যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফায়ারআই-কেই হ্যাক করা হয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সাধারণ কোনো হ্যাকার নয়, নিশ্চয়ই ক্ষমতাধর কোনো দেশ আছে এর পেছনে৷
বিজ্ঞাপন
কোন দেশের মদতে হ্যাক করা হয়ে থাকতে পারে সে বিষয়ে খোলাখুলি কিছু বলেনি সাইবারআই৷ এক ব্লগ পোস্টে শুধু জানিয়েছে, মঙ্গলবার হ্যাকার হ্যাক করে ‘রেড টিম’ টুলস নিয়ে গেছে, যা করা কেবল বিশ্বমানের ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব৷ রেড টুলস গ্রাহকদের সক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়৷ফায়ারআই-ও তা ব্যবহার করতো গ্রাহকদের সুরক্ষাশক্তি পরীক্ষার কাজে৷
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
এক সংবাদ সম্মেলনে ফায়ারআই-এর সিইও কেভিন ম্যান্ডিয়া বলেন, ‘‘আমরা এখন এমন এক দেশের আক্রমণ দেখছি যার উচ্চমাত্রার আক্রমণসক্ষমতা রয়েছে৷ এতদিন বছরের পর বছর ধরে আমরা যে ধরনের ঘটনা সামাল দিয়ে এসেছি, এটি সেগুলোর চেয়ে আলাদা৷’’
তিনি মনে করেন, ফায়ারআই-কে আক্রমণ করা যেনতেন কারো কাজ নয়, কারণ, এতে ‘বিশ্বমানের সক্ষমতা’ দরকার৷
হ্যাকিংয়ের ঘটনা প্রকাশের পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফায়ারআই-এর শেয়ারের দাম আট ভাগ কমে গেছে৷
সিলিকন ভ্যালিকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ফায়ারআই-এর গ্রাহকের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় এবং আঞ্চলিক সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠান৷ এতদিন অনেক বড় বড় সাইবার অপরাধ তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে এসেছে ফায়ারআই৷ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভূমিকা রাখে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট রুশ প্রতিষ্ঠান হ্যাক করেছিল কিনা তা যাচাই করার দায়িত্বও পেয়েছিল তারা৷ এবার তারাই হ্যাকারের কবলে৷
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ‘রেড টিম টুলস চুরি যাওয়ায় ভবিষ্যতে আরো বড় বড় সাইবার হামলার আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এমন কাজ কে বা কারা করেছে তা জানার জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে৷ তদন্তে ফায়ারআই-কে সহযোগিত করছে যুক্তরাষ্ট্রের সব রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং মাইক্রোসফট৷