ড সীমান্তের উজেডম দ্বীপের সৈকতে শীতের সময় পর্যটকরা যান স্কি করতে৷ অর্থাৎ গরমে যেখানে সবাই সূর্যস্নান করে, শীত এলেই সেটা হয়ে যায় স্কি-র জায়গা৷
ছবি: picture alliance/ZB/Sauer
সামুদ্রিক ঈগল দেখতে হিডেনজে
খেয়াল করে দেখুন পানি সব বরফ হয়ে গেছে৷ শীতের হিডেনজে বা হিডেনসি এমনই৷ সেখানে গেলে বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক ঈগলের দেখা পাওয়া যাবে৷ গরমের সময় যেটা আপনি পাবেন না৷
ছবি: picture-alliance/ZB/Sauer
সাগর দেখার সময় শীতকাল!
উত্তর সাগরের জ্যুল্ট দ্বীপে গ্রীষ্মকালে গেলে পর্যটকদের ভিড়ে স্বস্তিমতো সাগরের সৌন্দর্য দেখাই দায়৷ কিন্তু শীতের সময়কার এই ছবিটি দেখুন৷ হাতেগোনা অল্প কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷ ফলে তাঁরা সময় নিয়ে সাগরের রূপ উপভোগ করতে পারছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ossinger
ঘমুন্ত আমরুম
জ্যুল্ট দ্বীপের পাশেই আমরুম-এর অবস্থান৷ প্রতি গ্রীষ্মে সেখানে গড়ে প্রায় আট হাজার পর্যটকের দেখা মেলে৷ তখন তাঁদের আপ্যায়ন করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন দ্বীপবাসী৷ তাই শীতকাল এলেই আরাম করতে চলে যান তাঁরা৷ তবে সেসময় যে অল্প সংখ্যক পর্যটক সেখানে যান তাঁরা নির্জন প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Rehder
বন্যার দ্বীপ হালিগেন
নর্থ ফ্রিজিয়ান ভাডেন সাগরের বুকে ছোট ১০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত হালিগেন৷ ঐ অঞ্চলে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ বার সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়৷ তাই বসবাসের জন্য মানুষ টিলা তৈরি করে সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করেছে৷ শীতের সময় রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকরা ছুটে যান হালিগেন-এ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Hitij
যেন সাগরের বুকে এক দুর্গ
জার্মানির মূল ভূখণ্ড থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের হেলগোল্যান্ড দেখতে অনেকটা দুর্গের মতোই মনে হয়৷ ১৭২১ সালে বড় একটি দ্বীপ ভেঙে দুটো দ্বীপে পরিণত হয়৷ হেলগোল্যান্ড তার মধ্যে একটি৷ অন্যটির নাম ড্যুনে৷ শীতে সেখানে গেলে ধূসর রঙয়ের শিশু সিল জন্মাতে দেখা যায়৷
ছবি: Kurverwaltung Helgoland
বিচিত্র হাঁসের দেখা মেলে নর্ডার্নে
প্রকৃতির নির্জনতা উপভোগের পাশাপাশি বিচিত্র হাঁসের সঙ্গে পরিচিত হতে পর্যটকরা শীতের সময় নর্ডার্নে দ্বীপে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Wagner
না বেশি গরম, না বেশি শীত
এই হলো বোর্কুম দ্বীপের আবহাওয়া৷ জার্মানির সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের সীমান্তের এই দ্বীপটি তাই পর্যটকদের প্রিয়৷ সেখানকার বাতাস বেশ পরিষ্কার, সঙ্গে আছে পর্যাপ্ত আয়োডিন৷ দ্বীপটিতে তিনটি বাটিঘর রয়েছে৷ ছবির এই লাইটহাউজটি ১৯ শতকের শেষে নির্মাণ করা হয়, এবং এটি জার্মানির প্রথম বাতিঘর যেটাতে বিদ্যুতের ব্যবহার হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Grigoleit
শীতে ফুলের দেখা!
জার্মানি, অস্ট্রিয়া আর সুইজারল্যান্ড জুড়ে লেক কন্সটান্স হ্রদের অবস্থান৷ বিশাল এই হ্রদের মাঝে রয়েছে মাইনাও নামের একটি দ্বীপ৷ শীত শেষ হওয়ার আগেই সেখানে ফুল ফোটা শুরু করে৷ তাই প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের প্রিয় একটি জায়গা মাইনাও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Seeger
10 ছবি1 | 10
অনেকেই শুধু বাজার করতে আসেন৷ কারণ, এখানে ভ্যাট বা পণ্যের মূল্যের উপর কর দিতে হয় না৷ তবে জার্মানিতে এটাই একমাত্র ডিউটি-ফ্রি এলাকা নয়৷ হাতে একটু সময় থাকলে দ্বীপের ইতিহাস সম্পর্কেও কিছু জানা যায়৷ যেমন গির্জার পাশে ওবারলান্ড এলাকায় হেলিগোল্যান্ডের পাতালপুরির প্রবেশপথ৷ প্রায় সাড়ে তের কিলোমিটার দীর্ঘ বাংকারের অবশিষ্ট অংশ সেখানে রয়েছে৷ লাল পাহাড়ের প্রায় ২০ মিটার গভীরে কয়েকশ' মিটার অংশ দর্শকদের জন্য আজও খোলা রয়েছে৷ বাংকার গাইড ক্লাউস কোলাচ বলেন, ‘‘শিয়ালের বাসায় স্বাগতম৷ আগে এটা স্কুল-পড়ুয়াদের প্রবেশপথ ছিল৷ বাংকারের পাশে পরে এই সুড়ঙ্গটি তৈরি করা হয়েছে, যাতে স্কুলের বাচ্চারা অ্যালার্ম বাজলে দ্রুত নীচে নেমে আসতে পারতো৷ আমাদের ঠিক উপরে স্কুলটি ছিল৷ এখন এর এক চতুর্থাংশ সিঁড়ি থাকলেই চলতো৷ বর্তমানে হেলিগোল্যান্ডে মোট ৬৮ জন স্কুল-পড়ুয়া অবশিষ্ট রয়েছে৷ এবার নীচে যাওয়া যাক৷''
৯২টি পিচ্ছিল সিঁড়ি ভেঙে সেখানে পৌঁছানো যায়৷ বোমা হামলা থেকে বাঁচতে হেলিগোল্যান্ডের প্রায় ৩,৩০০ বাসিন্দা সেখানে আশ্রয় নিতেন৷ ক্লাউস কোলাচ বলেন, ‘‘রঙিন বেলেপাথরের মধ্যে গুহা তৈরি করা হয়েছিল৷ তার চারিদিকে ১০ সেন্টিমিটার পুরু রিইনফোর্সড কংক্রিটের আবরণ৷ সামরিক স্থাপনাগুলি উন্মুক্ত রয়েছে৷ এই অংশের উপর যুদ্ধের সময় ও তার পরে একাধিক বোমা বর্ষণ করা হয়েছে৷ শেষ বোমাটি পড়েছিল ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে৷ কিন্তু কোনো ক্ষতি হয়নি৷ তাই এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে৷ বিশেষ করে এখানকার বয়স্ক মানুষদের জীবনের সঙ্গে এই বাংকার যুক্ত রয়েছে৷''
আগামী বছরগুলিতে বাংকারের আরও অংশ সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে৷ শহরের ব্যস্ত বাজার এলাকা থেকে সুড়ঙ্গে প্রবেশের জন্য সিঁড়ি ও লিফট তৈরি করা হবে৷ তাছাড়া বাংকারের ইতিহাস নিয়ে একটি প্রদর্শনীরও পরিকল্পনা রয়েছে৷ শহরের মেয়র ইয়র্গ সিঙার বলেন, ‘‘নাৎসি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও দ্বীপের মুক্তির সময়ের মধ্যে এই টাইম মেশিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে৷ হেলিগোল্যান্ড ও এখানকার মানুষের জন্য সেই মুক্তির স্বাদ ছিল অত্যন্ত ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ৷ বাংকার নিয়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে সব ইন্দ্রিয় দিয়ে সেই অভিজ্ঞতা অনুভব করাই আমাদের লক্ষ্য৷''
পর্যটকদের আকর্ষণ করে জার্মানির যে দ্বীপগুলি
জার্মানিতে প্রায় ৮০টি দ্বীপ রয়েছে এবং বেশিরভাগের অবস্থান পূর্বে বাল্টিক সাগর এবং পশ্চিমে উত্তর সাগরে৷ এই ছবিঘরে জার্মানির দ্বীপপুঞ্জের কিছু নমুনা পাওয়া যাক৷
ছবি: picture alliance / Hinrich Bäsemann
জার্মানির উত্তরে
উত্তরে শ্লেসভিক হলস্টাইন রাজ্যের পশ্চিম উপকূলের কাছে ওয়াডেন সাগরে অবস্থিত উত্তর ফ্রিসিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কিছু দ্বীপ৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় দ্বীপ স্যুল্ট জার্মানি থেকে ডেনিশ উপকূল পর্যন্ত প্রসারিত৷ এখানকার মানুষরা ইংরেজি, ডেনিশ এবং ডাচ ভাষার মিশ্রণে অদ্ভুত এক আঞ্চলিক ভাষা ‘স্যালরিং’-এ কথা বলে৷
ছবি: Sven Hoppe/AFP/GettyImages
গভীর সাগরের গ্ল্যামার
নিউইয়র্কের হ্যামস্টনস যেমন,জার্মানিতে স্যুল্ট-ও তেমনি দ্বীপ৷ জার্মানির এলিট শ্রেণি এবং পর্যটকরা আসেন রেড ক্লিফ-এর মতো একটি ক্লাবে গ্ল্যামার উপভোগ করতে এবং সেলিব্রেটিদের দেখার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুগেন দ্বীপের দুর্লভ সময়
জার্মানির রুগেন দ্বীপের অবস্থান জার্মানির পূর্বাঞ্চলে বাল্টিক সাগরের কাছাকাছি৷ ২০১৩ সালে এই দ্বীপে এক কোটিরও বেশি মানুষ রাত কাটান৷ এখানে আলোকসজ্জ্বায় সজ্জিত সাগরপাড়ের অবসর যাপন কেন্দ্র সেলিন-এ পর্যটকরা আনন্দের সাথে কনসার্ট উপভোগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মধ্যযুগীয় উত্তরাধিকার
রাইশেনাউ দ্বীপটির অবস্থান জার্মানির দক্ষিণের সীমান্তে অবস্থিত লেক কন্সটানৎস-এর কাছাকাছি৷ এই দ্বীপটি আবিষ্কৃত হয় ৭২৪ সালে আর ২০০২ সাল থেকে এটি বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নেদারল্যান্ডস-এর উত্তরে
ঐতিহাসিক দলিলপত্রে সরকারিভাবে বরকুম দ্বীপের প্রথম উল্লেখ দেখা যায় ১৩৯৮ সালে৷ সে সময় দ্বীপটি ছিলো জলদস্যুদের স্বর্গ৷ বর্তমানে উত্তর সাগরের এই দ্বীপে বসবাস করে আনুমানিক পাঁচ হাজার মানুষ৷ হোটেলগুলোর অবস্থান একেবারে সাগরের গা ঘেঁষে৷ ১৮৩০ সাল থেকে এই সমুদ্র সৈকত অবসর যাপন কেন্দ্র৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur Huber
হেলগোলান্ড-এর প্রাকৃতিক টাওয়ার
জার্মানির উপকূল থেকে একমাত্র হেলগোলান্ড দ্বীপে যেতেই নৌকায় প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে৷ পরিবেশ রক্ষার জন্য এখানে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ৷ বালির পাথর ‘টল আনা’ এই দ্বীপের বড় চিহ্ন৷
ছবি: picture alliance / Hinrich Bäsemann
6 ছবি1 | 6
মুক্ত সাগরের বুকে হেলিগোল্যান্ডই জার্মানির একমাত্র দ্বীপ৷ মাত্র ২ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কত বৈচিত্র্য রয়েছে, একটু সময় থাকলেই তা পরখ করা যায়৷ একই দিনে যাতায়াত করলে হাতে যে প্রায় ৩ ঘণ্টা থাকে, তা সেই অভিজ্ঞতার জন্য যথেষ্ট নয়৷ এক বা দুই দিন থাকতে পারলে দ্বীপের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যেতে পারে৷