হোয়াইট হাউসে করোনা ধরা পড়ার পর নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷ দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ বাড়ালেও নিজের ঘর সামলাতে না পেরে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংকট যে ঘরের সমস্যা হয়ে উঠবে, এমনটা বোধহয় ভাবতে পারেন নি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ হোয়াইট হাউসে একের পর এক ব্যক্তি আক্রান্ত হবার ফলে বাধ্য হয়ে তাঁকে একাধিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে৷ সেখানে সবাইকে মাস্ক পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ প্রতিদিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের পরীক্ষা হচ্ছে৷ অথচ ট্রাম্প নিজে প্রকাশ্যে বা চার দেওয়ালের আড়ালে কিছুতেই মাস্ক পরতে প্রস্তুত নন৷ করোনা সংকটকে লঘু করে দেখিয়ে দেশে ব্যবসাবাণিজ্য আবার চালু করার উদ্যোগের সঙ্গে যে সেই ‘ভাবমূর্তি’ একেবারেই খাপ খাচ্ছে না৷
কিন্তু সেই ‘ভাবমূর্তি’ ভঙ্গুর হয়ে উঠছে৷ হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও শীর্ষ চিকিৎসা কর্মকর্তাদের আর দেখা যাচ্ছে না৷ হোয়াইট হাউসে করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসে তাঁরা সবাই নিজেদের আপাতত বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন৷ প্রেসিডেন্টকে নিরাপদ রাখতে সবাই তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে৷ ট্রাম্প পেন্সের সঙ্গে শুধু টেলিফোনে কথা বলছেন৷ ট্রাম্পের জামাই ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারও মাস্ক পরে থাকছেন৷
খোদ হোয়াইট হাউসে যখন এমন পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে, তখন গোটা দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বদলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ট্রাম্পের চাপ অত্যন্ত দৃষ্টিকটু হয়ে উঠছে৷ ট্রাম্পের অন্যতম উপদেষ্টা কেভিন হ্যাসেট রবিবার বলেন, হোয়াইট হাউসে কাজ করতে যাওয়া ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে৷ ছোট জায়গায় ভিড়ের মধ্যে কাজের ঝুঁকি সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন তিনি৷
এদিকে ট্রাম্প প্রায় দুই মাস ধরে গোটা দেশকে আশ্বাস দিয়ে চলেছেন, যে সবার জন্য করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে৷ অথচ বাস্তবে এমন পরীক্ষার সুযোগ খুবই সীমিত৷ রাজ্যের গভর্নররা ফেডারেল সরকারের উদ্দেশ্যে আরও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের জরুরি আবেদন করে চলেছেন৷ তাঁদের মতে, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়া আবার সবকিছু চালু করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে৷
সোমবার ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে দুই সাংবাদিকের সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন৷ ট্রাম্প বার বার করোনা ভাইরাস পরীক্ষার প্রশ্নে অ্যামেরিকার ‘সাফল্য’ তুলে ধরার চেষ্টা করায় সিবিএস নেটওয়ার্কের এক চীনা বংশোদ্ভূত সাংবাদিক দেশে মৃত্যুলীলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ তার জবাবে ট্রাম্প এমন পরিস্থিতির দায় চীনের উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেন৷ সিএনএন নেটওয়ার্কের এক সাংবাদিককে উপেক্ষা করে তর্কে জড়িয়ে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ তারপর আচমকা সংবাদ সম্মেলন ছেড়ে চলে যান তিনি৷
এসবি/কেএম (এপি, রয়টার্স)
২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
ডনাল্ড ট্রাম্প: ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট
রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী, জনপ্রিয় বইয়ের লেখক এবং রিয়েলিটি টিভি স্টার হিসেবে পরিচিত ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট৷ হোয়াইট হাউজে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিবার, সাম্রাজ্য
তিনি যাদের ভালোবাসেন তাদের নিয়ে তোলা ছবি৷ এখানে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া, মেয়ে ইভানকা এবং টিফানি, ছেলে এরিক এবং ডোনাল্ড জুনিয়র এবং নাতি কাই ও ডোনাল্ড জন থ্রি৷ তাঁর তিন বড় সন্তান ট্রাম্প অরর্গানাইজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিলিয়নিয়ার থেকে বিলিয়নিয়ার
১৯৮৪ সালে তোলা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে নিউ জার্সির ট্রাম্প প্লাজায় হারাহ’স ক্যাসিনো উদ্বোধন করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এটা অন্যতম এক খাত যেখানে বিনিয়োগ করে বাপের টাকায় মিলিয়নিয়ার হওয়া ট্রাম্প নিজেকে বিলিয়নিয়ারে পরিণত করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Lederhandler
বাপের টাকায় ব্যবসা শুরু
রিয়েল স্টেট সাম্রাজ্যের শুরুটা ট্রাম্প করেছিলেন তাঁর বাবা ফ্রিডরিকের কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে৷ তিনি তাঁর ছেলেকে শুরুতে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন৷ এবং তাঁর মৃত্যুর পর ট্রাম্প এবং তাঁর তিন ভাইবোন উত্তরাধিকার সূত্রে চার’শ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক হন৷
ছবি: imago/ZUMA Press
একটি নামের মধ্যে কী আছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন এবং মার্কেটের উত্থান পতনের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন৷ নিউ ইয়র্ক সিটির ট্রাম্প টাওয়ার তাঁকে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য এনে দিয়েছে৷ ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর সম্পদের পরিমাণ দশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ তবে কখনো তিনি তাঁর এই দাবির পক্ষে কোনো আর্থিক কাগজপত্র প্রকাশ করেননি৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তাঁর সম্পদের পরিমাণ তিনি যা বলেন তাঁর এক-তৃতীয়াংশ মাত্র৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
‘খুব ভালো, খুব স্মার্ট’
ট্রাম্প নিজের সম্পর্কে নিজেই বলেন একথা৷ তিনি সুপরিচিত সুপরিচিত ‘ওয়ার্টন স্কুল অফ দ্য ইউনিভার্সিটি অফ পেনসেলভেনিয়ায়’ লেখাপড়া করেছেন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.J. Harpaz
ক্যাপ্টেন ট্রাম্প
কলেজে পাঠানোর আগে ১৩ বছর বয়সে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে পাঠানো হয়েছিল ট্রাম্পকে৷ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের আগেই একাডেমি থেকে একটি অফিসার’স ব়্যাংক অর্জন করেন তিনি৷ নির্বাচনি প্রচারাভিযানকালে তিনি জানান যে, তিনি স্কুলে কাঠামো এবং সামরিক সংস্কৃতি উপভোগ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/
ভিয়েতনাম যাওয়ার বদলে গোড়ালির চিকিৎসা
মিলিটারি শিক্ষা সত্ত্বেও ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাননি ট্রাম্প৷ পড়াশোনা করার সময় তিনি চারবার কালহরণ করেছিলেন এবং গোড়ালির চিকিৎসার জন্য একবার বিরতি নিয়েছিলেন৷ ট্রাম্প হবেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগ অবধি কোনো সরকারি কার্যালয় বা সামরিক বাহিনীতে কাজ করেননি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রথম স্ত্রী: ইভানা জেলনিউকোভা
১৯৭৭ সালে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার ইভানা জেলনিউকোভাকে বিয়ে করেন ট্রাম্প৷ তাঁদের তিন সন্তান হয়৷ ডোনাল্ড জন জুনিয়র, ইভানকা মারি এবং এরিক ফ্রেডরিক৷ তবে বিবাহবহিভূর্ত সম্পর্কসহ নানা জটিলতায় ১৯৯০ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ ইভানা হচ্ছেন সেই নারী, যিনি ট্রাম্পের ডাক নাম দিয়েছিলেন ‘দ্য ডোনাল্ড৷’
ছবি: Getty Images/AFP/Swerzey
দ্বিতীয় পরিবার
ট্রাম্প পরবর্তীতে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসকে বিয়ে করেন৷ ১৯৯৩ সালে তাঁদের মেয়ে টিফানির জন্ম দেন ম্যাপেলস৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/J. Minchillo
অন্য নারীদের সঙ্গে ট্রাম্প
ট্রাম্প সম্ভবত নিজের স্ত্রীর বদলে অন্য নারীদের সঙ্গে ছবি তুলতে ভালোবাসেন৷ তিনি প্রায়ই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যেতেন এবং তরুণী মডেলদের সঙ্গে ছবি তুলতেন৷ ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ অবধি আয়োজিত সব ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতার একজন অংশীদার ছিলেন তিনি৷ নির্বাচনের আগে আগে এক অডিও প্রকাশ হয় যেখানে ট্রাম্প বলেছিলেন, তাঁর খ্যাতি তাঁকে কোনোরকম পরিণতির ভয় ছাড়াই মেয়েদের ‘গায়ে হাত দেয়ার’ সুযোগ করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Lemm
বাণিজ্য এবং বিনোদনের মিশ্রণ
ট্রাম্প জানতেন কীভাবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়৷ এই ছবিতে তাঁকে ‘ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের’ একটি শোতে দেখা যাচ্ছে৷ রিয়েলিটি টিভি শো ‘দ্য এপ্রেন্টিস’, যেখানে প্রার্থীদের নিয়োগ অথবা বাতিল করা হতো, ট্রাম্পকে খ্যাতি অর্জনে সহায়তা করেছে৷ শোতে ট্রাম্পের প্রিয় লাইন ছিলে, ‘ইউ আর ফায়ার্ড!’
ছবি: Getty Images/B. Pugliano
রাজনীতিতে ট্রাম্প
যদিও অতীতে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর খুব কম যোগাযোগ ছিল, তারপরও ২০১৫ সালে সালের ১৬ জুলাই তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন৷ রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন৷’ নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় তিনি অভিবাসী, মুসলমান, নারী এবং তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রত্যেককে অপমান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Lane
ওয়াশিংটনের পথে
প্রেসিডেন্ট হিসেবেও হোয়াইট হাউসে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প৷ ৷ সবশেষ তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করল সে দেশের সংসদের নিম্নকক্ষ। অ্যামেরিকার ইতিহাসে ট্রাম্পই তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব আনা হয়েছে।