ফায়ারআই-কে হ্যাক করার পর আরো বড় কিছুর আশঙ্কা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা৷ সে আশঙ্কা সত্যি হতে চলেছে৷ কোষাগার এবং বাণিজ্যসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের ওয়েবসাইটও এখন হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
বিজ্ঞাপন
এক ব্লগ পোস্টে ‘রেড টিম' টুলস চুরি যাওয়ার খবর জানানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফায়ারআর্ম আরো বলেছিল, তাদের অনুমান, রেড টিম চুরি করা বিশ্বমানের ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো রাষ্ট্রের পক্ষেই কেবল সম্ভব৷
ফায়ার আই হ্যাক করার ঘটনা তদন্ত করছে এফবিআই এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ৷ কোষাগার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটও হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন উলিয়ট বলেন, ‘‘ সরকার এ সংক্রান্ত সব খবরে চোখ রাখছে৷ ঘটনার পেছনে যারা, তাদের চিহ্নিত করার সব চেষ্টা চালানো হচ্ছে৷''
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফায়ারআই হ্যাক করা হয়েছিল সোলারউইন্ডস নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে৷ বার্তাসংস্থা এপির কাছে সোলারউইন্ডস কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি৷
সত্যি সত্যিই সোলারউইন্ডসের মাধ্যমে ফায়ারআই-কে হ্যাক করা হয়ে থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের আরো অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারেন হ্যাকাররা৷ যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৫০০টি কোম্পানি, সবচেয়ে বড় দশটি টেলিযোগাযোগ সংস্থা, সেনাবাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, এমনকি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ও রয়েছে সোলারউইন্ডস-এর গ্রাহকের তালিকায়৷সোলারউইন্ডসের মাধ্যমে হ্যাক করে থাকলে এসব প্রতিষ্ঠানও হ্যাককরতে পারবেন হ্যাকাররা৷
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
নাটের গুরু রাশিয়া
ফায়ারআই-এর ওয়েবসাইটে হ্যাকারদের হামলার কয়েকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কর্মকর্তা রাশিয়া-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তথ্য জানতে মরিয়া বলে দাবি করেছিলেন৷এখনো রাশিয়ার নামই সবার আগে উঠে আসছে সন্দেহের তালিকায়৷ যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ারদূতাবাস অবশ্য রোববার এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে৷ এক ফেসবুক পোষ্টে দূতাবাস বলেছে, রাশিয়া এমন কোনো ঘটনার সঙ্গে একেবারেই জড়িত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম কোনো প্রমাণ ছাড়া অহেতুক রাশিয়ার ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে৷