সাদা পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্রের মিসুরি রাজ্যের শহর ফার্গুসন৷ মাত্র ২১ হাজার অধিবাসীর এই শহরের প্রতিবাদের খবর এখন বিশ্ব মিডিয়ায়৷
বিজ্ঞাপন
ঘটনার সময়কাল আগস্ট ৯৷ সেদিন রাতে এক সাদা পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৮ বছরের মাইকেল ব্রাউন৷ সেসময় তাঁর কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না৷ এই ঘটনার প্রতিবাদে এখন নিয়মতি বিক্ষোভ হচ্ছে ফার্গুসনে৷ পরিস্থিতি সামলাতে দেশের সরকার সেখানে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের পাঠিয়েছে৷
প্রায় প্রতি রাতেই ফার্গুসনে বিক্ষোভ হচ্ছে৷ প্রতিবাদকারীরা হাত উপরে তুলে ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট' বলে স্লোগান দিচ্ছে৷ স্লোগানটি এতই জনপ্রিয় হয়েছে যে, মঙ্গলবার ফার্গুসনের একটি স্কুল বাসে থাকা শিক্ষার্থীরা যখন ব্রাউন হত্যাকাণ্ডের স্থানটি দিয়ে যাচ্ছিল তখন তারা বাসেই হাত উপরে তুলে স্লোগানটি দিতে থাকে৷
স্লোগান ছাড়াও প্রতিবাদ কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিয়েছে৷ এছাড়া পুলিশের দিকে মূত্র নিক্ষেপের মতো ঘটনাও ঘটেছে৷ ফলে কয়েক প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ৷
জানা গেছে, ফার্গুসনের জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকান-অ্যামেরিকান৷ কিন্তু শহরের পুলিশ বিভাগ সহ, প্রশাসন, রাজনীতি সব স্থানেই শ্বেতাঙ্গ মানুষের পদচারণা৷ শহরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য এগুলো অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি
এক সময় আফ্রিকাকে বলা হতো ‘অন্ধকার মহাদেশ’৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহাদেশ সব দিক থেকে অনেক এগোলেও মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো খুব খারাপ৷ ছবিগুলো তারই প্রমাণ৷
ছবি: Adballe Ahmed Mumin
চলমান ছবি
এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় নিকিওয়ে মাসাঙ্গোর৷ চোখ খুলে দেখেন এক লোক তাঁর ওপরে৷ লোকটি বলল, চোখ ঢেকে রাখতে যাতে তাকে চেনা না যায়৷ তারপর সারা রাত ধরে চলল ধর্ষণ৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই নারীর বয়স এখন ৮৭ হয়ে গেলেও সেই রাতের কথা ভোলেননি মাসাঙ্গোর৷ তাঁর এ ছবি তুলেছেন জার্মান ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসের ‘আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি’ ক্যাটাগরির ফাইনালিস্ট লুঙ্গি মবুলওয়ানা৷
ছবি: Lungi Mbulwana
পুলিশের নির্মমতা
পুলিশের পা ধরে রেহাই চাইছেন এক ওকাডা মোটর সাইকেল ট্যাক্সি চালক৷ তাঁকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদ নগ্ন হয়ে জানিয়ে আরো বড় বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি৷ পুলিশ বেধড়ক পেটাতে শুরু করে৷ নাইজেরিয়া সরকার প্রধান সড়কগুলোতে ওকাডা নিষিদ্ধ করার পরও চালাতে যাওয়াই এই তরুণের প্রথম অপরাধ৷ রাস্তায় সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কাজে ভীষণ কঠোর নাইজেরিয়ার পুলিশ৷
ছবি: Olufemi Ajasa
ইচ্ছা থাকলে শিক্ষা হয়
শিশুগুলো এখন স্কুল থেকে মাকোকোয় ফিরবে নৌকা চালিয়ে৷ ওদের ভাগ্য ভালো, কেননা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার লেখাপড়া, আর খুব কষ্ট করে হলেও তা তারা করতে পারছে৷ ওদের মতো ভাসমান বস্তির অনেক ছেলেমেয়েই কিন্তু এ সুযোগ পায়না৷
ছবি: Oluyinka Ezekiel Adeparusi
হতভাগ্যের আবেগ
দক্ষিণ আফ্রিকার এই লোকটি ২০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন কারাগারে৷ সেই কষ্ট আছে, আছে অহঙ্কারও৷ মুখে অনেকগুলো ট্যাটু৷ প্রত্যেকটি ট্যাটু তাঁর দল এবং নিজের মর্যাদার প্রতীক৷ যত জটিলতা, যত দুর্ভোগই থাকুক জীবনে তারপরও সুন্দর কিছু থাকেই- ছবিটি দেখে তা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই!
ছবি: Theodore Afrika
সড়কে ন্যায়দণ্ড
মোবাইল ফোন চুরি করেছে- এই সন্দেহে একটু আগে মারধর করা হয়েছে তাঁকে৷ গণপিটুনির পর তাঁকে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ তারপর পুলিশ তাঁকে নিয়ে যায় হাসপাতালে৷ স্রেফ সন্দেহের বশে একজনকে নির্বিচারে পেটানোর অপরাধে কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ৷ সুবিচারের মানবাধিকার দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানীতে অনেক মানুষেরই নেই৷
ছবি: Lulama Zenzile
গৃহহারার কান্না
বিলাসবহুল হোটেল তৈরি করার জন্য ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ঘর৷ আফ্রিকার আরেক দেশ চাদ-এর রাজধানীতে সাত সন্তানের এই মায়ের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে তাঁর অশ্রু৷ এভাবে গৃহহারা করা হয়েছে ৬৭০টি পরিরারকে৷ অথচ ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি পয়সাও দেয়া হয়নি কাউকে৷
ছবি: Salma Khalil Alio
সাংবাদিকের অধিকারের লড়াই
সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার এবং হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সোমালিয়ার সাংবাদিকরা৷ আব্দাল্লে আহমেদ মুমিন ছবিটি তুলেছেন ধর্ষিতার সাক্ষাৎকার নেয়ার কারণে এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর সময়৷ ‘আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি’ ক্যাটাগরিতে এই ছবিও স্থান পেয়েছে৷ প্রতিযোগিতার পৃষ্ঠপোষক ডয়চে ভেলে এবং জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন মন্ত্রণালয়৷ বুধবারই বিজয়ীদের হাত পুরষ্কার তুলে দেয়ার কথা৷
ছবি: Adballe Ahmed Mumin
7 ছবি1 | 7
বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ
ফার্গুসনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান নাভি পিল্লাই বিক্ষোভকারীদের দমনে অত্যধিক শক্তি প্রয়োগের সমালোচনা করেছেন৷ তিনি বিক্ষোভ করার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোরও আহ্বান জানান৷
নিজের চরকায় তেল দাও
ফার্গুসনের ঘটনায় চীন ও রাশিয়ার গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে৷ চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সবসময় অন্যের দিকে আঙুল না তুলে নিজের সমস্যাগুলোর সমাধান করা৷'' এছাড়া টেলিভিশন চ্যানেল সিসিটিভি ফার্গুসনের ঘটনা কভার করতে সেখানে একজন প্রতিবেদক পাঠিয়েছে৷ চীনে একই ধরণের প্রতিবাদের ঘটনার ক্ষেত্রে এটা একটা অচিন্তনীয় বিষয় বলে মন্তব্য করেছে বার্তা সংস্থা এপি৷
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, ফার্গুসনের প্রতিবাদ দমনে শক্তি প্রয়োগের ঘটনা রুশদের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিচ্ছে যে, গণতান্ত্রিক পশ্চিমা বিশ্বের নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিবাদ দমনে রাশিয়ার চেয়ে কম বর্বর নয়৷