হোয়াইট হাউসে নতুন ‘চিফ অফ স্টাফ' নিয়োগ করে ও যোগাযোগ বিভাগের প্রধানকে বরখাস্ত করে নিজের টিমে ব্যাপক রদবদল করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ দেশে-বিদেশে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে জেরবার হচ্ছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের ঘর সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছেন৷ হোয়াইট হাউসে কোন্দল, কেলেঙ্কারি ও অরাজকতার ফলে বার বার চাপের মুখে পড়ছেন তিনি৷ ভেতরের সেই সব খবর ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, অপদস্থ হতে হচ্ছে প্রেসিডেন্টকে৷ তাঁর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পালন করতে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে হোয়াইট হাউস৷ ‘ওবামাকেয়ার' বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়ন করতে গিয়ে বার বার ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প৷নিজের টিমে রদবদল করেও শান্তি আসছে না৷
এবার ‘চিফ অফ স্টাফ' পদে জেনারেল জন কেলিকে এনে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা চালালেন ট্রাম্প৷ তাঁর সেই দায়িত্ব সহজ করতে সদ্য নিযুক্ত যোগাযোগ বিভাগের প্রধানকে বরখাস্তও করলেন তিনি৷ কিন্তু সমালোচকদের ধারণা, ট্রাম্প যতদিন না নিজের আচরণ বদলাবেন, ততদিন এই অরাজকতা বন্ধ হবার সম্ভাবনা তৈরি হবে না৷
১০ দিন আগে ওয়াল স্ট্রিটের ব্যাংকিং জগত থেকে অ্যান্টনি স্কারামুচি-কে হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসে তাঁকে যোগাযোগ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করার পর পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে৷ একদিকে ট্রাম্প-এর জয়গান, অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন কর্মকর্তা সম্পর্কে প্রকাশ্যে কটু, প্ররোচনামূলক ও অশ্লীল মন্তব্য করে ‘মুচ' নামে পরিচিত যোগাযোগ বিভাগের প্রধান উলটে আরও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন৷ ‘চিফ অফ স্টাফ' রেন্স প্রিবাসও তাঁর শ্লেষের শিকার হয়েছিলেন৷
প্রথমে প্রিবাস, তারপর স্কারামুচিকে বরখাস্ত করে নতুন সূচনা করতে চাইছেন ট্রাম্প৷ নতুন ‘চিফ অফ স্টাফ' জেনারেল জন কেলি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন, এমনটাই তাঁর আশা৷ তবে প্রথা অনুযায়ী হোয়াইট হাউসের সব কর্মী ও কর্মকর্তা ‘চিফ অফ স্টাফ' হিসেবে জেনারেল কেলির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ মেনে নেবেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷
এই রদবদলের পর ট্রাম্প টুইট করে মন্তব্য করেন, যে হোয়াইট হাউসের জন্য এটা বড় ভালো দিন৷
তিনি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ে সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জেনারেল কেলির কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন৷ হোয়াইট হাউসেও তিনি অসাধারণ কাজ করবেন বলে পূর্ববাণী করেন ট্রাম্প৷
‘ওবামাকেয়ার' বাতিল, কর ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মতো অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সামলাতে হোয়াইট হাউসকে আরও তৎপর হতে হবে৷ এই অবস্থায় এমন রদবদল সেই প্রত্যাশিত ফল নিয়ে আসে কিনা, সেদিকে নজর রাখবেন পর্যবেক্ষকরা৷
‘বিদায় হোন’ – ট্রাম্প প্রশাসনে উইকেট পতন
ট্রাম্প প্রশাসনে যত দ্রুত একের পর এক উইকেট পড়ছে, ততটা আর কখনো কোথাও হয়নি৷ চলুন দেখা যাক, এ যাবৎ কার কার বিদায় ঘণ্টা বেজেছে৷
সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জিম ম্যাটিস৷
ছবি: picture-alliance/AP/C. Kaster
রেক্স টিলারসন
১৩ই মার্চ, ২০১৮৷ টুইটারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে টিলারসনকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন৷ ট্রাম্প বলেছেন, টিলারসনের সঙ্গে তার মতভিন্নতা ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে এসেছিল৷ টিলারসনের সঙ্গে আলোচনা না করেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানিয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
অ্যান্টনি স্কারামুচি
‘দ্য মুচ’ বলে পরিচিত ৫৩ বছর বয়সি সাবেক এই পুঁজিবাজার ব্যবসায়ী ট্রাম্প প্রশাসনে টিকতে পেরেছেন মাত্র দশদিন৷ ছিলেন যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ তাঁর যোগ দেয়ার আগে দীর্ঘদিন এই পদটি খালি ছিল৷ চিফ অফ স্টাফ পদে সাবেক মেরিন প্রধান জেনারেল জন কেলির যোগ দেয়ার দিনেই বিদায় হন অ্যান্টনি৷ প্রশাসনের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে চাকরি হারান তিনি৷
ট্রাম্পের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল গভর্নমেন্ট এথিক্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ওয়াল্টার শাওবের৷ এরই জের ধরে গেল এই জুলাইতে পদত্যাগ করেন৷ তিনি প্রায়ই ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘হাস্যকর পুঁজিবাজার’ বলে ডাকতেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J.S. Applewhite
রিন্স প্রাইবাস
যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক অ্যান্টনি স্কারামুচির সঙ্গে প্রকাশ্যে ঝগড়া করে চাকরি হারিয়েছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অফ স্টাফ রিন্স প্রাইবাস৷ মাত্র ছয় মাসে তাঁর উইকেট পতন হয়৷ প্রাইবাস সেই সব ডানপন্থি কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন যাঁরা স্কারামুচির নিয়োগের বিরোধিতা করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Segar
শন স্পাইসার
এবারও সেই স্কারামুচিই বিবাদের কারণ৷ প্রেসিডেন্ট ভবনের সাবেক প্রেস সচিব শন স্পাইসার বিবাদে জড়িয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসের সঙ্গেও৷ পদত্যাগের আগে স্কারামুচির নিয়োগের চরম বিরোধিতা করেছিলেন স্পাইসার৷
ছবি: Reuters/K.Lamarque
মাইকেল ডুবকে
স্কারামুচির আগে মাইকেল ডুবকে ছিলেন হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ গেল মে মাসে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়, কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগটি ঠিকমত সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Walsh
জেমস কোমি
হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল কেলেঙ্কারির তদন্ত ‘ঠিকমত করতে পারেননি’ এই অভিযোগে এফবিআই-এর এই পরিচালককে অব্যাহতি দেন ট্রাম্প৷ নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন যে, ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে ‘রাশিয়ার সম্পর্ক’ তদন্তের মুখে পড়ার শঙ্কায় তাকে বহিষ্কার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. S. Applewhite
মাইকেল ফ্লিন
গেল ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগে বাধ্য হন৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ট্রাম্প দায়িত্ব নেবার আগেই রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ‘আলাপ’ করা এবং এ বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ভুল তথ্য দেয়া৷