ভারতীয় মিডিয়া বলছে, পাকিস্তানে হিন্দুরা শান্তিপূর্ণভাবে হোলি উদযাপন করেছে৷ মোটা দাগে বাংলাদেশেও সুন্দরভাবেই পালিত হয়েছে হোলি৷ তবে নিন্দনীয় ঘটনাও ঘটেছে, এই ভিডিও যার প্রমাণ৷
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানে সংখ্যালঘু শিয়া মুসলমানদের মসজিদে হামলা প্রায় নিয়মিত খবর৷ সচরাচর অন্যান্য সম্প্রদায়ের অস্তিত্বও জানান দেয় হানাহানির খবর৷ তবে এবারের হোলিতে একটু অন্যরকম খবরও নজরে পড়েছে৷ ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমের খবর
করাচিতেও হয়েছে হোলি উত্সব৷ সেখানেও রঙের খেলায় মেতেছিলেন হিন্দুরা৷ খবরে বলা হয়, সম্প্রীতির বার্তা দিতে প্রতিবছরই করাচির এক মন্দিরে হোলি উৎসবে মাতেন পাকিস্তানের হিন্দুরা৷
বরাবরের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে হোলি৷ পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর কিছু এলাকা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকেই অংশ নিয়েছেন এই রঙের উৎসবে৷ কিন্তু ঢাকায় উৎসবের আনন্দকে কিছুটা বিবর্ণ করেছে বখাটেদের উৎপাত৷ একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনে দেখা যায়, পথচারীদের, বিশেষ করে নারীদের ধরে ধরে রং লাগানো হচ্ছে৷ এক নারী তাঁর কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন৷ আপত্তি সত্ত্বেও কর্মজীবী ওই নারীকে জোর করে রং দেয়া হয়৷ সে অবস্থায় ক্ষুব্ধ নারী জানতে চান, ‘‘এখন যদি আমি চাকরি হারাই, ক্ষতিপূরণ কে দেবে?''
আরেক ছাত্রীও প্রতিবেদককে তার বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন৷ ক্যামেরার সামনেই এক উচ্ছৃঙ্খল যুবক এসে আবার রং লাগিয়ে দেয় তার চেহারায়৷
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয়ধারী কিছু যুবক হোলি উদযাপনের নামে নারীদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে৷
বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি উঠে না এলেও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই যমুনা টেলিভিশনের প্রতিবেদনের ভিডিওটি শেয়ার করেছেন৷ লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট বন্দনা কবীর উৎসবে বখাটেদের এমন নোংরামো বন্ধ করার দাবি জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আমরা যে অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার বলি – এই ঘটনা সেই বলার মুখে অনেক বড় জুতোর বাড়ি৷ অসাম্প্রদায়িকতার – উৎসবের নামে অসভ্যতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না৷ এই সব অতি উৎসাহীদের জন্যই সব সুন্দর কুৎসিত হয়ে যায়, সব ভালো হয়ে যায় কালো৷ এর তীব্র প্রতিবাদ করছি৷ সাথে এরকম ঘটনা কেন, কাদের দ্বারা ঘটেছে সেটা খুঁজে বের করার দাবি জানাই৷''
রঙিন বাণিজ্য
উত্তর ভারতের হোলি, বা বাঙালির দোলপূর্ণিমার রং ও আবির খেলার প্রচলন দীর্ঘ দিনের৷ নিজের বাড়ির ব্যক্তিগত পরিসর পেরিয়ে এই উৎসব জনসমষ্টির আঙিনায় পা রেখেছিল শুরু থেকেই৷ কাজেই এর সঙ্গে যুক্ত যে বাণিজ্য, তারও বিরাট বাজার৷
ছবি: Reuters/R. de Chowdhuri
চীনেবাজার
কলকাতার টেরিট্টি বাজার, যা লোকমুখে চীনে বাজার৷ একদা বিখ্যাত ছিল হাতে বানানো কাগজের চীনা লণ্ঠনের জন্য৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
হরেক পশরা
এখন প্রতিটি লোকপ্রিয় উৎসবের আগে এখানে বসে আনুষঙ্গিক উপকরণের বাজার৷ দিওয়ালির আগে আতসবাজি, হোলির আগে রং৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সাজসজ্জা
হোলি উদযাপনের ক্ষেত্রে সাজসজ্জা একটা বড় ব্যাপার৷ কাজেই পার্টি-পরবের যে সাজ, তার বিরাট আয়োজন থাকে চীনেবাজারে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
কার্নিভালের মুখোশ
ইটালির শহরের যে কার্নিভালের মুখোশ, তাও কী চমৎকার জায়গা পেয়ে গেছে হোলির পশরায়!
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
অন্য কার্নিভাল
জার্মানির কোলন শহরের যে বিখ্যাত কার্নিভাল, তার সাজগোজের উপকরণও কীভাবে যেন চলে এসেছে কলকাতার এই হোলির বাজারে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
রঙিন আবির
জলে গোলা রং, আর শুকনো আবির, হোলি খেলার এই দু’টিই প্রধান উপকরণ, এখনও৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
উপার্জনের সুযোগ
স্থানীয় ক্ষুদ্রশিল্প এবং অর্থনীতিকে বিশেষভাবে পুষ্ট করে উৎসবের এই মৌসুমী বাজার৷ বহু লোকের অনেক টাকা উপার্জন হয় এইসব পণ্য বানিয়ে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
পরিবেশবান্ধব
পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর নয়, এমন ভেষজ রঙে রাঙানো আবির বেশ কিছু বছর ধরেই জনপ্রিয় হয়েছে হোলি খেলায়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
চীনা আগ্রাসন
এত বড় বাজার, এত বেশি টাকার ব্যবসা যে প্রতিবেশী চীনও ঢুকে পড়েছে হোলির বাণিজ্যে৷ অনেক পণ্য এখন আমদানি হচ্ছে চীন থেকে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
হ্যালোউইন
ইটালি, জার্মানির প্রভাব থাকলে আমেরিকাই বা নয় কেন! সেদেশের হ্যালোউইন উৎসবের ভয় দেখানো মুখোশও হোলির বাজারে হাজির৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
রেড ইন্ডিয়ান
অ্যামেরিকার ভূমিপুত্র রেড ইন্ডিয়ানদের রঙিন পালকের মুকুট৷ ভালো লেগেছে, তার অবিকল রং ঝলমলে প্রতিরূপ চলে এসেছে দোকানে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ছোটদের জন্য
রং খেলায় এখনও সবথেকে উৎসাহী ছোটরা৷ তাদের মন ভোলাতে কার্টুন চরিত্রের আদলে পিচকিরি, জল-বন্দুক৷ সৌজন্যে সেই চীন৷
‘‘সব কিছু ট্রেন্ড বানিয়ে ফেলো৷ কিন্তু সবকিছুরই একটা সীমা থাকে৷ দিনশেষে সবকিছুই তো ভালগার মনে হলো৷ এখানে ধর্ম মুখ্য ছিল না, কিছু মানুষ সুযোগের অপব্যবহারের চেষ্টা করেছে৷ এখানে কে মুসলিম, কে হিন্দু, কে খ্রিষ্টান, কে বৌদ্ধ – এটা কোনো ব্যাপার নয়৷ শেষ অংশটা দয়া করে দেখবেন৷ ছ্যাচড়ামির একটা সীমা থাকে৷ ঘরে কি মা-বোন নেই নাকি যে ওদের সাথেও এইরকম করে!''
ফয়সল ওয়াহাব চৌধুরী সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক অবস্থান থেকে বিষয়টিকে বিশ্লেষন করলেও কিছু অখ্যাত এবং বেনামি সংবাদমাধ্যম বিষয়টিতে সাম্প্রদায়িকতার রং চড়াচ্ছে৷
এসিবি/ডিজি
বসন্তের উৎসব, রঙের উৎসব ‘হোলি’
শীত শেষে আগমনবার্তা দিয়েছে বসন্ত৷ এবার মাততে হবে আনন্দে৷ তাই ভারত জুড়ে চলছে রঙের উৎসব ‘হোলি’৷ দেশটির অন্যতম আকর্ষণীয় উৎসব এটি৷ হিন্দুরা তো বটেই, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মনেই যেন লেগেছে রং৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton
‘হ্যাপি হোলি’
বছর ঘুরে আবারো এসেছে অনেক প্রতীক্ষার হোলি৷ তবে পশ্চিমবঙ্গে একদিন আগে, মানে ‘দোলে’-র দিন এ উৎসব পালন করা হয়৷ সাধারণত, এর মধ্য দিয়ে ভালো কাজের জয় আর মন্দের ক্ষয়কে বোঝানো হয়৷
ছবি: Diptendu Dutta/AFP/Getty Images
মথুরায় ১৬ দিনের হোলি
ধর্মীয় প্রার্থনা দিয়ে শুরু হয় উৎসব৷ এরপর চলে নাচ-গান আর রঙের খেলা৷ হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের পৌরাণিক জন্মভূমি উত্তর ভারতের মথুরায় হোলির উৎসব চলে ১৬ দিন ধরে৷
ছবি: Sanjay Kanojia/AFP/Getty Images
লাঠি দিয়ে মারা
ভারতের উত্তর প্রদেশের বার্সানায় একটু অন্যরকমভাবে হোলি উদযাপিত হয়ে থাকে৷ সেখানকার পুরুষরা নারীর উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক গান গায়৷ আর তাতে উত্যক্ত হয়ে লাঠি দিয়ে পুরুষদের মারার চেষ্টা করেন নারীরা, নিতান্তই প্রতীকীভাবে৷
ছবি: UNI
সব ভুলে এক হওয়া
বছরের এই সময়টায় মানুষজন সব বিভেদ ভুলে এক হন৷ আত্মীয়রা উপহার নিয়ে একে অপরের বাড়ি যান৷ চলে খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা৷
ছবি: Sanjay Kanojia/AFP/Getty Images
ভাং পান
হোলির দিন মানেই ভাং থাকতে হবে৷ দুধের সঙ্গে গাঁজার পাতা আর ফুল মিশিয়ে বিশেষ এই পানীয়টি তৈরি হয়৷ যাঁরা কখনও ভাং খাননি, তাঁদের কীভাবে বোঝাই বলুন তো, এর নেশা কেমন?
ছবি: UNI
দেশ ছেড়ে বিদেশেও
হোলি আর এখন শুধু ভারতবর্ষের উৎসব নয়৷ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন ঘটা করে হোলি উদযাপন করা হয়৷ ছবিটি জার্মানির মিউনিখ শহরের হোলি উৎসবের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বসন্তকে স্বাগতম
হোলির অবশ্য অন্য একটি অর্থও আছে৷ ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলে বিধাতাকে ভালো ফলনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং বসন্ত ঋতুকে স্বাগত জানানো হয় রঙের এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে৷
ছবি: Reuters
হলুদ-কেমিক্যাল-অর্গানিক
আগে হলুদ আর জাফরানের ফুল ও পাতা থেকে রং তৈরি হতো৷ তবে ইদানীং রঙে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়ে থাকে৷ অবশ্য পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ার কারণে আজকাল অর্গানিক রঙের চাহিদা বেড়েছে অনেকটাই৷
ছবি: UNI
উৎসব সবার
‘দিওয়ালি’-র মতো হোলির সময়ও অনেকে বাড়িতে বাঙালির আলপনা দেয়ার মতো রং দিয়ে ‘রঙ্গোলি’ আঁকেন৷ তবে হোলি মানে শুধু নিজের ঘরটা সাজানো আর ভালো-মন্দ রান্না করাই নয়৷ এই সময়টায় ঘরের পশুদেরও হোলির রঙে রাঙিয়ে দেয়া হয়৷