‘‘সাভারের রাস্তা দিয়ে হাটলে অতি বড় পাষণ্ডও চোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না৷ ঘরে ঘরে শোকের মাতম৷ অনেক লোক আহত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে৷ তাদের জন্য রক্তের প্রয়োজন৷ যারা রক্ত দিতে আগ্রহী দয়া করে যোগাযোগ করুন৷’’
বিজ্ঞাপন
সাভারের পার্বতীনগরের একটি হাসপাতালে রক্ত দিতে যাওয়ার আহ্বান করে সামহয়্যারইন ব্লগে কথাগুলো লিখেছেন ব্লগার মোহাম্মদ ওবায়দুল হক মাহমুদ (মিঠু)৷
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার ‘রানা প্লাজা' বুধবার ভবনটি ধসে পড়ে৷ ধ্বংস্তূপের নীচ থেকে বুধবার বিকাল পর্যন্ত অন্তত ৮৫টি মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷ আহত অবস্থায় স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে কয়েকশ মানুষকে৷ নয়তলার ভবনটি ধসে হতাহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে এ ঘোষণা দেন৷
এমন ঘটনায় জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা আগেও হয়েছে৷ দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়ার নজির কোনো সরকারের আমলেই অবশ্য দেখা দেখা যায়নি৷ এবারও তা-ই হবে, এমন আশঙ্কা ব্লগারদের মাঝেও রয়েছে৷ বিডিনিউজের দেয়া খবর অনুযায়ী, ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম সাংবাদিক বলেছেন, আগে সতর্ক করার পর ভবন মালিক সোহেল রানা পরিদর্শক দলকে ভবন বন্ধ রাখার ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেও, পরে তা তিনি মানেননি৷ হতাহতের এ ঘটনা সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য বিজিএমইএ সুপারিশ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধসে বহু হতাহত
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷
ছবি: Reuters
আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷ সাভার মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই ওই ভবনে থাকা চারটি গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ তবে ২৪ এপ্রিল সকালে কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহু হতাহত
১০ মে সকাল পর্যন্ত ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে ১০৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এসব লাশের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই’
ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, ব্যাপক ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে৷ এমন ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই৷ এ কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters
এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন
সাভারে ধসে পড়া বহুতল ভবনে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা৷ সকালে ভবন ধসের পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে আসেন৷ এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters
রক্ত চাই
ধ্বংসস্তুপ থেকে থেকে উদ্ধার করা শত শত আহতের জন্য প্রচুর রক্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ এজন্য ব্লগ, ফেসবুকের মাধ্যমে সকলকে রক্ত দানে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বিভিন্ন সংগঠনও রক্ত সংগ্রহে নেমেছে৷
ছবি: Reuters
জোর করে ঢোকানোর অভিযোগ
আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় ঐ ভবনে থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যেতে না চাইলেও মালিকরা তাদেরকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ছবি: Reuters
ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি
‘রানা প্লাজা’ ইমারত বিধিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর৷ বুধবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷'' (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
হরতাল প্রত্যাহার
উদ্ধার তৎপরতা নির্বিঘ্ন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার পথে বাঁধা দূর করতে হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: Harun Ur Rashid
সরকারের আশ্বাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷
ছবি: dapd
খালেদার শোক প্রকাশ
ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ উদ্ধারকাজ যথাযথভাবে চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ খালেদা জিয়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
ভবন মালিক রানা পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পর সাংবাদিকদের বলেন, ভবনের মালিককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেয়ার বিষয়টি তাঁর মাথায় আছে, তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷
এদিকে, আহতদের রক্ত দেয়ার আহ্বান জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন অনেক ব্লগার৷ তবে কেউ কেউ এর বাইরেও তুলেছেন ভবনের মালিকসহ দোষীদের কঠোর শাস্তি দেয়ার দাবি৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন লিখেছেন, স্পেকট্রাম, ফিনিক্স ভবন, রানা প্লাজা এগুলি নারকীয় নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতীকী নাম৷ কেন এই হত্যাযজ্ঞ? এ কি শুধুই উদাসীনতা? শুধুই দ্বায়িত্বহীনতা? না কিছু রক্ত পিপাসুর রক্তের তৃষ্ণা মেটাতেই মাঝে মাঝে এমন হত্যাযজ্ঞের আয়োজন?....প্রকৌশলী নকশা করে, শকুনের দৃষ্টিতে করে তদারক নির্মাণের৷ শতভাগ নিশ্চয়তা চাই মৃত্যু কুপের৷ সরকারি কর্মকর্তা মৃত্যুর নিশ্চয়তায় ভবনের নকশাকে দেন অনুমোদন৷ ধসে একে পড়তেই হবে৷ মৃত্যু পথযাত্রীর আর্ত চীৎকারে হতেই হবে বাতাস ভারি৷....কুশীলব যারা এই বীভৎস নাটকের আর কতবার ছাড় পাবে তারা? করজোড়ে মিনতি হে দণ্ডদাতা একটি দণ্ড দাও৷ এমন দণ্ড দাও যাতে শয়তানের আত্মাও ওঠে কেঁপে৷