একপ্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়লেও অপর প্রান্ত আগলে রেখে দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ম্যাচ জেতালেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেই হোপ৷ দ্বিতীয় ওয়ানডে জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের সঙ্গে ১-১ সমতায় ফিরলো ক্যারিবীয়রা৷ অপেক্ষা রইলো সিলেটের৷
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ৷ টাইগারদের প্রথম ওয়ানডে জয়ী একাদশে কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশে পরিবর্তন ছিল একটি৷ ওপেনার কাইরান পাওয়েলের জায়গায় বাঁহাতি ব্যাটসম্যান চন্দ্রপল হেমরাজকে নেয়া হয় দলে৷
শুরুতেই উইন্ডিজ বোলার ওশান টমাসের গতির ঝড়ে পড়েন দুই ওপেনার৷ দ্বিতীয় ওভারে টমাসের একটি ইয়র্কার পায়ে লেগে চোট পান লিটন দাস৷ এক রান নিলেও পরে শুয়ে পড়েন মাঠে৷ ফিজিওর প্রাথমিক চিকিৎসাতেও কাজ না হওয়ায় মাঠ ছাড়েন স্ট্রেচারে করে৷
৫ রানে লিটন অবসরে গেলে মাঠে নামেন ইমরুল কায়েস৷ আগের ম্যাচে টমাসের বলেই বোল্ড হওয়া ইমরুল এবারও কট বিহাইন্ড শুন্য রানে৷ তবে লিটন-ইমরুলের বিদায় ভালোই সামাল দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম৷ ১১১ রানের পার্টনারশিপ ভাঙে তামিমের বিদায়ে৷ ৫০ রান করে তামিম যখন প্যাভিলিয়নের পথে, বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে তখন ২৩.৩ ওভারে দুই উইকেটে ১২৫ রান৷
৪১.১ ওভারে বাংলাদেশের দলীয় স্কোর ২০০ স্পর্শ করে৷ মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর বিদায়ের পরও হাতে রয়েছে ছয় উইকেট৷ তিনশ রানের সংগ্রহের পথে সেসময় কোনো বাধা দেখা যাচ্ছিলো না৷ কিন্ত এর পর ধস নামে টাইগারদের মিডল অর্ডারে৷
ব্যক্তিগত মাত্র ছয় রানে সৌম্য সরকারের বিদায়ে আহত হয়ে মাঠ ছাড়া লিটন আবার আসেন ব্যাটিংয়ে৷ কিন্তু মাত্র তিন ওভার পর ৪৬তম ওভারে ছক্কা মারতে গিয়ে ব্যক্তিগত আট রানে লং অনে ক্যাচ দেন তিনি৷ পরের ওভারে কেমার রোচের দারুণ এক স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন সাকিবও৷
স্লগ ওভারে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেনি বাংলাদেশ৷ মাশরাফি ও মিরাজ শেষ দুই ওভার থেকে নিতে পেরেছেন মাত্র ৫ রান৷ শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশের স্কোরে যোগ হয়েছে মাত্র ২৬ রান৷ বাংলাদেশের রানের চাকা থামে ২৫৫ রানে৷
ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রত্যাবর্তন
উইকেট বিবেচনায় একসময় বাংলাদেশের দেয়া টার্গেট বেশ বড়ই মনে হচ্ছিল৷ দ্বিতীয় ওভারেই হেমরাজকে এলবিডব্লু করে মেহেদী হাসান মিরাজ সে পালে লাগিয়েছিলেন জোর হাওয়া৷
একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা একাদশ
ডয়চে ভেলের অনুরোধে এপ্রিল, ২০১৬ সালে এই একাদশ নির্বাচন করেন আকরাম খান৷ তাঁর দেয়া ব্যাটিং অর্ডার অনুযায়ী নামগুলো থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: BDnews24/M. Rahman
তামিম ইকবাল
ডয়চে ভেলের অনুরোধে ২০১৬ সালের এপ্রিলে এই একাদশ নির্বাচন করেন আকরাম খান৷ তিনি সেরা একাদশ নির্বাচন করায় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের ভাতিজা তামিমকে নিয়েছেন বলে যাঁরা ভাবছেন তাঁরা একবার তামিমের পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিন৷ বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে ব্যক্তিগত মোট রানের সংখ্যা ৫,০০০ রান পেরিয়েছেন তিনি৷ এ জন্য তাঁকে ১৫৯টি ম্যাচ খেলতে হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ
টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম জয়টি আসে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে৷ সেই ম্যাচে ওয়াকার, ওয়াসিম, শোয়ের আখতারের মতো বোলারদের বিপক্ষে প্রথম ব্যাট করতে নেমে ৩৯ রান করেছিলেন বিদ্যুৎ৷ দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই রান টাইগারদের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল৷
ছবি: Mir Farid
সাকিব
অনেকে হয়ত তাঁকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় বলবেন৷ বিশ্ব ব়্যাংকিংয়ে কয়েকবার শীর্ষে উঠে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা বিজ্ঞাপন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এই অলরাউন্ডার৷ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত ১৬৩টি একদিনের ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৪,৫৬৬, উইকেট নিয়েছেন ২১৫টি, সেঞ্চুরি আছে ৬টি৷ সাকিবের চেয়ে উইকেট বেশি আছে শুধু মাশরাফির৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মুশফিকুর রহিম
এই উইকেট-রক্ষক কাম ব্যাটসম্যানের ওডিআই ডেব্যু হয়েছিল ২০০৬ সালে৷ সেই থেকে ১৬৪টি ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৪,০৭৬টি, আছে ৪ সেঞ্চুরি (২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত)৷ প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ডটিও তাঁর৷
ছবি: Getty Images/R. Pierse
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু
বাংলাদেশের প্রথম একদিনের ম্যাচ খেলেছিলেন নান্নু৷ সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২০৷ সেটি ১৯৮৬ সালের কথা৷ এরপর মোট ২৭টি ওয়ানডে খেলেছেন৷ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ে নান্নুর করা সাত ওভার (২৯ রান দিয়েছিলেন) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল৷
ছবি: Mir Farid
পাইলট
শুধু ভালো উইকেট-রক্ষকও ছিলেন না, শেষদিকে ব্যাট করতে নেমে দলকে জেতাতে না পারলেও বেশ কয়েকবারই একটা সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন৷ ১৯৯৫ সালে ওডিআই খেলা শুরু করার পর ১২৬ ম্যাচে ১,৮১৮ রান করেছিলেন৷
ছবি: Mir Farid
রফিকুল আলম
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন এই অলরাউন্ডার৷ ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের হয়ে দু’টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন৷ তবে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম খেলেন ১৯৮০ সালে৷ ১৯৮২ ও ১৯৮৬-র আইসিসি ট্রফিতেও খেলেছেন রফিকুল আলম৷
ছবি: Mir Farid
রফিক
প্রধান পরিচয় বাঁ-হাতি স্পিনার হলেও মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবেও পরিচিত ছিলেন৷ ১৯৯৫ সালে শারজায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে তাঁর ওডিআই অভিষেক হয়েছিল৷ প্রথম উইকেটটাই পেয়েছিলেন টেন্ডুলকারকে আউট করে৷ বোলিং ফিগার ছিল ৫-০-১৫-১৷ এরপর ১২৫টি একদিনের ম্যাচ খেলে সমান সংখ্যক উইকেট পেয়েছিলেন৷
ছবি: Mir Farid
মাশরাফি (অধিনায়ক)
সেরা একাদশের অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফিকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্তটি আকরামের জন্য সহজই ছিল বলা যায়৷ দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বোলার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অন্যদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে নিতে বেশ কয়েকবারই পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তিনি৷
ছবি: BDnews24/M. Rahman
মুস্তাফিজুর রহমান
আইসিসি ২০১৫ সালে ওয়ানডে একাদশের যে নাম ঘোষণা করেছিল তাতে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে স্থান পেয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান৷ ঐ বছর জুনে ভারতের বিরুদ্ধে তাঁর অভিষেক ঘটে৷ প্রথম দুই ওয়ানডেতে তিনি ১১ উইকেট নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
রুবেল হোসেন
ডানহাতি এই ফাস্ট বোলারের ওয়ানডে অভিষেকটা স্মরণীয় হয়েছিল৷ ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঐ ম্যাচে ৩৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে টাইগারদের জয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/Dibyangshu Sarkar
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (দ্বাদশ খেলোয়াড়)
সাকিব-তামিম-মুশিফক-মাশরাফিদের ভিড়ে তাঁর নাম চাপা পড়ে গেলেও দলের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যেই তাঁকে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হতে দেখা যায়৷ ২০১৫ বিশ্বকাপের পরপর দুই ম্যাচে তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন৷ তাঁর অফস্পিনও সময় সময় বেশ কাজে লাগে৷
ছবি: Getty Images/R. Pierse
অমায়িক আকরাম
সেরা একাদশে নিজের নাম না রাখা প্রসঙ্গে আকরাম খান বলেন, ‘‘তালিকা আমি করেছি, সেখানে তো আমার নাম রাখতে পারি না৷’’ তবে ইএসপিএনক্রিকইনফো ডটকম ওয়েবসাইটে আকরামকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘প্রথম আসল নায়ক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Bernama
13 ছবি1 | 13
কিন্তু এরপরই দেয়াল হয়ে এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে পড়েন শেই হোপ৷ ড্যারেন ব্রাভোকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে গড়ে তুলেন ৬৫ রানের জুটি৷ রুবেল হোসেন নিজের প্রথম ওভারে ব্রাভোকে বোল্ড করে বিদায় করলেও কমেনি রানের গতি৷
মারলন স্যামুয়েলস মাঠে নেমে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ও তুলে নেন অর্ধশত রান৷ মুস্তাফিজুর রহমানের কাটারে ৪৫ বলে ২৬ রান করে আউট হন স্যামুয়েলস৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন পৌছে গেছে ৩৩ ওভারে চার উইকেটে ১৫৫৷
এরপর শুরু হয় বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ক্যাচ মিস আর মিস ফিল্ডিংয়ের মহড়া৷ স্যামুয়েলসের বিদায়ে ক্রিজে আসা শিমরন হেটমায়ার রুবেলের বলে শূন্য রানে সহজ ক্যাচ তুলে দিলেও তা তালুবন্দি করতে পারেননি ইমরুল৷ এর পর ২৫ রানের মধ্যে দ্রুত তিন উইকেট তুলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা৷
সুযোগ এসেছিল আরো৷ পরপর দুইবার হোপের সঙ্গী কিমো পলকে আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ৷ ব্যক্তিগত ছয় রানে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে আসা ক্যাচ ডাইভ দিয়েও ধরতে পারেননি নাজমুল ইসলাম অপু৷ পরে আবার ব্যক্তিগত ১২ রানে রুবেলের বলে পুল করে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিলেন পল৷ এবারো বল গেল অপুর কাছে, আবারো মিস৷
শেষ পর্যন্ত দুই বল বাকি থাকতে সেই পলকে সাথে নিয়েই হোপ ভেড়ালেন ক্যারিবীয় তরী৷