ট্রাম্প প্রশাসনের একের পর এক উইকেট পতনের মধ্যে এবার বরখাস্ত হলেন হোয়াইট হাউজের চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভ ব্যানন৷ হোয়াইট হাউজে শুক্রবারই যে তাঁর শেষ দিন ছিল, তা নিশ্চিত করেছেন সেখানকার মুখপাত্র সারা হাক্যাবি স্যান্ডার্স৷
বিজ্ঞাপন
বরখাস্ত হওয়ার পর ফের কট্টর ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্টের শীর্ষ পদে ফিরেছেন স্টিভেন ব্যানন৷ ব্রেইটবার্ট নিশ্চিত করেছে তাদের নির্বাহী চেয়ারম্যন পদে যোগ দিচ্ছেন ব্যানন৷ শুক্রবার ট্রাম্প ব্যাননকে হোয়াইট হাউজের চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট পদ থেকে সরিয়ে দেন৷ ব্যানন শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বলে অভিযোগ ছিল সমালোচকদের৷
আগস্টের ৭ তারিখেই ব্যানন ট্রাম্পের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানোর পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানা যায়৷ কিন্তু শার্লটসভিল শহরে কু-ক্লাক্স-ক্ল্যান, নব্য নাৎসি ও শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্যবাদী ‘হোয়াইট সুপ্রিম্যাসি' গোষ্ঠীগুলির হিংস্র তাণ্ডবের ঘটনায় তিনি পদত্যাগ করতে দেরি করে ফেলেন বলে জানিয়েছেন ব্যানন৷
বিরোধীদের শায়েস্তা
বরখাস্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্যানন ব্লুমবার্গ নিউজকে জানান, ট্রাম্পের বিরোধীদের সঙ্গে লড়তে গিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি৷ অন্যদিকে, ব্যানন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে যে লড়াই চালিয়েছিলাম আমরা, সেটা শেষ হয়েছে৷ আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে, তবে ট্রাম্পের সাথে কাজ করার ব্যাপারটা চুকে গেছে৷'' তবে তিনি এটাও বলেন যে, বিরোধীদের শায়েস্তা করবেন তিনি৷
নতুন করে ব্রেইটবার্টে ফিরে ব্যানন হোয়াইট হাউজের ভেতরে যাঁরা তাঁর পরামর্শমতো তীব্র জাতীয়তাবাদী নীতি বাস্তবায়নে বাধা দিয়েছিল তাঁদের বিরুদ্ধে সরব হতে পারেন বলেও ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা৷ এ তালিকায় রিপাবলিকান এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও থাকতে পারেন৷
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র সারাহ হাক্যাবি স্যান্ডার্স শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানান, ‘‘হোয়াইট হাউজের চিফ অফ স্টাফ জন কেলি ও স্টিভ ব্যানন একমত হয়েছেন যে, শুক্রবারই হবে স্টিভের শেষ কর্মদিবস৷ তিনি এতদিন পালন করেছেন যে দায়িত্ব সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ৷ আমরা তাঁর মঙ্গল কামনা করছি৷''
‘বিদায় হোন’ – ট্রাম্প প্রশাসনে উইকেট পতন
ট্রাম্প প্রশাসনে যত দ্রুত একের পর এক উইকেট পড়ছে, ততটা আর কখনো কোথাও হয়নি৷ চলুন দেখা যাক, এ যাবৎ কার কার বিদায় ঘণ্টা বেজেছে৷
সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জিম ম্যাটিস৷
ছবি: picture-alliance/AP/C. Kaster
রেক্স টিলারসন
১৩ই মার্চ, ২০১৮৷ টুইটারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে টিলারসনকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন৷ ট্রাম্প বলেছেন, টিলারসনের সঙ্গে তার মতভিন্নতা ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে এসেছিল৷ টিলারসনের সঙ্গে আলোচনা না করেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানিয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
অ্যান্টনি স্কারামুচি
‘দ্য মুচ’ বলে পরিচিত ৫৩ বছর বয়সি সাবেক এই পুঁজিবাজার ব্যবসায়ী ট্রাম্প প্রশাসনে টিকতে পেরেছেন মাত্র দশদিন৷ ছিলেন যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ তাঁর যোগ দেয়ার আগে দীর্ঘদিন এই পদটি খালি ছিল৷ চিফ অফ স্টাফ পদে সাবেক মেরিন প্রধান জেনারেল জন কেলির যোগ দেয়ার দিনেই বিদায় হন অ্যান্টনি৷ প্রশাসনের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে চাকরি হারান তিনি৷
ট্রাম্পের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল গভর্নমেন্ট এথিক্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ওয়াল্টার শাওবের৷ এরই জের ধরে গেল এই জুলাইতে পদত্যাগ করেন৷ তিনি প্রায়ই ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘হাস্যকর পুঁজিবাজার’ বলে ডাকতেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J.S. Applewhite
রিন্স প্রাইবাস
যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক অ্যান্টনি স্কারামুচির সঙ্গে প্রকাশ্যে ঝগড়া করে চাকরি হারিয়েছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অফ স্টাফ রিন্স প্রাইবাস৷ মাত্র ছয় মাসে তাঁর উইকেট পতন হয়৷ প্রাইবাস সেই সব ডানপন্থি কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন যাঁরা স্কারামুচির নিয়োগের বিরোধিতা করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Segar
শন স্পাইসার
এবারও সেই স্কারামুচিই বিবাদের কারণ৷ প্রেসিডেন্ট ভবনের সাবেক প্রেস সচিব শন স্পাইসার বিবাদে জড়িয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসের সঙ্গেও৷ পদত্যাগের আগে স্কারামুচির নিয়োগের চরম বিরোধিতা করেছিলেন স্পাইসার৷
ছবি: Reuters/K.Lamarque
মাইকেল ডুবকে
স্কারামুচির আগে মাইকেল ডুবকে ছিলেন হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ গেল মে মাসে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়, কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগটি ঠিকমত সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Walsh
জেমস কোমি
হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল কেলেঙ্কারির তদন্ত ‘ঠিকমত করতে পারেননি’ এই অভিযোগে এফবিআই-এর এই পরিচালককে অব্যাহতি দেন ট্রাম্প৷ নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন যে, ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে ‘রাশিয়ার সম্পর্ক’ তদন্তের মুখে পড়ার শঙ্কায় তাকে বহিষ্কার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. S. Applewhite
মাইকেল ফ্লিন
গেল ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগে বাধ্য হন৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ট্রাম্প দায়িত্ব নেবার আগেই রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ‘আলাপ’ করা এবং এ বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ভুল তথ্য দেয়া৷
ছবি: Reuters/C. Barria
9 ছবি1 | 9
জন কেলির আগমনই বি ব্যাননের বরখাস্তের কারণ?
জুলাইতে হোয়াইট হাউজে সাবেক মার্কিন মেরিন জেনারেল জন কেলি চিফ অফ স্টাফ হিসেবে যোগদানের পরই ঘটল এই উইকেট পতন৷ কেননা কেলি তাঁর কৌশল খাটিয়ে হোয়াইট হাউজের কর্মীদের আরও দক্ষভাবে কাজ করানোর চেষ্টা করছিলেন৷ আগস্টের প্রথম দিকে কেলি ট্রাম্পের নিউজার্সির গল্ফ ক্লাবে এক সপ্তাহ কাটান৷ সেসময় প্রেসিডেন্টের মেয়ের জামাই জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেন বলে গণমাধ্যমে জানা গেছে৷ ঐ সময় ব্যানন কিন্তু ওয়াশিংটনেই ছিলেন৷
ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব
ট্রাম্পকে নির্বাচনে জেতানোর পেছনে তাঁর কৃতিত্ব রয়েছে এটা জানান দিয়ে জনগণের মনোযোগ কাড়তে চেয়েছিলেন ব্যানন - এমনটাই অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে৷ এমনকি হোয়াইট হাউজের অনেক কর্মকর্তার গোপন তথ্য গণমাধ্যমে ফাঁস করে দেয়ার অভিযোগও আছে৷ ট্রাম্পের ট্রাভেল ব্যান বা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসার পেছনে ব্যানন সবচেয়ে বেশি প্রভাব খাটিয়েছিলেন বলে জানা যায়৷
হোয়াইট হাউজে অন্য উপদেষ্টা এবং কংগ্রেসের শীর্ষ রিপাবলিকান নেতাদের সঙ্গে লড়াইয়ের পুরো সময়েও ব্রেইটবার্ট ব্যাননকে সাহচর্য দিয়ে গেছে৷ ট্রাম্পের কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সংবাদমাধ্যমটি ধারাবাহিকভাবে সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের নেতা মিচ ম্যাককনেল ও নিম্নকক্ষের স্পিকার পল রায়ানের মতো প্রতিষ্ঠিত অনেক রিপাবলিকান নেতার সমালোচনা করেছে৷
৬ মাস গেল, ৪ বছর টিকতে পারবেন তো ট্রাম্প?
ক্ষমতার প্রথম ৬ মাস কাটলো বিতর্ক, কেলেঙ্কারি, অভিযোগ ও সংকটের মধ্যে৷ অবশ্য রিপাবলিকান দলের মধ্যে এখনো তাঁর প্রতি অটুট সমর্থন রয়েছে৷ সব প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে বাকি সাড়ে তিন বছর টিকে থাকতে পারবেন কি ডোনাল্ড ট্রাম্প?
ছবি: picture-alliance/dpa/Consolidated/R. Sachs
নির্বাহী আদেশই পছন্দ
প্রথম ছ’মাসে পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলের বিশেষ করে পরিবেশ ও শিল্প সংক্রান্ত ১৪টি নিয়মকানুন বাতিল করে দিয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে সংসদের উভয় কক্ষে রিপাবলিকান দলের নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও তাদের উপর ভরসা না করে নির্বাহী আদেশ জারি করতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Consolidated/R. Sachs
সংসদে ব্যর্থতা
রিপাবলিকান দলের সংসদ সদস্যরা আনুগত্য দেখিয়ে চললেও প্রথম ছ’মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংসদে কোনো উল্লেখযোগ্য আইন পাশ করাতে পারেন নি ট্রাম্প৷ এমনকি দু’বার চেষ্টা চালিয়ে ‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল করে স্বাস্থ্য বিমার সংস্কার সংক্রান্ত আইনও অনুমোদন করাতে পারেন নি তিনি৷
ছবি: Getty Images/Chip Somodevilla
উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা
স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে হাত পুড়িয়েও কর ও জনকল্যাণ ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে বদ্ধপরিকর ট্রাম্প প্রশাসন৷ প্রথম এক বছরে প্রধান নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করে ভোটারদের বাহবা কুড়াতে চান ট্রাম্প৷ তবে জটিল এই আইন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও ঐকমত্যের অভাব দেখছেন সমালোচকরা৷
ছবি: Getty Images
অবকাঠামোর উন্নয়ন
নির্বাচনি প্রচারের সময় অ্যামেরিকার বিপর্যস্ত অবকাঠামো ঢেলে সাজাতে এক লক্ষ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ রাস্তাঘাট, সেতু, পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা বা সংস্কারের কাজে সেই অর্থ ব্যয় করতে চেয়েছিলেন তিনি৷ অথচ ২০১৮ সালের বাজেটে এই খাতে কত বরাদ্দ পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/R.Beck
আবার ভোটের পরীক্ষা
২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে কংগ্রেসের প্রায় অর্ধেক আসনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ ততদিনে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করতে না পারলে রিপাবলিকান সংসদ সদস্যদের পক্ষে ভোটারদের মন জয় করা কঠিন হবে৷ সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে না পারলে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে বাকি দু’বছর দেশ শাসন করা কঠিন হয়ে উঠবে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/D. Goldman
ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা?
প্রতীকী প্রতিরোধ হিসেবে বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব আনলেও প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রক্রিয়ার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক সদস্যের সমর্থন পাওয়া কঠিন৷ মারাত্মক কোনো ঘটনা বা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যদিও আগেভাগে তার পূর্বাভাষ পাওয়া কঠিন৷