ভোটগণনা চলছে। আসছে হার-জিতের খবর। আর হোয়াইট হাউসের সামনে ভিড় করেছেন কয়োকশ মানুষ। গান, নাচ, ব্যানার সহ উৎসব চলছে।
বিজ্ঞাপন
তাঁরা বেশির ভাগই বাইডেনের সমর্থক। ট্রাম্পের অনুগামীরাও আছেন, তবে সংখ্যায় কম। অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হয়ে নাচে-গানে উৎসবে মেতেছেন তাঁরা। বাইডেনের সমর্থকরা বলছেন, এটা হলো 'গোয়িং অ্যাওয়ে পার্টি' বা ট্রাম্পের বিদায় অনুষ্ঠান।
তাই মাঝেমধ্যেই চিৎকার করে কেউ বলছেন, 'উই ওয়ান্ট হিম গন'। ব্যানার লেগে গেছে, 'রিমুভ ট্রাম্প'। বাইডেনসমর্থকদের বিশ্বাস, তাঁদের নেতা এ বার প্রেসিডেন্ট হবেন। কিছুদিন আগেই এই জায়গা ছিল ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারস-এর বিক্ষোভকারীদের দখলে। তবে তখন ছিল প্রতিবাদ। এখন আশায় বুক বেঁধে উৎসব। মাঝে মধ্যে ট্রাম্প সমর্থকদের সঙ্গে বাইডেন ভক্তরা যে সামনা-সামনি হননি এমন নয়। তবে এ দিন পরিবেশ শান্ত এবং উৎসবের। ট্রাম্পের অল্প কিছু সমর্থক আশায় বুক বেঁধে আছেন, তাঁদের নেতার জয়ের উৎসব করবেন বলে। তাঁদের আশা, প্রাথমিক ফল যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পই জিতবেন। তাঁদের উৎসব পালন দীর্ঘ হবে। পরাজিত প্রার্থীর অনুগামীরা মনে বেদনা নিয়ে সরে যাবেন।
হলিউডের নজরে ‘হোয়াইট হাউস’
এই ছবিগুলি অ্যামেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও ‘হোয়াইট হাউস’-কে নতুনভাবে চেনায়, দেখুন এই ছবিঘরে...
ছবি: Imago/Sony/BRON Studios
টানাপোড়েনে ‘দ্য ফ্রন্ট রানার’
জেসন রাইটম্যান পরিচালিত ছবি ‘দ্য ফ্রন্ট রানার‘ ২০১৮ সালে মুক্তি পায়৷ ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী গ্যারি হার্টের চরিত্রে অভিনয় করেন হিউ জ্যাকম্যান৷ উল্লেখ্য, গ্যারি হার্ট ছিলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, যার যৌন কেলেঙ্কারির কেচ্ছা উঠে আসে শিরোনামে৷ এই ছবিটি তুলে ধরেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার বিভিন্ন দিক৷
ছবি: Imago/Sony/BRON Studios
হিউ-এর ক্যারিশমা
১৯৮৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কলোরাডোর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ছিলেন নির্বাচনের ‘হট ফেভারিট’৷ কিন্তু সব হিসেব পাল্টে দেয় এক নারীর সাথে তাঁর নৌকাবিহারের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কিছু ছবি৷ ব্যক্তিত্বশালী এই রাজনীতিকের নানা কেচ্ছা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কীর্তিকলাপের সামনে নেহাতই তুচ্ছ, এমনও মনে করেন অনেকে৷
ছবি: Imago/Sony/BRON Studios
হার্ট, না ক্লিন্টন, নাকি ট্রাম্প?
কার কেচ্ছার ফল ছিল সুদূরপ্রসারী? গ্যারি হার্ট? হয়তো না৷ রাজনীতিকের যৌন কেচ্ছা বিষয়ে অনেকেই তুলবেন নব্বইয়ের দশকে আলোড়ন তোলা মনিকা লিউইনস্কি ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের কথা, যে কারণে পদত্যাগ করতে হয় ক্লিন্টনকে৷ সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ের প্রতিবেদন হার্ট ও ক্লিন্টন, দুজনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্যই মারাত্মক ফল বয়ে আনে৷ কিন্তু ট্রাম্পের একাধিক কেলেঙ্কারির ঘটনা খবরে এলেও তাঁর আসন টলাতে পারেনি৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
পর্দায় ট্রাম্প: ‘ফারেনহাইট ১১/৯’
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সব অনুমান মিথ্যা প্রমাণ করে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনকে হারিয়ে দেন রিপাব্লিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এই নির্বাচনে ট্রাম্পবিরোধী মানুষ কীভাবে সংগঠিত হয়েছিলেন, কেমন ভূমিকা ছিল সংবাদমাধ্যমের, এসব রয়েছে ২০১৬ সালে মাইকেল মুর পরিচালিত ‘ফারেনহাইট ১১/৯’ নামের এই তথ্যচিত্রে৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection/Briarcliff Entertainment
ওয়াশিংটনের বাইরের কুকীর্তি
এই তথ্যচিত্রকে সম্পূর্ণতা দিতে পরিচালক মুর মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটনের বাইরের রাজ্যগুলির চিত্রও এখানে তুলে ধরেছেন৷ পরিচালক মুর মিশিগানের সাংসদ রিক স্নাইডারকে সরাসরি ‘ফ্লিন্ট ওয়াটার’ কেলেঙ্কারিতে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেন এই তথ্যচিত্রে৷ ওপরের ছবিতে রয়েছে সেই অংশের একটি দৃশ্যের ছবি৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection/Briarcliff Entertainment
ট্রাম্পবিরোধীরা কোথায়?
মাইকেল মুরের এই ছবিতে রয়েছে একঝাঁক হলিউড তারকার জবানবন্দী, যারা সবাই রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্পের বিরোধী৷ এছাড়াও ছবিটিতে বলা হয়েছে, ডেমোক্র্যাট দলের নির্বাচনি কৌশলের দুর্বলতার বিষয়ে নানা তথ্য৷বর্তমান অ্যামেরিকায় একাধিক তৃণমূল স্তরের আন্দোলন গড়ে উঠছে৷ এই ছবিতে তাদের প্রতিনিধিদের ট্রাম্প সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবার সুযোগ করে দিয়েছেন মাইকেল মুর৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection/Briarcliff Entertainment
ভাইস প্রেসিডেন্টের গুরুত্ব...
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের ‘ডানহাত’ বলে পরিচিত তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি৷ চেনি’র জীবন নিয়ে তৈরি ‘ভাইস’ ছবিটিতে ডিক চেনির ভূমিকায় দেখা যায় গোল্ডেন গ্লোবজয়ী অভিনেতা ক্রিশ্চিয়ান বেল-কে৷ এই ছবি শুধু বুশের আমলের অ্যামেরিকাকে তুলে ধরে না, বরং বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক টানাপোড়েনেরও সমালোচনা করে৷
পরিচালক ম্যাককে’র মতে, হোয়াইট হাউস তখন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের কথায় কম, আর ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির আদেশে চলতো বেশি৷ ‘ভাইস’ ছবিতে রয়েছে বুশ-জমানার গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা ও তার পেছনে চেনির অবদানের অনেক অজানা তথ্য৷
অনেকেই মনে করেন, মার্কিন রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা রাখেন প্রেসিডেন্ট ও তাঁর স্ত্রী বা ফার্স্ট লেডি৷ ‘ভাইস’ ছবি এই বিশ্বাস ভাঙতে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে ডিক চেনি ও তাঁর স্ত্রী লিন-এর কাহিনি, যাদের প্রভাবে গোটা ওয়াশিংটনের রাজনীতি এক সময় নির্ধারিত হতো৷ বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স-কে ডিক চেনির সঙ্গে তুলনা করেন অনেকে৷
৩০ বছর বয়সী গোল্ডিং ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন, ''ট্রাম্প যে দিন জিতেছিলেন, সে দিন মন খারাপ নিয়ে বাড়িতে বসেছিলাম। আজ ঠিক করেছি, যাই হোক মানুষের মাঝখানে থাকব।'' ২৮ বছর বয়সী শাফ্রিটজ বলেছেন, ''আমি তো উৎসব পালন করতে চাই। তাই এসেছি।''
পুলিশও প্রচুর মোতায়েন করা আছে। হোয়াইট হাউসের চারপাশ ঘিরে লাগানো হয়েছে অস্থায়ী নিরাপত্তা বেড়া। নিরাপত্তা কর্মীরা সতর্ক। কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত মোকাবিলা করার জন্য তৈরি তাঁরা।