রামপুরহাটের ঘটনা কেবল যন্ত্রণা দিচ্ছে না। ভয় পাইয়ে দিয়েছে। এই হত্যার রাজনীতি এবার বন্ধ হোক।
বিজ্ঞাপন
নন্দীগ্রামে যেদিন গুলি চলেছিল, মহাকরণের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী সেদিন একটিই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন-- ছিঃ। এরপর নানা কথার ভিড়েও ওই উচ্চারণটি কান থেকে যায় না। বড় তীক্ষ্ণ ছিল সেই 'ছিঃ'। প্রায় ১৫ বছর পর আজ আরেকটি শব্দ বার বার ফিরে বাজছে কানে-- শকড। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রামপুরহাট কাণ্ড নিয়ে এই একটি শব্দই ব্যবহার করেছেন। 'শকড', একজন পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসেবে ভীষণ শকড হয়েছি। স্তম্ভিত লাগছে।
রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম এখন গোটা দেশের খবরের শিরোনামে। সোমবার এক তৃণমূল নেতা খুন হওয়ার পরে গ্রামের একের পর এক বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির ভিতর থেকে যে মৃতদেহগুলি বের করা হয়েছে, তা চেনা যাচ্ছে না। পুড়ে কালো কঙ্কালে পরিণত হয়েছে দেহগুলি। ফরেনসিক পরীক্ষার পর হয়তো সকলের পরিচয় জানা যাবে। তবে স্থানীয় মানুষের অনেকেই বলছেন, যেদিন আগুন লাগানো হলো, তার আগে গ্রাম কার্যত পুরুষশূন্য হয়ে গেছিল। ফলে যারা মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশই সম্ভবত নারী এবং শিশু।
ভয়াবহ। এই ভয়বহতা প্রথম দেখছি, এমন নয়। এর আগে এই পশ্চিমবঙ্গেই নন্দীগ্রাম দেখেছি, নেতাই দেখেছি, নানুর দেখেছি। গত কয়েকবছরে একের পর এক রাজনৈতিক খুন দেখেছি। মনে পড়ছে নেতাইয়ের কথা। বাম আমলে নেতাইয়ের হত্যার পর সংবাদসংগ্রহ করতে গিয়ে একটি বাচ্চা মেয়ের আর্তনাদ ক্যামেরায় বন্দি করেছিলাম। দিনের পর দিন যে কান্না খবরের চ্যানেলে প্রোমোয় ব্যবহার হতো। এখনো রাতের ঘুম ভেঙে যায় ওই কান্নার দৃশ্য মনে পড়লে।
ভয়, উত্তেজনার রামপুরহাট
চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে ছাই। হাওয়াই চটি। থমথমে গ্রামে সকলে সন্ত্রস্ত। পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ চিহ্নিত পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থলে ডিডাব্লিউ-র ক্যামেরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বগটুই গ্রামের অন্দরে
পোড়া বাড়ি থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। দমকলকর্মীরা এখনো বাড়ির ভিতর ঢুকে ঢুকে আগুন নেভানোর কাজ করছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাস্তায় তাজা বোমা
গ্রামের রাস্তায় এখনো পড়ে আছে তাজা বোমা। পুলিশ গিয়ে কিছু বোমা উদ্ধার করেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ভয়াবহতার আরেক নাম
বাড়ির সামনে পড়ে আছে কলসি। জুতো, চটি। বাড়ির ভিতর আগুনে তছনছ হয়ে গেছে। পোড়া দেহগুলি শনাক্ত পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। এতই খারাপ অবস্থা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শিশুদের মৃত্যু
স্থানীয় মানুষ ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরেই গ্রামে উত্তেজনা চলছিল। তার জেরে গ্রামের পুরুষরা আগেই পালিয়েছিল। যাদের পুড়ে মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশই নারী ও শিশু। প্রশাসন অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নিহত ভাদু শেখ
স্থানীয় তৃণমূল নেতা ভাদু শেখের ছবি। গন্ডগোলের সূত্রপাত তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই। চায়ের দোকানে তার মাথা লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়। তার মৃত্যুর পরেই গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঘটনাস্থলে ফিরহাদ হাকিম
মঙ্গলবারই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ভাদু শেখের বাড়িতে কথা বলছেন তিনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সিপিএমের প্রতিনিধি দল
সিপিএমের প্রতিনিধি দল সকালে ঢুকেছে গ্রামে। দলের সদ্য নিযুক্ত রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, প্রবীণ নেতা বিমান বসু ঘটনাস্থলে যাবেন। সেলিম মঙ্গলবার অভিযোগ করেছিলেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সবকিছু ধামাচাপা দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এদিন গ্রামে ঢুকে সেলিম বলেন, পুলিশ সিন্ডিকেটের টাকায় চলছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজেপির প্রতিনিধি দল
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং রাজ্য নেতৃত্বের দল এদিন রামপুরহাটে যাবে। তারাও এলাকা ঘুরে দেখবে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবিষয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশন এবং শিশু সুরক্ষা কমিশন রাজ্যকে কড়া ভাষায় চিঠি দিয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাজ্য প্রশাসনের যুক্তি
তৃণমূল কর্মী খুন এবং আগুন লাগার বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত কি না, তা নিয়ে এখনো স্পষ্ট বার্তা দেয়নি রাজ্য প্রশাসন। মৃতের সংখ্যা নিয়েও একেকজন একেক কথা বলছেন। দমকলকর্মীরা বলেছিলেন মৃতের সংখ্যা ১০। স্থানীয় পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন মৃতের সংখ্যা সাত। রাজ্য পুলিশের ডিজি জানিয়েছেন মৃতের সংখ্যা আট। গ্রামবাসীদের অভিযোগ মৃতের সংখ্যা আরো বেশি। পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
থমথমে পরিস্থিতি
সব মিলিয়ে থমথমে পরিস্থিতি রামপুরহাটের গ্রামে। সাংবাদিকদেরও বিশ্বাস করতে পারছেন না গ্রামের মানুষ। সন্ধের পর কাউকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
10 ছবি1 | 10
বাম আমলের শেষ সময়ে অধুনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতদেহ শহরে নিয়ে এসে মিছিল করতেন। তাকে সিঙ্গুরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে সংবিধান হাতে বিধানসভায় ঢুকে পড়েছিলেন। তারপরের ঘটনা কলঙ্কিত ইতিহাসের অধ্যায় হয়ে থেকে যাবে। তছনছ করা হয়েছিল বিধানসভা ভবন।
মনে পড়ে, কেন তাকে উপদ্রুত অঞ্চলে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, এই প্রশ্ন সামনে নিয়ে ধর্মতলায় হরতালে বসেছিলেন তৎকালীন তৃণমূলনেত্রী। আর এখন? রামপুরহাটের ঘটনার পর তারই প্রশাসন বিরোধীদের এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না। বিরোধীরা এসে অশান্তি সৃষ্টি করছেন বলে টুইট করছেন রাজ্যের মন্ত্রী-সান্ত্রি-নেতার দল। টিভি ফেটে ঘরের পর ঘর জ্বলে গেছে বলে অবলীলায় দায় এড়াচ্ছেন মাথায় কম অক্সিজেন ওঠা নেতা। অকাতরে যিনি বলে দেন, পুলিশের দিকে বোমা মারো।
অবাক লাগে ভাবতে, ঘটনার পর এতঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও প্রশাসন সামান্য একটি তথ্য ঠিকমতো প্রকাশ করে উঠতে পারছে না-- ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে? কিছু পুড়ে যাওয়া শব গোনা এত কঠিন?
অবাক লাগে ভাবতে, এক দশক আগে এই তৃণমূলই দেহ লোপাট, মৃতদেহ সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলতো। আজ তারাই সে কাজে লিপ্ত হয়েছে। সামান্য তথ্য ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারছে না। পারছে না কারণ, রাজনীতিতে এটাই দস্তুর। রাজনীতিতে মৃতদেহের গায়েও পতাকা লাগানো থাকে। পোড়া শরীরেও রং মেশানো থাকে। মৃতদেহেও ওরা-আমরা।
সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার কম হয়নি৷ এমনকি ১৯৪৭-এর দেশভাগের সময় থেকেও যদি দেখা যায়, সংখ্যালঘুদের ওপর বারবার আঘাত এসেছে৷ কখনো রাজনৈতিক কারণে, কখনো স্থানীয় স্বার্থে৷
ছবি: bdnews24.com
ভারতভাগের পরপরই
ভারত ভাগ হয় ১৯৪৭ সালে৷ এর পরপর পূর্ব বাংলার অনেক জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের বিভিন্ন ঘটনা ঘটতে থাকে৷ অনেকে বলে থাকেন যে, রাষ্ট্রীয় মদদে স্থানীয় মুসলিম জনগোষ্ঠী হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করে৷ ১৯৪৯ সালে কালশিরা ও নাচোলে চলে বর্বরতা৷ এরপর ১৯৫০ সালে বরিশাল, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর একাংশ, পাকিস্তানি পুলিশ, আনসার বাহিনী হত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ, ধর্ষণ চালায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
গুজব ছড়িয়ে হামলা
প্রায়ই গুজব ছড়িয়ে বাঙালি হিন্দুদের ওপর হামলা করা হয়েছে, যা এখনো দেখা যায়৷ তেমনই এক ঘটনা ঘটে ১৯৬৪ সালে৷ ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে অবস্থিত হজরতবাল নামক তীর্থক্ষেত্রে হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর সংরক্ষিত মাথার চুল চুরি করা হয়েছে – এই সংবাদ ছড়িয়ে পূর্ব-বাংলায় আবারো সংগঠিত হয় বাঙালি হিন্দু হত্যা৷ আবারো হাজারো হিন্দু ধর্মাবলম্বী পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমান৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
স্বাধীনতা আন্দোলনে
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য ছিল হিন্দু সম্প্রদায়৷ তারা হিন্দু অধ্যুষিত অসংখ্য গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন চালিয়েছে৷ একটি হিসেব বলছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৪০ শতাংশ হিন্দু জনসংখ্যা নেমে হয়েছে ২১ শতাংশ৷
ছবি: AP
বাবরি মসজিদের গুজব
ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে এই গুজব ছড়িয়ে দাঙ্গা শুরু হয় ভারতীয় উপমহাদেশে৷ তার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও৷ ১৯৯০ সালে হিন্দুদের উপর ৩০ অক্টোবর থেকে নির্মম নৃশংসতা শুরু হয় এবং বিরতিহীন ভাবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলে৷ এই ঘটনার সূত্র ধরে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত থেকে থেকে পুরো বংলাদেশেই হিন্দুদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
রাজনৈতিক হামলার শিকার
শুধু সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বা অন্য স্থানীয় স্বার্থে নয়, রাজনৈতিক কারণেও সহিংসতার শিকার হয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ৷ যেমন, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, নির্দিষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নৃশংস হামলা হয়৷ এমনকি ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শুরুতেও ব্যাপক হামলা হয়৷ এসব হামলার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় নয় লাখ মানুষ দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান৷
ছবি: bdnews24.com
নিস্তার পাননি অন্যান্য সংখ্যালঘুরাও
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামের রামুতে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা৷ এই ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক নিন্দিত হয়৷ ২০১৬ সালে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সাঁওতালদের৷ এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন সাঁওতাল মারা যান ও উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়৷ এছাড়া পাহাড়ে প্রায়ই নিপীড়নের খবর পাওয়া যায়৷
ছবি: AFP/Getty Images
এখনো থেমে নেই
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার রায়ের পর হামলা করা হয় নোয়াখালীর অনেকগুলো হিন্দু বাড়িতে হামলা হয়৷ অনেক মন্দির পুড়িয়ে দেয়া হয়৷ এছাড়া রংপুর বা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফেসবুকে মিথ্যা পোস্ট দিয়ে পরিকল্পনা করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ এসব ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন সারা দেশের মানুষ৷
ছবি: Khukon Singha
কত শতাংশ অবশিষ্ট?
কিছু হিসেবে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর শতকরা ৪০ ভাগ ছিল সংখ্যালঘু৷ ১৯৫১ সালের আদমশুমারিতে তা ২২ শতাংশ৷ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে তা নেমে হয় ৮ দশমিক ৪ শতাংশ৷ তবে সবশেষ ২০১৫ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরো যে হিসেব দেখিয়েছে, তাতে হিন্দু ধর্মের মানুষের সংখ্যা ২০১১ থেকে বেড়েছে৷ ২০১৫ সালে দেখা গেছে, জনসংখ্যার ১০.৭ শতাংশ সংখ্যালঘু রয়েছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW
শত্রু সম্পত্তি আইন
২০০৮ সালে অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতসহ আরো কয়েকজনের লেখা নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়৷ বইটির নাম, ‘Deprivation of Hindu Minority in Bangladesh: Living with Vested Property’৷ সেখানে লেখকরা বলেন, শত্রু সম্পত্তি আইনের ফলে ১৯৬৫-২০০৬ সময়কালে ১২ লাখ পরিবারের ৬০ লাখ হিন্দু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ এ সময় তাঁরা ২৬ লাখ একর ভূমি হারিয়েছেন৷
ছবি: bdnews24.com
হামলার বিচার হয় না
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ইতিহাস দীর্ঘ৷ কিন্তু হামলার বিচার এবং দোষীদের শাস্তির নজির নেই বাংলাদেশে৷
ছবি: bdnews24.com
10 ছবি1 | 10
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীও বুঝিয়ে দিয়েছেন, মৃত্যুর শোক নিয়ে তার বিশেষ মাথাব্যথা নেই। আগ্রহ আছে মৃত্যু ঘিরে রাজনীতিতে। যেভাবে হাসতে হাসতে তিনি আসানসোলের ভোটের সঙ্গে রামপুরহাটের ঘটনার তূল্যমূল্য বিচার করেছেন, তা দেখলে অবাক লাগে। আরও একবার শকড হতে হয়।
টেলিভিশনের পর্দায় এক আশ্চর্য দৃশ্য লাইভ হয়ে আছে এখন। শঙ্কিত, ভীত গ্রামের মানুষ কার্যত গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। দুই-এক ঘর মানুষ এখনো হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়ের অপেক্ষায় হয়তো বসে আছেন। আর গোটা এলাকা ঘিরে ফেলেছে পুলিশ, মিডিয়া আর রাজনীতির লোকেরা। মুখ্যমন্ত্রীও ঘটনাস্থলে যাবেন বলে জানিয়েছেন। সকালে এলাকায় পৌঁছেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলে সেই কথাগুলোই বলেছেন, একসময় তাদের দিকে আঙুল তুলে বিরোধীরা যা বলতেন।
অবাক লাগছে দেখেও না দেখার ভান করে থাকা একদল বিশিষ্ট মানুষের দিকে তাকিয়ে। একদিন তাদেরই বিশ্বাস করে রাস্তায় নেমেছিলেন তো হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। সমাজের অভিভাবক মনে করেছিলেন তাদের। মানবতার বাণী ছড়ানো সেই বিশিষ্টরাও কি অন্ধ হয়ে গেলেন? নাকি তারা সেই তিন বাঁদরের মতো-- দেখেন না, শোনেন না, বলেন না।
দল আসে, দল যায়। পতাকার রং বদল হয়। রাজনীতি বদলায় না। আর উলুখাগরার মতো বলি হতে থাকে সাধারণ গরিব মানুষ। তাদের কোনও নাম নেই। তারা কেবলই সংখ্যা। ময়নাতদন্তের টেবিলে তাদের পায়ের আঙুলে সেই সংখ্যা ঝুলতে থাকে।
এই পশ্চিমবঙ্গ আমার দেশ নয়। এই রক্ত উপত্যকা আমার দেশ নয়। অথবা, এটাই বোধ হয় আমার দেশ ছিল!